প্র: একজন অভিনেতার জন্য থিয়েটারের ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উ: অভিনেতা হওয়ার নিয়মাবলি নেই। তবে থিয়েটারে কাজ করলে অভিনয়শিল্পটা অভ্যেসের সুযোগ আর সময় বেশি থাকে। থিয়েটারের ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা যে আবশ্যিক, তা নয়। তবে থাকলে তো ভালই।
প্র: আপনাকে রিয়্যালিস্টিক চরিত্রে অভিনয় করতে বেশি দেখা যায়...
উ: চিত্রনাট্যটা যখন পরদায় তুলে ধরা হয়, আমার কাছে সেটা ম্যাজিক। ছোটবেলায় সিনেমা দেখতে গিয়ে খেয়াল করতাম, পরদা নামের সীমারেখাটা ভেঙে গিয়েছে। দর্শকরা ভুলে যেতেন যে, তাঁরা অডিটোরিয়ামে আছেন। রিঅ্যাক্ট করতেন। তখন থেকে রিয়্যালিজমের প্রতি টান অনুভব করি।
প্র: কমেডি ও সিরিয়াস, দু’ধরনের চরিত্রেই আপনি সমান সাবলীল। সামঞ্জস্য রাখেন কী ভাবে?
উ: প্রথমত, আমি আলাদা করে কমেডি, সিরিয়াস চরিত্রে অভিনয় করছি মনে করি না। চিত্রনাট্যের উপর ভিত্তি করেই বিশেষ মুহূর্তটা তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত, এটা বুঝেছি যে, কোনও কিছুরই একটা মাত্র রং হয় না। ইট্স অল আ মিক্সড ব্যাগ অফ ইমোশন। মনখারাপের মধ্যেও হিউমর লুকিয়ে থাকে। আবার হিউমরের মধ্যে ডার্কনেস! আমি সমস্ত অনুভূতিগুলোকে চরিত্রটার মধ্যে ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করি। সেটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ জার্নি তৈরি করে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে লোককে হাসানোর চেষ্টা করি না। সব মিলিয়ে তৈরি হওয়া মুহূর্তটায় লোকে হাসে।
প্র: অভিনয়, নির্দেশনা, লেখালিখির মধ্যে কোনটা সবচেয়ে প্রিয়?
উ: তিনটে একই আর্টের অংশ। লেখালিখি জানা প্রয়োজন। তা হলে নির্দেশনায় সুবিধে হবে। চরিত্রায়নের জন্য অভিনয়ও দরকারি। আমার ক্লাসগুলোতেও এটাই বলি, অভিনয় করতে চাইলে আগে লিখতে শেখো।
প্র: সিনেমা না থিয়েটার?
উ: থিয়েটারের পরিতৃপ্তিটা পিয়োর, তাৎক্ষণিক। তক্ষুনি দর্শকদের ভাল লাগা-খারাপ লাগা জানতে পারি। ছবির ক্ষেত্রে পারফরম্যান্সটা হয় আইসোলেশনে। থিয়েটারের দর্শক সীমাবদ্ধ। সেখানে একটা ছবি একই সময়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। থিয়েটার ও সিনেমার আলাদা আলাদা চড়াই-উতরাই আছে। দুটোই ভীষণ ভালবাসি।
প্র: জাতীয় পুরস্কার আসতে সময় লেগেছে বেশ। কখনও মনে হয়নি, এই প্রাপ্তিটা আগে আসতে পারত?
উ: কখন কে অ্যাওয়ার্ড দেবে, সেটা আমি ঠিক করব কেন? তবে দিলে তো ভালই লাগে। সকলেই চায়। বিনয় দেখাচ্ছি না। তবে আমি পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা করিনি। পুরস্কারের আনন্দ আলাদা। তবে যে চরিত্রটা করে পুরস্কার পাচ্ছি, সেটার আনন্দ আরও বেশি। বেসিক্যালি বিষয়টা প্রেমে পড়া আর প্রেমের গল্প বলার মতো। অভিনয়ের আনন্দ প্রেম করার মতো। আর পুরস্কারটা যেন প্রেম করে পরে কাউকে সেই গল্প শোনানোর মতো খানিকটা!
আরও পড়ুন: বিনোদন কি ক্রমশ মুঠোবন্দি?
প্র: কাজ না থাকার ভয় বা অনিশ্চয়তায় ভোগেননি?
উ: অবশ্যই। তবে আমি লাকি। নিজেকে শূন্য মনে হতে দিইনি। যখন অভিনয় করছি না, তখন লিখছি। যখন লিখছি না, ওয়র্কশপ করছি। কিছু না করলে ট্র্যাভেল করছি। পরের কাজ কেন এল না ভেবে বসে পড়িনি। বরং প্রতিটা মুহূর্ত চুটিয়ে এনজয় করেছি।
প্র: অবসর সময়ে কী করেন?
উ: আমি তো গত ৩৫ বছর ধরেই ছুটি কাটাচ্ছি। যা করি, তাই অবসর।
প্র: কোনও আক্ষেপ?
উ: হয়তো সমুদ্রের তীরে বড় পেন্টহাউস নেই, প্রাইভেট জেট বা ক্রুজ নেই। কিন্তু আমার এমন অনেক কিছু আছে, যা বহু মানুষ চেয়েও পান না। আক্ষেপ কীসের?
প্র: নতুন কী কী ছবি আসছে?
উ: রাজকুমার গুপ্তের ‘রেড’, সুধীর মিশ্রের ‘দাসদেব’।
প্র: আগেও কলকাতায় এসেছেন শো নিয়ে। এখানকার দর্শক কেমন?
উ: অসাধারণ। এমন সহৃদয়, শিল্প সমঝদার দর্শকদের সামনে পারফর্মের সুযোগই আলাদা।
প্র: বাংলার সঙ্গে তো আপনার নিবিড় যোগ। এখানকার কী প্রিয়?
উ: প্রতিটা শহরের আলাদা গন্ধ রয়েছে। কলকাতার মেজাজ কোথাও পাবেন না। কারণ এখানকার মানুষ। অদ্ভুত সব চরিত্র, যা বলে বোঝাতে পারব না। আড্ডা কালচারটা খুব প্রিয়। আর রয়েছে খাবারদাবার। আমার মা, বউ কিন্তু বাঙালি। বাড়িতে বাঙালি রান্নাও হয়। ছোলার ডাল, মাছ ভাজা, সরষে মাছ, কষা মাংস, মিষ্টি দই চেটেপুটে খাই। এই তো ‘আবার খাব’ খেলাম (হেসে)।
প্র: বলিউড কি বদলাচ্ছে?
উ: অফকোর্স। শুধু বলিউড কেন, সকলেই বদলাচ্ছি। তাই টপিক, মর্যালিটি, সিনেমা সবই বদলাচ্ছে।