Advertisement
E-Paper

সিরিয়াল কিলার ত্রৈলোক্য থেকে কুমোরটুলির ‘পুতুলবাড়ি’ কলকাতায় ভূত খুঁজতে রূপাঞ্জনা, সত্যমেরা, অনুভূতি কেমন?

ভাঙাচোরা বাড়ি, পলেস্তারা খসে পড়েছে। দোতলায় বড় জানালা। রাস্তা দিয়ে জানালার ভিতরে টর্চ দিয়ে আলো ফেলেলন গাইড। তার পর কী দেখলেন তারকারা?

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৫ ০৬:৫৮
ভূতের সন্ধানে রাতের কলকাতায় পথে তারকারা।

ভূতের সন্ধানে রাতের কলকাতায় পথে তারকারা। — নিজস্ব চিত্র।

রাত ১১:৩০। উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি এলাকা অনেকটা শান্ত। সকালের ব্যস্ততার লেশ নেই। আকাশে মেঘের সঙ্গে ঘোলাটে চাঁদ। গন্তব্য আহিরিটোলা ঘাটের কাছে পুতুলবাড়ি। ভৌতিক গল্পের ভূত নয়। শহরের ইতিহাসের খাঁজে খাঁজে মিশে থাকা ভূতুড়ে বাড়ির রহস্য আর সে সব ঘিরে গড়ে ওঠা গল্প রাতের অন্ধকারে যেন বেশি ভয়ের সৃষ্টি করে। এমন একটা রাতে ‘ভূত অভিযানে’ বেরোলেন ‘ভূতপূর্ব’ ছবির চার অভিনেতা-অভিনেত্রী। ছিলেন রূপাঞ্জনা মিত্র, সত্যম ভট্টাচার্য, সুহোত্র মুখোপাধ্যায়, সপ্তর্ষি মৌলিক। সঙ্গী আনন্দবাজার ডট কম।

খুব শীঘ্রই মুক্তি পেতে চলেছে ‘ভূতপূর্ব’। তিন সাহিত্যিকের তিনটি ভৌতিক গল্পের সমাহারে এই ছবি নির্মিত। সেটাকে উদ্‌যাপন করতেই সিনেমার মেকি ভৌতিক জায়গা নয়, বরং শহর কলকাতার ভৌতিক বলে খ্যাত (বা কুখ্যাত) স্থান দর্শনে বেরিয়ে পড়লেন এই ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। অভিযানের শুরু উত্তর কলকাতার পুতুলবাড়ি থেকে। তার পরে জোঁড়াসাকো ঠাকুরবাড়ি, সেখান থেকে ‘সিরিয়াল কিলার’ ত্রৈলোক্যের বাড়ি থেকে কলকাতার ফাঁসি গলি। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন ভৌতিক গল্পে, কেউ আবার যুক্তিবাদী, কেউ সত্যি ভয় পান। তাই এমন নিশুতি রাতে কেউ সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছেন হনুমান চালিশা, কেউ আবার এলেন শুধু ইতিহাসের টানে। যদিও একটা বাড়ির সামনে এসে যেন থমকে গেল ঘড়ির কাঁটা, ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল শিরদাঁড়া দিয়ে। সেটা কি বাড়িটার হাড়হিম গল্পের জন্য? কেউ মুখ খুললেন না।

শুরুটা হল আহিরিটোলা ঘাটের কাছে ‘পুতুলবাড়ি’ দিয়ে। আঠারোশো শতকের এই বাড়ির ছাদে ছিল অগুনতি পুতুল। যদিও পুতুলগুলো ভেঙেচুরে গিয়েছে। তবে ছাদের চূড়ায় মাথা নামিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি মাত্র পুতুল। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ। মূল দরজা বাইরে দাঁড়িয়ে উঁকিঝুঁকি মারলেন সত্যম, রূপাঞ্জনা, সুহোত্র, সপ্তর্ষিরা। ব্রিটিশ যুগের বাড়ি, দপদপ করছে বাড়ির সামনের ল্যাম্পপোস্টের আলো। দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারলেও সেই কালো অন্ধকার। কিছুই দেখা গেল না। কিন্তু...... নিমেষে চোখ সরিয়ে নেন সত্যম। যদিও তাঁর সাফ কথা, ‘‘ভূতে বিশ্বাস করি না, তবে ভয়ের অনুভূতি তো সব মানুষের মধ্যেই রয়েছে।’’

এর পর রেললাইন পেরিয়ে গাড়িতে উঠলেন সবাই। নামা হল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পিছনের দরজার কাছে। সঙ্গে ছিলেন ট্যুর গাইড অভিজিৎ ধর। তিনি ইতিহাস যেমন বলেছেন, তেমনই বার বার যুক্তি দিয়ে আলৌকিক কিছুর অস্তিত্বকেও অস্বীকার করেছেন। এমনিতেই ঠাকুরবাড়ির অনেক ইতিহাস, কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পর থেকে বন্ধ তাঁর ঘর। তাই রাতে সেই বাড়ির অন্দরে ঢোকা না গেলেও বার বার সকলের মুখে উঠে এসেছে উনিশ শতকের সাড়া জাগানো সেই ঘটনার প্রসঙ্গ। অভিনেত্রী রূপঞ্জনা চারপাশ ঘুরে দেখলেন বাড়ির অন্দরে। খানিক তাকিয়ে বললেন, ‘‘কাদম্বরী দেবীর সুইসাইড নোটটার অডিয়ো বুক শুনেছিলাম, সত্যি বলতে কী, সেই সময় রবি ঠাকুরেরর উপর একটু রাগই হয়েছিল।’’ অনেকেই বলেন এই বাড়িতেই নাকি প্ল্যানচেট করতেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। লালবাড়ির অন্দরের কথা নিয়ে সেই সময় যেমন উৎসাহ ছিল, এই প্রজন্মও ততটাই উৎসাহী। জোড়াসাঁকোর পিছন থেকে রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গেলে দু’পাশে মার্বেল পাথরের মূর্তির দোকান। কোথাও হনুমান, কোথাও লোকনাথ বাবা। ঈশ্বরবিশ্বাসী রূপাঞ্জনা মূর্তি দেখতে দেখতে যেন মোহিত গেলেন। সেই সময় একটু এগিয়ে পাশের রাস্তায় ঢুকতে খানিক থমকে গেলেন সবই।

ভাঙাচোরা বাড়ি, পলেস্তারা খসে পড়েছে। দোতলায় বড় জানলা। রাস্তা দিয়ে জানলার ভিতরে টর্চ দিয়ে আলো ফেললেন গাইড। একেবারে অন্ধকার গলির ভিতরে একটা বাড়ি। এই বাড়িতেই থাকতেন কলকাতার প্রথম ‘সিরিয়াল কিলার’ ত্রৈলোক্য। এই বাড়িতে নাকি খুন করে একাধিক দেহ পুঁতে দেন এই মহিলা। এই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সকলে মৌনী। গলি দিয়ে বেরোতেই রূপাঞ্জনা বললেন, ‘‘এই জন্য ব্যাগে হনুমান চালিশা নিয়ে ঘুরছি।’’ কিছু একটা অস্বস্তি হচ্ছিল, স্বীকার করে নিলেন সত্যম, সুহোত্ররা।

এর পর আর কোথাও যেন কেউ বিরতি নিতে চাননি। রাত ১:১৫। রাজভবনের সামনে খানিক বিরতি। কিন্তু যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সবাই, তাঁরা অনেকে জানতেন না তার ইতিহাস। রেড ক্রস প্যালেস রোডকে অনেকেই ফ্যান্সি লেন বলেই চেনেন। এক কালে এটাই ছিল ‘ফাঁসি গলি’। এখন যেখানে বড় বড় ইমারত উঠেছে সেখানেই এক কালে সারি দিয়ে ছিল গাছ। সেখানে ভারতীয়দের ফাঁসি দিত ইংরেজরা। এই ইতিহাস জানার আগের মুহূর্তে সবাই চা-কফি খেতে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু এর পর যেন খানিক নিস্তব্ধতা গ্রাস করল। এই ‘ভূতপূর্ব’ ছবিতে তারানাথ তান্ত্রিকের চরিত্রে দেখা যাবে সপ্তর্ষিকে। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘আমি যুক্তি দিয়ে সব কিছু বিচার করি। ভয় একেবারেই পাই না। তবে আমরা শুটিং করেছিলাম অজয় নদীর তীরে। উল্টো দিকে শ্মশান। রাতে কান্নার রোল উঠলে বুকে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হত।’’

শেষ গন্তব্য ডালহৌসি চত্বরে লালদিঘির বিপরীতে জিপিও (জেনারেল পোস্ট অফিস)। এর পাশ দিয়ে কয়লা ঘাটা রোড। উল্টো দিকে রাইটার্স বিল্ডিং। গাইড অভিজিৎবাবু এই রাস্তার ইতিহাস বোঝাচ্ছেন। সেখানে এক কালে ছিল কবরখানা। ব্রিটিশ আমলে যাঁরা চাকরি করতে আসতেন এবং সেই সময় কলেরা, কালাজ্বরে মারা যেতেন, তাঁদের এইখানেই নাকি কবর দেওয়া হত। শুনে মুখের আকার খানিকটা বদলে গেল সুহোত্রের। এমনিতেই শহরের ইতিহাস নিয়ে উৎসাহ রয়েছে তাঁর। এ দিকে, এই গল্প শুনতে শুনতে তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত ৩টে। অনেকে অবশ্য বাড়ি ফিরতে চাইছেন। কিন্তু সুহোত্র নাছোড়। এই চত্বরের গোটা ইতিহাস শুনেই বাড়ি ফিরবেন। সুহোত্রের কথায়, ‘‘শুনলাম জায়গাটায় কবর দেওয়া হত। জানি না, কার কবরের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। তবে কলকাতার ইতিহাস আমার দারুণ লাগে। রাতে শহরটা হেঁটে দেখার অনুভূতিই অন্য রকম। তাও আবার এত রাতে প্রথম বার হাঁটলাম। ভয় যে পেয়েছি তেমন নয়। তবে ত্রৈলোক্যের বাড়ির সামনের চারপাশটা যেন সবটা খুব ভারী ছিল।’’ একই অভিজ্ঞতা আরও কয়েক জনের।

রাতের অন্ধকার কেটে তখন ভোর হব হব। ইতিহাস আর অতিলৌকিক গল্পের ঝুলি নিয়ে যে যাঁর বাড়ির পথে। ভূতের খোঁজ মিলল কি না, কেউ জানেন না। তবে পৃথিবীতে অশুভ শক্তি যেমন আছে, তেমন ঈশ্বরের শক্তিও রয়েছে,একমত তারকারা।

Bhutopurbo Rupanjana Mitra Saptarshi Moulick Suhotra Mukhopadhyay Satyam Bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy