Advertisement
E-Paper

বাংলা ছবিতে গ্রাম-শহর, এটা ভাগ করল কারা?

তাঁকে পাওয়াই মুশকিল। তবে ধরে বেঁধে বসাতে পারলে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের মতো আড্ডাবাজ আর দুটি নেই তাঁকে পাওয়াই মুশকিল। তবে ধরে বেঁধে বসাতে পারলে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের মতো আড্ডাবাজ আর দুটি নেই

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০০:০০

গল্ফগ্রিনের পাঁচতলার ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোট-বড় অন্তত ৫-৬টা মোবাইল। অথচ তিনি মোবাইল ব্যবহার করেন না! শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। অনুরাগ বসুর ‘জগ্গা জাসুস’, সুমন ঘোষের ‘বসু পরিবার’, অরিন্দম শীলের শবর, অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের ‘শংকর মুদি’, ব্যোমকেশ-সহ একগুচ্ছ ছবি নিয়ে আড্ডার মেজাজে।

প্র: আপনার নাকি গোপন মোবাইল আছে?

উ: কলকাতার বাইরে শ্যুট থাকলে একটা মোবাইল আমার সঙ্গে থাকে শুধু সন্ধেবেলা বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলার জন্য। আর এমনিতে সকলেই জানে, আমি বাড়ির টেলিফোনে সকাল ৯টা পর্যন্ত আর শ্যুট না থাকলে রাত ৯টার পর কথা বলি। আসলে অর্ধেক লোকের তো ১২টায় সকাল হয়। অসুবিধে সেখানেই।

প্র: টালিগঞ্জের স্টুডিয়োর চেয়ে শাশ্বত এখন নাকি বেশি কমফর্টেবল অনুরাগ বসুর সেটে রণবীর-ক্যাটরিনার সঙ্গে…

উ: জাস্ট দুটো ছবি তো করলাম। ওখানে যা সম্মান পেয়েছি, মনে থাকবে। প্রথম যে দিন সেটে গেলাম, রণবীর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘‘আমি আপনার বিগ ফ্যান।’’

প্র: ‘জগ্গা জাসুস’-এর শ্যুটিং শেষ হল?

উ: ডাবিংয়ের জন্য মুম্বই যেতে পারিনি। ওরা কলকাতায় ডাব করিয়ে নিয়ে গেল। আসলে এই ছবিটা একটা মিউজিক্যাল। ট্রেলার দেখে পুরোটা বোঝা যাবে না।
সিনেমাহলে দেখতে হবে।

প্র: কিন্তু ছবি রিলিজে এত দেরি!

উ: মুম্বই ভীষণ প্রফেশনাল। ‘জগ্গা’-র শ্যুট চলছে, একদিন রাতে একটা মিটিং হল। কর্ণ জোহর, সিদ্ধার্থ রায় কপূর, রণবীর অনুরাগ। আমিও ছিলাম। সেখানে ঠিক হল, আগে ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ রিলিজ করবে। তার পর ছ’মাস বাদে ‘জগ্গা জাসুস’ আসবে। প্রযোজকরা প্রযোজকদের কীভাবে সাহায্য করছে ভাবুন! আমরা টলিউডে পারব? বলুন তো, প্রযোজকরা এখানে অন্যের পোস্টার ছিঁড়ে কী পান? ইন্ডাস্ট্রির মানুষকে কাদা ছুড়লে নিজের গায়েই কাদা লাগে। এ বার কিন্তু ভাববার সময় হয়েছে। প্রযোজক না বাঁচলে ইন্ডাস্ট্রি মরে যাবে।

প্র: শাশ্বত কেমন করে বাঁচছেন? ইন্ডাস্ট্রির অনেকের মতে, ‘কহানি’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কেয়ার অব স্যার’ করেও আপনি ছোটখাটো ছবিতে মুখ দেখাচ্ছেন...

উ: নতুন পরিচালকের সঙ্গে কাজ না করলে বাড়িতে বসে থাকতে হবে। সেটা কি ভাল? মিঠুন চক্রবর্তী বলেছিলেন আমায়, কাজ করে যেতে হবে। আমি কোন হরিদাস পাল যে বলব, নতুন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করব না? মিঠুন চক্রবর্তী থেকে অমিতাভ বচ্চন প্রত্যেকের ঝুলিতে বাজে ছবি আছে। ওঁদের মতো অভিনেতারাই ছবি করার ক্ষেত্রে বাছতে পারেননি। আমি কে? প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তও তো কাজ ছাড়া আর কিছু পারে না। পার্টিতে মন দিয়ে খাচ্ছি, সেখানেও ঋতু কোথায় কবে কী কাজ হতে পারে তা নিয়ে বলে চলেছে!

প্র: অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করার স্বপ্নটা আছে?

উ: অবশ্যই আছে। ‘তিন’‌-এর স্পেশ্যাল শোয়ে সুজয় ঘোষ আলাপ করিয়ে দিল। উনি বব বিশ্বাসকে দেখতে চেয়েছিলেন। বাবার কথা বলায় মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদও করলেন। নিজে থেকেই বললেন, আমি বেরিয়ে যাব। আমার সঙ্গে ছবি তুলবে নাকি? আমার তো মনে হয়, যে যত বড় সুপারস্টার, সে ততই সহজ।

প্র: মানে?

উ: রণবীরকে দেখলাম! রাজরক্ত! ওদের বংশে কত বড় বড় নাম। ওর চাপটা ভাবুন। নিজেই বলে, ‘‘সেই ‘বরফি’, ‘রকস্টার’-এর পর আর ছবি চলেনি। তো আমি কী করব? এ বার ‘জগ্গা’ আসছে। কাজ করছি কিন্তু ছবি ফ্লপ হিট আমার হাতে নেই!’’

প্র: আর ক্যাটরিনা?

উ: সব বলে দিলে অনুরাগ রেগে যাবে।

প্র: একটু তো বলতেই হবে...

উ: ক্যাটরিনা শ্যুট করছে আর ইনস্টাগ্রামে ছবি দিচ্ছে। অনুরাগ বলছে, ও প্রমোশনের আগেই সব দিয়ে দিচ্ছে। কী কাণ্ড!

আরও পড়ুন:‘প্রেম না থাকলে জীবন মৃত! বহুবার প্রেমে পড়েছি’

প্র: আপনি নাকি ‘জগ্গা জাসুস’-এ নেচেছেন?

উ: না না। ওটাকে নাচ বলে না। কিছু মুভমেন্ট ছিল। একটু ব্যস্ত ব্যস্ত ভাব দেখিয়েছি।

প্র: হঠাৎ ওয়েব সিরিজ নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়লেন?

উ: দেখুন, আগে হলের সময় অনুযায়ী ছবি দেখতে হতো। এখন সে সুযোগ কমে আসছে। বালাজি টেলিফিল্মস আর ছায়াবাণীর যৌথ উদ্যোগে যে ছবিটা করছি সেটাও মোবাইল না-থাকা এক চরিত্র। লোকে নিজের সময়মতো দেখবে।

প্র: তা হলে কি ধারাবাহিকের জায়গায় ওয়েব সিরিজ?

উ: ধারাবাহিকে কী আছে বলুন তো? পরিচালক বলে তো কিছু নেই। চ্যানেল যা বলবে, সেটাই শেষ কথা। সেটাও মুম্বইয়ে বসে বাংলা ধারাবাহিক নিয়ে বিধান দেওয়ার মতো। ধারাবাহিকে যে ভাল মানুষ, সে সারাক্ষণ কেঁদে চলেছে। আর যে খারাপ, সে চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। অদ্ভুত সাজ-পোশাক। এটা কি সুস্থ বিনোদন? একটা প্রশ্ন তুলতে চাই আজ।

প্র: বলুন না...

উ: বাংলা ছবিতে গ্রাম-শহর, এটা ভাগ করল কারা? তাপসদা’র যে ভাবে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ ঘটেছিল ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’, ‘সাহেব’ দিয়ে— উত্তমকুমারেরও সে রকম হয়নি। কোথায় গেলেন তরুণ মজুমদার, প্রভাত রায়? অনুরোধ করছি ওঁরা ছবি করুন। তবে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবিতে কিন্তু ইমোশন আছে। ওটাই আসল। আমার গুরু জোছন দস্তিদার বলতেন পরিচালক সে-ই, যে মানুষের মন কাটাছেঁড়া করে। হেলিকপ্টার শট, বিদেশে নাচ দিয়ে কী হবে, যদি মানুষকে কাঁদাতে বা হাসাতে না পারা যায়? তবে গোয়েন্দাদের মার নেই কিন্তু।

প্র: মানে?

উ: প্রত্যেক মানুষের মধ্যে গোয়েন্দা আছে। এই যে আপনি প্রশ্ন করছেন আমায়, আমার গোয়েন্দা মন বলছে আপনি আমার থেকে এমন কিছু বের করে নিতে চা‌ইছেন যা থেকে বিতর্ক তৈরি হবে বা হেডলাইন। তবে কী করলে সব বাংলা ছবি চলবে, সেটা খোঁজার জন্য নতুন কোনও গোয়েন্দাকে আসতে হবে।

Celebrity Interview Saswata Chatterjee শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy