রবিনা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা কালো পোশাকে রবিনা টন্ডন যখন আনন্দবাজার পত্রিকার অফিসে ঢুকলেন, শহরের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। এই গরমে কালো পোশাক! সুযোগ বুঝে প্রশ্নটা করে নেওয়া গেল। প্রথমে খানিকটা যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন ‘মোহরা’র মস্ত মস্ত গার্ল। সামলে নিয়ে হেসে বললেন, ‘‘এমনিই পরেছি। যাতে রোগা দেখায়।’’
বাংলা ছবি ‘ল্যাবরেটরি’-তে অভিনয় করেছেন। টেলিভিশনের জন্য যখন ‘সাহেব বিবি গোলাম’ করছেন, তখন অনেকটা সময় কলকাতায় কাটিয়েছেন। বললেন, ‘‘এখানে এলে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না। জানি না, শহরটার মধ্যে কী যেন আছে!’’
• কামব্যাকের তোড়জোড়
রোগা দেখানোর জন্য কালো পরার প্রয়োজন নেই রবিনার। ‘মাতৃ’ ছবির প্রচারে গোটা দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এখনও ছিপছিপে চেহারা। মুখে চোখে বয়সের ছাপ পড়লেও, লাবণ্য তাঁকে ছেড়ে যায়নি। ছবির জন্য আলাদা করে রোগা হয়েছেন। অ্যাকশন দৃশ্য করেছেন। ক্যামব্যাকের জন্য এত কিছু! এ বার কি তাঁকে নিয়মিত পরদায় দেখা যাবে? ‘‘জানি না। ভাল চিত্রনাট্য পেলে আর সংসারের ফাঁকে সময় পেলে ছবি করব।’’ নিজেকে তিনি ‘রিটায়ার্ড হাউজওয়াইফ’ বলে থাকেন। জানালেন, ছবির বিষয়টা খুব প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সিরিয়াস ছবি ‘মাতৃ’। অতিরিক্ত কিছু ঢোকানো হয়নি ছবিতে। নেই কোনও আইটেম সং।
• মটক মটক জ্যায়সে
রবিনাকে নিয়ে ‘কপূর অ্যান্ড সন্স’-এ একটা গানই রয়েছে। হাসতে হাসতে জানালেন, ‘মটক মটক জ্যায়সে রবিনা টন্ডন’ শুনতে তাঁর ভালই লেগেছে। কিন্তু আইটেম সং-এ মহিলাদের অনেক সময় পণ্য হিসেবে দেখানো হয়। এ ব্যাপারে তাঁর কী মত? বললেন, ‘‘এটা নির্ভর করে গানটা কেমন, তার ওপর। মহিলাকে অবজেক্টিফাই করা হচ্ছে এ রকম কোনও গানে আমি কখনও পারফর্ম করিনি। বলতে পারেন, ‘তু চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত’-এর কথা। কিন্তু বিশ্বাস করুন, ওই গানটার মধ্যে নিচু নজরে দেখার ব্যাপার ছিল না। উত্তর প্রদেশে খুব চল আছে ‘তু চিজ মস্ত হ্যায়’ কথাটার। একেবারেই কলোকিয়াল। ওরা নিজেদের মধ্যে এভাবেই কথা বলে। ওখানে মহিলাকে ‘পণ্য’ হিসেবে দেখার কোনও বিষয় নেই।’’ রবিনা একটা সময় পরপর কমেডি ছবি করেছেন। জোর গলায় জানালেন, ডাবল মিনিং সংলাপ আছে, এমন ছবির প্রস্তাব তিনি সব সময় ফিরিয়ে দিয়েছেন।
• আন্দাজে কিছু না করাই ভাল
নব্বইয়ের দশকের হিট ছবি ‘আন্দাজ অপনা অপনা’র সিক্যুয়েল হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। রবিনার মতে, ‘‘ক্লাসিকে হাত না দেওয়াই ভাল।’’ তিনি থাকছেন কি না ছবিতে এখনও জানেন না। ‘‘যদি ছবিটা তৈরি করতেই হয়, তা হলে একেবারে নতুন মুখ নিয়ে, নতুন গল্প ভেবেই করা উচিত,’’ বক্তব্য রবিনার।
• মহিলাতন্ত্রের শুরুয়াত
তাঁর ছবির সঙ্গেই সোনাক্ষী সিংহর ‘নুর’ মুক্তি পাচ্ছে। অপর্ণা সেনের ‘সোনাটা’। সব ক’টাই মহিলাকেন্দ্রিক। বিষয়টা নিয়ে রবিনাও উচ্ছ্বসিত! বললেন, ‘‘এটা খুব ভাল সময় এসেছে বলিউডে। পরপর মহিলাকেন্দ্রিক ছবি হচ্ছে।’’ সে না হয় হচ্ছে। পারিশ্রমিকের বিচারে মহিলারা তো পুরুষদের তুলনায় অনেকটা পিছনে। এই বৈষম্য নিয়ে তিনি কী মনে করেন? ‘‘পারিশ্রমিক নির্ভর করে চরিত্রটা কতটা জোরালো তার উপর। কতটা সময় কেউ স্ক্রিনে আছে, তার উপর। আমি যখন ‘দমন’ করেছি তখন সেই ছবিতে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক আমারই ছিল। নায়িকার ছবিতে মোটে পাঁচ দিন কাজ। আর গোটা ছবি নায়কের একার ঘাড়ে। তা হলে তো সমান পারিশ্রমিক হতে পারে না!’’ অনেক সময় নায়ক-নায়িকা সমান স্ক্রিন স্পেস শেয়ার করলেও পারিশ্রমিকের বিচারে অভিনেতা এগিয়ে থাকেন। রবিনার আশা, বলিউড ধীরে ধীরে পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে ব্যালান্স আনতে পারবে।
• ঘরে বাইরে রবিনা
তখন কমার্শিয়াল ছবিতে রবিনা ভরসাযোগ্য মুখ। সন্তান দত্তক নিলেন। সিঙ্গল মাদার হয়েও রবিনা ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকার চরিত্র করে গিয়েছেন। জানালেন, তাঁর বড় মেয়ে বিয়ে করে সাউথ আফ্রিকায় সেটল্ড। ছোট মেয়ে গোয়ায়। ছবি রিলিজের পর দু’জনেই প্রতিক্রিয়াগুলো মা’কে হোয়াটসঅ্যাপ করে যাচ্ছেন। বিয়ের পর রবিনার আরও দুই সন্তান হয়েছে। মেয়ের বয়স বারো। ছেলে সাড়ে ন’বছরের। দু’জনকেই এখনও সময় দিতে হয়। স্কুল, টিউশনে রবিনা নিজেই নিয়ে যান বলে শোনা যায়। নায়িকা নিজেও বললেন, সে কথা। মা হিসেবে ছেলেমেয়েকে তিনি পুরো সময় দেন। যে কারণে এখনই প্রযোজনার কথা ভাবছেন না। বললেন, ‘‘প্রযোজনা করেছি আগে। খুব একটা ভাল ফল হয়নি! তাই এখন ও-সব ভাবছি না। ওই কাজটায় অনেকটা সময় লাগে।’’
আরও পড়ুন:মিস্টার বিন বৃদ্ধ হলেন
• আইন কানুন সর্বনেশে
‘মাতৃ’তে ধর্ষণ এবং সেই প্রেক্ষিতে রিভে়ঞ্জ ড্রামার দিকে গল্প এগিয়েছে। ছবিতে যতটা পরিমিতভাবে ধর্ষণের ঘটনা দেখানো যায়, সে ভাবেই দেখানো হয়েছে। রবিনার কথায়, ‘‘খুব বেশি নৃশংসতা দেখানো সম্ভব নয়। সেন্সর বোর্ডও আপত্তি করবে। আমাদের উদ্দেশ্য মানুষকে সচেতন করা।’’ কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে সাধারণত নির্যাতিতাকেই দোষারোপ করা হয়। মেয়েটির পোশাকের দিকে আঙুল তোলা হয়। ‘‘এই অজুহাতগুলো এ বার আমাদের বন্ধ করা উচিত। কেন বাচ্চা মেয়ের হাতে ফোন দিয়েছ? কেন ওই পোশাকটা সে পরেছে? এগুলোর বদলে যদি আমরা নিজেদের আইনগুলো আর একটু কঠোর করতে পারি, তা হলে ভাল হয়,’’ বেশ উত্তেজিত রবিনা! তিনি কি দেশের বিচার ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন? রবিনার কথায়, ‘‘কাউকে নির্দিষ্ট করে দায়ী করছি না। কোথাও তো একটা গলদ আছে। নয়তো দিনে দিনে অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে কেন? অপরাধীরা যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেত, তা হলে ধর্ষণের ঘটনা এত বা়ড়ত না। আর নিয়ম-কানুনগুলো যে সময় তৈরি হয়েছে, তখন পরিস্থিতি আলাদা ছিল। এখন তো আর সেটা নেই।’’
কলকাতা থেকে রাত আট’টায় মুম্বইয়ের ফ্লাইট তাঁর। আগামী সপ্তাহটাও ছবির প্রচারের জন্য নানা শহরে ঘুরে বেড়াবেন। তার পর? ‘‘যত দিন না ভাল কিছু পাচ্ছি, আবার রিটায়ার্ড হাইজ ওয়াইফ,’’ অপনা আন্দাজে বলে গেলেন রবিনা! সে আন্দাজেই রসগোল্লা বাদ দিয়ে তুলে নিলেন ভেজ-প্যাটিস। শোনালেন, এ দিনই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় খাইয়েছেন গুলাবজামুন। যদিও টলিপাড়ার খবর, বুম্বার সঙ্গে বাংলা ছবিতে জুটি বেঁধে শিগগিরই আসছেন তিনি! সে জন্যই কি মুম্বই ফিরেই ‘ওয়ান’ দেখবেন বললেন রবিনা? প্রসেনজিৎ অবশ্য এর জবাবে টেক্সটে ‘স্মাইলি’ পাঠিয়েছেন ইতিমধ্যেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy