Advertisement
E-Paper

লিয়েন্ডার, আমার প্রেমিক হওয়ার যোগ্য তুমি ছিলে না...

তিনি মহিমা চৌধুরী, আবার জোরদার খবরে। এই শুক্রবার থেকে তাঁর নতুন নাম ঈশানী বন্দ্যোপাধ্যায়। ওরফে ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়। ওরফে শিনা বোরার মা। কিন্তু কী করে ভুলে যাবেন তাঁর আগের জীবন? যার সঙ্গে জড়িত ভারতীয় টেনিস সুপারস্টারের নাম। কথা বললেন সায়ন আচার্যরিও অলিম্পিক্স দেখলেন? খুব ভালো করে নয়। ওই একটু আধটু খবর রাখছিলাম। টিভিটা আসলে মেয়ের দখলে থাকে তো, অধিকাংশ সময়টায় কার্টুনই দেখে ও।

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ০০:০০
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

• রিও অলিম্পিক্স দেখলেন?

খুব ভালো করে নয়। ওই একটু আধটু খবর রাখছিলাম। টিভিটা আসলে মেয়ের দখলে থাকে তো, অধিকাংশ সময়টায় কার্টুনই দেখে ও।

• টেনিসে ভারতীয় পুরুষদের ডাবলস ম্যাচটাও দেখেননি তা হলে?

না… কেন বলুন তো?

• লিয়েন্ডার পেজ-রোহন বোপান্না খেললেন যে…

(একটু বিরক্ত হয়ে) আমরা কি লিয়েন্ডারকে নিয়ে কথা বলব? ওই প্রসঙ্গটা বাদ দিন না…

• আচ্ছা, ঠিক আছে। প্রায় দশ বছর পর ‘পরদেশ’য়ের নায়িকা আবার সিনেমায় ফিরছেন। এত দিন ছিলেন কোথায়?

(হেসে) এখানেই তো ছিলাম। মুম্বইতে, নিজের বাড়িতে। মা-বাবা আর মেয়ের সঙ্গে। লাইটস, ক্যামেরা, অ্যাকশন-এর জগতে ফেরার খুব একটা ইচ্ছেও ছিল না।

• ফিরছেন তো। তাও আবার বাংলা ছবিতে...

‘ডার্ক চকলেট’টা জাস্ট হয়ে গেল। অগ্নিদা (অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়) আমার পূর্বপরিচিত। শিনা বোরা হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর, হঠাৎ একদিন ফোনে বললেন যে ছবিটা করতে হবে। আমি তো অবাক।

প্রথমে না বলিনি, তবে একটু সময় চেয়েছিলাম ভাবার জন্য। কিন্তু অগ্নিদা বোধহয় জানতেন যে সময় দিলেই আমি কোনও না কোনও অছিলায় পাশ কাটিয়ে যাব। কথা বলার দিনকয়েকের মধ্যেই আমাকে রাজি করালেন। ব্যস, হয়ে গেল কামব্যাক!

(হাসি) এখন অবশ্য পুরনো পরিবেশে ফিরে মনে হচ্ছে, অভিনয়টা ভুলে যাইনি!

• একাধিক সেলিব্রিটির সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। সেই অভিজ্ঞতাগুলো নিশ্চয়ই এই ছবির ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে...

কিছুটা তো বটেই। সব সম্পর্কই যে টিকবে এ রকম কোনও গ্যারান্টি তো নেই। আমি বরাবরই প্রেমে পড়তে ভালবাসি। এবং সেই কারণেই দুমদাম প্রেমে পড়েছি। সেগুলো ভেঙেছে, আবার প্রেমে পড়েছি (হাসি)।

• হ্যাঁ, কখনও প্রিয় মানুষটির নাম আর্কিটেক্ট ববি মুখোপাধ্যায়, আবার কখনও লিয়েন্ডার পেজ...

হুম... কিন্তু আপনি শুধুই লিয়েন্ডারকে নিয়ে প্রশ্ন করবেন নাকি? (একটু থেমে) কেন রে বাবা! এত দিন তো হয়ে গেল...

• আপনাদের সেই বহুচর্চিত সম্পর্কটা তো সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানায়। প্রেম, চিটিং, ব্রেক আপ। সেই শক-এ আপনি বলিউড থেকে সরে গেলেন। লোকে তো প্রশ্ন করবেই...

(একটু উত্তেজিত) দাঁড়ান, দাঁড়ান। আমার কোনও শক ছিল না। বলিউড থেকে সরে যাওয়াটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। যে লোকটা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমায় ঠকিয়ে গেল, আমি কেন তার কথা ভাবব বলুন তো? আমার কাছে ভালবাসা ব্যাপারটা সিম্পল— হয় তুমি কাউকে ভালবাসো, কিংবা নয়। তুমি ভাই যতই বড় টেনিস প্লেয়ার হও না কেন, তোমার কোনও অধিকার নেই কাউকে আঘাত করার। আই হ্যাভ মুভড অন, লং ব্যাক...

• এখনও লিয়েন্ডারকে নিয়ে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করছেন কেন?

(একটু উত্তেজিত হয়ে) যেদিন লিয়েন্ডারের সঙ্গে ব্রেক-আপ হল, সেদিন থেকেই ও আমার কাছে একটা ক্লোজড চ্যাপ্টার। যে গুরুত্ব দেয় না, তার জন্য কেনই বা চোখের জল ফেলব? আর, ব্রেক-আপের পর আমি কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়েছি। লি-র ব্যক্তিগত জীবন কী রকম কাটছে সে তো সবাই জানেন। এবার একটু অন্য কথা বলি, প্লিজ!

• আচ্ছা, কখনও কি মনে হয় ব্রেক-আপের পর স্বেচ্ছা নির্বাসনের সিদ্ধান্তটা না নিলেও চলত?

না। একদম সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল ওটা। বিশ্বাস করুন, তখন বলিউডের ব্যস্ত জীবনে হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। মাঝে মাঝে মনে হত পালিয়ে যাই।

কিন্তু পালানো আর হল কই? বিয়ে করে ফেললাম। মেয়ে আরিয়ানা বড় হল। মনে হল, এর চেয়ে সুখের পৃথিবী আর কিছু হতে পারে না। আরিয়ানা বড় হওয়ার পরই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে বলিউডে ফিরব না। (একটু থেমে) আমার সামনে অনেকে ছিলেন, যাঁরা মা হওয়ার পরেও চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। রাখি গুলজার, নূতনজি, জয়া বচ্চন, তনুজা...কিন্তু আমি সেই পথে হাঁটতে চাইনি। মনে হয়েছিল, মেয়ের সঙ্গে যা এনজয় করি, সিনেমা সেটা আমাকে কোনও দিন দিতে পারবে না। আর কী জানেন? মা-মেয়ের এই সুখের সম্পর্কটা অনুভব করেছি বলেই ‘ডার্ক চকলেট’য়ে কাজ করা। প্রথম যে দিন ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় আর শিনা বোরার ঘটনাটা শুনলাম, মনে হয়েছিল—কোনও মা এ রকম করতে পারে? বাস্তবে যে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে, আমার ধারণাই ছিল না।

পরে ভেবে দেখলাম, এই ঘটনাটা আমাদের নাড়া দিয়েছে, কারণ মানুষগুলো উচ্চবিত্ত পরিবারের। এ রকম ঘটনা তো হরিয়ানা বা বিহারে প্রায়ই ঘটে। মা-মেয়ের সম্পর্কের কথা লোককে বোঝানো উচিত। দিস স্টোরি হ্যাড টু বি টোল্ড...

• আর সেই জন্যই আপনি বড় পর্দার ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়...

(হেসে) ও ইয়েস! তবে আমাদের এই গল্পটা কিন্তু পুরোপুরি ওই চরিত্রগুলোর ওপর ভিত্তি করে নয়। কিছুটা ফিকশন, কিছুটা বাস্তবের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা একটা ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

• বহু দিন পর আবার সিনেমায়। টেলি‌ভিশনের পর্দায় তো আপনি এখনও জনপ্রিয়...

হ্যাঁ, কিছু টিভি শোয়ের জাজ আমি। সঙ্গে কিছু সেলেব্রিটি ইভেন্টসে মুখ দেখাতে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, তাড়াতাড়ি রোজগারের এই পথগুলো না থাকলে হয়তো আমাকে আবার অভিনয় জীবনেই ফিরে যেতে হত। এই সব শো হয়তো আমার অভিনয় সত্তাটাকেও নষ্ট করেছে। কিন্তু ওই সময়ে আরিয়ানাকে বড় করতে টাকাগুলো খুব দরকার ছিল...

• সোশ্যাল মিডিয়ায় আছেন? সেটা না হলে তো আজকাল ফ্যানেদের কাছে পৌঁছনোটা কঠিন...

না। টুইটারে থাকতে গেলে যে ডিপ্লোমেসি দরকার সেটা আমার নেই। আর ফেসবুক তো পুরো ওয়েস্ট অব টাইম! তবে হ্যাঁ, ইন্সটাগ্রামে আছি।

• একা থাকেন। ইন্ডাস্ট্রি থেকে শত যোজন দূরে। কোনও প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ হয়?

হ্যাঁ, অক্ষয়কুমার। আমার প্রিয় অভিনেতাও। ওর সঙ্গে প্রথম কাজ করি ‘খিলাড়ি ৪২০’-তে। ওর মতো মানুষ ইন্ডাস্ট্রিতে বিরল। যেমন ব্যবহার, তেমন ডাউন টু আর্থ। আমার যদি অক্ষয়কুমারের মতো একটা ছেলে থাকত! কী হ্যান্ডসাম বলুন তো! (জোরে হাসি)

• এখনও প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে?

(জোরে হেসে) ভীষণ। আমি চিরকালই রোম্যান্টিক। বছর তিনেক আগে যখন ববি-র সঙ্গে সেপারেশন হল, তার পরেও আমি প্রেমে পড়েছি। সে প্রেম ভেঙেছে। কিন্তু এখনও আমি প্রেমে পড়তে চাই। সেই মানুষটাকে খুঁজছি যে আমাকে ভালবাসবে, মেয়ে আরিয়ানাকেও...

‘ডার্ক চকলেট’ ছবিতে মহিমা চৌধুরী ও সুদীপ মুখোপাধ্যায়

• আরিয়ানা এখন ৯। সিঙ্গল মাদার হিসেবে একা হাতে সন্তানকে বড় করার লড়াইটা কেমন?

খুব কঠিন। আমার সঙ্গে মা-বাবা থাকেন বলে কিছুটা সুবিধে হয়। তবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা হল আরিয়ানা। রোজ সকাল ৭টায় যখন ওকে স্কুলে ছাড়তে যাই, মনে হয় — এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। আজকাল তো ছেলেরাও সিঙ্গল পেরেন্ট হচ্ছেন, তুষার কপূরকেই দেখুন না। আরিয়ানার জন্য আর পুরোপুরি সিনেমা জগতে ফেরা হবে না।

• লিয়েন্ডারের সঙ্গে ব্রেক-আপের পর, কখনও মনে হয়নি যে, একবার লি-য়ের সঙ্গে কথা বলা উচিত? এত দিনের সম্পর্ক এভাবে ভেঙে যাওয়া...

আবার লি! (একটু থেমে) না, সে রকম কোনও ইচ্ছেই ছিল না। তবে, বেশ কয়েক বছর পর ওর সঙ্গে এক ফ্লাইটে দেখা হয়েছিল। তত দিনে আমার মেয়ে হয়ে গেছে, লাইফও সর্টেড। ওই জাস্ট ‘হাই’ বলে পাশ কাটিয়ে গেছিলাম।

• টেনিস কোর্টে লিয়েন্ডারের লড়াইকে সবাই কুর্নিশ জানান। কিন্তু কোর্টের বাইরে অধিকাংশ সতীর্থই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন...

(থামিয়ে দিয়ে) মুখ খোলাটা খুব অন্যায় কি? দেখুন, আমার সঙ্গে লিয়েন্ডার সঠিক রাস্তায় হাঁটেনি। হি ডিড নট প্লে আ ফেয়ার গেম। এবং, ওর যে রকম মানসিকতা, তাতে সতীর্থদের সঙ্গে ফেয়ার গেম খেলা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। ওর চরিত্র আমার পছন্দ হয় না এবং আমার ধারণা বাকিদেরও এ রকমই মত। তুমি কোর্টে একটা ভাল সার্ভ করতে পারো। কিন্তু লোককে ভালবাসার বা কাছে টানার ক্ষমতা তোমার নেই। ভালবাসার কিস্যু বোঝো না তুমি। তবে ওই ব্রেক-আপ আমাকে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখিয়েছে...

• কী?

নিজের ওপর বিশ্বাস না হারানো। আজকাল যখন শুনি, ইয়ং ছেলে মেয়েরা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করছে, মনে হয় ওদের কাউন্সেলিং করি। গিয়ে বলি যে, ভাই, প্রেমে ব্যর্থ হওয়াটাই জীবনের শেষ কথা নয়। যে তোমাকে ডাম্প করল, তার জন্য তুমি কেন নিজের জীবনটা শেষ করে দেবে? বরং, এনজয় ইওর লাইফ।

যেদিন শুনেছিলাম লি আমার আড়ালে সঞ্জয় দত্ত-র প্রাক্তন স্ত্রী রিহা পিল্লাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে, সেই মুহূর্ত থেকে ওকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিলাম। মনে হয়েছিল, এই ছেলেটা দেশের সেরা টেনিস প্লেয়ার হতে পারে, কিন্তু আমার প্রেমিক হওয়ার যোগ্যতা ওর নেই।

• এতগুলো ব্রেক আপ। তবু এত প্রাণচঞ্চল। কখনও একা লাগে না?

যখন একা ট্রাভেল করি, তখন হোটেলের ঘরে ঢুকলে ভীষণ একা লাগে। মনে হয়, যদি আরিয়ানা থাকত পাশে। আমার জীবনে কোনও রিগ্রেট নেই। গত দশ বছরে, আরিয়ানা আমায় সব দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে। শুধু মনে হয় আরও কয়েক বছর আগে যদি ওকে পেতাম!

• মুম্বই-কলকাতার ফ্লাইটে যদি আবার লিয়েন্ডারের সঙ্গে দেখা হয়?

উফ্ ভগবান, সে রকম কিছু যেন না হয়! আমি আর ওকে দেখতে চাই না। আরে ভাই, আমি অনেক দূর এগিয়ে গেছি এখন।

Mahima Chawdhury Tollywood Entertainment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy