অনুপম। ছবি: অর্পিতা প্রামাণিক
প্র: বলিউড আর টলিউডে এই বিরল কিন্তু সফল ইনিংস খেলার রহস্য কী?
উ: ব্যাপারটা যে এত অনায়াসে ঘটে যাচ্ছে, তাতে আমিও বিস্মিত (হাসি)! আমাকে অনেকেই মুম্বই চলে যেতে বলেছিল। কিন্তু এখানে থেকেই দু’জায়গায় কাজ করা যায় কি না, সেটা দেখতে চেয়েছিলাম। আর আমার তো বাংলার কাজ হিন্দির তুলনায় অনেক বেশিও। নিজের কমফর্টে থেকে যেটুকু করতে পারছি, তাতেই আমি খুশি।
প্র: কিন্তু আপনার হিন্দি গানও তো হিট। সেটা কোনও কিক দেয় না?
উ: ‘অক্টোবর’-এ রাহত ফতে আলি খান আমার সুরে গাইলেন, এটা বিরাট কিক। রেখা ভরদ্বাজ আমার সুরে কাজ করলে আমার ভাল লাগে। যেহেতু আমি হিন্দিতে লিখি না, সেহেতু বৃহত্তর শ্রোতা আমার লেখাটাই অ্যাপ্রিশিয়েট করতে পারবেন না। সুতরাং আমার কাছে সেটার খিদে নেই। তা ছাড়া আমি যে কারণে পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয়, সেই একই কারণে পঞ্জাবে জনপ্রিয় হতে পারব? আমার মনে হয় না, প্রচুর হরিয়ানভি ছেলে আমাকে দেখে খুব ইন্সপায়ার্ড হবে! আমার মধ্যে ওই সুপারমেল ইগোটাই নেই। সুতরাং আমি তাদের ইমপ্রেস করার চেষ্টাও করব না।
প্র: সমালোচকরা বলেন আপনার গানগুলো মাঝে মাঝে একঘেয়ে। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের কাজ নিয়ে এক্সপ্লোরও করেন। সেটা কি সমালোচনার উত্তরে?
উ: যে কোনও নতুন শিল্পীকে একটু সময় দেওয়া উচিত। দশটা গান শুনেই একটা ব্র্যাকেটে ফেলে দেওয়াটা ঠিক নয়। মানুষ কিন্তু আমাকে সেই সুযোগটা দিয়েছেন। আমিও একটা জায়গায় পৌঁছে এখন নিজের মতো কিছু করার চেষ্টা করছি। তা-ও কিছু মানুষ সমালোচনা করবেই। তবে সত্যি সত্যি ভীষণ অন্য রকম কিছু করে উঠব কি না জানি না। অনুপম রায় দারুণ একটা কাওয়ালি বানাল— এটা হবে না বোধহয়! কারণ আমি সেই গ্রুমিংটার মধ্য দিয়ে যাইনি। শুনে শুনে কিছু একটা বানাব হয়তো। কিন্তু নুসরত ফতে আলি খানের কাওয়ালি হবে না।
প্র: অনুপম রায়ের মতো লেখেন, এ রকম গীতিকারও দেখা যাচ্ছে এখন! তাঁদের কিছু বলতে চান?
উ: কত গানে জাহাজ-মাস্তুল ছারখার হচ্ছে আর কত বার অবুঝের পেন্সিল ঘুরে ঘুরে আসছে, সেটা দেখে মজাই লাগে। আসলে আমাদের সমাজে একটা মুশকিল আছে। কপি করাকে আমরা বড্ড সম্মান করি। সিনেমা হোক বা গান বা লেখালিখি হোক— প্রথম হাততালিটা কিন্তু পাওয়া যায় কপি করেই। মহম্মদ রফির গান কেউ যদি ওঁর মতো করে হুবহু গায়, সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হবেই। কিন্তু এগুলো সাময়িক। নকল করলে ওই একটা জায়গাতেই মানুষ আটকে থাকবে, সেখান থেকে কোনও উৎকৃষ্ট কিছু বেরিয়ে আসবে না।
প্র: ইমন, লগ্নজিতা, পালোমাদের কেরিয়ারে মাইলফলক আপনার সুরে গাওয়া গান। নতুনদের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে চান?
উ: আমিও নতুন ছিলাম। আমাকেও কেউ সুযোগ দিয়েছিল। সুযোগ পেলেই এক জন গুণী মানুষ জনসমক্ষে আসতে পারে। আমার ছবিতে যদি পাঁচটা গান থাকে তার চারটে আমি নিশ্চিন্তে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের দিতে পারি। সেখানে একটা গান নতুন কাউকে দিয়ে গাওয়ানোতে তো অসুবিধে নেই। কিন্তু এই সাফল্যের ভবিষ্যৎ তার মুঠোতেই।
প্র: টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি এত ক্লিন ইমেজ নিয়ে আছেন কী করে? যেখানে আপনার সহকর্মীরা প্রত্যেকেই বেশ রঙিন!
উ: (হাসতে হাসতে) এর উত্তর সবচেয়ে ভাল দিতে পারবে পিয়া (অনুপমের স্ত্রী)। ও তো বলে আমি খুবই বোরিং। আমার প্রায়রিটি কাজ। তার পিছনেই দিনের অর্ধেক সময় চলে যায়। আর যে কারণে সহকর্মীরা রঙিন, আমার সেটা খুব একটা টেম্পটিং লাগে না।
প্র: এর পর নতুন কী কাজ করছেন?
উ: সম্প্রতিই আমার কলামের সংগ্রহ ‘অনুপমকথা ও অন্যান্য’ প্রকাশিত হল। তা ছাড়া এ বছর একটা অ্যালবাম করতে চলেছি, ছ’টা নতুন গান নিয়ে। তারই একটা পুজোর আগে বেরোবে— ‘মিথ্যে কথা’। আমার ভক্তরা আমার কাছ থেকে এক ধরনের গান শুনতে অভ্যস্ত। এটা সে রকম নয়, নাচের গান। এ বার নাচ শুনলেই মানুষ তাকে ছোট হিসেবে দেখে, যেহেতু ওটা ইন্টেলেকচুয়ালি ইনফিরিয়র। কিন্তু ক্লাবে-টাবে গেলে দেখা যায় লোকে বলিউড, ইংরেজি গান, পঞ্জাবি গান চালিয়ে নাচছে। আর আমার গান নিয়ে লোকে তো হতাশ, কারণ নাচাই যায় না (হাসি)! বরং রিল্যাক্স করার সময় বা লাউঞ্জে বসে শোনে মানুষ। তাই বাংলায় নাচের গান লেখার চেষ্টা করলাম।
প্র: আপনি নাকি এই মুহূর্তে শো করতে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক দাবি করেন?
উ: খুবই কঠিন প্রশ্ন। আমি তো অন্যদের পারিশ্রমিক জানি না! তা ছাড়া পুরনো শিল্পীদের তাঁদের পারিশ্রমিক দিয়ে মাপা হয় না। ফলে আমি এই বিষয়টা নিয়ে একদমই বদার্ড নই। খুব বেশি অনুষ্ঠান করিও না আমরা। একটা বেঞ্চমার্ক তৈরি করা হয়েছে। সেটা যারা অ্যাফর্ড করতে পারবে, আমরা তাদের অনুষ্ঠান করব। তার ফলে আমাকে মাসে ৩০ দিন ছোটাছুটি করতে হয় না। হাতে গোনা কয়েকটা শো করলেই দিব্যি চলে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy