গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।
কোভিড আবহেসাধারণ মানুষের বিপন্নতার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা, পরিষেবা, হাসপাতাল। বার বার তাই মনের মধ্যে কোথাও ধাক্কা মারছে সেই ‘অলীক সুখ’-এর সফল গাইনোকলজিস্ট সার্জেন কিংশুক, ওরফে দেবশঙ্কর হালদারকে। আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বললেন, “এই মাস্ক, গ্লাভস, আমি প্রথম ওই ছবি করতে গিয়েই পরি। দেখি চিকিৎসকদের জীবন। ক্রমাগত শট দিতে দিতে মাঝে মাঝে নিজেকে বেশ কেউকেটা বলেও মনে হত।সাত বছর আগের ছবি, যেখানে চিকিৎসা পরিষেবা আর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পাশাপাশি চলেছিল। আজও তো তাই। কোভিড হাসপাতালে রোজ যে চিকিৎসক যাচ্ছেন এখন তাঁর বাড়ির লোকেরা কী ভাবছেন?” মাথার মধ্যে এ ভাবেই ফিরে আসছে কিংশুক চরিত্র।
বিদেশের সিনেমায় দ্বৈতসত্ত্বা বা ‘ডপেলগ্যাঙ্গার’রা বারবার ফিরে ফিরে এসেছে। তা সে নাতালি পোর্টম্যানের ‘ব্ল্যাক সোয়ান’ হোক কি হেনরি সেলিকের ‘ক্যারোলিন’।
কিন্তু বাংলা সিনেমায় ‘ডপেলগ্যাঙ্গার’-এর কনসেপ্টটা সে সময় ছিল নতুন যা ‘অলীক সুখ’-এ ধরা ছিল। করোনাকালে চিকিৎসা পরিষেবা, চিকিৎসক নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। দেবশঙ্কর যেমন বললেন, “ভুল বলে ওইভাবে সত্যি কি কিছু হয়? সমাজের প্রেক্ষিতে ভুল।আমাদের দু’রকমের মন— আদর্শের মন আর বাস্তবের। চিকিৎসকদেরও তো তাই! চিকিৎসক ভাবতে পারেন তিনি ভুল নন।আমি সেরকম ডাক্তার আছে বলে মনে করি না কিন্তু এমন তো হতে পারে, বাড়িকে মান্যতা দিতে গিয়ে আজ কোনও ডাক্তার কাজে যোগ দিলেন না। তাঁর সঙ্গত কারণ আছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁর সংসার তাঁকে কী ভাবে জরিপ করে? এই ছবি ‘অলীক সুখ’ দেখিয়েছে।”
‘অলীক সুখ’-এ ঋতুপর্ণা-সোহিনী
শুধু সিনেমা নয়, ‘শেষ সাক্ষাৎকার’ নাটকে চিকিৎসকের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে বুঝেছিলেন দেবশঙ্কর, চিকিৎসক মানুষের প্রাণ বাঁচাতে যেমন ‘ভগবান’ আবার মুহূর্তে তিনিই ‘শয়তান’, এই নির্মম বাস্তব জেনেও তাঁরা কাজ করে যান। করোনা যুদ্ধে চিকিৎসকদের লড়াইকে অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন দেবশঙ্কর।বলে ওঠেন তিনি, “আমি একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে চিনি যিনি বলেছিলেন,ওপেন হার্ট সার্জারি করলে যতক্ষণ না রোগীর জ্ঞান ফেরে আমরাও আটকে থাকি। ওই রোগীর সঙ্গে আমরা বেঁচে ফিরি!” চিকিৎসকের এই বোধ এই অতিমারির সময় তাঁকে বার বার নাড়া দিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু ‘অলীক সুখ’-এর নায়ক হয়েও আর তাঁকে বাংলা সিনেমায় সে ভাবে পাওয়া গেল না কেন? আপনিও কি স্বজনপোষণের স্বীকার হয়েছিলেন?
“আমি থিয়েটারের মানুষ। সিনেমার অফার পেলে বলতাম,থিয়েটারের সময় কিন্তু ছেড়ে দিতে হবে। লোকে জানত এই লোকটাকে নিলে সে-ই বিপদে পড়বে!আমার মনে হত থিয়েটার আমায় যা দেয়, তা আর কিছুতেই নেই। এখনও কেউ ছবির প্রস্তাব নিয়ে এলে বলি, না না থাক না।ভাবি, আবার ছবি! আবার পারব! কী যে হয়! শুটিং না হলে রীতিমতো নাচতে থাকি! না করতে পারলেই ভাল হয় এমন ভাব। তাই বলে কি ছবি করব না? করেছি তো। এ বছর ছবি করার কথাও ছিল।”
‘অলীক সুখ’-এর নায়ক হয়েও আর তাঁকে বাংলা সিনেমায় সে ভাবে পাওয়া গেল না কেন?
ছবি নিয়ে নিজের মনোভাব বুঝিয়ে দিলেন দেবশঙ্কর, বাংলার মঞ্চে ২০টা নাটক একসঙ্গে অভিনয় করাটা অভিনব। তবে শুধু নাটক নয়। কাজ করছেন ওয়েব সিরিজেও। সম্প্রতি ‘তানসেনের তানপুরা’–র দ্বিতীয় সিরিজে তাঁকে দেখা যাবে।
থিয়েটার বন্ধ। থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি এক অস্থায়ী সংগঠনের মাধ্যমে, নাম ‘সৌভ্রাতৃত্ব’। ‘‘অনেক নাট্য নির্দেশক যুক্ত।বিদেশে বন্ধুবান্ধব আর নিজেদের অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে তহবিল তৈরি করে ১৫০ পরিবারকে সামান্য সাহায্য করা হয়েছে। মঞ্চের বাইরেথাকেনএঁরা।মঞ্চে আলো পড়লে আমি ওঁদের মুখ আগে দেখতে পাই,” আবেগ দেবশঙ্করের গলায়।
‘অলীক সুখ’-এর সূত্র ধরেই দেবশঙ্কর চিকিৎসকদের সঙ্গে একত্রে ‘কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক’ তৈরি করেছেন। “চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী আছেন। এই সময় যাতে মানুষকে সহায়তা দেওয়া যায়। কোভিড হলে বেডের জন্য সাহায্য করা, সরকারকে বলা,মানুষের মনোবল বাড়ানো, পাড়ায় পাড়ায় কাজ করছি। এখন মনে হয় এটাই আমার থিয়েটার, এটাই আমার সিনেমা।”কোভিড যুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন অভিনেতা।
এই লড়াই যদিও অলীক নয়, বাস্তব!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy