Advertisement
১৮ মে ২০২৪

‘সিরিয়ালের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আমাকে বেশি টানে’

অভিনয়ের হাতেখড়ি তৃপ্তি মিত্রের কাছে হলেও অভিনয়কে পেশা করবেন ভাবেননি। অথচ আজ অভিনয় নিয়েই তিনি চূড়ান্ত ব্যস্ত। তাঁর জীবনের দীর্ঘ যাত্রাপথের গল্পে ঋতা দত্ত চক্রবর্তী। অভিনয়ের হাতেখড়ি তৃপ্তি মিত্রের কাছে হলেও অভিনয়কে পেশা করবেন ভাবেননি। অথচ আজ অভিনয় নিয়েই তিনি চূড়ান্ত ব্যস্ত। তাঁর জীবনের দীর্ঘ যাত্রাপথের গল্পে ঋতা দত্ত চক্রবর্তী।

ঋতা

ঋতা

পিয়ালী দাস
শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৯:১০
Share: Save:

একাধিক ধারাবাহিক, সঙ্গে থিয়েটার...সব নিয়ে আপনি তো বেজায় ব্যস্ত!

‘‘অভিনয় নিয়ে এতটা ব্যস্ত থাকব কখনও ভাবিনি। টালিগঞ্জে কাজ করব, সিরিয়াল করব আমার ভাবনার মধ্যেই ছিল না। থিয়েটারটা ভালবেসে করেছি। যাদবপুর থেকে সংস্কৃতে এমএ করার পরে বিএড করি। কাজেই শিক্ষকতা করতেই পারতাম।’’ পড়াশোনার সূত্রেই কলকাতায় আসা। যাদবপুরে পড়াকালীন ফোটোগ্রাফি এবং ড্রামা ক্লাব নিয়ে সিরিয়াস ছিলেন। উত্তর কলকাতায় এক ছোট্ট ঘরে থেকেছেন স্রেফ থিয়েটার করবেন বলেই। তৃপ্তি মিত্রের কাছে অভিনয়ের হাতেখড়ি। এই স্কুলিং কতটা কাজে দিয়েছে? ‘‘সম্পূর্ণভাবে। জেঠিমা (তৃপ্তি মিত্র) একটা কথা বলতেন, ‘আমাকে কখনও নকল করবি না। বুঝে নিয়ে নিজের মতো করে করবি।’ দ্বিতীয়ত, ওঁর কাছ থেকে শিখেছি কাজের প্রতি ডিসিপ্লিন এবং সিরিয়াসনেস। সিরিয়াস থিয়েটার সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণাও তৈরি হয় জেঠিমার হাত ধরেই।’’

পাকেচক্রে থিয়েটারের সূত্রেই সিরিয়ালে সুযোগ পাওয়া। ডেবিউ ইন্দর সেনের পরিচালনায়, ‘জননী’ ধারাবাহিকে। রাজা সেন ডেকেছিলেন ‘সুবর্ণলতা’ ধারাবাহিকের জন্য। বড় পরদায় নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘শিল্পী’-তে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। রাজা দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে অনেক নামী পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। দূরদর্শনের ‘শ্রীরামকৃষ্ণ’র সময় থেকে তিরিশ বছর ধরে নিয়মিত কাজ করে চলেছেন। ‘‘এখনকার অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা ধারাবাহিক ভাবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের সময় সপ্তাহে একটা কাজের পর আবার হয়তো একমাস পরে ়ডাকা হতো। তখন প্রাইভেট চ্যানেলও ছিল না। এখনকার নায়িকারা অনেক কম বয়সেই সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। আগে এমনটা হতো না।’’ এ নিয়ে আক্ষেপ হয় না? ‘‘একেবারেই না। আমার নিজেরও তো একটা ছেলে আছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা যারা কাজ করছে, আমার সন্তানতুল্য। ওদের কাজ ভাল হলে আমার কিন্তু আনন্দ হয়। তা ছাড়া আমি সাফল্য, ব্যর্থতাকে অন্য চোখে দেখি। আমার জন্ম উত্তরবঙ্গের এক সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বিধ্বংসী বন্যা স্মৃতিতে উজ্জ্বল। এর স্বরূপ যে-মানুষ দেখেছে, সাফল্য আর ব্যর্থতা তাকে জীবনকে অন্য চোখে দেখতে শেখায়। নিজের শর্তে স্বাধীনভাবে বাঁচাই আমার কাছে বড় কথা।’’

ঋতা এখন ‘কুসুমদোলা’, ‘গাছকৌটো’, ‘অন্দরমহল’ তিন তিনটে ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন। সব চরিত্রই কি ডার্ক শেডের? ‘‘না, তিনটি চরিত্রই ভিন্ন। যেমন ‘কুসুমদোলা’র চরিত্রটা খুব পজিটিভ। সিরিয়ালে ক্যারেক্টার রোল গুরুত্বপূর্ণ। শুধু লিড দিয়ে তো একটা মেগা চালানো যায় না।’’ ব্রাত্য বসুর ‘বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী’ নাটকেও আছেন। এত ব্যস্ততার মাঝে থিয়েটারে সময় দেন কী ভাবে? ‘‘আসলে আমি সময় এবং ডিসিপ্লিনের বিষয়ে একটু কড়া। ব্যক্তিগত সমস্যার প্রভাব কাজে পড়তে দিইনি। আমার গুরু, বাবা-মা এ ভাবেই আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। তাই প্রয়োজনে ছুটি চাইলে সহজেই পেয়েছি। আমি কাজটাকে খুব এনজয় করি। জানেন তো, সবচেয়ে বেশি কমফোর্ট ফিল করি ফ্লোরে বা স্টেজে। কোনও দিন ক্যামেরার সামনে না দাঁড়ালে দিনটাই বৃথা মনে হয়। আমার মনের মধ্যে একটা বালুরঘাট আর একটা টালিগঞ্জ আছে। দুটোকেই একসঙ্গে বয়ে নিয়ে চলেছি।’’

সংস্কৃত নিয়ে পড়ার সূত্রে প্রাচীন নাট্যশাস্ত্র, নাট্যকলার সঙ্গে আপনার প্রত্যক্ষ পরিচয়। অভিনয় জীবনে এটা কতটা সাহায্য করেছে? ‘‘ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন। মানুষের জীবনে আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই জ্ঞান আর প্রজ্ঞাকে। এগুলো সব সময়ই কাজে লাগে। এক সময় আকাশবাণী এফএম-এর ফাউন্ডার টকার ছিলাম। একবার পয়লা আষাঢ়ের অনুষ্ঠানে স্ক্রিপ্ট ছাড়াই পুরো প্রোগ্রামটা টানতে হবে। অথচ কিছু রেডি নেই! তখন মনে হল, আচ্ছা আমরা তো মেঘদূত পড়েছি...’’

এখন ছবির ধরন বদলেছে। চিত্রনাট্যই আসল নায়ক। চরিত্রাভিনেতাদের সুযোগ বাড়ছে সিনেমায়। বড় পরদায় অভিনয়ের ইচ্ছে নেই? ‘‘ছবির ক্যানভাস তো বড়, ভাল লাগবেই। যদি কেউ ভাল চরিত্র দেন, অবশ্যই করব। আমি একটু গুটিয়ে থাকি। যেচে কাউকে কাজের কথা বলতে পারি না। অবশ্য এ সব নিয়ে এখন আর ভাবি না। জীবন যেমন আসবে, তাকে তো সেভাবেই গ্রহণ করতে হবে। কমার্শিয়াল ছবিতে আমাকে এখন ‘হয় মা নয় শাশুড়ি’ চরিত্র দেওয়া হবে। তার চেয়ে সিরিয়ালের কমপ্লেক্স রোল বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আমাকে বেশি টানে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE