গত বছরের শেষের দিকে ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব সাময়িক বন্ধ ছিল। ২০২৫ দরজায় কড়া নাড়তেই ফের ডিরেক্টর্স গিল্ড আর ফেডারেশনের কাজিয়া প্রকাশ্যে। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, শ্রীজিৎ রায়ের উপর কোপ পড়তেই নড়ে বসেছে টলিউড। টলিপাড়ায় গুঞ্জন, পর পর তিন পরিচালকের সঙ্গে অসহযোগিতা করে আদতে সিনেমা, সিরিজ়, ধারাবাহিক— এই তিন ক্ষেত্রে জোর ধাক্কা দিল ফেডারেশন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কৌশিকের পুজোর ছবি ‘জংলা’র শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। জয়দীপ তাঁর জনপ্রিয় সিরিজ় ‘অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য আইচ’-এর পরের পর্ব নিয়ে এগোবেন ঠিক করেছিলেন। শ্রীজিতের আগামী ধারাবাহিকের সেট তৈরির কাজ স্থগিত।
একের পর এক পরিচালকের শুটিং বন্ধ হতেই চোরা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ছোট পর্দার অভিনেতাদের মনে। কখন কার উপর কোপ পড়ে কে বলতে পারে? ভয় তাঁদের। যার জেরে রোজের শুটিংয়ের পাশাপাশি বাড়তি পর্ব তৈরির শুটিংও চলছে জোরকদমে। যাতে আচমকা কোনও ধারাবাহিকের শুটিং সাময়িক বন্ধ হলে বেগ পেতে না হয়। যেমন, শ্রীজিৎ রায়ের চারটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক। পরিচালনার পাশাপাশি তিনি এবং লেখক শৌভিক চক্রবর্তীর যৌথ প্রযোজনা সংস্থা বেনিয়ান ট্রিস স্টুডিয়ো চারটি ধারাবাহিকের প্রযোজনাও করছে। তালিকায় ‘কোন গোপনে মন ভেসেছে’, ‘ফুলকি’, ‘পরিণীতা’, ‘নিমফুলের মধু’-র মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিক। দাসানি ১, ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়ো, ভারতলক্ষ্মী স্টুডিয়োয় ধারাবাহিকগুলির শুটিং চলছে। কী অবস্থা সেখানে? আনন্দবাজার অনলাইনকে শ্রীজিৎ জানিয়েছেন, তাঁর চারটি ধারাবাহিকের শুটিং নিয়মিত চলছে। কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি। পাশাপাশি, বাড়তি পর্ব শুটিং করা হচ্ছে না সে ভাবে।
ধারাবাহিকের অভিনেতারা কি আগের মতোই খুশি মনে শুটিং করছেন?
খবর নিতে ঢুঁ মারা হয়েছিল তাঁদের রূপটানের ঘরে। রূপটান নিতে নিতেই কথা বললেন অভিনেত্রী অদিতি চট্টোপাধ্যায়। ‘কোন গোপনে মন ভেসেছে’ ধারাবাহিকে নায়কের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। তাঁর কথায়, “এমনিতেই আমাদের পেশাজীবন অনিশ্চিত। নিয়মিত কাজ থাকে এমন নয়। তার উপর যদি এই পরিস্থিতি তৈরি হয় তা হলে ভয় হয় বৈকি!” শঙ্কা চেপে রাখেননি তিনি। পাশাপাশি এ-ও জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি দেখে তাঁর মনে হচ্ছে, যে কোনও সময় চলতে থাকা কোনও ধারাবাহিকের শুটিং বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
একই রকম শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ‘নিমফুলের মধু’ ধারাবাহিকের তনুশ্রী। শ্রীজিৎকে নৈতিক সমর্থন জানাতে তিনি মঙ্গলবার দাসানি স্টুডিয়োয় এসেছিলেন। জানালেন, ভয় পাচ্ছেন অভিনেতারা। হয়তো প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না, কিন্তু আশঙ্কায় ভুগছেন। এর পর কার ঘাড়ে কোপ পড়বে, সেই চিন্তায় আড়ষ্ট সকলে। কাজ বন্ধ মানে অভিনেতাদের উপার্জনও বন্ধ।
অভিনেতা অনিমেষ ভাদুড়ি। ‘কোন গোপনে মন ভেসেছে’ ধারাবাহিকে নায়কের বাবার ভূমিকায় অভিনয় করছেন। শ্রীজিতের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে... কথা থামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন, “খারাপ লাগছে। ভয়ে আছি। এই বুঝি আমাদের ধারাবাহিকের উপরেও কোপ পড়ল।” ভয় পাচ্ছেন বাকি অভিনেতাদের ভবিষ্যৎ ভেবেও। প্রসঙ্গ তুলতেই অকপট অনিমেষ, “নতুন ছবি, সিরিজ় বা ধারাবাহিক শুরু হলে আমাদের মন ভাল হয়ে যায়, নতুন কাজ পাওয়ার আশায়। শুটিং বন্ধ হলে আমাদের সংসার চলবে কী করে?”
আরও পড়ুন:
একের পর এক জনপ্রিয় ধারাবাহিকের নায়িকা তিনি। সদ্য সাতপাক সেরেছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা রুবেল দাসের সঙ্গে। শ্বেতা ভট্টাচার্য এ দিন দাসানি স্টুডিয়োয় পা দিয়েই থমকে গিয়েছেন। শ্রীজিতের আগামী ধারাবাহিকের সেট তৈরির কাজ বন্ধ করে দেওয়ার খবর শুনে বিস্মিত। নিজেকে ধাতস্থ করে রূপটান নিয়ে ফের পায়ে পায়ে তিনি বাইরে। মুখোমুখি হতেই বললেন, “খুব খারাপ লাগছে। আজ আমাদের ধারাবাহিকের শুটিং হচ্ছে, কাল বন্ধ হয়ে গেলে আমরাই বা কী করব? নতুন কাজ না হলে ইন্ডাস্ট্রি এগোবে কী করে!”
শ্রীজিতের চলতি চারটি ধারাবাহিকের সঙ্গে যুক্ত টেকনিশিয়ানেরা সেটে শুটিংয়ের সময় কোনও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন? প্রশ্ন ছিল ধারাবাহিকের আরও এক অভিনেতা অনুরাধা মুখোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি জানিয়েছেন, কেউ, কোনও রকম অসহযোগিতা করেননি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আগামী দিনে বিনোদন দুনিয়ায় পা রাখতে অনেকেই ভয় পাবেন— এ কথা জানাতেও ভোলেননি। তাঁর মতে, কাজ বন্ধ করে দেওয়া সমাধান নয়। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোতেই বিশ্বাসী তিনি।