Advertisement
E-Paper

‘কপি-পেস্ট ছবিতে আমি আর নেই’

সাফল্যের সংজ্ঞা, কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে ভিন্নধর্মী চরিত্রে কাজ, অভিনয়-রাজনীতির টানাপড়েন নিয়ে মনখোলা দেবসাফল্যের সংজ্ঞা, কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে ভিন্নধর্মী চরিত্রে কাজ, অভিনয়-রাজনীতির টানাপড়েন নিয়ে মনখোলা দেব

পারমিতা সাহা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০৩

প্র: নতুন অভিযান, নতুন দেশ দেখার ভ্রমণপিপাসু মন শঙ্করকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। আর দেবকে?

উ: শঙ্করের মতো আমারও পৃথিবী দেখার খুব শখ। নতুন দেশ, বেশভূষা, খাবারদাবার... বেড়াতে গেলে অফবিট জায়গাই আমার পছন্দ। আমরা তো জীবনে রোজগার আর প্রেমটেমেই শেষ হয়ে গেলাম। পৃথিবীতে এত কিছু দেখার আছে, শেখার আছে, এনজয় করলাম না। তার পর হঠাৎ একদিন হার্ট অ্যাটাক হল, সব শেষ! আফটার ফিফটি ওই আক্ষেপ যেন না থাকে যে, আমি ওই জায়গাটা দেখিনি। প্রথম বার আমেরিকা যাওয়া, প্রথম আউটডোর, প্রথম পাসপোর্ট... এগুলো আমার কাছে খুব ইন্সপায়ারিং।

প্র: এ তো গেল বেড়ানো। আর কাজের ক্ষেত্রে?

উ: আমি ভবিষ্যৎকে দেখার চেষ্টা করি। যাতে কেউ পিছন ফিরে দেখলে মনে হবে, দেব একমাত্র অভিনেতা যে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে গিয়েছে। এ বছর যেমন বক্সার, পাইলট ও অ্যাডভেঞ্চারারের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। ‘ধূমকেতু’ রিলিজ করলে, সেখানে ৮২ বছরের এক বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখবেন। আমাকে যা প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়, তা হল আমি নতুন কী করলাম। আপনাকে বাছতে হবে, আপনি কী চান? স্বল্পমেয়াদি সাফল্য নিয়ে বেঁচে থাকা না কি যুগের পর যুগ দর্শকের মনে স্থান পাওয়া?

প্র: তার মানে কি দক্ষিণী ছবির রিমেকে দেব নেই?

উ: কেন নেই? আমার মতো করে আছি। আমাকে ডিভিডি দিয়ে কেউ ছবি করাতে পারবে না। ডিভিডি দিতে পারো, কিন্তু আমাকে ইম্প্রোভাইজ করতে দিতে হবে। কপি-পেস্ট ছবিতে আমি আর নেই। দিন-রাত পরিশ্রম করে ছবি বানালাম, প্রোমোশন প্ল্যান করলাম, তার পর এ ধরনের একটা ছবি করলে আমি আবার পিছিয়ে যাব।

প্র: ‘আমাজন অভিযান’-এর শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কী রকম?

উ: জঙ্গলের মধ্যে আমার একটা লাফানোর দৃশ্য ছিল। হান্টার শুজ পরেছিলাম, ইয়া মোটা সোল। তা সত্ত্বেও একটা কাঠ পা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছিল। জলের মধ্যে শ্যুটিং। সেখানে কুমির থাকতে পারে, পিরানহা, অ্যানাকোন্ডা... আমরা দেখেছিও পাশ দিয়ে কুমির চলে যাচ্ছে। কমলদাকে (কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়) বলেছি, তাড়াতাড়ি সারো, কিছু একটা মুভমেন্ট টের পাচ্ছি... তার পর বোটে উঠে দেখলাম, ঠিক বুঝেছিলাম। জোর বেঁচে গিয়েছি! মশা, পোকামাকড় তো ছিলই। ওখানকার ব্যাঙের বিষেও ইউ আর ফিনিশড। সেই বিষাক্ত ব্যাং হাতে শ্যুটও করেছি। ক্ষমতা দেখো ছেলেটার (নিজেকে দেখিয়ে হাসতে হাসতে)! যে ক্যানোপে উঠে শ্যুট করেছিলাম, সেটাতেও দাঁড়ানোর জন্য ব্যালান্সের প্রয়োজন ছিল। একটু এদিক-ওদিক হলেই জলে। আর তখন যদি নীচ দিয়ে একটা অ্যানাকোন্ডা চলে যায়! এত পোকা যে, পা রক্তে ভরে যেত। অ্যালার্জি, চুলকানি, জ্বর.. কোন গাছের কারণে যে এ সব হত, তা ভগবানই জানেন!

আরও পড়ুন: কাজই হোক পরিচয়

প্র: নিজের কমফর্ট জোন থেকে বেরোনোটা কিন্তু সহজ নয়। বিশেষত সে যখন আপনার মতো স্টার!

উ: এটা শুধুই দৃষ্টিভঙ্গির তফাত। আমি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাইনি। তাই বিলাসিতা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসলে লাক্সারি আর সো কলড স্টারডম, দুটোই সাময়িক। আমি খুব ফ্লেক্সিবল অ্যাক্টর। যখন কোনও চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যাই, মনে হয়, কী ভাবে আরও ভাল করব... প্রত্যেক দিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার, হোটেল মিলিয়ে কী বিরাট টাকা খরচ হচ্ছে, তা আমি জানি। ভারত আর ব্রাজিলের টিম মিলিয়ে আমরা ১২০ জন কাজ করেছিলাম। কলকাতায় আমি বিএমডব্লু চড়ি, ওরা চড়ে না। কিন্তু ওখানে আমরা একটা টিম। সবাই এক খাবার খেয়েছি। রাজমা আর ভাত। কপাল ভাল থাকলে বিস্কিট পেয়ে গেলাম বা ডিম। মাছ পাওয়া যেত, কখনও ব্রেড। সাও পাওলো হচ্ছে শেষ সিভিলাইজড অঞ্চল, যেখান থেকে বোটে করে ভিতরে যেতে হবে। দিনে একবারই মাত্র সেই বোট যাবে। কিন্তু তা পাওয়ারও নিশ্চয়তা নেই।

‘আমাজন অভিযান’ ছবির একটি দৃশ্য

প্র: সাংসদ না কি অভিনেতা... পাখির চোখ কোনটা?

উ: এক থেকে একশো অভিনয়। একশোর পর যা কিছু, সেটা ঘাটালের মানুষের জন্য ভাবনা।

প্র: অভিনেতা দেবের কতটা কাছে রাজনীতিক দেব আসতে পেরেছে?

উ: ধারেকাছেও না। এ জন্মে অন্তত আসতে পারবে না, যত দিন অভিনেতা দেব বেঁচে থাকবে। রাজনীতিতে আসা পুরোপুরি দিদির ভালবাসা আর আবদার। তার জন্য ব্লেসড! তবে আমাকে কত দিন রাখা হবে, তাও নির্ভর করছে দিদির উপরেই।

প্র: ব্যক্তিগত ভাবে আপনি কী চান?

উ: যখন আমি মারা যাব, আমাকে যেন মানুষ অভিনেতা দেব হিসেবেই মনে রাখে।

প্র: প্রযোজক দেবের লক্ষ্য কী?

উ: বাংলা ছবিকে জাতীয়, আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়া। আজ ‘বাহুবলী’, ‘টু পয়েন্ট ও’-র মতো ছবি পৃথিবী জুড়ে যে সম্মান পাচ্ছে ও টক্কর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও মাল্টিপ্লেক্সে আমাদের ছবির চেয়ে বেশি শো পাচ্ছে, সেটা আমি সম্মান করি। প্রযোজক দেবের লক্ষ্য, কাল যেন আমরাও সে সম্মানটা পাই। আমাজন পার্ট থ্রি করলে এই সাক্ষাৎকারটা যেন আমি মুম্বইয়ে বসে দিতে পারি। কাল যদি শিবু (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) কোনও ছবি বানায়, সেটা নিয়ে যেন মুম্বইয়ের বড়-বড় প্রযোজকরাও কথা বলেন, যে ভাবে আমরা বড় রিজিওনাল ছবি নিয়ে কথা বলি। তার জন্য বিষয়টাও সে রকম বাছতে হবে। আমার ছবির ভাষা বাংলা, ফিল কিন্তু ভারতীয়।

প্র: শোনা যায়, এসভিএফ-এর সঙ্গে ঝামেলা চলছে। তবু ওদের সবচেয়ে বড় প্রজেক্টে আপনি!

উ: দেখুন, এখানে দু’জন প্রযোজক লড়ছে। আমি চাই, আমার ছবি বেশি শো পাক, ওরা চায় ওদের ছবি। এগুলো সব টেম্পোরারি। এটা ছোট ইন্ডাস্ট্রি। তবে অভিনেতা দেবের সঙ্গে সকলের সম্পর্ক ভাল। পরের ছবির জন্য ওদের ডেটও দিয়ে রেখেছি ।

Dev Celebrity interview Deepak Adhikari Tollywood interview Amazon Obhijaan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy