Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ইতিহাস আর কল্পনার রোমাঞ্চকর বুনট

দুর্গাপুজো, তার শতাব্দী প্রাচীন মন্ত্র, হাতে আঁকা চালচিত্র, চিরাচরিত প্রথা— এ সবের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে দুর্গেশগড়ের গুপ্তধনের সন্ধান।

অন্তরা মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৯ ০০:০৪
Share: Save:

গা ছমছমে বাংলার ইতিহাস, পরতে পরতে থ্রিল, গুপ্তধন খোঁজার টানটান রোমাঞ্চ, ধাঁধার জট খুলতে মগজাস্ত্রে শান— সোনাদা ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির দ্বিতীয় ছবিতেও এ সব রসদে কমতি নেই। উপরি পাওনা হিসেবে বরং মিলেছে পুজোর আবহ। সুতরাং গরমের ছুটিতেই জাঁকিয়ে বসল ডাবল ভেকেশনের মেজাজ! সে ভাবে দেখলে খুদেদের জন্য উপহারটা ভালই সাজানো হয়েছে। অবশ্য শুধু খুদেরা নয়, সোনাদার দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট, অর্থাৎ আবীর-ঝিনুকের প্রেম ইয়ং অ্যাডাল্টদের মনেও ফুরফুরে বাতাসের দোলা লাগাবে, তা বেশ বোঝা গেল।

গত বার শাহ সুজার বাদশাহি গুপ্তধন খুঁজে বার করার পরে এ বারের রহস্যের ভাঁজে ভাঁজেও যে ইতিহাসের কাহিনি থাকবে, তার ইঙ্গিত আগেই ছিল। দ্বিতীয় কাহিনির প্রেক্ষাপট দুর্গেশগড়। সেখানে বংশ পরম্পরায় দেব রায় পরিবারের দুর্গাপুজোর বেশ নামডাক। কারণ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় সেই পুজোর পত্তন করেছিলেন নিজের পরম বন্ধু দুর্গাগতি দেব রায়ের পৈতৃক ভিটেয়। কাহিনিতে সুন্দর করে ইতিহাস আর কল্পনার নকশি-কাঁথা বুনেছেন পরিচালক। পলাশীর যুদ্ধে সিরাজৌদ্দোলার বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন জগৎ শেঠ। তাঁকে সহায়তা করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। প্রচুর অর্থের বিনিময়ে। এখন রাজাবাদশাদের অর্থ বলতেই তো সোনাদানা, মণিমাণিক্য, হিরে-জহরত... এক কথায় গুপ্তধন! দুর্গেশগড়ে সেই ধনসম্পদ কোন প্রক্রিয়ায় এল, সেই হস্তান্তরের কাহিনিতেই মিশেছে থ্রিল এবং তথ্য। জগৎ শেঠ যে অষ্টাদশ শতকে বাংলার এক জন বিখ্যাত ব্যাঙ্কার ছিলেন, যাঁর কোষাগারে তৎকালীন ইংল্যান্ডের চেয়েও বেশি পরিমাণ সম্পদ ছিল— শুনেও চমক লাগে! কিংবা রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পারিষদ গোপাল ভাঁড় এবং সিরাজৌদ্দোলা যে সমসাময়িক, শিহরন জাগবে এ সব অ্যানেকডোটে।

দুর্গাপুজো, তার শতাব্দী প্রাচীন মন্ত্র, হাতে আঁকা চালচিত্র, চিরাচরিত প্রথা— এ সবের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে দুর্গেশগড়ের গুপ্তধনের সন্ধান। আপাতদৃষ্টিতে ছবির প্লট এই ভাবনার নিরিখেই। তবে তলিয়ে ভাবলে দেখা যাবে, ঐতিহ্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সূত্র ধরে যে বিপুল সম্পদের সন্ধান আসলে পাওয়া যাবে— তা হল প্রায় হারিয়ে যেতে বসা একটা অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী বাঙালি সভ্যতা। চরিত্রগুলির নির্মাণে এই ভাবনাটাই বাস্তবে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। যেমন দেব রায় বাড়ির বড় ছেলে পিনাকপাণি দেব রায় (অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়) তার পরিবারের ঐতিহ্যের ধারক। তারই ছোট ভাই ত্রিশূলপাণি দেব রায় (কৌশিক সেন) যা কিছুই ঐতিহ্যবাহী, তা সবই পুরনো, অতএব বাতিলযোগ্য— এই ভাবধারায় বিশ্বাসী। প্রতিটা চরিত্রই যত্নের সঙ্গে বানানো। এই ছবিতে সোনাদা, আবীর, ঝিনুকের বোঝাপড়াটাও জোরালো। সোনাদা হিসেবে আবীর খুবই স্মার্ট, ঝকঝকে। কমেডির বেশির ভাগটাই আত্মস্থ করে নিয়েছে আবীর (অর্জুন চক্রবর্তী)। তার এবং ঝিনুকের (ইশা সাহা) মধ্যেকার ‘ব্যান্টারিং’ উপভোগ করবেন দর্শক।

দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন পরিচালনা: ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনয়: আবীর, ইশা, অর্জুন, কৌশিক, অনিন্দ্য, খরাজ ৬.৫/১০

ছবির দুর্বল জায়গা উল্লেখ না করলে সমালোচনা অসম্পূর্ণ। গুহার মধ্যে ভল্লুকের আচম্বিতে ঝিনুককে আক্রমণ করা, জলের তলায় চুলের সেটিং-মুখের আদলের বদল না ঘটিয়েই রহস্য উদ্‌ঘাটন, আনাড়ি মারপিটের দৃশ্য বেদনা দেয়। মনে হয়, আর একটু পরিশ্রম করলে গরম-রাজনীতির ভরা বাজারে ছবিটি হয়তো গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ারই মতোই হতো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgeshgorer Guptodhon Tollywood Celebrities
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE