Advertisement
E-Paper

বিতর্ক দে

শোভা দে = ইচ্ছাকৃত বিতর্ক তৈরি। বরাবর তাই। অলিম্পিক্সেও কি সেই ঐতিহ্য? উত্তর খুঁজলেন কিশোর ভিমানিশোভা দে = ইচ্ছাকৃত বিতর্ক তৈরি। বরাবর তাই। অলিম্পিক্সেও কি সেই ঐতিহ্য? উত্তর খুঁজলেন কিশোর ভিমানি

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০০:০৩

গত কয়েক দিনে সোশ্যাল মিডিয়া বেশ সরগরম শোভা দে-র ট্যুইট নিয়ে। মাত্র কয়েক শব্দে ভারতের অলিম্পিক্স দলের সদস্যদের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হয়েছেন এই সোশ্যালাইট।

এবং তাতেই ফুঁসছে গোটা দেশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় আছ়়ড়ে প়়ড়ছে কমেন্ট-এর ঝড়। শোভার মন্তব্যের বিরুদ্ধে মুখর অলিম্পিয়ান থেকে সাধারণ মানুষ। তবে এখন মনে হচ্ছে, ট্যুইটটা করে এই পাবলিক অ্যাটেনশনটাই চাইছিলেন শোভা। তার জন্য অলিম্পিয়ানদের লড়াইটা না হয় একটু খাটো করা হল। না হয় একটু ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হল সেই সমস্ত অ্যাথলিট বা সংস্থাকে যাঁরা এখনও অলিম্পিক্সের মঞ্চে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন। কয়েকটা মন্তব্য করে সস্তার প্রচার তো পাওয়া গেল। হওয়া গেল আড্ডার মুখরোচক বিষয়।

আরে, এটাই তো চেয়েছিলেন শোভা!

কিন্তু, অলিম্পিক্স তো শুধু ঘোরা বা সেলফি তোলার জায়গা নয়। প্রতি চার বছরের এই মহাকুম্ভ আসলে ক্রীড়া জগতের রাষ্ট্রপুঞ্জ, যেখানে সুপার পাওয়ারদের পাশাপাশি একই মঞ্চে দাঁড়ানোর সাহস পান অখ্যাত, নামগোত্রহীন দেশের অ্যাথলিটরাও। স্বপ্ন দেখেন স্রেফ একটা পদক জয়ের। এই সব অপরিচিত অ্যাথলিটকে যখন মঞ্চে দেখি, আমার মতো যাঁরা অলিম্পিক্সের বিভিন্ন ঘটনাক্রম সংগ্রহ করতে ভালবাসেন, তাঁদেরও মনে হয়—কই, এঁদের নাম তো আগে শুনিনি। এঁদের স্বপ্নগুলো অনেকটা ভারতীয় রাজনীতিবিদদের হেভিওয়েট বক্সিং-এ সোনা জেতার মতো—সুদূরপ্রসারী এবং প্রায় অসম্ভব।

তবু তাঁরা লড়ে যান স্রেফ মনের জোরে। স্রেফ একটা পদকের আশায়। এখানে কিন্তু সেলফি তোলা বা ঘুরে বেড়ানোর, বিলাসিতার সুযোগ নেই।

আসলে যাঁরা ভাবছেন অলিম্পিক্সটা ফুর্তির মঞ্চ, তাঁদের অনেকেই জন আকি বুয়া কিংবা কিপচো কিনোদের নাম শোনেননি। তাঁদের অধিকাংশই হয়তো জানেন না কী ভাবে উগান্ডার এক অখ্যাত গ্রাম থেকে উঠে এসে ১৯৭২-এর মিউনিখ অলিম্পিক্সে চারশো মিটার হার্ডলসে সোনা জিতেছিলেন আকি বুয়া, তাও আবার সুপারস্টারদের হারিয়ে।

শুধু তাই নয়, অলিম্পিক্স মানে তো আমাদের দীপা কর্মকার, সানিয়া মির্জা, রোহন বোপান্না, অতনু দাস, ললিতা বব্বরদের উত্তরণের গল্পও। কঠিন লড়াই পেরিয়ে বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে চোখে চোখ রাখার কাহিনি।

এ রকম প্রচুর ঘটনা শোনা গেছে যখন অলিম্পিয়ানরা স্রেফ কিছু রোজগারের আশায় রাস্তায় সব্জি বিক্রি করেছেন, কিংবা কারও বা়ড়ির গাড়ি ধুয়েছেন। তবে এঁদেরই পাশাপাশি কেনিয়ার এক অখ্যাত প্রান্ত থেকে উঠে এসে দু’-দু’বার সোনা জিতেছেন কিপচো কিনো। ছেলেবেলায় প্রতিদিন দশ কিলোমিটার দৌড়ে স্কুলে যেতেন এই কেনিয়ান কিংবদন্তি। এবং বাকিটা তো ইতিহাস।

এখনও মনে পড়ে তীব্র বর্ণবৈষম্য পেরিয়ে ’৬৮র অলিম্পিক্সে আমেরিকার জন কার্লোসের সেই ব্রোঞ্জ জয়ের মুহূর্ত। পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে সেই ঐতিহাসিক ব্ল্যাক স্যালুট। এটাই কিন্তু আসল অলিম্পিক্স।

কিন্তু যাঁর খ্যাতিই যৌনতার সুড়সুড়িতে ভরা কেচ্ছামূলক উপন্যাসের সুবাদে, তাঁর কাছে যে অলিম্পিয়ানদের এই পরিশ্রম, এই হাল না-ছাড়া মনোভাবের কোনও দামই নেই, তা তো বোঝাই যাচ্ছে।

আমাদের দেশের অলিম্পিয়ানদের অধিকাংশই তো আর ল্যুটিয়েন্স দিল্লি বা মুম্বইয়ের মালাবার হিলসে বেড়ে ওঠেননি। সুতরাং এঁদের কথা কেনই বা ভাবতে যাবেন শোভা দে-রা। আসলে সোশ্যাল মিডিয়া তো জনমত প্রকাশের ক্ষেত্র এবং টেলিভিশনের প্যানেল ডিসকাশনের মতো ধারাবিবরণীরও একটা মাধ্যম, যেখানে কিছু সামাজিক ধারাভাষ্যকার সব বিষয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করতে পছন্দ করেন। কিন্তু ক্রিকেটাররা যখন ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া থেকে সিরিজ হেরে ফেরেন তখন এই সামাজিক ধারাভাষ্যকাররা একটিও শব্দ নষ্ট করেন না ট্যুইটার বা ফেসবুকে। মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে করে, এর কারণটা কী?

আসলে, অধিকাংশ ক্রিকেটারেরই দেশের সোশ্যাল সার্কিটে নিয়মিত যাতায়াত এবং তাব়়ড় তাবড় সেলিব্রিটি ও ফিল্মস্টারদের সঙ্গে তাঁদের নিয়মিত যোগাযোগ। শুধু তাই নয়। এঁদের অনেকেই আবার নিয়মিত কলাম লেখেন খবরের কাগজে, কিংবা হাজির হন টিভি স্টুডিয়োয়। সুতরাং এঁদের তো কোনও ভাবেই চটানো যাবে না।

তাই ধরো এমন কাউকে যিনি বছরের পর বছর লড়ে যান নীরবে। স্বপ্ন দেখেন চার বছর পর অলিম্পিক্সে পদক জয়ের। আর তিনি যদি খালি হাতে ফেরেন, তা হলে তাঁকে সমালোচনায় বিদ্ধ করো, ক্ষতবিক্ষত করো। যদিও সেই অলিম্পিয়ান কিন্তু জানেন, এত সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি অন্তত বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে লড়ার সাহসটা দেখিয়েছিলেন।

লিখতে বসে মনে হচ্ছে, এত দিশাহীন ট্যুইটকে আমরা একটু বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আসলে এমন এক ফাঁদে আমরা পা দিয়েছি যেখানে শোভার ট্যুইটগুলো এড়ানো মুশকিল, আবার চুপ করে থাকাও সম্ভব নয়। ১৯৭২-এর মিউনিখ অলিম্পিক্সের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। মিলখা সিংহ-র সঙ্গে কথা বলছি, শুনছি স্বীকৃতি নিয়ে তাঁর আক্ষেপ। হঠাৎ মিলখা বললেন, ‘‘জানেন, অস্ট্রেলিয়ার শেফ দ্য মিশন আমাকে চিনতে পেরে অটোগ্রাফ নিয়ে গেলেন বাসে ওঠার আগে।’’ আমার সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল, পদক জয় নয়, অলিম্পিক্সের আসল মাহাত্ম্যটা এখানেই।

কে বলতে পারে, এ বারেও রিওতে এ রকম কিছু স্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী হচ্ছেন না ভারতীয়রা!
পদক না এলেও, কিছু উল্লাসের মুহূর্ত তো তৈরি হতেই পারে। এবং বিশ্বাস করুন, আমরা কিন্তু তাতেও ভীষণ গর্ব বোধ করব। যৌবনে শোভা পরিচিত ছিলেন নিজের গসিপ কলাম লেখার জন্য। এত বছর পরেও বিশেষ কিছু বদলেছে বলে তো মনে হচ্ছে না!

Shobhaa De Ananda Plus Kishore Bhimani Controversy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy