Advertisement
E-Paper

উন্মুক্ত ঊর্ধ্বাঙ্গ, ভেজা চুমুতে কোনও আপত্তি নেই! কিন্তু দর্শক ওই দৃশ্যে আটকে থাকলেই সমস্যা

“‘ডিপ ফ্রিজ’ মানে শুধুই শীতলতা নয়। ডিপ ফ্রিজে কিন্তু আইস প্যাক থাকে। বরফের ওই টুকরো ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা হয়।”

উপালি মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:৪১
আবীর চট্টোপাধ্যায় কি ক্রমশ পর্দায় সাহসী হচ্ছেন?

আবীর চট্টোপাধ্যায় কি ক্রমশ পর্দায় সাহসী হচ্ছেন? ছবি: ফেসবুক।

গাঢ় বাদামি রঙের টি-শার্ট আর কালো ট্রাউজ়ার। পর্দায় নায়িকা তনুশ্রী চক্রবর্তী যে ভাবে তাঁকে ‘উষ্ণ’ তকমা দিয়েছেন, প্রচার-ঝলকমুক্তিতে এসে ততটাই উষ্ণতা ছড়ালেন আবীর চট্টোপাধ্যায়। অর্জুন দত্তের ‘ডিপ ফ্রিজ’ দিয়ে আড্ডা শুরু। সম্পর্কের শীতলতা, পরকীয়া হয়ে বিচ্ছিন্ন দাম্পত্য— কিচ্ছু বাদ দিলেন না!

প্রশ্ন: ‘ডিপ ফ্রিজ’ মানেই মাছ, মাংস... আঁশটে ব্যাপার!

আবীর: (মৃদু হেসে) ডিপ ফ্রিজের সঙ্গে শীতলতা বা শৈত্য শব্দটা যায়। অর্জুন দত্তের ছবিতে বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য। সেই জন্যই পরিচালক এই নাম দিয়েছেন। ছবিতে তিনটি ভাগে গল্প বলা হয়েছে। তার মধ্যে দু’টি ডিপ ফ্রিজ, ডি-ফ্রস্ট। সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আমরা জানি যে, যখন শীতলতা বা শৈত্য চলে আসে, তখন সেই সম্পর্কের উষ্ণতা হারিয়ে যায়। ‘ডিপ ফ্রিজ’ ছবিতে সেটাই দেখানো হয়েছে। তবে তার সঙ্গে আরও একটি জিনিস কিন্তু ডিপ ফ্রিজে থাকে...

প্রশ্ন: কী?

আবীর: আইস প্যাক বা আইস কিউব। এগুলো ব্যথা বা যন্ত্রণায় আরাম দেয়। বিশেষ করে যাঁরা শরীরচর্চা করেন, তাঁদের এগুলো খুবই কাজে লাগে। কাজেই যন্ত্রণা উপশমেও কিন্তু ডিপ ফ্রিজ কাজে দেয়। অর্থাৎ, ডিপ ফ্রিজ মানে শুধুই সম্পর্কের শীতলতা নয়। এ ভাবেও ব্যাপারটা ভাবা যেতে পারে।

প্রশ্ন: আবীরের ডিপ ফ্রিজে কী থাকে?

আবীর: (হেসে ফেলে) আমার ডিপ ফ্রিজেও আইস প্যাক থাকে। আর থাকে ডার্ক চকলেট, মাছ, মাংস। ফলও থাকে। তবে আমি ও সবে হাত দিই না।

প্রশ্ন: বেশি বরফ জমে গেলে আমরা ‘ডি-ফ্রস্ট’ করি, বরফ গলতে দিই। এতে পুরনো উষ্ণতা ফেরে। সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়?

তনুশ্রী চক্রবর্তী, আবীর চট্টোপাধ্যায় ‘ডিপ ফ্রিজ’ ছবিতে।

তনুশ্রী চক্রবর্তী, আবীর চট্টোপাধ্যায় ‘ডিপ ফ্রিজ’ ছবিতে। ছবি: সংগৃহীত।

আবীর: কিছু কিছু সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেটা হয়। কিছু সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে ঠিক হয়েও যায়। অবশ্যই নির্ভর করে কী ধরনের সম্পর্ক বা কতটা সময় চলে গিয়েছে— তার উপরে। সে ক্ষেত্রে সব সময়ে যে বিবাহিত সম্পর্ক হতে হবে, এমনও কথা নেই। তবে সিংহভাগ নির্ভর করে দু’জন মানুষের মানসিকতার উপরে। এখন তাঁরা কী ভাবে আছেন, কী ভাবে দেখছেন বিষয়টিকে, তার উপরে।

প্রশ্ন: একটি ছবিতে সম্পর্কের এত স্তর দেখানো হয়েছে বলেই কি অভিনয়ে রাজি?

আবীর: আমি কিন্তু শুরুতে রাজি হইনি। একে তারিখ নিয়ে সমস্যা। তার পর গল্প নিয়ে কিছু ‘রিজ়ার্ভেশন’ ছিল। এক-দেড় মাস পরে অর্জুন আবার আসেন। তখন আমার হাতে তারিখ ছিল। দফায় দফায় বৈঠকের পর বিষয়টির প্রতি আমার বিশ্বাস জন্মায়। এ-ও মনে হয়, কোনও অভিনেতার কাছে পরিচালকের ফিরে আসা মানে তিনি নিজের ছবি নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। একই সঙ্গে ওই অভিনেতার উপরেও। তার পর দু’জনে আলোচনা করে অর্জুনের ‘স্বর্ণাভ’ হতে রাজি হই। এটাও বুঝেছিলাম, চট করে কেউ আমায় এই ধরনের চরিত্রের জন্য বাছবে না। এ কথা পরে অনেক সমালোচক বলেছেন। যা-ই হোক, চরিত্র হয়ে উঠতে গিয়ে নিজেকে অনেক ভেঙেছি। ভাবনারও অনেক বদল ঘটিয়েছি। এটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি সেটা গ্রহণ করেছি। আর অর্জুন ফ্লেক্সিবল হলেও, যা বলব সেটাই মেনে নেওয়ার লোক নন। দিনের শেষে উনি কিন্তু নিজের যুক্তি ধরে থাকেন। ওঁর এই আচরণও ছবিতে কাজ করার আরও একটি কারণ।

প্রশ্ন: অনেক দিন পরে তনুশ্রী চক্রবর্তী আপনার নায়িকা। অনেক বদল দেখলেন?

আবীর: ওর অনেক ‘গ্রোথ’ হয়েছে। এমনিতেই প্রচণ্ড সিরিয়াস অভিনেত্রী। সেটা পর্দা ছাপিয়ে সেটেও ছড়িয়ে পড়ে! আমরা তাই নিয়ে পিছনে লাগি। যেমন, সেটে আমাদের সকলের অভিভাবক হয়ে যায় ও। বন্ধুদের ছোট ভাই-বোনের মতো শাসন করে। কথাই শুরু করে ‘শোন’ বলে। তনুশ্রী এটা উচ্চারণ করলেই আমার মুখচোখ এমন হয়ে যায় যে, ও বোঝে আমি শুনছি না। তা-ই নিয়ে খুনসুটি শুরু। পরিচালক অর্জুন আমাদের এই ছবির জন্য বেছেছেন ‘আবার বছর কুড়ি পরে’ ছবি দেখে। ওখানে আমরা পুরনো বন্ধু। বাস্তবেও আমরা সেটাই। ফলে, পরিচালক শ্রীমন্ত সেনগুপ্তের নির্দেশের বাইরে গিয়ে আমরা এমন কিছু করেছিলাম, যেটা অর্জুনের নজর কেড়েছিল। অর্থাৎ, আমাদের রসায়ন ক্লিক করেছিল। আরও একটা ব্যাপার, তনুশ্রীর অভিনয় কিন্তু জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্র উৎসব— সর্বত্র প্রশংসিত।

তনুশ্রী চক্রবর্তী কি টলিউডে কম ব্যবহৃত?

তনুশ্রী চক্রবর্তী কি টলিউডে কম ব্যবহৃত? ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: অথচ তনুশ্রীকে সে ভাবে টলিউড ব্যবহারই করল না!

আবীর: তনুশ্রী কিন্তু অনেক ভাল ছবি উপহার দিয়েছে। নানা স্বাদের ছবি সে সব। ওকে টলিউড সঠিক ব্যবহার করল না বা পারল না— যেটাই বলুন, সেটায় কিন্তু টলিউডের পাশাপাশি দর্শকেরও ভূমিকা রয়েছে। দর্শক চাইলে সব সম্ভব।

প্রশ্ন: আপনার দাম্পত্যে কখনও শৈত্যপ্রবাহ এসেছে?

আবীর: ফ্রিজেই যায়নি তো ডিপ ফ্রিজে! (জোরে হাসি)

প্রশ্ন: এই প্রজন্ম কি শীতলতার ভয়েই সম্পর্কে জড়ায় না?

আবীর: শুধুই এই ভয়ে নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লোকের মানসিকতা বদলে যায়। স্বাধীন জীবনযাপনের প্রতি আলাদা ঝোঁক থাকে। অর্থনৈতিক কারণ থাকতে পারে। এখন পেশার কারণে মানুষ নানা জায়গায় চলে যায়। এটাও একটা কারণ। সব মিলিয়েই হয়তো। আমার অন্তত এটাই ধারণা। দেখুন, আমি তো এই প্রজন্মের নই। ফলে, ওদের অনুভূতি বা ভাবনা ততটাও বুঝি না।

প্রশ্ন: পারস্পরিক বোঝাপড়ায় ফাটল ধরলেই পরকীয়া বা বিচ্ছেদ?

আবীর: না, সেটা হয়তো নয়। অনেক সময় পারস্পরিক শ্রদ্ধা কমে যায় বা চলে যায়। পরস্পর অচেনা হয়ে ওঠে ক্রমশ। পুরোটাই নির্ভর করে সম্পর্ক এবং সেই সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা দুটো মানুষের উপরে। সম্পর্ক নষ্ট মানেই পরকীয়া বা বিচ্ছেদ— এ রকম অলিখিত কোনও নিয়ম নেই।

প্রশ্ন: বিচ্ছেদের পরেও ইদানীং মা-বাবা একসঙ্গে সন্তান মানুষ করেন। ব্যাপারটা ‘সোনার পাথরবাটি’র মতো না?

আবীর: সম্পর্কের অনেক ঘাত-প্রতিঘাত আছে। অনেকগুলো জায়গা আছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক একরকম। তাঁরাই সন্তানের বাবা-মা যখন, তখন সম্পর্ক বদলে যায়। দ্বিতীয় বিষয়, বিচ্ছেদ কিন্তু সন্তানের উপরে প্রচণ্ড ছাপ ফেলে। কারণ, ছেলে বা মেয়ের কাছে স্বামী-স্ত্রী শুধুই বাবা-মা। তারা উভয়কে একসঙ্গে পেতে চায়। তারা বিচ্ছেদ বোঝে না। সেই চাওয়া থেকেই মা-বাবারা চেষ্টা করেন, একসঙ্গে সন্তানকে বড় করে তুলতে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, চেষ্টাই সার। কারণ দূরত্ব, সময়ের পার্থক্য-সহ আরও নানা বিষয় তখন জড়ো হয়। আলাদা থাকলে যা হয়। এটা কতটা যন্ত্রণার, যাঁরা এর মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তাঁরা ভাল জানেন। তবে কেউই তো খুব শখ করে বিচ্ছেদের রাস্তায় হাঁটেন না। শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। সন্তানের মুখ চেয়েই।

প্রশ্ন: ধরুন, কোনও পুরুষের দুই বিবাহ থেকে দুই সন্তান। তাদের মানুষ করার ক্ষেত্রে ওই পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হয়?

আবীর: সমান হবে। বাবা তো আফটার অল বাবা! তাই না? (হাসি)

প্রশ্ন: ছবিতে নাকি আবীরকে উন্মুক্ত ঊর্ধ্বাঙ্গে দেখা যাবে! ভেজা চুমু খেয়েছেন। সাহসী হচ্ছেন, না কি সাবালক?

আবীর: (লাজুক হাসি) ও রকম কিছু না। আমার আগের ছবিগুলোতেও কিন্তু এই ধরনের দৃশ্য ছিল। পর্দায় উন্মুক্ত ঊর্ধ্বাঙ্গ বা গাঢ় চুম্বনে আপত্তি নেই। ছবির জন্য এই ধরনের দৃশ্য থাকতেই পারে। তা-ই দেখে বন্ধুরা হাল্কা ঠাট্টা করে। উপভোগ করি। কিন্তু দর্শক যদি শুধু ওই দৃশ্যই মনে রাখেন বা ওই ধরনের দৃশ্যে আমায় সীমাবদ্ধ করে ফেলেন— তাতে আপত্তি।

ফের পর্দায় আবীর-তনুশ্রীর রসায়ন।

ফের পর্দায় আবীর-তনুশ্রীর রসায়ন। ছবি সংগৃহীত।

প্রশ্ন: নিয়মিত শরীরচর্চা কি এই ধরনের দৃশ্যে সাবলীল থাকার জন্যই? এই প্রজন্মের তরুণীরা নাকি আবীরের ‘ফিজিক’-এ ফিদা? অনুরাগিণী বাড়ছে!

আবীর: (হা হা হাসি), অভিনেতাকে শারীরিক দিক থেকে ফিট থাকতে হবে। সেটাও একটা ব্যাপার। আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব এই প্রজন্মের তরুণীরাই ভাল দিতে পারবেন। তবে শরীরচর্চার ক্ষেত্রে সত্যিই যদি কারও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকি তা হলে বলব, আমাকে দেখে কেউ শরীরচর্চার কথা ভাববেন না। আপনার যেটা ভাল লাগে সেটাই করুন। সুস্থ থাকা কাম্য। কারও মতো হয়ে ওঠা নয়।

প্রশ্ন: আপনি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে অনুপস্থিত... আপনার ‘বন্ধু’ তনুশ্রী ছবির প্রচারে!

আবীর: পুরোটাই ছবির প্রচারের কারণে। যখন প্রচার শেষ হচ্ছে, তখন আর যাওয়ার সময় থাকছে না। উৎসবের শেষ দিন যাওয়ার ইচ্ছা আছে। দেখা যাক। তবে ২০২২ সাল পর্যন্ত নিয়মিত যেতাম কিন্তু। রইল বাকি তনুশ্রীর কথা। ছবির গানমুক্তির সময় ও রাজস্থানে হিন্দি ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিল। এখন বিদেশে। আমাকে যথারীতি অভিভাবকসুলভ জ্ঞান দিয়েছে, “শোন, তুই কিন্তু তোর তরফ থেকে বিষয়টা দেখে নিস। আমি আমার মতো করে সামলে নেব।” তনুশ্রী কিন্তু ভিডিয়ো সাক্ষাৎকার দিয়েছে। দেখেননি?

Tanusree Chakraborty Arjunn Dutta Deep Fridge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy