Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja 2021

Durga Puja Music: গানে গানে দুর্গাপুজো! পঞ্চমী থেকে দশমী ভিন্ন রূপে আরাধনায় অজয়-কৌশিকী

পঞ্চমী থেকে দশমী অজয় চক্রবর্তীর প্রাণের আলাপ হতে চলেছে কেবল মাত্র গানে গানে। যার দৌলতে বহু দিন বাদে বাঙালি পাবে একগুচ্ছ ‘পুজোর গান’। 

অজয় চক্রবর্তী। সঙ্গে কন্যা কৌশিকী ও স্ত্রী চন্দনা

অজয় চক্রবর্তী। সঙ্গে কন্যা কৌশিকী ও স্ত্রী চন্দনা নিজস্ব চিত্র

ঋতপ্রভ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:৩৬
Share: Save:

টানা ২১ বছর নিজে পুজো করেছেন। শ্যামনগরের বাড়ির দোতলায় পুজো হত। কিন্তু অনেক কিছুর মতোই কোভিডও খানিক পাল্টে দিয়েছে তাঁর জীবন। তিনিও ভেবেছেন, কী ভাবে করোনাকালে পঞ্চমী থেকে দশমী অন্য ভাবে উদ্‌যাপন করা যায়। সেই ভাবনা থেকেই তাঁর ‘গানে গানে দুর্গাপুজো’-র পরিকল্পনা। পঞ্চমী থেকে দশমী প্রাণের আলাপ হতে চলেছে কেবল মাত্র গানে গানে। ৬৯ বছরের পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছে গানই এ বার পুজোর উপচার। যার দৌলতে বহু দিন বাদে বাঙালি পাবে একগুচ্ছ ‘পুজোর গান’। অজয়ের সঙ্গে সেই গানগুলি গেয়েছেন কন্যা কৌশিকী, স্ত্রী চন্দনাও। গানের দৃশ্যায়নের পুরো প্রকল্পটি পুত্র অনঞ্জনের মস্তিষ্কপ্রসূত।

অজয় বলছিলেন, “আমাদের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। সেখানে দেবীপুরাণ মতে আমাদের বাড়িতে পুজো হত। প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো পুজো। দেশভাগের সময় আমার বাবা পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। কিন্তু তখন তো আমাদের অবস্থা ভাল ছিল না। মায়ের হাতে তৈরি কাঁথা বেচে সংসার চলত। আমার প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে। রয়্যালটি বাবদ সে বছর ২১ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। তখন তা অনেক টাকা। সে সময় বাবা বললেন, আমরা আবার পুজো করব। সে বার আর মূর্তি কেনা হয়নি। ফোটোতেই পুজো হয়েছিল। তার পর থেকে আর পুজো বন্ধ হয়নি।”

পুত্র অনঞ্জনের সঙ্গে অজয়-চন্দনা

পুত্র অনঞ্জনের সঙ্গে অজয়-চন্দনা নিজস্ব চিত্র

কিন্তু পুজো মানেই কি শুধু সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণ? অজয় তেমনটা মনে করেন না। তাঁর কাছে পুজো হল সব মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। বলছেন, “আমি মনে করি, মন্ত্রোচ্চারণ করে যা বোঝানো যায় না, গানের মধ্যে দিয়ে তা বোঝানো সম্ভব। যে কারণেই বোধন থেকে বিসর্জন— ২৭টি গানের মধ্যে দিয়ে ধরতে চেয়েছি। আমার বাবার গুরু ছিলেন প্রেমানন্দ তীর্থস্বামীজি মহারাজ। তিনি বলতেন, পুজোতে সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। পুজো সমবেত হওয়া উচিত। তাঁর শিষ্য সদানন্দ ব্রহ্মচারীজি সমবেত পুজো করতে শিখিয়েছেন। পুজো মানে সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে মায়ের প্রার্থনা করা। যেহেতু পুজোর মন্ত্র সংস্কৃতে লেখা, তাই পুজোর আসল অর্থ অনেকেরই হয়তো হৃদয়ঙ্গম হয় না। যে কারণে অনেক দিন থেকে ইচ্ছা ছিল, পুজোর সব দিক মাথায় রেখে এমন ভাবে গান গাওয়া, যাতে পুজোর প্রতিটা অনুষঙ্গ গানের মধ্যে দিয়ে ছোঁয়া যায়।’’ অজয় বলে চলেন, “আমার বাবার মাথায় প্রথম এই ভাবনাটা আসে। উনি এ রকম ২৭টি গান বেছেছিলেন। আমার বাবা চক্ষুদানের গান নিজে রচনা করেছিলেন। ভাই সঞ্জয়ও দু’একটি গান রচনা করেছে। এ বার কোভিডের কারণে অনেকেই পুজোয় বাড়িতে থাকবেন। তাই আমার পুত্র অনঞ্জন প্রস্তাব দেয়, এই ২৭টি গান যদি ভিডিয়ো হিসাবে প্রকাশ করা যায়, তা হলে অনেকেই তা উপভোগ করতে পারেন।”

এই সাতাশটি গানের একটি যেমন বেলুড় মঠে রেকর্ড করা, তেমনই একটি গান করুণাময়ী কালীমন্দিরে। একটি গান রেকর্ড করেছেন নিজের বাড়ির ঠাকুরঘরে। পাঁচটি গান গেয়েছেন কৌশিকী, দু’টি অজয়-জায়া চন্দনা এবং বাকি ২০টি গান অজয় নিজে।

পশুপতি রুদ্রপালের তৈরি প্রতিমা

পশুপতি রুদ্রপালের তৈরি প্রতিমা নিজস্ব চিত্র

গত তিন মাস ধরে রিহার্সাল করেছেন। কোভিডবিধি মেনে ছাত্রছাত্রীরাও অংশ নিয়েছেন তাঁর এই স্বপ্নের প্রকল্পে। অজয় বলছিলেন, “আসলে পুজো মানে তো সবাইকে নিয়ে আনন্দ করা এবং নিজেকে ফিরে দেখা। সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে উদ্‌যাপন করা। যে কারণেই এটা বাঙালির সব চেয়ে বড় উৎসব।” এই প্রকল্পে অজয় পাশে পেয়েছেন পুরাণবিদ নৃসিংপ্রসাদ ভাদুড়িকে। যিনি বিভিন্ন সংস্কৃত মন্ত্র এবং স্তোত্রের অর্থ ব্যাখ্যা করেছেন। অশোক চট্টোপাধ্যায় প্রতিটি গান ইংরেজিতে ভাবানুবাদ করেছেন।

পুজোর আবহ ফুটিয়ে তোলার জন্য কুমোরটুলি থেকে মূর্তি গড়ানো হয়েছে। পশুপতি রুদ্রপাল সেই মূর্তি তৈরি করেছেন। সাজসজ্জা করেছেন পরিচালক গৌতম হালদার। সব মিলিয়ে, ভিন্নরূপে শুধু গানে-গানে পঞ্চমী থেকে দশমী দেবী আরাধনায় ব্রতী অজয় ও চন্দনা।

একটা সময় ছিল যখন পুজোর গান নিয়ম করে প্রকাশিত হত। সেই সব গানের রেকর্ড সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার দফতরে রীতিমতো লাইনও পড়ত। এখন তেমন ভাবে বহু শিল্পীর একাধিক পুজোর গান প্রকাশিত হয় না। বরং, একটা-দুটো গান পুজো উপলক্ষে প্রকাশিত হয় নেটমাধ্যমে। সেই ‘নিয়ম’-এর ব্যতিক্রম হতে চলেছে এ বার। দীর্ঘ দিন বাদে পুজোয় এক সঙ্গে অনেকগুলি গান পেতে চলেছে বাঙালি। মহালয়ার দিন প্রথম এই গানের টিজার আত্মপ্রকাশ করবে। দেখা যাবে আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউব চ্যানেলে। এর পর বাকি গান অজয় পর্যায়ক্রমে পঞ্চমী থেকে দশমীতে প্রকাশ করবেন নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে। অনুষ্ঠান প্রযোজনা করেছে শ্রুতিনন্দন। প্রতিষ্ঠানের সব ছাত্রছাত্রী এতে অংশগ্রহণ করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE