একদিনে আমার, সব্যসাচী চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের জন্মদিন। ওরা দু’জনেই আমার ‘ফেলুদা’। আমি ওদের পরিচলক। এই ব্যাপারটাই অভিনব। তাই তিন জনে মিলে মুখোমুখি আড্ডায় বসতে পারলে ভালই হত। সেটা সম্ভব হচ্ছে না। আমি, ললিতা সবে ভাইরাল জ্বর থেকে উঠলাম। শরীর খুবই দুর্বল। বাড়িতেই তাই দিনটা কাটাব। হয়তো খুব ঘনিষ্ঠ কয়েক জন আসবেন। এর বেশি কিছু না। সব্যসাচী আর ইন্দ্রনীলও নিশ্চয়ই নিজেদের মতো করে দিন কাটাবে। অবশ্যই ফোনে কথা বিনিময় হবে আমাদের।
একই দিনে তিন জনে তিন জনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাব। এর থেকে ভাল বিষয় আর কী?
আরও পড়ুন:
সব্যসাচীর সঙ্গে আমার কাজের দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। খুব ভাল সময় কাটিয়েছিলাম আমরা। ও ‘ফেলুদা’ হতেই এসেছিল। তখন ঠিক হয়েছে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর ‘ফেলুদা’ হবেন না। আমার বাবা, সত্যজিৎ রায়ও আর ‘ফেলুদা’ বানাবেন না। সেই সময় সব্যসাচী ওরফে বেণু এসেছিল বাবার কাছে। ওর গোয়েন্দার ভূমিকায় অভিনয় করার ভীষণ ইচ্ছে। বাবা ওকে বলেছিলেন, “আমি তো আর পরিচালনা করব না। বাবু (সন্দীপ) করবে। তুমি ওর সঙ্গে যোগাযোগ কর। বেণু তার পর এসেছিল আমার কাছে।”
বেণুর উচ্চতা, কণ্ঠস্বর, বুদ্ধিদীপ্ত কথা, বাংলা-হিন্দি-ইংরেজি ভাষার উপরে দখল— ভাল লেগেছিল। সবার উপরে ওর অভিনয় দক্ষতা। আমিও ‘না’ বলিনি। সৌমিত্রকাকুর পরে ও আমার ‘ফেলুদা’। শুধু একটু দুশ্চিন্তা ছিল। দর্শক তখনও ‘ফেলুদা’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ে বুঁদ। এই বদল তাঁরা কতটা মেনে নেবেন? শুধু ‘ফেলুদা’ তো নয়, পুরো দলেরই বদল হয়েছিল সে সময়ে। মনে আছে, আমাদের প্রথম কাজ ‘বাক্স রহস্য’। নন্দনে মুক্তি পেয়েছিল, পর পর দুটো শো। দুটো শো-ই হাউসফুল। রমরমিয়ে চলেছিল। ব্যস, সব দুশ্চিন্তার অবসান।
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তেরও জন্মদিন এ দিন। ছবি: সংগৃহীত।
তার পর থেকে আমরা একটা পরিবার। ছবি নিয়ে, চরিত্র নিয়ে আলোচনা। নিজেদের কাজ নিয়ে ভাল-মন্দ মতামত দেওয়াও চলত শুটিংয়ের ফাঁকে। ইদানীং শুনছি, বেণু নাকি অভিনয় থেকে অবসর নিচ্ছে। আমার থেকে ছ’বছরের ছোট কেউ অবসরের কথা ভাবছে! মনে হয়, ভাল ছবি বা ভাল চরিত্র পেলে নিশ্চয়ই আবার ফিরবে। ওর জন্মদিনে আমি অন্তত তেমনই চাইব।