আড্ডার মুডে অভিনেতা।— নিজস্ব চিত্র।
আপনি তো রামকৃষ্ণর বাবা?
ভাস্বর: হা হা হা…।
রাস্তায় লোকে তো তাই বলছে?
ভাস্বর: ঠিকই বলেছেন। ‘রাণি রাসমণি’তে আমি রামকৃষ্ণদেবের বাবার চরিত্রে অভিনয় করছি। এর মধ্যেই এক দিন আমি ফোন কিনতে গিয়েছিলাম। সেখানে এক জন বললেন, আমার বাড়িতে তো আপনাকে পুজো করে সকলে। আমি জানতে চাইলাম, কেন? বলল, আপনি রামকৃষ্ণর বাবা তো!
‘রাণি রাসমণি’র ফিডব্যাক তা হলে ভালই?
ভাস্বর: হ্যাঁ, আমার চরিত্রের ফিডব্যাক ভাল। আর রাসমণি বিরাট হিট সিরিয়াল। আমাকে ও ভাবে দেখতে অনেকে অভ্যস্ত নন। ও রকম সাদা চাদর গায়ে। আর ওই বাংলায় কথা বলা। খাবে নে, পড়বে নে, যাবে নে। তবে কিছু লোকের বক্তব্য, যে পিরিয়ডটা দেখানো হচ্ছে সেটা অনুযায়ী, আমার জুলপিটা বেশি বড়। আমি কিন্তু সে কথা শুনে যথাসম্ভব ছোট করেছি।
আরও পড়ুন, দেবলীনা কি আপনার গার্লফ্রেন্ড? মুখ খুললেন গৌরব
দর্শকদের কথা শুনে নিজেকে বদলান তা হলে?
ভাস্বর: সাধারণ লোকের কথা শুনে এখন করছি। কারণ এখন অনেক রকম চরিত্র পাচ্ছি। এই যেমন ধরুন, ১ মে থেকে এক মাসের সাহিত্য শুরু হয়েছে। ‘ফুলেশ্বরী’।
সিনেমাতে যে চরিত্র শমিত ভঞ্জ করেছিলেন, সেটাই আপনি করছেন?
ভাস্বর: হ্যাঁ, সেটাই।
আলাদা চাপ রয়েছে?
ভাস্বর: দেখুন, ছবিটা আমার অনেক বার দেখা। কিন্তু এই কাজটার জন্য ছবিটা নতুন করে আর দেখিনি। আমি আমার মতো করার চেষ্টা করছি।
আরও পড়ুন, প্রেম নিয়ে কথা বলা কি ইশার বারণ?
২০ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন। এত দিন পর বিভিন্ন রকম চরিত্র পাচ্ছেন কেন?
ভাস্বর: আমি অনেক রকম চরিত্র আগেও করেছি। তবে আমার বেসিক স্ট্যাম্পটা ছিল খুব ভাল ছেলে। সাত চড়ে রা নেই। ভীষণ ভাল হাজব্যান্ড। কেয়ারিং ব্রাদার— এ সব ইমেজ ছিল। আমি প্রচুর নেগেটিভ রোল করেছি। দেবাংশু সেনগুপ্ত করিয়েছেন। আসলে আমি টিভিতে করিনি এমন চরিত্র নেই। কিন্তু দেখলাম যখন ‘ওম সাইরাম’ করলাম তার পর সামহাউ একটা চেঞ্জ এল। দর্শক বুঝল, বা দর্শকের থেকেও বড় কথা মেকাররা বুঝলেন, আমাকে দিয়ে অন্য রকম কিছু করানো যেতে পারে। তখন থেকে অন্য রকম কাজ পাচ্ছি। ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালী’ আর ‘মায়ার বাঁধন’-এ নেগেটিভ চরিত্র করে খুব ভাল ফিডব্যাক পেয়েছি।
মেকার বলতে কাদের কথা বলছেন?
ভাস্বর: এখন তো সবটাই চ্যানেলের ব্যাপার। চ্যানেল যে বুঝতে পারছে আমাকে অন্য ভাবে ট্রাই করা যায়। সেটা আমার সৌভাগ্য।
আর পরিচালকরা?
ভাস্বর: এখন তো ডিরেক্টরদের টাইম নেই, ক্ষমতাও নেই। ভাস্বরকে দিয়ে এটা না করিয়ে অন্য কিছু ট্রাই করব, সেই সময়টা নেই। কারণ সপ্তাহে সাত দিন টেলিকাস্ট। ওটা করতে গেলে এপিসোড ধরাতে পারব না।
ক্ষমতা নেই কেন?
ভাস্বর: দেখুন, হাতে গোনা কয়েক জন ভাল ডিরেক্টর আছেন এখন। বাকি কেউ কাজই জানেন না। আমরা যখন এসেছিলাম তখন যে সব ডিরেক্টরকে পেয়েছি, যাদের কাছে কাজ শিখেছি তাদের তুলনায় এখনকার ডিরেক্টররা কিছুই নন। পার্সেন্টেজ এত খারাপ ভাবা যায় না।
২০ বছরে সে ভাবে সিনেমায় সুযোগ এল না কেন?
ভাস্বর: সিরিয়াল বেশি করেছি বলে (হাসি)। আমার মা চলে গেলেন গত নভেম্বরে। ঠিক তার আগেই হরনাথ চক্রবর্তীর একটা ছবির অফার ছিল। আমার আর নবমিতার একসঙ্গে। রঞ্জিৎকাকু। তার পরই আমি। ছবিটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম সিরিয়ালের কাজের জন্য। এমন আগেও হয়েছে।
আরও পড়ুন, পুরনো প্রেম থেকে কী শিখলেন ইমন?
আপনি টেলিভিশনে অভিনয় করেই খুশি?
ভাস্বর: হ্যাঁ, আমি খুশি। দেখুন সিনেমার আর্কাইভাল ভ্যালু আছে। করেও মজা। লোকে মনে রাখবে, সব ঠিক আছে। কিন্তু একটা সিনেমা আমি ১৪ দিন করতে গেলে একটা মেগা সিরিয়াল হাত থেকে বেরিয়ে যাবে। আর সেটা যাওয়া মানে আবার পরের কাজের জন্য ওয়েট করা। আমি আনএমপ্লয়েড থাকতে চাই না। আমার তো এটাই রুজি-রোজগার। আমার আজকে যা হয়েছে সব সিরিয়ালের জন্য। আমি টিভিকে সবসময় এগিয়ে রাখব। ভাস্বরকে চিনেছে মানুষ তো টেলিভিশন থেকেই।
কখনও আন্ডাররেটেড মনে হয়েছে?
ভাস্বর: কিছু ক্ষেত্রে তো বটেই। আন্ডাররেটেড মনে হয়েছে।
যেমন?
ভাস্বর: বেশ কিছু বড় পুরস্কার আমার হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। আমার নমিনেশন আছে। আমি জানি আমি পাব। কিন্তু পেলাম না। পরে আমাকে ব্যকস্টেজে এক জুরি মেম্বার বলেছেন, কী করব বল, অন্য জায়গা থেকে চাপ ছিল অন্য কাউকে দেওয়ার।
আরও পড়ুন, বিয়ে করে কি কেরিয়ারে পিছিয়ে পড়লেন? মুখ খুললেন সমতা
এমনও হয়েছে?
ভাস্বর: হ্যাঁ। আরও কত…। কলকাতা ফিল্মের সবচেয়ে বড় পুরস্কার যেটা, আমি নাম বলছি না। সেখান থেকে আমাকে দেওয়ার কথা। যাঁরা ঠিক করেন তাঁদের মধ্যে এক জন বলেছেন, ভাস্বরকে দিয়ে কী হবে? ও কি তার জন্য কোনও বোতল দেবে আমাকে? আমি বোতল দেব না। ফলে দরকার নেই পুরস্কারের। বোতল দিয়ে বা অন্য কিছু সাপ্লাই করে আমার পক্ষে পুরস্কার হাতানো সম্ভব নয়। আমার হাত থেকে এমন অনেক বেরিয়ে গিয়েছে। অনেক বার এমন হয়েছে।
কখনও এ সবের জন্য কাজ হাতছাড়া হয়েছে?
ভাস্বর: হুম। কাজও হাতছাড়া হয়েছে। একসময় বলা হত, আমি নাকি মাথায় উইগ পরি। এক ডিরেক্টর আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, আচ্ছা তোমাকে কাস্ট করব ভেবেছিলাম, শুনলাম তুমি নাকি মাথায় উইগ পরো? (হাসি) আমি বলেছিলাম, আপনি একটু কষ্ট করে আমার বাড়িতে এসে আমার চুল টেনে দেখুন। আবার কেউ বলেছে ওর খুব ট্যানট্রাম। এ সবই কিন্তু ছবির ক্ষেত্রে হয়েছে। সিরিয়ালে এমন কোনও খবর আমার কানে আসেনি।
চরিত্র সিলেক্ট করেন কী দেখে?
ভাস্বর: আমি তো আগেই বললাম, এখন ডিরেক্টরদের যা অবস্থা, তাঁদের দেখে চরিত্র সিলেক্ট করার কোনও মানে হয় না। হয়তো ফ্লোরে গিয়ে জানতে পারলাম কে ডিরেক্টর। ফলে চ্যানেল দেখে, হাউজ দেখে বাছি। মেন ট্র্যাক না সাইড ট্র্যাক সেটাও দেখি। যেমন ধরুন গত বছর স্টার জলসার মহালয়ায় বিবেকানন্দ হয়েছিলাম। দারুণ লেগেছিল আমার চরিত্রটা করে। আমি ভাবিইনি আমাকে মানাবে। সবচেয়ে বড় কমপ্লিমেন্ট হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তোমার বিবেকানন্দ দেখেছি। খুব ভাল করেছ। এটা খুব বড় পাওনা।
আরও পড়ুন, ‘শট রেডি, ডাকতে আসবে, কিন্তু উঠব না, এ ভাবেই মরতে চাই’
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার খুব ভাল সম্পর্ক?
ভাস্বর: হ্যাঁ, দিদি আমাকে খুব ভালবাসেন।
রাজনীতিতে আসবেন নাকি?
ভাস্বর: আমাকে অনেক বার অফার করা হয়েছে। তৃণমূল নয়, অন্য দল থেকে অনেক বার অফার করা হয়েছে । আমি হাতজোড় করে পালিয়ে এসেছি। রাজনীতি আমি বুঝি না।
যদি তৃণমূল থেকে অফার আসে?
ভাস্বর: (হাসি) আমার দ্বারা হবে না। আমি বুঝি না।
যদি তৃণমূলের অফার আপনি রিফিউজ করেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকবে?
ভাস্বর: যখন তৃণমূল ক্ষমতায় আসছে তখন অনেক জায়গায় আমাকে প্রচারে যেতে বলা হয়েছিল। আমি কিন্তু কোথাও যাইনি। তাও আমার সঙ্গে কিন্তু ওঁর ভাল সম্পর্ক। উনি আমাকে ডেকে বাড়ির খবরও নেন। উনি কখনও তো মনে করেননি, ভাস্বর কিন্তু আমার প্রচারে যায়নি!
আরও পড়ুন, ‘বিশ্বাস করুন, আমি বেকার, আমার কাছে কোনও কাজ নেই’
নিজের সম্পর্কে শোনা অদ্ভুত গসিপ কী?
ভাস্বর: আমার আর সোনালীর বহু বার বহু ভাবে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনও শুনেছিলাম, আমি আর সোনালী নাকি স্পেনসার্সে সংসারের বাজার করতে যাই। কে যে দেখেছে জানি না! প্রথম প্রথম রেগে যেতাম। পরে এ সব শুনলে উড়িয়ে দিতাম।
ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার বন্ধু কে?
ভাস্বর: সোনালী।
আবার সোনালী?
ভাস্বর: হা হা...। আরে ওর সঙ্গে আমার প্রথম ক্যামেরা ফেস। তা ছাড়া সৌমিলি আর শুভ্রজিত্ও আমার ভাল বন্ধু। আর বিশ্বনাথের সঙ্গে আমার সুখ-দুঃখের গল্প হয়।
ইন্ডাস্ট্রিতে অপছন্দের কেউ আছেন?
ভাস্বর: অঞ্জন দত্ত। ওঁকে একদম পছন্দ করি না।
কেন?
ভাস্বর: দেখুন, আমার সঙ্গে ওঁর কোনও দিন আলাপ হয়নি। তবে যে ভাবে উনি কথা বলেন, ‘চিড়িয়াখানা’য় উত্তমকুমার নাকি অভিনয় করতে পারেননি। এ কথা বলার অধিকার ওঁর নেই। উনি নিজে তো সব ছবিতেই প্রায় এক রকম অভিনয় করেন!
অঞ্জন দত্ত যদি আপনাকে কোনও ছবির অফার দেন, করবেন?
ভাস্বর: এই সাক্ষাৎকারটা পড়লে আর অফার করবেন না (হাসি)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy