Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

বাবা খুব খুশি, মেয়ে হাত ধরে হাঁটাচ্ছে, শ্রাবন্তীর ডায়েরি

লকডাউনে বাপের বাড়িতে বসে ডায়েরি লিখলেন শ্রাবন্তীএই জমায়েতের নিষেধ যখন জারি হল, ‘আরবানা’ থেকে আমি মায়ের কাছে বেহালার বাড়িতে চলে আসি।

শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়।

শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ১৮:৪৯
Share: Save:

সকাল সাড়ে ১০টা

দেরিতেই উঠছি এখন। কী করব? কাজ কিছু নেই। আর শুটের সময় তো ভোরবেলা উঠেই ছুটতে হয়। মা-কে বলেছি তাই, সাতসকালে ডেক না। এই যে উঠলাম মায়েরই হুকুমে। এ বার কাঁচা হলুদ খেতে হবে। বাড়ির সব্বাই খাচ্ছে। যাই, খেয়ে আসি।

সকাল ১১টা

আমি এখন বেহালার বাড়িতে। বাবা-মায়ের কাছে। সঙ্গে আমার ছেলে, দিদি আর জিজু। এক্কেবারে সেই ছোটবেলা মনে হচ্ছে। এই জমায়েতের নিষেধ যখন জারি হল, ‘আরবানা’ থেকে আমি মায়ের কাছে বেহালার বাড়িতে চলে আসি। আসলে ‘আরবানা’-য় অনেক লোক হয়ে যাচ্ছিল। আমি, আমার বর, শাশুড়ি, মামাশ্বশুর, তাঁর পরিবার... অনেক! তাই মার কাছে চলে এলাম। বাবা-মাকেও তো দেখতে হবে আমায়।

দুপুর ১২টা

এখন মা-কে রান্নাঘরে সাহায্য করাই আমার কাজ। মাঝে ক্যান্ডি ক্রাশও খেলে নিচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়া করলাম। দিদিও রান্নায় মাকে হেল্প করে। ও মাছ বানিয়েছিল আজ। আবার আমার জিজুও বাড়ির কাজে এখন এগিয়ে আসছে। বাড়ির পরিচারিকারা সবাই ছুটিতে। রান্নাঘরেই ঢুকলাম। ছেলে এসে মাঝে মাঝেই বলছে, মা বোর হচ্ছি, আর ভাল লাগছে না। পনেরো বছরের ছেলে আর কত বাড়ি বন্দি হয়ে থাকবে? ওকে কাজ শেখানোর চেষ্টা করছি। নিজের প্লেটটা দেখছি আজকাল নিজেই তোলে। এ দিকে রোশন তো ওর মায়ের কাছে পার্ক সার্কাসের বাড়িতে আছে। আমার শাশুড়িমায়ের শরীর খারাপ তাই ও মায়ের দেখাশোনা করছে। কিছু দিন বাদে হয়তো চলে আসবে। দেখি... ফোনে আর মাঝে মাঝে ভিডিয়ো কল চলছে আমাদের মধ্যে। বাবা এখন টেলিভিশন চালিয়ে দিয়ে বসে আছে। বয়স হয়েছে। বেশি চিন্তা করছে। কী যে হচ্ছে চারিদিকে! উফ্ফ! যাই রান্নাঘরে।

আরও পড়ুন: শরীরে শরীর মিশিয়ে দিলেন সুস্মিতা আর তাঁর বয়ফ্রেন্ড রহমান

দুপুর সাড়ে ১২টা

আজ চিকেন বানালাম। হাল্কা করে। তবে বাড়িতে সবাই খাওয়ার পরিমাণ কম করে দিচ্ছি আমরা। আমাদের বাঙালবাড়ি, আগে দশ রকম মেনু ছাড়া খাওয়াই হত না। এখন সব বন্ধ। জানি না তো কবে কী হবে? পরে ঠিকমতো খাবার পাওয়া যাবে কি না! সারা বিশ্ব অনিশ্চয়তা নিয়ে বসে আছে। কেউ ঠিক ভাবে জানে না কী আসছে সামনে। এখনও মানুষ বেরোচ্ছে। আমি তো কিছু দিন আগে একটা ভিডিয়ো করে বললাম মানুষকে বাড়িতে থাকতে। যে যার মতো চেষ্টা করছি আমরা।

দুপুর ২টো

একসঙ্গে খাওয়া হচ্ছে এখন। বাবা, মা, দিদি যেন ছোটবেলার দুপুরে ভাত খেতে বসেছি। আমার ছেলে আর জিজুও আছে। খাওয়ার পর আমি আর দিদি প্রচুর গল্প করছি। এত গল্প বাকি ছিল আমাদের? হবে না-ই বা কেন? একে তো ছুটি পাই না। আর পেলে বাড়িতে থাকাই হয় না। কোথাও বেড়াতে চলে যাই। সব ছোটবেলাগুলো ফিরে আসছে। রংপেনসিল, টিফিনবক্স। কোন টিচার কেমন করে বকত? এই সব গল্প হচ্ছে। গরমের দুপুরে ছোটবেলা ফিরে পাচ্ছি এই আতঙ্কের বাতাবরণে। আর এক জনের কথা এই সময় আমায় লিখতেই হবে। আমার বেস্টফ্রেন্ড সঞ্চারী। ও আমার পাড়ায় থাকে। আমাদের বাড়ির বাইরের সব কাজ ও করে দিচ্ছে। বাবার ওষুধ আনা, বাজার থেকে কিছু আনা। মাস্ক পরে স্কুটি নিয়ে ঘুরছে ও।

আরও পড়ুন: ৫ দিনে ১৪০০ কুকুরের খাবার যোগালেন মডেল-অভিনেত্রী নায়লা নাঈম

দুপুর ৩টে

দেখলাম বাবা মাঝে মাঝে আমার আর দিদির মাঝে এসে দাঁড়াল। বলল, ‘কি রে? তোরা লুডো খেলছিস না?’ আমি বললাম, ‘আজ না।’ তবে ফাঁক পেলেই এখন লুডো খেলা চলছে। বিকেল হয়ে আসছে... এ বার ছাদে যাব।

বিকেল ৫টা

এই সময়টা আমার আর বাবার। বাবা খুব খুশি, মেয়ে হাত ধরে রোজ হাঁটাচ্ছে...। বাবাকে বেশ অনেক ক্ষণ পুরো ছাদটা হাঁটানোর পরে আমি কার্ডিয়ো করি। বাড়িতে আছি। খাওয়াও চলছে। এই মুহূর্তে ছাদেই এক্সারসাইজ করি। কী করব? দেখি লোকে ছাদে উঠে দেখে আমায়। আমার কিছু করার নেই।

সন্ধে সাড়ে ৬টা

নুডলস বা মুড়ি খাই এই সময়। মা আগের মতো অনেক কিছু দিয়ে মুড়ি মেখে দেয়। বেশ লাগে খেতে।

সন্ধে ৭টা

এই সময় অ্যামাজনে ছবি দেখি। আমার মেকআপ ম্যান, ডিজাইনারের সঙ্গে কথা বলি। রাতে হাল্কাই খাই। কিন্তু দিদি আর মায়ের সঙ্গে এত গল্প, শুতে শুতে ১টা বেজেই যায়।

রাত ৮টা

পরিবার নিয়ে আছি। জীবন চলছে। কিন্তু এই ভয়াবহতাকে এড়িয়ে চলতে পারছি কই? আমি কর্মে বিশ্বাসী। মানুষ যে ভাবে প্রকৃতিকে অবহেলা করেছে, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে, তাতে প্রকৃতি তো এ বার মানুষকে বোঝাবেই। আমিও প্রকৃতির কাছে দোষ করেছি। তাই সবাই গৃহবন্দি। আর পশুপাখিরা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফুল ফুটছে!

কিন্তু আমরা?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE