Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
koel mallick

কি এক গভীর অসুখ এই পৃথিবীর আজ! কোয়েলের ডায়েরি

মা হতে চলেছেন। করোনা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই ডায়েরি লেখায় মন দিলেন কোয়েল মল্লিক

কোয়েল মল্লিক।

কোয়েল মল্লিক।

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ২০:১৪
Share: Save:

মা হতে চলেছেন। করোনা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই ডায়েরি লেখায় মন দিলেন কোয়েল মল্লিক

সকাল সাড়ে ৭টা

ঘুম ভেঙে কিছু ক্ষণ বিছানাতেই থাকি আজকাল। তাড়া নেই। কিন্তু ডাক্তারের নিয়ম আছে। আর তো কয়েকটা দিন... কাচের জানলায় চোখ যেতেই দেখি ঝকঝকে আকাশ। দিনকে দিন কলকাতা কী স্বচ্ছ হয়ে উঠছে! উফ্ফ্! সব ধুয়েমুছে যাক। এই মারণ রোগ থেকে সকলকে মুক্তি দিন ঈশ্বর। এ বার মেডিটেড করব।

সকাল ৮টা

বরাবর সকালে মেডিটেশনের পর বড় কাপের এক কাপ দুধ খাই আমি। সেটা এখনও খাচ্ছি। আগে কফি খেতাম। এখন সেটা বাদ।

কেন মেডিটেড করি? ওখানেই শ্রান্তি। বিশ্বাস। আজ মা হয়েছি তাই করছি, এমনটা তো নয়। শুট না থাকলেই তো গোয়া, কোয়ম্বত্তূর ছুটে যেতাম ওখানকার ক্লাস করতে। এমন মনের আরাম আর কিছুতেই যেন নেই। ব্যস্ততা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হয় মাঝে মাঝে। এখন মন্ত্র পড়েও নিজের ভেতর একটা প্রচ্ছন্ন শক্তি পাই। ডাক্তার বলেছেন, এই অতিমারি, তাকে ঘিরে গুচ্ছ গুচ্ছ ইনফরমেশনের বাইরে থাকতে। কিন্তু যা পরিস্থিতি, কানে তো সব আসবেই। আমি পারি না দূরে থাকতে। মহামারি আমার বাবা, ঠাকুরদা দেখেছে। কিন্তু এই অতিমারি! ভাবতেই পারছি না। কোথায় কী ভাবে হয়ে যাচ্ছে! ছেলে জীবাণু বহন করে আনছে, কিন্তু হচ্ছে মা বা বাবার। এখন যে প্রশ্ন সবচেয়ে জরুরি তা হল ইমিউনিটি। বার বার এই শব্দ উঠে আসছে। কিন্তু রিকশাচালক, দিন আনি দিন খাই মজুরের ইমিউনিটি কী করে হবে? তাঁরা তো খেতেই পাবে না! আর ভাবতে পারছি না...

সকাল সাড়ে ৯টা

ডাক্তারের বাধা রুটিনে চলছি আমি। ফল খাই... আজকাল খেতে গেলেও মনে হচ্ছে আমার চারপাশে কত লোক খেতে পাচ্ছে না! বসে থাকলেই এই চিন্তাগুলো ঘিরে ধরছে।

বেলা ১১টা

নিয়ম করে যোগব্যায়াম করছি এখন। আমার ইনস্ট্রাক্টর ছিল আগে। লকডাউনের জন্য ও এখন আসতে পারছে না। তবে রোজ করে করে আমার সব মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। অসুবিধে হয় না। বরং না করলেই অস্বস্তি হয়। যোগাসনের পরে লম্বা হাঁটা। আমি কানে হেডফোন নিয়ে গান শুনতে শুনতে হাঁটি। আমি গান শুনতে ভালবাসি। আর এ সময়ে গান শুনত বলেছেও ডাক্তার। টেক্সট আসে আমার কাছে। ‘রানে খেয়াল রাখছে?’, ‘বাচ্চার নাম ঠিক হয়েছে?’ কী উত্তর দেব? ধুর! তবে নাম কিছু ঠিক করিনি এখনও।

দুপুর দেড়টা

লকডাউনে রানে এখন বাড়িতে। পরিবারের সকলের সঙ্গে দুপুরের খাওয়া সারলাম। অনেকেই এখন জানতে চায় আমি পঞ্জাবি না বাঙালি খাবার খাচ্ছি! আসলে একসঙ্গে থাকতে থাকতে এটা পঞ্জাবি ওটা বাঙালি এমন হয় না। মা হওয়ার রিচ্যুয়াল তো যেমন হয় সব হয়েছে। আমরা এখন ‘ইউনিভার্সাল’। আজ তো আমরা ভাত, ডাল, পুঁইশাক চচ্চড়ি খেলাম।

দুপুর ৩টে

দুপুরে ভাতঘুমের সুযোগ ছিল না কাজের ব্যস্ততায়। তবে এখন ডাক্তারের পরামর্শে দিবানিদ্রা মাস্ট।

বিকেল ৫টা

ঘুম থেকে উঠেই বাবামায়ের সঙ্গে ভিডিয়োও কল। আগে তো বিকেলের দিকে দেখা হত। এখন লকডাউনে আমার যেমন চিন্তা হয়, ওদেরও হয়।

সন্ধে ৬টা

সূর্য মিলিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে। কি এক গভীর অসুখ এই পৃথিবীর আজ! মানুষ অসহায়। আমি আবার ভেবে চলেছি। সৌকর্যের-র স্ত্রী পূজা আমায় একটা বই উপহার দিয়েছে। বেশ পছন্দের বই আমার, ‘আওয়ার বডিজ আওয়ারসেলভস প্রেগন্যান্সি অ্যান্ড বার্থ’, ওটা পড়ছি।

সন্ধে ৭টা

বারে বারে খিদে পায় এখন। টুকটাক মুখ চলে। আমি আর রানে এই সময়টা নেটফ্লিক্সে ছবি দেখি। নানা দিক থেকে দেখি আজকাল মানুষ আমার শরীর নিয়ে কনসার্ন। কেউ লম্বা গানের লিস্ট পাঠাচ্ছে, বলছে গান শোন, তো কেউ কী খাব বা না খাব জানাচ্ছে। এত মানুষ আমার জন্য ভাবছে, এটা ভাবতে বেশ লাগে। তবে অনেকেই জানতে চান আমার কী খেতে ইচ্ছে করছে? কে জানে! আমার মা হওয়ার সময় কোনও ক্রেভিং হয়নি।

রাত সাড়ে ৯টা

সন্ধে আর রাত বই, নেটফ্লিক্সে সব নিয়ে কাটাই। আমার সুন্দর পরিবার আছে। গল্পগুজবও হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, এ রকম একটা ঐতিহাসিক সময়ে আমার ভেতর থেকে আর একটা প্রাণ জন্ম নিতে চলেছে! এর চেয়ে আশ্চর্যের, আনন্দের আর কী বা হতে পারে! আমি একটুও ভয় পাচ্ছি না। আসলে আমার মন যা চাইবে শরীরও তাই বলবে, করবে। আমি এই বিশ্বাসের অনুসারী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Koel Mallick coronavirus lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE