Advertisement
E-Paper

এখনও জেগে স্বপ্ন দেখতে ভাল লাগে

তাঁর সাক্ষাৎকার পেতে এখনও দিন গুনতে হয়। অভিনয়োত্তর জীবনেও কতটা ব্যস্ত শর্মিলা ঠাকুর? তাঁর সাক্ষাৎকার পেতে এখনও দিন গুনতে হয়। অভিনয়োত্তর জীবনেও কতটা ব্যস্ত শর্মিলা ঠাকুর?

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ০০:২৩
শর্মিলা ঠাকুর

শর্মিলা ঠাকুর

প্র: দীর্ঘ পথ হেঁটে সাফল্যকে ছুঁয়েছেন। কেমন ছিল এই রাস্তা?

উ: যখন নিজের মুখোমুখি দাঁড়াই তখন এ সব মাথায় আসে না। আগের মতোই যেন রয়ে গিয়েছি। অবশ্য ফিল্মে অভিনয়ের কারণে পরিচিতির ক্ষেত্রটাই অনেক বিস্তৃত। অভিনেতাদের প্রতি মানুষের একটা হিরো ওয়ারশিপ রয়েছে। হয়তো সংবাদমাধ্যমের কাছেও আমার কিছুটা গুরুত্ব তৈরি হয়েছে। এই যে আপনি আমার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন, সেটারও নিশ্চয়ই কিছু কারণ রয়েছে!

প্র: কারণ তো একাধিক। আপনার ব্যক্তিত্ব শুধু অভিনয়েই আটকে থাকেনি। এত রকম স্তর রয়েছে আপনার যাত্রাপথে। গোড়ার দিকের কথা যদি একটু বলেন...

উ: মধ্যবিত্ত মূল্যবোধেই আমার বেড়ে ওঠা। গাড়িতে চড়ে কোনও দিন স্কুলে যাইনি। বাসে যেতাম, কখনও হেঁটেও ফিরতাম। বাবা অবশ্যই বড় চাকরি করতেন, কিন্তু দূরে থাকতেন। আমি বড় হয়েছি ঠাকুরদা-ঠাকুমার সঙ্গে একান্নবর্তী পরিবেশে। শিল্পকলার প্রতি টানও তৈরি হয়েছিল পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণেই। কোনও কিছু অ-নান্দনিক, এলোমলো দেখলেই আমার চোখে লাগে। এটাকে বদভ্যাসই বলতে পারেন! সোহা তো ওর বাড়ি গেলেই বকাঝকা করে! বলে, এই রে, মা আবার সব সাজাতে বসল!

প্র: দুটো সম্পূর্ণ বিপরীত ধারার ছবিতে কাজ করেছেন। রহস্যটা কী?

উ: মানিকদার ছবিতে কাজ করতে দক্ষতা প্রয়োজন আর শক্তি সামন্তের ক্ষেত্রে দক্ষতার প্রয়োজন নেই, এটা তো নয়। দু’ক্ষেত্রেই পরিশ্রম, সৃজনশীলতা প্রয়োজন। মূল ধারার হিন্দি ছবি তখন একটু লার্জার দ্যান লাইফ, অপেরা ঘেঁষা হতো। হিন্দি ছবি করতে গিয়ে দেখলাম, ওখানে স্পিডটাই আলাদা। একটু স্পষ্টভাবে বলতে বা করতে হবে। গোটা দেশের দর্শকের কথা মাথায় রেখেই হিন্দি মূল ধারার ছবি তৈরি হয়। ফলে সোজাসাপটা না বললে সেই ছবি মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। অবশ্য এখন বলিউডের ছবিও বদলাচ্ছে। নাসিরুদ্দিন শাহ, ইরফান খান, নওয়াজউদ্দিনদের হাত ধরে।

প্র: এই যে নিরন্তর শিখতে শিখতে এগোনোর কথা বললেন, এটা কি শুধুই ফিল্ম প্রসঙ্গে?

উ: জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। হয়তো একটা পার্টিতে গিয়েছি যেখানে ফিল্ম বা রাজনীতি নিয়ে কথা বলার মতো কেউ নেই। কিন্তু সেখানে কেউ হয়তো রয়েছেন যিনি খুব ভাল রান্না করেন। তাঁর কাছে নতুন কোনও রেসিপি শিখলাম। কারও থেকে হয়তো কাঁথা স্টিচের কাজ শিখে নিলাম। যেটুকু করি নিজের সেরাটুকু দেওয়ার চেষ্টা করি। কোথাও যাওয়ার থাকলে ভাবি, শাড়িটা যেন সেখানকার জন্য মানানসই হয়। এ ভাবেই ভাল থাকতে পারি। কোনও আক্ষেপও নেই। বয়স হয়ে যাচ্ছে, মোটা হয়ে যাচ্ছি, এ সব নিয়ে আদৌ ভাবি না।

আরও পড়ুন:কার সঙ্গে প্রেম করছেন ঋতাভরী?

প্র: আজকেও আপনার ক্যালেন্ডারে ফাঁকা সময় বলে কিছু নেই। অনেক তারিখ পাল্টানোর পর আপনার মুখোমুখি বসার সুযোগ হল...

উ: এমন কোনও ব্যস্ততার মধ্যে আমি যাই না যেখানে আমার শেখার বা পাওয়ার সুযোগ নেই। বাবরি মসজিদ কাণ্ডের পর আমার জীবন অনেকটা বদলে যায়। রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ে। পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক কাজও করতে শুরু করি। অনেক এনজিও-র সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে যারা মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুকন্যাদের নিয়ে কাজ করে। ইউনিসেফ-এর গুডউইল অ্যাম্বাসাডর, সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের প্রধান পদের কাজও সামলেছি। সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি। সরকারকে একাধিক প্রস্তাব দিয়েছি। ভাল-মন্দ মেশানো অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু সব সময়ই কিছু করে গিয়েছি। এখনও পতৌদিতে গিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে থাকি। হয়তো গোলাপবাগান করছি, বিভিন্ন পকেটে স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র গড়ছি। কবিতা পড়ার কোনও অনুষ্ঠানে গিয়ে পড়ছি। হয়তো সৌমিত্রর মতো দক্ষ আমি নই। কিন্তু কবিতা পাঠের মঞ্চে গিয়ে অনেক নতুন-পুরনো ভাল কবিতা পড়ার সুযোগ তো হয়ে যায়! ঈশ্বরের কৃপায় এখনও আমাকে এমন কোনও কাজ করতে হয়নি যা আমি করতে চাইনি। হ্যাঁ, কিছু ছবিতে হয়তো মানসিক সায় না থাকলেও কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু সেটাও করেছি আমার বোন বা নিকটাত্মীয়কে কিছু সাহায্য করতে বা তাদের কাউকে কিছু কিনে দিতে।

প্র: আর্থ সামাজিক ভূত এখনও ঘাড়ে চেপে বসে রয়েছে নারীশক্তির একটি বিরাট অংশের। কী বলবেন এই নিয়ে?

উ: আমি মনে করি, দেশের মহিলাদের পরিস্থিতি কিন্তু অনেকটাই ভালর দিকে এগোচ্ছে। কাগজ পড়লে অবশ্য তা বোঝা যায় না! মনে হয় পুরোটাই অন্ধকার। কিন্তু একটু নিরপেক্ষভাবে যদি দেখা যায়, তা হলে এটা কি মনে হয় না যে, শ্রীলঙ্কা বাদে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলির তুলনায় নারী স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছি? ভারতীয়রা সর্বত্র সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে। অবশ্যই এ ব্যাপারে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। এই তো অঙ্কে যে মহিলা নোবেল পুরস্কার পেলেন, তাঁর স্বামীর এ ব্যাপারে কোনও সহায়তা ছিল কি না সে খবর ক’জন রাখেন? ফলে দোষারোপ করে লাভ নেই, কাজ করে যেতে হবে। হোমমেকিংটাও খুবই বড় কাজ। যে সব মহিলা শুধুমাত্র শপিং করেই খুশি, তাঁদের কথা আলাদা! কিন্তু যাঁরা তা নন, তাঁদের জন্য কাজের অভাব কোথায়। বাড়িতে বসে স্বামী বা সন্তানের জন্য একটা সোয়েটার বুনলেও তো বাজার থেকে কেনা একটা সোয়েটারের দাম থেকে অর্ধেক বাঁচানো যায়।

প্র: এই ব্যস্ততার মধ্যেও কি নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে ভাল লাগে?

উ: আমি ছোটবেলা থেকেই ডে-ড্রিমার! এখনও জেগে স্বপ্ন দেখতে ভাল লাগে! মেঘের দিকে তাকিয়ে অনেক সময়ই হারিয়ে যাই। কলকাতায় গেলে দেখি, কেউ টিউবওয়েলে স্নান করছে বা রাস্তায় বাচ্চারা খেলছে—এই সব টুকরো টুকরো দৃশ্য আমাকে খুব টানে। আমি এই দেখা-না-দেখা চরিত্রগুলোর অজানা জীবনকাহিনি নিয়ে ভাবতে বসি...

Celebrity Interview Sharmila Tagore Bollywood Tollywood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy