Advertisement
E-Paper

নে‌তাজির মেকআপ রুমে বাস প্রাণের ঠাকুরের

ব্যস্ততা থাকলেও ছোট সুভাষ মাতিয়ে রাখে ধারাবাহিকের সেটব্যস্ততা থাকলেও ছোট সুভাষ মাতিয়ে রাখে ধারাবাহিকের সেট

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
অঙ্কিত, বাসবদত্তা

অঙ্কিত, বাসবদত্তা

ইতিহাস-নির্ভর রাজা-রাজড়ার পিরিয়ড ড্রামা এক ধরনের। তার সঙ্গে মধ্যবিত্ত বাঙালির প্রত্যক্ষ যোগসূত্র নেই। তবে প্রায় একশো দশ বছর পুরনো বাঙালি গৃহস্থালি রিক্রিয়েট করার ঝক্কিও কম নয়। বিশেষত, যখন সেই গার্হস্থ্য জীবন ঢুকে পড়েছে বাঙালির ড্রয়িং রুমে। দক্ষিণ কলকাতায় ‘নেতাজি’ ধারাবাহিকের সেটে ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা দুর্লভ সামগ্রী, আসবাবপত্র উস্কে দেয় ফেলে আসা দিনের নস্ট্যালজিয়া।

কটকের বাড়ির আদলেই তৈরি হয়েছে ‘নেতাজি’র সেট। পরে এলগিন রোডের বাড়িও এই সেটেই সাজানো হবে। সেট ডিজ়াইন করেছেন শাশ্বতী-মৃদুল। ‘‘কটকের বাড়ির ঘরগুলো ছোট। শুটিংয়ের স্বার্থে ঘরগুলোকে বড় করতে হয়েছে। চুনের দেওয়াল ক্যামেরায় দেখতে ভাল লাগে না। তাই একটু রঙের ব্যবহার,’’ বললেন মৃদুল।

ছোট সুভাষের ঘর, প্রভাবতীর ঘর, জানকীনাথের চেম্বারে উঁকিঝুঁকি মারলেই নজর কাড়ে ডিটেলিংয়ের খুঁটিনাটি। বিছানার চাদরে সুতোর কাজ, পর্দায় কটকি প্রিন্ট, সর্বোপরি কটকের বাড়ির আদলে সদর দরজা ও দেওয়ালের র‌ং।

ছোট সুভাষের চরিত্রে অঙ্কিত মজুমদার সকলের নয়নের মণি। ক্লাস ফোরের এই ছাত্র স্কুলের পরীক্ষার জন্য সেটে আসছিল সন্ধেবেলায়। পরীক্ষা কেমন হয়েছে জানতে চাওয়ায় হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল, মেকআপ রুমের আয়নার সামনে রাখা কালো রঙের একটি কৃষ্ণমূর্তি। ‘‘ও সব জানে। এটা দিদা আমাকে কিনে দিয়েছিলেন। আর আমার বাড়িতে রয়েছে ‘জাগ্রত কৃষ্ণ’। মানে বাড়ির কৃষ্ণ আমার হাতে রং করা,’’ বলছিল খুদে শিল্পী। ছোট্ট সুভাষ শুধু মুখের রঙেই ভাব ফোটায় না! পেন্সিল আর মোম রঙেও সে নিখুঁত শিল্পী। শটে‌র ফাঁকে তাকে আঁকতে না দিলে সে পরের শট দেবেই না! অঙ্কিতের ব্যাগে ড্রয়িং খাতা ছাড়াও থাকে সুভাষচন্দ্রের উপরে ইংরেজি ও বাংলা বই। অঙ্কিত আবার নিজেই বলছিল, ‘‘দুষ্টুমিও করি, তবে কী দুষ্টুমি বলব না।’’

অঙ্কিতের অনস্ক্রিন মা বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায় (প্রভাবতী) অবশ্য তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ‘‘একটা শটে আমি ওর জুতো-মোজা খুলে দিচ্ছি, এমন দৃশ্যও ছিল। শট দেওয়ার পরেই ও আমাকে প্রণাম করেছিল। বাড়ির শিক্ষা না থাকলে এটা হয় না।’’ প্রভাবতী সম্পর্কে বাসবদত্তা একটা ধারণা পেয়েছিলেন কৃষ্ণা বসুর (সুভাষচন্দ্রের দাদার পুত্রবধূ) কাছ থেকে। ‘‘উনি আমাকে বলেছিলেন, তুমি তো বেশ রোগা। প্রভাবতীদেবীর চেহারা ভারী ছিল। তোমাদের কস্টিউম ডিজ়াইনারকে খাটতে হবে,’’ স্মিত হাসি অভিনেত্রীর।

‘নেতাজি’র সেটে শিল্পীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। তবে তার ফাঁকে আড্ডা-খাওয়াদাওয়াও চলতে থাকে। বাসবদত্তার কথায়, ‘‘বিকেলে সকলেরই মন চায় নোনতা খেতে। কোনও দিন মুড়িমাখা, কোনও দিন ফুচকা, শিঙাড়া চলতেই থাকে।’’ পেঁয়াজি ছাড়া অঙ্কিতও শট দিতে রাজি হয় না, পাশ থেকে টিপ্পনী কাটছিলেন তার আর এক সহকর্মী।

একটু বিশ্রাম নিয়ে ছোট সুভাষ তখন মেকআপের জন্য রেডি। জানকীনাথ ঘরে ঢুকতেই সে চেঁচিয়ে উঠল ‘বাবা!’ অনস্ক্রিন বাবার স্নেহের ধমক, ‘‘এই, আমাকে শটের বাইরে বাবা বলবি না।’’ হাসির কূল-কিনারা থাকে না এ বার সেটের বাকিদের!

ছবি: সুপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়

Basabdatta Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy