Advertisement
E-Paper

সংসার, সন্তান, সম্মান— সব ‘ভাল’কেই যত্নে রাখতে হয়, উৎপলেন্দু সেটা পারেননি

“মানুষটা চলেই গেলেন। আজ আর আমাদের জীবনের কালো দিক তুলে কথা বলে লাভ কী? সব কালো ওঁর নশ্বর দেহের সঙ্গে ছাই হয়ে যাক। রয়ে যাক শুধুই ভাল”, লিখলেন শতরূপা।

শতরূপা সান্যাল

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৪ ২১:২৪
Image Of Satarupa Sanyal, Late Utpalendu Chakraborty

(বাঁ দিকে) শতরূপা সান্যাল, প্রয়াত পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তী (ডান দিকে) ছবি: সংগৃহীত।

তখন পরপর ছবির সাফল্য। ওঁকে ঘিরে একদল মানুষের আনাগোনা। সেই সময় কানে এসেছিল কথাটা, উনি নাকি ছোট ‘ঋত্বিক ঘটক’! হ্যাঁ, উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর মধ্যে অনেক গুণের সমাহার। ভাল শিক্ষক, পরিচালক, লেখক, সুরকার, অভিনেতা। কিন্তু ঋত্বিক ঘটকের অপচয়, বিশৃঙ্খল জীবনযাপন ওঁর ছিল না। আমি বরং গোলাম মুরশিদ-এর লেখা ‘আশার ছলনে ভুলি’ পড়ে কোথাও মাইকেল মধুসূদল দত্তের জীবনের সঙ্গে ওঁর জীবনের মিল পেয়েছি। ‘প্রাক্তন’স্বামীর আগেও আমার জীবনে উনি ‘শিক্ষক’। ছবির প্রতি আগ্রহ, পরিচালনায় আসার ইচ্ছে— সবটাই ওঁর সঙ্গে কাজ করার সুবাদে। পাশাপাশি, সাতপাকের বাঁধনে জড়িয়ে যাওয়ায় ‘ব্যক্তি’ উৎপলেন্দু চক্রবর্তীকেও দেখেছি। সেই জায়গা থেকে আজ মনে হচ্ছে, যা কিছু কালো তা ওঁর নশ্বর দেহের সঙ্গে ছাই হয়ে যাক। রয়ে যাক শুধুই ভাল, সুখস্মৃতি।

আমার জীবন যেন একটি খাতা। যার প্রথম পর্ব জুড়ে উৎপলেন্দু চক্রবর্তী। বিনোদন দুনিয়ার তখন সোনার সময়। আমি একদম নতুন। তা-ও আমাকে খুব আপন করে নিয়েছিলেন। দুটো ছবিতে ওঁর পরিচালনায় অভিনয় করেছি। হিন্দিতে ‘অপরিচিতা’, বাংলায় ‘বিকল্প’। আজ ওঁর মৃত্যুর খবর জানার পর প্রথমেই মনে হল ‘বিকল্প’ ছবির আর মাত্র দু’জন বেঁচে রইলাম। আমি আর অশোক বিশ্বনাথন। ছবির পরিচালক থেকে বাকি অভিনেতা, টেকনিশিয়ান— কেউ জীবিত নেই! পরবর্তীকালে ‘বিকল্প’ ছবিকে উৎপলেন্দু নিজের হাতে ডিজিটালে রূপান্তরিত করে গিয়েছেন। শুনেছি, তার পরেও দূরদর্শনের জন্য তৈরি করা ছবিটি নাকি দূরদর্শনের কাছেই নেই! সেই সময় ওঁর সঙ্গে সারা ক্ষণ জুড়ে থেকে ছবি তৈরির অ-আ-ক-খ শিখেছিলাম। একটা সময়ের পর ওঁর ছবির জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ আমিই করতাম। এই একটা নেমপ্লেট বানিয়ে দাও, এই ছবির একটা গান লিখে দাও, এটা গুছিয়ে রাখো, সেটা এনে দাও— নির্দেশ দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতেন। বাকিটা আমায় দায়িত্ব। মনে পড়ছে, আমার প্রথম পরিচালনা ‘গুরু’, যামিনীনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপর তথ্যচিত্র। উনি তখন প্রথম সারির পরিচালক। আমার কাজে নাক গলাতেই পারতেন। সেটা কিন্তু করেননি। বরং পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে জানিয়েছিলেন, দরকার হলে তিনি আছেন।

ওঁর সাফল্যে মোড়া সময়ের সাক্ষী আমি। নাম, যশ, অর্থ, সম্মান— সব একে একে ধরা দিচ্ছে। সকলে ওঁকে ঘিরে রয়েছেন। এমন মুহূর্তেও কিন্তু উনি চঞ্চল, উদ্বিগ্ন। নিরাপত্তায়হীনতায় ভুগেছেন উৎপলেন্দু চক্রবর্তী। পরের ছবি সফল হবে কি না, সেই নিয়ে চিন্তিত।

ভাল খেতে ভালবাসতেন, খাওয়াতেও। আমার বাবার বাড়ির রেওয়াজ, দুপুরে যিনি বাড়িতে আসবেন তাঁকে ভাত খাইয়ে তবে ছাড়া হবে। উৎপলেন্দু সেই ধারা আপন করে নিয়েছিলেন। যে কোনও ভাল জিনিসের প্রতি ওঁর আসক্তি ছিল। ভাল আড্ডার আয়োজনেও আগ্রহী ছিলেন। আর তিনিই হবেন সব কিছুর মধ্যমণি, এমন ভাব ছিল। কিন্তু বিলাসিতা করেননি কোনও দিন।

এত কিছু পাওয়ার পরেও শেষটা সুখের হল না। আসলে সংসার, সন্তান, সম্মান— সব ‘ভাল’কেই যত্নে রাখতে হয়, উৎপলেন্দু সেটা পারেননি। পারেননি বলেই কোনও কিছুই ওঁর জীবনে স্থায়ী হল না।

Utpalendu Chakrabarty Satarupa Sanyal Personal Remembrance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy