Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছবি ফ্লপের ধাক্কা থেকে ইন্ডাস্ট্রিটা বাঁচান

পরের পর ফ্লপের ধাক্কায় জেরবার বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর আকুতি চিরঞ্জিতের গলায়পরের পর ফ্লপের ধাক্কায় জেরবার বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর আকুতি চিরঞ্জিতের গলায়

পারমিতা সাহা
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

প্র: এ বছরের ঈদ তো আপনারই। ‘চ্যাম্প’ এবং ‘বস টু’, দুটি ছবিতেই আপনি রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়!

উ: হ্যাঁ, ‘চ্যাম্প’এ আমি দেবের কোচ আর ‘বস টু’-তে একাধারে শুভশ্রীর বাবা ও পুলিশ কমিশনার অব মুম্বই। আর আমি তো হার্ডকোর কমার্শিয়াল ফিল্মের মানুষ। আমাকে অভিনয় করতে রাজি করানোর জন্য জিৎ আর দেব তো আমার বাড়ি পর্যন্ত চলে আসে। ‘চ্যাম্প’ ছবিটা অবশ্য একটু আলাদা। আর ‘বস টু’ হচ্ছে আউট অ্যান্ড আউট কমার্শিয়াল ছবি। জিৎ এ ধরনের ছবি, সো কলড আর্টহাউস ফিল্ম করে না। দেবের ভাবনাচিন্তা একটু আলাদা। ও সিরিয়াস ছবি বানাতে চাইছে।

প্র: বর্তমানের বাংলা ছবি দ্যাখেন?

উ: ব্যস্ততার কারণে খুব একটা দেখা হয় না। রিসেন্টলি ‘পোস্ত’ আর ‘বিসর্জন’ দেখলাম। দুটোই ভাল লেগেছে, তবে ‘পোস্ত’-র শেষটা আমার পছন্দ হয়নি।

প্র: এখন যাঁরা কাজ করছেন ইন্ডাস্ট্রিতে, কেমন লাগে তাঁদের কাজ?

উ: খুব ট্যালেন্ডেড। দারুণ কাজ করছে এঁরা। এঁদের মাঝেও যে আমি আর বুম্বা টিকে আছি, সেটা সত্যি ডিফিকাল্ট। এখন রিয়্যালিস্টিক অভিনয় করতে হয় বলে অ্যাক্টিংয়ের স্কোপ অনেক বেশি। এখন যেমন সিরিয়াল হয়, আমাদের সময় তেমন কমার্শিয়াল ছবি হতো। সোপ ফিল্ম। সেই আর্টিস্টরা যখন অন্য ধারার ছবিতে কাজ করেছেন, ছবিটা চলেনি। সেটা কোয়ালিটির দিক থেকে হয়তো ভাল, যাকে আবার এনকারেজ করে মিডিয়া। তারা আবার বাণিজ্যিক ছবিকে উৎসাহ দেয় না। মিডিয়ার এই মনোভাবের জন্য ইন্ডাস্ট্রি মরে যাচ্ছে, তাই বাঁচানোর জন্য ‘বস টু’, ‘চ্যাম্প’ হিট হওয়া ভীষণ প্রয়োজন।

প্র: বাংলা ছবির খারাপ অবস্থার জন্য মিডিয়া কী ভাবে দায়ী হল?

উ: কারণ, তাদের তৈরি করা বিভেদের জন্য সিনেমাটা মরে যাচ্ছে। তবে আরও খারাপ হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য। কমার্শিয়াল ছবি সম্পর্কে শিক্ষিত সমাজের একটা নেগেটিভ মনোভাব আছে। ধরুন, একটি ছেলে যে বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসেছে, ফিল্ম বানাতে চায়, সে এই কমার্শিয়াল গ্রুপটায় ঢুকতে চাইবে না। চাইবে একটা ছবি বানাতে ‘আসা যাওয়ার মাঝে’... ইত্যাদি-ইত্যাদি। সেই ছবি জনগণের জন্য নয়, একমাত্র কাগজই তার প্রশংসা করে এবং ছবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পায়। সে ছবি কিন্তু চলে না। তাই আমাদের তখন সরকারকে বলতে হয়, কমপালসারিভাবে বাংলা ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করুন। ছবিটা বিক্রি হচ্ছে না বলে বলতে হয়। সলমন খানকে এটা বলতে হয় না।

আরও পড়ুন:আবির-পাওলির তৃতীয় পর্ব

প্র: ভাল কনটেন্ট থাকলে মিডিয়া প্রশংসা করে।

উ: কোন হার্ডকোর কমার্শিয়াল ছবিকে দশে আট দেওয়া হয়েছে? একটা ছেলে যদি আঁকাবাঁকা ছবি আঁকে, তার নিন্দে করলে কিন্তু সে আর ছবি আঁকবে না। আবার ব্যাড স্কুলও প্রশংসা পেলে, সেখান থেকে কৃতী ছাত্র বেরবে।

হিউস্টনে নাতনি দিয়ার সঙ্গে

প্র: তার মানে কোয়ালিটির সঙ্গে কম্প্রোমাইজের কথা বলছেন?

উ: না, কোয়ালিটি নিশ্চয়ই রাখবেন। কিন্তু আপনি তো আমজাদ আলি খানের সরোদের সঙ্গে কিশোর কুমারের গান মেশাবেন না। দুটো জায়গা আলাদা। আপনারা দুটো জায়গাকে মিশিয়ে দিচ্ছেন। কমার্শিয়াল ছবির এবং আর্ট ফিল্মের মাপকাঠি কখনও এক হতে পারে না। যে বিচারদণ্ডে ওই ছবিকে আট দেওয়া হচ্ছে সেখানে কমার্শিয়াল ছবির বিচার হতে পারে না। অঞ্জন চৌধুরী, স্বপন সাহাকে ফালতু পরিচালক বলা হচ্ছে। তাই তাঁদের সেই কমার্শিয়াল ছবির সার্কিটে তো গৌতম ঘোষের মতো পরিচালক আসতেই চাইবেন না। গত বছর একশো কোটি টাকা লস হয়েছে ইন্ডাস্ট্রির। এখন কমার্শিয়াল ছবিও প্রযোজক পাচ্ছে না। হিরোরা ছবি বানাচ্ছে। এখানে রাজ চক্রবর্তীকে ‘ভাল’ ছবি বানাতে বললে মুশকিল, মানে যা দশে আট পাবে। ওর ভাত বন্ধ হয়ে যাবে। সেটা বানানোর চেষ্টাও করেছে ও, কিন্তু চলেনি। জিৎ, দেবও চেষ্টা করেছে, পারেনি।

প্র: কিন্তু তা সত্ত্বেও তো নানা ধরনের ছবি হচ্ছে...

উ: হ্যাঁ, এগুলো করতে-করতে আমরা ইকনমিক্যালি এতটা পিছিয়ে গিয়েছি যে, এখানে হিরোরাও কোনও টাকা পায় না। একটুও এগোয়নি উত্তমকুমারের সময়ের চেয়ে তাঁরা। বরং অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে গিয়েছে অনেক। সুচিত্রা সেন দু’ লাখ টাকা নিয়েছিলেন ‘সপ্তপদী’তে। সেখানে দু’লাখ টাকা বর্তমান নায়িকারা পায়। একশো গুণ পিছিয়ে গিয়েছি আমরা। কাজ করে পয়সা পাই না। কাগজে একটা লাইনও পাই না। মিঠুনকে কোনও আন্তর্জাতিক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলে ও শুধু ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পাওয়া ছবির কথা বলতে চায়, ‘ডিস্কো ডান্সার’ নয়। একজন পরিচালকের ভাল ছবি বা আর্ট তৈরির সুযোগ কিন্তু এই কমার্শিয়াল ছবি করে দেয়। তাই অবশ্যই দুটো ক্যাটিগরি করা উচিত।

প্র: আপনার হাতে তো এখন পরপর ছবি...

উ: হ্যাঁ পরপর তিনটে ছবির কাজ শেষ করলাম। শ্যুটিং, প্রোমশন এসব নিয়ে সারাটা দিন খুব ব্যস্ত হয়ে থাকি। তার পর আমার মেয়ে হিউস্টনে থাকে। ওর কাছে যাই মাঝেমাঝে। গত ফেব্রুয়ারিতে আমার নাতনি হয়েছে। আমি আর আমার স্ত্রী তখন ওখানে গিয়ে মাসখানেক ছিলাম। সামনের মাসেই আমার স্ত্রী নাতনি সমেত ওখান থেকে ফিরবে। তার পরের সময়টা শুধু নাতনির জন্য।

একসঙ্গে চিরঞ্জিৎ-প্রসেনজিৎ

অঞ্জন দত্তের পরিচালনায় একটি ছবিতে চিরঞ্জিৎ ও প্রসেনজিতের একসঙ্গে কাজ করার কথা হচ্ছে। ছবিটি একটি রিভেঞ্জ ফিল্ম। একজন পুলিশ অফিসার, অন্যজন অপরাধী। সে একটা বিশেষ কারণে অপরাধী হয়। তার পর পুলিশ অফিসারের সেই অপরাধীর পিছনে চেজ করার গল্প।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE