E-Paper

নিশানায় স্বরূপ, টলিউডে ফাঁস ‘পথে আনা’র হুমকি-চিঠি

ইন্ডাস্ট্রি সূত্রের খবর, কেশসজ্জা শিল্পীদের গিল্ড (সিনে অ্যান্ড ভিডিয়ো হেয়ার স্টাইলিস্ট অ্যাসোসিয়েশন)-এর কমিটিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে ভোট হোক, এই দাবি তুলে কয়েক জন কেশসজ্জা শিল্পী গিল্ডের মাথাদের বিরাগভাজন হন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৬
স্বরূপ বিশ্বাস।

স্বরূপ বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র।

বাঘে বা পুলিশ ছুঁলে আঠেরো ঘা এবং ছত্রিশ ঘা বলে শোনা যেত এত দিন। টালিগঞ্জের চলচ্চিত্র জগতের কলাকুশলীদের ক্ষেত্রে পাল্টে যাবে প্রবাদবাক্যটি। তাঁদের মতে, সেখানে ফেডারেশনই সর্বেসর্বা। ফেডারেশন চটলে আর রক্ষা নেই। ফেডারেশন ছুঁলে ক’ঘা, তার হিসাবেরও ইয়ত্তা নেই। রাজ্য জুড়ে ‘হুমকি-রীতি’র (থ্রেট কালচার) পর্দা ফাঁস হওয়ার আবহে এ বার টালিগঞ্জের কেশসজ্জা শিল্পীদের গিল্ডের একটি চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে। কলাকুশলীদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’-র নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন গিল্ডের মাধ্যমে ‘অবাধ্য’ কলাকুশলীদের পথে আনতে হুমকি পদ্ধতির নমুনা হিসাবেই শনিবার চিঠিটি সামনে আনা হয় টালিগঞ্জের পরিচালকদের গিল্ডের তরফে।

‘ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’-র তরফে সভাপতি সুব্রত সেন এবং সম্পাদক সুদেষ্ণা রায় একটি বিবৃতি দিয়ে কলাকুশলীদের উপরে চাপ সৃষ্টি করে ফেডারেশনের নেতৃত্বে থাকা গিল্ডগুলি কী ভাবে তাঁদের যে কোনও কাজ করার অধিকার নিয়ন্ত্রণ করছে, তা তুলে ধরেছেন। প্রসঙ্গত, গত শনিবারই চলচ্চিত্র জগতের এক অভিজ্ঞ কেশসজ্জা শিল্পী গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে টালিগঞ্জের বেশ কয়েক জন পরিচালক, অভিনেতা সরব হয়েছেন। ওই মহিলা শিল্পীর লেখা অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে এর পরে রাজ্যের মন্ত্রী, অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বাধীন ফেডারেশনের নামে রিজেন্ট পার্ক থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।

ইন্ডাস্ট্রি সূত্রের খবর, কেশসজ্জা শিল্পীদের গিল্ড (সিনে অ্যান্ড ভিডিয়ো হেয়ার স্টাইলিস্ট অ্যাসোসিয়েশন)-এর কমিটিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে ভোট হোক, এই দাবি তুলে কয়েক জন কেশসজ্জা শিল্পী গিল্ডের মাথাদের বিরাগভাজন হন। তাঁদের আচরণের কারণ দর্শাতে বলে গিল্ড। তাঁদের ‘সাংগঠনিক ভাবে করা সকল প্রকার কাজ’ থেকে ‘কর্মবিরতিতেও’ যেতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। চলচ্চিত্র জগতের সূত্রে জানা যাচ্ছে, কয়েক জন কেশসজ্জা শিল্পী এর পরে কার্যত বিনা কাজে, বিনা রোজগারে থাকতে বাধ্য হচ্ছিলেন। যিনি আত্মহননের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ, তিনি পরে একটি কাজ পেলেও গিল্ডের বাধায় তা করতে পারছিলেন না। তাতে চরম হতাশার শিকার হন তিনি।

পরিচালকদের গিল্ডের দাবি, এমন অবস্থা আরও অনেকের। এমনকি, ক্ষমা চেয়েও নিস্তার নেই। তাতে ‘কর্মবিরতি’ তোলা হলেও নিজের পছন্দমতো কাজ নেওয়ার বা করার অধিকার থাকে না বলে অভিযোগ। গিল্ডই ঠিক করে দেয়, কোন কাজটা তাঁরা করতে পারবেন। ইন্ডাস্ট্রির এক পরিচালকের কথায়, “কোনও ট্রেড ইউনিয়ন কাজের অধিকার এ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।” একটি চিঠি তুলে ধরে তাঁরা দেখিয়েছেন, কেশসজ্জা গিল্ডের এক কর্ত্রী চন্দ্রা মিত্র নামের এক কেশসজ্জা শিল্পীকে লিখছেন, ক্ষমা চাওয়ায় সংগঠনের কাজে যোগ দিতে পারবেন চন্দ্রা। কিন্তু নিজে কোনও কাজ ধরে করতে পারবেন না। অভিযোগ, চিঠিটিতে মুচলেকার ঢঙে ওই শিল্পীকে সইও করানো হয়েছিল। তবে চিঠিটি তাঁকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু চিঠিটির ছবি ক্ষেত্রবিশেষে হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবহার করা হয়েছে বলে পরিচালক গিল্ডের দাবি।

ফেডারেশন কর্তা স্বরূপ বিশ্বাস অবশ্য বার বার হুমকি-রীতি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু তা হলে এই চিঠির মানে কী? স্বরূপের কাছে এ দিন তার সদুত্তর মেলেনি।

এ দিকে, শুধু মাত্র এক জন তৃণমূল নেতা হওয়ার সুবাদে স্বরূপ কী ভাবে কলাকুশলীদের ফেডারেশনের সভাপতি পদে বহাল থাকতে পারেন, তা নিয়ে শনিবার চলচ্চিত্র জগতের এক প্রবীণ পরিচালক হিসাবে প্রশ্ন তোলেন অপর্ণা সেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Swarup Biswas Tollywood

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy