শিবপ্রসাদ ও শ্রীকান্ত
দুটো বড় নাম গাঁটছড়া বাঁধলে একটা আলোড়ন হবেই। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে কোনও তরফেই আলোচনা ছিল না। গত বছর অক্টোবর মাসে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের প্রযোজনা সংস্থা উইন্ডোজ়ের সঙ্গে শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের ছ’টি ছবির চুক্তি হয়। শোনা যাচ্ছে, সেই চুক্তির কিছু শর্ত নাকি মানেনি উইন্ডোজ়। ফলে এসভিএফ তাদের আইনি নোটিস পাঠায়। এবং পুরনো চুক্তি প্রত্যাহার করে নেয়।
এসভিএফ এবং উইন্ডোজ়ের এই সন্ধির খবর ইন্ডাস্ট্রিতে ঘুরছিলই। কিন্তু শিবপ্রসাদকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বরাবরই এড়িয়ে যান। শিবপ্রসাদ-নন্দিতা পরিচালিত ছবি ‘হামি’ মুক্তির পর এসভিএফ-এর অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হইচই-এ তা দেখানোর কথা ঘোষণা করা হয়। তখনও উইন্ডোজ়ের বাকি ছবির সঙ্গে চুক্তির কথা প্রকাশ্যে আসেনি।
চুক্তি থাকাকালীন যে খবর চাপা ছিল, চুক্তি ভেঙে যেতে তার অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এসভিএফের সঙ্গে ‘হামি’, ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’, ‘কণ্ঠ’, ‘রসগোল্লা’ এবং আরও দুটো ছবির চুক্তি হয়। যার স্যাটেলাইট, অনলাইন রাইটস এবং ডিস্ট্রিবিউশনের কিছু শতাংশ অর্থ এসভিএফ-এর প্রাপ্য। চুক্তি বাবদ প্রায় ছয় কোটি টাকা উইন্ডোজ় পায় এসভিএফ-এর কাছ থেকে।
এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু খবর হল, উইন্ডোজ় চুক্তির একাধিক শর্ত নাকি মানেনি। ‘হামি’তে এসভিএফ-কে ক্রেডিট দেওয়ার কথা ছিল। তা দেওয়া হয়নি। কোন খাতে কত খরচ হচ্ছে এবং ডেইলি কালেকশন রিপোর্টও নাকি এসভিএফ-কে দিতে হতো। এ সবের কোনও কিছুই মানা হয়নি বলে অভিযোগ। এসভিএফ-এর তরফ থেকে শিবপ্রসাদকে মৌখিক ভাবে এগুলো নাকি বলাও হয়। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি বদলায়নি। চুক্তির দ্বিতীয় ছবি ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’র ট্রেলার রিলিজ় করার পরে দেখা যায়, সেখানেও এসভিএফ-কে কোনও ক্রেডিট দেওয়া হয়নি। ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের খবর, এর পরেই আর চুক্তি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাননি এসভিএফ-এর কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতা। আইনি পথেই তাঁরা বিচ্ছেদ করে নেন এবং ‘হামি’র টাকা বাদ দিয়ে চুক্তির বাকি অর্থ ফেরত চান। শিবপ্রসাদ নাকি সেই টাকার সিংহভাগ দিয়েও দিয়েছেন।
এসভিএফ-এর পাল্টা যদি কোনও সংস্থা দাঁড়াতে পেরে থাকে তা হলে সেটা উইন্ডোজ়। এটা ইন্ডাস্ট্রির সকলে একবাক্যে স্বীকার করবেন। ‘বেলাশেষে’, ‘প্রাক্তন’, ‘পোস্ত’র পর টলিউডের পাওয়ার লিস্টে উইন্ডোজ় একদম প্রথম দিকে থাকবে। পাশাপাশি এসভিএফ বছরে অনেক ছবি নিয়ে এলেও তার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটা ছবিই ভাল ফল করে। সুতরাং জুটি হিসেবে শিবপ্রসাদ-নন্দিতা লাভজনক। তবে সবটাই ছিল গোপনে। যেখানে কোনও খবর হওয়ার আগেই মিডিয়ায় এঁরা ফলাও করে বলে থাকেন, সেখানে এই খবরটা কেন গোপনে রাখা হল, তার কোনও জবাব নেই।
চুক্তি ভেঙে যাওয়ার খবর নিয়েও দু’পক্ষ একেবারেই চুপ। আনন্দ প্লাসের পক্ষ থেকে অনেক বার শিবপ্রসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি এই মুহূর্তে ‘বেলাশুরু’র শুটিং করছেন। মেসেজ করলে উত্তরে জানান, ব্যস্ত আছেন। শ্রীকান্ত মোহতাও এ নিয়ে নীরব। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’
সম্প্রতি ‘বেলাশেষে’র সহ প্রযোজক এমকে মিডিয়া অভিযোগ করেছিল, রাইটস বিক্রির টাকা দেননি শিবপ্রসাদ। কিছু দিন আগে পর্যন্ত উইন্ডোজ়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অতনু রায়চৌধুরী। কিন্তু তিনিও সরে গিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, পাওনার হিসেবনিকেশে সমস্যার কারণেই নাকি তাঁর বেরিয়ে যাওয়া।
তবে চুক্তি ভেঙে গিয়েছে মানে, তাঁরা একে অপরের শত্রু এটা মনে করার কারণ নেই। উইন্ডোজ়ের ‘রসগোল্লা’ আর এসভিএফ-এর ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ একই দিনে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দু’পক্ষ আলোচনা করে ঠিক করে, ‘শাহজাহান...’ পিছিয়ে যাবে। এটা টলিউ়ড, এখানে বন্ধুত্ব-শত্রুতা দুটোই লাভ-ক্ষতির নিরিখে এবং ক্ষণস্থায়ী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy