Advertisement
E-Paper

ভি়ড়ের চাপে থমকে কঙ্গনা-শাহিদদের ট্রেন

এই জনপদে ভোরের আলো ফোটে অনেকটা আগে। সাড়ে চারটে থেকেই আকাশের কালো রং মুছতে শুরু করে প্রথম সূর্যের আলো। রাস্তাঘাটে ভিড়ের বালাই থাকে না।

সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৬ ০২:৪২

এই জনপদে ভোরের আলো ফোটে অনেকটা আগে। সাড়ে চারটে থেকেই আকাশের কালো রং মুছতে শুরু করে প্রথম সূর্যের আলো। রাস্তাঘাটে ভিড়ের বালাই থাকে না।

গত দু’তিন দিনে অবশ্য ছবিটা বদলে গিয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের অজ গ্রামটায়। সৌজন্যে বলিউড। অরুণাচল-অসমের সীমানায় ধেমাজি জেলার ডিপা স্টেশনে এখন ভিড় করছেন হাজার দশেক মানুষ। সারা রাত। কারণ আর কিছুই না, কঙ্গনা রানাওয়াত-শাহিদ কপূরের মতো তারকাদের নিয়ে সেখানে হাজির বিশাল ভরদ্বাজ। ‘রেঙ্গুন’ ছবির শ্যুটিং করতে। আর তাতেই পাগলপারা এলাকা। রীতিমতো মেলা বসে গিয়েছে স্টেশনের আশপাশে। বিক্রি হচ্ছে খেলনা, ঘুরছে নাগরদোলা। অনেকে আবার চড়ে বসেছেন গাছের মগডালেও।

বিপত্তি বেধেছে এতেই।

কথা ছিল, পাঁচ দিন ধরে একটি গানের শ্যুটিং হবে এই স্টেশনে। ‘রেঙ্গুন’ ছবির কাহিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহে গড়া। যে হেতু ওই যুদ্ধের অনেকটাই হয়েছিল অরুণাচল-মণিপুর-মায়ানমার মিলিয়ে তাই শ্যুটিংয়ের জন্যেও বিশাল দলবল নিয়ে সেখানেই শ্যুটিং করতে চেয়েছেন। কিন্তু ভিড় সামলায় কে! ট্র্যাকের উপরে উঠে যাচ্ছে জনতা! মাইকে বার বার ঘোষণা হচ্ছে, ‘দয়া করে আপনারা সরে যান। না হলে আমাদের অন্যত্র চলে যেতে হবে।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা? ভোর সাড়ে চারটেয় ‘কল টাইম’ থাকলেও শাহিদ-কঙ্গনা অধিকাংশ সময় বেরোতেই পারছেন না। গানের অন্য অংশগুলির অল্প শ্যুটিং হয়েছে। যে টুকু সময় শ্যুটিং করেন শাহিদ-কঙ্গনা— ভিড় সামলাতে নাকাল হয় পুলিশ। ভিড়ের চাপে প্রথম দফার চারদিনের শ্যুটিং নমো নমো করে সেরে কঙ্গনা-শাহিদ রওনা হয়ে যান গুয়াহাটি হয়ে মুম্বই। ক’দিন পরে তাঁরা ফিরলে আবার শ্যুটিং শুরু হবে অরুণাচলের অন্য জায়গায়। টিম রেঙ্গুনের সদস্যদের উদ্বেগ, সেখানেও না আবার এমন কাণ্ডই হয়!

তবে প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, ভিড়ের চাপ অস্বাভাবিক নয়। এই সব প্রত্যন্ত এলাকায় বিনোদন বলতে হাতেগোনা বাড়িতে টিভি। সেখানেই ৪৫টা গাড়ি, শ’খানেক মানুষ, লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন মিলিয়ে বলিউড সংসার পেতেছে প্রথম বার! রেল ও পুলিশের তরফে সাবধান করা হয়েছিল, যতটা সম্ভব প্রচার এড়িয়ে শ্যুটিংপর্ব সেরে ফেলতে হবে। কিন্তু কঙ্গনা-শাহিদদের ডিব্রুগড়ে নামার ছবি, ট্রেনের উপরে কঙ্গনার নাচের ছবি স্থানীয় চ্যানেলে দেখানোর পরেই দলে দলে মানুষ গাড়ি-বাস-ট্রাক ভাড়া করে পাড়ি জমান ডিপা-র উদ্দেশে।

টিম রেঙ্গুনের কাছেও জগৎটা অচেনা। অরুণাচলের দিক থেকে আদি উপজাতির মানুষরা হাতে-কোমরে তরবারি নিয়ে হাজির। তাঁরা নায়ক-নায়িকাদের স্বাগত জানাতে চান। কিন্তু তলোয়ার হাতে লোকদের দেখেই শ্যুটিং দলের দেহরক্ষীরা ঘাবড়ে গিয়েছেন। উপজাতি নেতারাও নাছোড়বান্দা। সকাল থেকে এসে স্টেশনে হত্যে গিয়ে বসেছেন ডিপার গাঁওবুড়ো লিকার বাসার। গমগমে গলায় জানিয়ে দিচ্ছেন, এমন জাঁকজমক দেখে তিনি বেজায় খুশি। শ্যুটিং দলের এক সদস্য সব দেখেশুনে বলছেন, ‘‘কাশ্মীর থেকে শুরু করে বহু জায়গায় শ্যুটিং করেছি। আপ্যায়নের এমন হিড়িক দেখিনি।’’ ধেমাজির এসপি স্বপ্ননীল ডেকা বলেন, ‘‘আমার হাতে থাকা তিন কোম্পানি জওয়ানের মধ্যে দু’কোম্পানি জওয়ানই শ্যুটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছি।’’

এর আগে অরুণাচলে ১৯৯৭ সালে ‘কোয়লা’ আর গত বছর মেঘালয়ে ‘রক অন-২’এশ্যুটিং হলেও অসমে মূল ধারার বলিউড ছবির শ্যুটিং আগে হয়নি। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে জানায়, অসমে এটাই প্রথম ট্রেন ভাড়া নিয়ে শ্যুটিং। রেলের মুখপাত্র জয়ন্ত শর্মা জানান, ২৫ লক্ষের বিনিময়ে চার দিনের জন্য ট্রেন নিয়েছে বিশালের দল। তাঁর অবশ্য আক্ষেপ, ট্রেনের গায়ে ‘এনএফআর স্পেশ্যাল’ লেখাটা তথ্য বিকৃতি। কারণ, যুদ্ধের অনেক পরে ১৯৫৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তৈরি হয় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে।

তবে এ সব নিয়ে ভাবার সময় নেই জনতার। শাহিদ-কঙ্গনা দর্শন হয়নি তো কী? মুম্বই থেকে আসা ইউনিটের কাউকে দেখলেই জড়িয়ে ধরে ছবি তুলেছেন সকলে।

kangana ranaut shahid kapoor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy