Advertisement
E-Paper

‘তৃপ্তি’ খোঁজে নিঝুম দুপুর, দরজা খোলে বিতর্ক

নয়ের দশকের শেষ দিক। হইহই পড়ে গেল একটি ছবিকে ঘিরে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এক গৃহবধূ নিজেকে দেহব্যবসায় জড়িয়ে ফেলছেন। মেয়ে একটা দামি জুতো চেয়েছিল। দিতে পারেননি। হঠাৎ প্রস্তাব এল, কিছু টাকা রোজগার করার। বধূটি রাজি হয়ে গেলেন। প্রাথমিক জড়তা কেটে যাওয়ার পরে ‘কাজ’টা কিছুটা উপভোগ করতেও শুরু করলেন।

জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০২:২৭
ওই ছবির পোস্টার। —ফাইল চিত্র

ওই ছবির পোস্টার। —ফাইল চিত্র

নয়ের দশকের শেষ দিক। হইহই পড়ে গেল একটি ছবিকে ঘিরে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এক গৃহবধূ নিজেকে দেহব্যবসায় জড়িয়ে ফেলছেন। মেয়ে একটা দামি জুতো চেয়েছিল। দিতে পারেননি। হঠাৎ প্রস্তাব এল, কিছু টাকা রোজগার করার। বধূটি রাজি হয়ে গেলেন। প্রাথমিক জড়তা কেটে যাওয়ার পরে ‘কাজ’টা কিছুটা উপভোগ করতেও শুরু করলেন।

ছবির নাম আস্থা। পরিচালক বাসু ভট্টাচার্য। কেন্দ্রীয় চরিত্রে রেখা। এ দেশে উদার অর্থনীতি তখন হামাগুড়ি দিচ্ছে সবে। আজ, শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে যে বাংলা ছবি ‘সাহেব বিবি গোলাম’, তার সামাজিক প্রেক্ষিত আরও অন্য রকম হয়ে গিয়েছে। যৌনতা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গিয়েছে আরও অনেকটাই। সাহেব-বিবির নতুন কিসসা যৌনব্যবসাকে এক কথায় দাসত্ব হিসেবে না দেখে যেন মুক্তির গল্প হিসেবেও দেখছে। খুলে দিচ্ছে বিতর্কের দরজা।

কী রকম?

ছবিতে বিবির চরিত্রটি আরও অনেক গৃহবধূর মধ্যে এক জন, যিনি স্বেচ্ছায় বুঝেশুনে দেহব্যবসার পথে পা বাড়াচ্ছেন। সংসারে টাকার টানাটানি তাঁর নেই। দাম্পত্যে শীতলতা আছে। মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে দুপুরবেলার অবসরটুকু তাই তিনি ‘কাজে’ লাগান, তৃপ্তি পান।

স্কুল-কলেজের ছাত্রী থেকে শুরু করে গৃহবধূ— হাতখরচের টানে, অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় অনেকেই ইদানীং নাম লেখাচ্ছেন এসকর্ট সার্ভিসে। দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলে পড়ার সময় গৃহবধূদের এই ‘অ্যাডভেঞ্চারে’র কথা হরবখত কানে আসত পরিচালক প্রতিম ডি গুপ্ত-র ।

বিষয়টা অচেনা নয় ‘বিবি’ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়েরও। যৌন চাহিদা থেকে দেহব্যবসায় যোগ দেওয়ার নানা ঘটনা তাঁর কানেও এসেছে। খাস কলকাতার পাশাপাশি শহরতলিতেও আজকাল যে ভাবে ম্যাসাজ পার্লার, ইউনিসেক্স বিউটি পার্লারের রমরমা, তার অনেকগুলোই নানা কমর্কাণ্ডের আখড়া। নায়িকা মনে করালেন, ‘‘মহিলারা যদি যৌন অতৃপ্তি থেকে মুক্তি না চাইতেন, জিগোলো-র ব্যবসাই বা চলত কী করে?’’

যৌনব্যবসা তবে শোষণের বদলে সোহাগের প্রতীক হয়ে দাঁড়াল? পৃথিবী জুড়ে অনেকেই কথাটা বলছেন বটে। বলছেন, যৌনতাও একটা পরিষেবা। তাই কি? সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদারের বক্তব্য, দেহকে বিনিময়মূল্য হিসেবে ব্যবহার করতে হচ্ছে, এই বাস্তবতাটাই তো সভ্যতার পরিপন্থী। কিন্তু বাস্তবতা যখন আছেই, তখন ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে মান্য করতেই হবে!

মনে পড়ে কি, লুই বুনুয়েলের বিখ্যাত ছবি ‘বেল দ্য জর’-এর কথা? ক্যাথরিন দেনেউভ সে ছবিতে মনের মধ্যে নানা রকম গোপন, ফ্যান্টাসি লালন করেন। যৌনপেশায় অংশ নিয়ে তিনি আসলে সেই ফ্যান্টাসিতেই বুঁদ হয়ে থাকেন।

কিন্তু সাহেব-বিবির ‘বিবি’ তো আর ফ্যান্টাসির বাসিন্দা নন। তিনি যাচ্ছেন কামনার মুক্তি ঘটাতে। খেলার ঘুঁটি না হয়ে চাইছেন নিজে খেলোয়াড় হতে। সময়ের তফাৎটা এখানেই।

নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ তফাৎটা লক্ষ করছেন চারপাশে। মানুষ মনে করছে, সে-ই সব বেছে নিচ্ছে। শাশ্বতীর আশঙ্কা, আসলে ‘চয়েস’টা কিন্তু বেঁধে দিচ্ছে অন্য কেউ। বলে দিচ্ছে, যৌবন ধরে রাখতেই হবে। তাঁর কথায়, ‘‘যৌন চাহিদার গুরুত্বকে খাটো না করেই বলছি, পেটে খাবার আর মাথায় ছাদ যার আছে সে-ই অ্যাডভেঞ্চারের কথা ভাবতে পারে।’’

অ্যাডভেঞ্চার! যৌনব্যবসার প্রাথমিক শর্ত তো খদ্দের-এর চাহিদা মেটানো। সেখানে নিজের শর্তে যৌনতৃপ্তির অবকাশ আছে? তিলোত্তমা পাল্টা প্রশ্ন রাখছেন, কোনও পেশাই কি সম্পূর্ণত নিজের শর্তে চলার স্বাধীনতা দেয়? কর্মক্ষেত্রে উন্নতির জন্য যখন শরীরকে কাজে লাগানো হয়, ফ্যাশন শো-এ যখন ব্যবহার হয় নগ্নতা, সেগুলোও কি এক অর্থে দেহব্যবসা নয়?

অতএব?

‘নিশিপদ্ম’ বা ‘ফরিয়াদ’-এর যুগে যে ধরনের গল্প বলা হতো, সেই ধারাটি আজ কিছুটা আড়ালে। অসুখী দাম্পত্য এখন পর্দায় শুধু পরকীয়াই উস্কে দেয় না, হাত ধরে দাঁড় করিয়ে দেয় নিজের শরীর নিয়ে ব্যবসার ময়দানে। বিমল মিত্রের উপন্যাসে স্বামীর বাইরে যাওয়া আটকাতে ছোট বউ মরিয়া হয়ে ঘরে মেহফিল বসানোর কথা ভাবতেন। এ কালের বিবি কিন্তু নিজেই গোপন মেহফিলের বারবধূ ।

সেকাল বা একাল, সবার উপরে তা হলে মেহফিলই সত্য!

saheb bibi golam Entertainment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy