Advertisement
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Directors Guild-Federation Conflict

শুটিং বন্ধ, সেট তৈরিতেও বাধা! টেকনিশিয়ানদের অসহযোগিতায় পরিচালকদের পাল্টা পদক্ষেপ কী?

আনন্দবাজার অনলাইনকে কী জানালেন রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সুব্রত সেন, সুদেষ্ণা রায়?

‘পেন ডাউন স্ট্রাইক’-এর পথে পরিচালকেরাও?

‘পেন ডাউন স্ট্রাইক’-এর পথে পরিচালকেরাও? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৭
Share: Save:

কারণ না দর্শিয়েই একের পর এক পরিচালকের কাজে কোপ। বিনা নোটিসে কাজ শুরু করতে দেওয়া হয়নি পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়কে। কৌশিকের পুজোর ছবি ‘জংলা’-র শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল ২৯ জানুয়ারি থেকে। জয়দীপ তাঁর জনপ্রিয় সিরিজ় ‘অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য আইচ’-এর পরবর্তী শুটিং ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করবেন স্থির করেছিলেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে জয়দীপ জানিয়েছেন, তিনি এই সিরিজ়টির শুটিং করছেন না। খবর, কৌশিকের ছবির প্রযোজক প্রদীপ নন্দী নাকি ফেডারেশনের ভয়ে ছবি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এ বার কাঠগড়ায় ছোট পর্দার জনপ্রিয় পরিচালক শ্রীজিৎ রায়। তাঁর নতুন ধারাবাহিকের শুটিং শুরুর কথা ছিল শীঘ্রই। সেই অনুযায়ী সেটের কাজ চলছিল। সোমবার আর্টস সেটিংস গিল্ডের সভাপতির মৌখিক নির্দেশে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেন সেট তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা।

টলিপাড়া বলছে, গত বছর পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে অসহযোগিতার খাতা খুলেছিলেন টেকনিশিয়ানেরা। সেই সময়েও রাহুলের সেটে কাজে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। কার বা কাদের মদতে? বার বার উঠে এসেছে ফেডারেশনের নাম। পাল্টা পরিচালকেরাও অসহযোগিতার পথে নামতে চেয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতায় সে যাত্রায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়েছিল। ‘ধামাচাপা’ শব্দটি এই জন্যই ব্যবহৃত, কারণ বিষয়টি যে ছাইচাপা আগুনের মতোই ধিকিধিকি জ্বলছিল তার প্রমাণ মিলেছে নতুন বছরেই। সঠিক কারণ না দেখিয়েই তিন বার তিন পরিচালকের সঙ্গে অসহযোগিতা। এ বারেও সরাসরি ধর্মঘটের পথে না গিয়েও যেন ‘পেন ডাউন স্ট্রাইক’ করলেন টেকনিশিয়ানেরা।

তার পরেও প্রত্যেক পরিচালকের আন্তরিক আর্জি, “আপনারা কাজে ফিরুন। আমরা আগের মতো এক পরিবার হয়ে কাজ করতে চাই।” সকলের আশা, নিশ্চয় ইতিবাচক কিছুই ঘটবে। সেই কারণেই মঙ্গল এবং বুধবার দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য সময় রেখেছে পরিচালক গিল্ড।

যদি কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ না করে ফেডারেশন এবং টেকনিশিয়ানেরা? তখন কি পরিচালকেরাও একই ভাবে ‘পেন ডাউন স্ট্রাইক’ করবেন?

প্রশ্ন রেখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। ডিরেক্টর্স গিল্ডের সভাপতি সুব্রত সেন শুরুতেই বলেছেন, “‘পেন ডাউন স্ট্রাইক’ করতে গেলে কর্মস্থানে আসতে হয়। আমাদের টেকনিশিয়ান ভাইয়েরা তো সেটেই উপস্থিত হচ্ছেন না!” এ-ও জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ বন্ধ রাখার বিরোধী। পরিচালক সংগঠনও চায় না, কর্মস্থলে কোনও রকম অসহযোগিতার পরিবেশ তৈরি হোক। কিন্তু সমাধানসূত্র না মিললে ভবিষ্যতে এ রকম কিছু হবে না— এমন কথাও দিতে পারছেন না।

মঙ্গলবার সকালে বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে সমাজমাধ্যমে সরাসরি বার্তা রাখেন শ্রীজিৎ। তিনি টেকনিশিয়ানদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি, পরিচালক গিল্ডের সদস্যদেরও দাসানি স্টুডিয়োয় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার কথা বলেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে এ দিন স্টুডিয়োয় গিয়েছিলেন রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ডিরেক্টর্স গিল্ডের সভাপতি সুব্রত সেন, সম্পাদক সুদেষ্ণা রায়-সহ গিল্ডের সদস্যেরা। খবর, যাঁরা যেতে পারেননি তাঁরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। গিল্ডের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, এ বার পরিচালকদের অসহযোগিতার পথে নামার পালা। তবুও দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সমাধান খোঁজায় বিশ্বাসী পরিচালক সংগঠন। তাই সংগঠনের পরিচালকদের সিদ্ধান্ত, মঙ্গল এবং বুধবার তাঁরা মুখোমুখি আলোচনায় বসতে চান। সেটা না হলে তখন সংগঠন সিদ্ধান্ত নেবে।

এর মধ্যেও অবশ্য আশার আলো দেখছেন রাজ। তিনি বললেন, “সংসারে থাকতে গেলে ঠোকাঠুকি লাগে। আবার সব ঠিক হয়ে যায়। দীর্ঘ দিন কোনও অশান্তি চলতে পারে না। আপাতত দুই সংগঠনের বনিবনা হচ্ছে না। তার মানে এই নয়, সেটা আজীবন থাকবে। খুব শীঘ্রই সমস্যা মিটবে। আমরা আবার আগের মতো একসঙ্গে কাজ করব।” অন্য দিকে, পরমব্রত কিন্তু ফেডারেশন এবং টেকনিশিয়ানদের লাগাতার অসহযোগিতায় বিরক্ত। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখেছেন জনতার কাছে, “আপনাদের কী মনে হয়, আমাদের কী করা উচিত?” তাঁর শঙ্কা সেট তৈরির সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের গ্রাসাচ্ছাদন নিয়ে। কারণ, তাঁদের কাজ এবং আয় সীমিত। এ ভাবে চললে তাঁদের জীবন সবার আগে বিপর্যস্ত হবে। তাঁর মতে, বাক্‌স্বাধীনতা খর্ব করে কাজ কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।

অনির্বাণ এ দিন যথেষ্ট বাঙ্ময়। তিনিও রাজ, সুব্রত, সুদেষ্ণা বা শ্রীজিতের মতো কাজ বন্ধের ঘোর বিরোধী। তিনিও চান, আলোচনায় সমস্যা মিটুক। না মিটলে? পরিচালক-অভিনেতার কথায়, “তখন আবার পরিচালক সংগঠনের সদস্যেরা আলোচনায় বসবেন। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” দীর্ঘ দিন অচলাবস্থার পক্ষপাতী নন তিনিও।

যাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে পরিচালক সংগঠনের সদস্যেরা এককাট্টা, সেই শ্রীজিৎ কী বলছেন?

ছোট পর্দার পরিচালক দু’রাত জেগে, খাওয়াদাওয়া প্রায় বন্ধ। প্রশ্নের জবাবে বললেন, “ব্যারাকপুর থেকে গত ২৫ বছর ধরে নিয়মিত যাতায়াত করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। স্টুডিয়োপাড়ায় এক বেলা না এলে দমবন্ধ লাগে। আমার মতো টেকনিশিয়ানদেরও নিশ্চয়ই একই অবস্থা।” এই অনুভূতি থেকেই তাঁর আবারও আর্জি, “যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। সে সব ভুলে কাজে ফিরুন সকলে। এখনও সময় আছে। ধর্মঘট, অসহযোগিতা, কাজ বন্ধ হয়ে যাক, চাই না। আমাদের খেয়েপরে সংসার চালাতে হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Raj Chakrabarty Parambrata Chattopadhyay Anirban Bhattacharya Sudeshna Roy Subrata Sen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy