Advertisement
১১ মে ২০২৪
Sandhya Mukhopadhyay

Sandhya Mukherjee: ‘সন্ধ্যাপিসি আর লতাদিকে  বাবা সবচেয়ে কঠিন গানগুলো দিতেন’

তখন আমি টিনএজার। বাবা আমার একটা গান রেকর্ড করেছিলেন। গানটা ছিল ‘কোনও ভাল কবিতার দুটো পঙ্‌ক্তি দাও’।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সলিল চৌধুরী। ফাইল চিত্র

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সলিল চৌধুরী। ফাইল চিত্র

অন্তরা চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:০৪
Share: Save:

বাবা (সলিল চৌধুরী) খুব ভালবাসতেন পিসিকে। আমি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে পিসিই বলতাম। সন্ধ্যাপিসি আর লতাদিকে (মঙ্গেশকর) সবচেয়ে কঠিন গানগুলো বাবা দিতেন। কারণ, তিনি জানতেন যে, ওঁরাই গানগুলো ঠিকমতো গাইতে পারবেন। সন্ধ্যা পিসির সঙ্গে বাবার প্রথম গান ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’ আমার ছোটবেলার খুব প্রিয় গান ছিল। আমি যে দিন পিসিকে প্রথম বার গান শোনাই, সেই দিনটাও মনে আছে।

তখন আমি টিনএজার। বাবা আমার একটা গান রেকর্ড করেছিলেন। গানটা ছিল ‘কোনও ভাল কবিতার দুটো পঙ্‌ক্তি দাও’। আমি যখন গানটা গাইলাম, পিসি মন দিয়ে শুনে খুব আশীর্বাদ করেছিলেন। আসলে উনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত খুব ভালবাসতেন। আর তেমন ছিল পড়াশোনা। প্রত্যেক গানের রাগ উনি জানতেন। ‘শ্রাবণ অঝোর ঝরে’, ‘গহন রাতি ঘনায়’-এর মতো কঠিন কঠিন গান কী সুন্দর গেয়েছেন। ‘ঊজ্জ্বল একঝাঁক পায়রা’ও কিন্তু কঠিন গান, উনি এমন করে গেয়েছেন মনে হত কত সহজ। আর বাবার সঙ্গে পিসির বোঝাপড়াও ছিল অন্য রকম। বাবা তো খুব ছটফটে মানুষ ছিলেন। হয়তো কোনও গানের মুখরা বানালেন বা কোনওটার অন্তরা, ব্যস! উঠে পড়লেন। বলতেন, “বাকিটা পরে শেষ করছি।” সন্ধ্যাপিসি শুনতেন না। বাবাকে রিহার্সাল বা রেকর্ডিং রুমে দরজা বন্ধ করে আটকে রাখতেন। বলতেন, ‘‘না, সলিলদা, আমি দরজা বন্ধ করে দিচ্ছি, যতক্ষণ না শেষ হবে, আমি বেরোতে দেব না’’। এ সব গল্প মায়ের কাছে শুনেছি।

আর খুব ভাল মানুষ ছিলেন। অন্যকেও জায়গা ছাড়তে জানতেন। এক বার এক অনুষ্ঠানে গিয়েছেন সন্ধ্যাপিসি আর মা (সবিতা চৌধুরী)। অনুষ্ঠানের কর্মকর্তারা মাকে বললেন, আগে সন্ধ্যাদি গাইবেন, তার পরে মা গাইবে। মা বললেন, ‘‘সন্ধ্যাদির গানের পরে আমার গান আর কে শুনবে?’’ কিন্তু অনুষ্ঠানের আয়োজকরা শুনবেন না। সন্ধ্যাপিসি এসে যখন ঘটনাটা জানতে পারলেন, তখন পরিষ্কার মাকে বলেছিলেন, ‘‘আগে তুই গাইবি, তার পরে আমি গাইব।’’ আর সেটাই করেছিলেন।

সকলের খোঁজও রাখতেন। মাঝে আমার স্বামী খুব অসুস্থ ছিলেন। এক মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সে সময়ে উনি নিজে ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন। আশ্বাস দিয়েছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। বাবার বইটা যখন বেরোল, একটা আর্টিকল লিখে দিয়েছিলেন। আমি আর মা গিয়েছিলাম। নিজে রেঁধে খাইয়েছিলেন আমাদের। কত গল্প করতেন। খুব হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। কোনও দম্ভ ছিল না। আর বাবাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন।

শেষ বার যখন ফোনে কথা হল, তখনও বাবার কথা বলছিলেন, ‘‘তুমি কি জানো, তোমার বাবার অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর গানগুলো ওরা বার করছে। তুমিও কালেক্ট করে রেখো। না হলে তো কেউ আর জানতে পারবে না।’’ তবে শেষে ওঁকে পদ্মশ্রী দেওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। এই অপমানটা না করলেই হত। ওঁর মতো মানুষের এই বয়সে এটার দরকার ছিল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sandhya Mukhopadhyay Salil Chowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE