শাহরুখ, দীপিকা এবং অমিতাভ বচ্চন।
অনেক বছর আগে অমিতাভ বচ্চন বলেছিলেন যে, তাঁকে দেখতে হলে সিনেমা হলে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। কিন্তু কেউ কথা না রাখার মতো, তিনিও নিজের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছেন। টেলিভিশনের ছোট পরদা তো বটেই, এমনকী স্মার্টফোনের আরও ছোট পরদাতেও তিনি দর্শন দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। ফেসবুক, টুইটারে ঘন ঘন নিজের ছবি পোস্ট করা থেকে শুরু করে ব্লগে নিজের দিনযাপনের প্রতি মিনিটের বর্ণনা, মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চনের রোজনামচা আজ সবার মুখস্থ।
অনেকেই তাই মনে করছেন, সুপারস্টারের যুগটাই হয়তো মিলিয়ে গিয়েছে। আজকের সিনেমা দুনিয়ায় তারকার শেষ নেই। কিন্তু মহাতারকা বলতে যা বোঝায়, সেই ব্যাপারটা আজ আর কারও মধ্যে নেই।
বছর পাঁচেকে পরিস্থিতি বদলেছে। অমিতাভ বচ্চন তো ছিলেনই, সঙ্গে তিন খান শাহরুখ, সলমন আর আমির... ছবি মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে হাউজফুল বোর্ড ঝুলত টিকিট কাউন্টারের বাইরে। পরবর্তী সময়ে অক্ষয়কুমারও সেই জায়গার অনেকটা কবজা করে নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ কয়েক বছর বক্স অফিসের হিসেব খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, অনেক তারকাই শুধুমাত্র নিজের কাঁধে ছবির অভাবনীয় সাফল্য এনে দিতে পারেননি।
দর্শক টানার দিক থেকে তিন খানের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন অবশ্যই সলমন খান। ‘ভাই’য়ের কোনও ছবি সিনেমা হলে আসা মানেই থিয়েটার হলে ভাঙচুরের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া। অ্যাডভান্স বুকিং শুরু হওয়া মাত্র সমস্ত টিকিট উধাও। কিন্তু সম্প্রতি সলমনের সিনেমার পালেও আর ফ্যানদের তেমন হাওয়া দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। বক্স অফিসে ‘টিউবলাইট’ ছবির মুখ থুবড়ে পড়া তো তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। শাহরুখের অবস্থাও একই রকম। ‘রইস’, ‘ফ্যান’ বা ‘দিলওয়ালে’ সব ছবির অবস্থাই যাকে বলে তথৈবচ। তাও খানেদেরই সোলো হিট দেখা যায়।
অনেকের মতে, স্টারদের বড্ড কাছে পেয়ে যাওয়ায় তাঁদের ওই স্টারসুলভ ‘অরা’টা আর থাকছে না। নিজেদের বড্ড সহজলভ্য করে তুলেছেন নিজেরাই। আজ ফেসবুক লাইভে ফ্যানদের সঙ্গে আড্ডা। তো কাল টুইটার চ্যাট। পরের দিন আবার ইনস্টাগ্রামে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি পোস্ট করা।
আগের প্রজন্মের তারকাদের মধ্যে সুপারস্টারের আলোর বিচ্ছুরণ তবু কিছুটা থাকলেও, পরবর্তী প্রজন্মের তারকাদের মধ্যে তো তা একেবারে উধাও। রণবীর কপূর, রণবীর সিংহ, বরুণ ধবন, অর্জুন কপূররা তো নিজেরাই স্বীকার করেন, সুপারস্টার হওয়ার চার্মটাই তাঁরা হারিয়ে ফেলেছেন। কিছু দিন আগে অর্জুন কপূর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘এখন আমরা অনেক বেশি সহজলভ্য হয়ে পড়েছি। লোকে আর আমাদের বিষয়ে জানতে রুপোলি পরদার জন্য অপেক্ষা করেন না। এমনটা হলে সত্যিই স্টারডমের কোনও মানে হয় না।’’
ভুল বলেননি অর্জুন। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপারে একেবারে নিরক্ষর রণবীর কপূরও ছবি মুক্তির আগে আজকাল দেখা দেন ফেসবুক লাইভে! নায়িকাদের ক্ষেত্রে অবস্থাটা আরও ভয়াবহ। দিনরাত ইনস্টা আপলোডে এত কিছু শেয়ার করছেন ফ্যানদের সঙ্গে যে, ছবির জন্য দর্শক পাওয়া দুষ্কর হচ্ছে। সদ্য বলিউডের প্রথম সারির এক নায়িকা বলেছিলেন, ‘‘আগে স্টাররা একজন আর একজনের এমন কার্বন কপি ছিলেন না। ফলে এখন কোনও তারকার নিজস্বতা বলে ব্যাপারটাই থাকছে না। সুপারস্টার কা জমানা তো গয়া।’’ কথাটা সব তারকার জন্য তো বটেই, নায়িকাদের ক্ষেত্রে আরও বেশি করে প্রযোজ্য। অনুষ্কা শর্মার কোনও বিকিনি পরিহিত ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেলে, দু’দিন পর
দিশা পটানিকেও দেখা যায় একই রকম বিকিনি
পরা ছবিতে।
তবে সমস্যা যে শুধু আরব সাগরের তীরে সীমাবদ্ধ, তেমনটা বলা যাবে না। গঙ্গার পারের অবস্থাও অনেকটা এমনই। টলিউডের শেষ মেগাস্টার বলতে তো সেই উত্তমকুমার। তার পরে অনেক তারকা এলেও মেগাস্টারের সংজ্ঞায় তাঁরা পড়বেন না। উত্তমকুমার নাকি একবার শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে পেট্রোল পাম্পে দেখে খুব বকেছিলেন। বলেছিলেন, চিত্রতারকাদের এমন খোলাখুলি দেখা গেলে, তাঁদের জৌলুসটাই যে কমে যাবে! এখনকার বাংলা ছবির নায়ক-নায়িকারা কিন্তু তেমনটাই করছেন। টালিগঞ্জের এক প্রযোজক দুঃখ করে বলছিলেন, ‘‘আর কী হবে! এখন তো টাকা দিলে এরা যে-কোনও কিছু উদ্বোধন করে দিয়ে আসবে!’’
স্টারডমকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ভারতের ছবিটাও এর থেকে তেমনটা আলাদা নয়। প্রভাসের ‘বাহুবলী’ রমরম করে চললেও তাঁকে যে মহাতারকার আসনটা এখনই দিয়ে দেওয়া যাবে, তা কিন্তু নয়। অনেকেই মনে করছেন, ‘বাহুবলী’র জনপ্রিয়তার ছটায় উজ্জ্বল হয়েছেন প্রভাস। প্রভাসের জনপ্রিয়তায় ছবি চলেনি। সাঁইত্রিশ বছর বয়সি তারকার পরবর্তী ছবি ‘সাহো’ নিয়ে তাই তেমন উন্মাদনা চোখে পড়ছে না।
তবে ‘সুপারস্টার’ শব্দটার অপমৃত্যুর জন্য নিশ্চিত করে কাউকে দোষ দেওয়া যায় না। হয়তো এমন সময়ে এটাই স্বাভাবিক ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy