Advertisement
E-Paper

আমাকে ছেলের ছবি পোস্ট করে প্রচার করতে হয় না

বললেন অক্ষয় কুমার। বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে। মুম্বইয়ে মুখোমুখি অরিজিৎ চক্রবর্তী।বললেন অক্ষয় কুমার। বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে। মুম্বইয়ে মুখোমুখি অরিজিৎ চক্রবর্তী।

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০০

ফোনে চৌরঙ্গি লেনের ক্যাপিটাল গেস্ট হাউজের ছবিটা দেখালাম। চিনতে সময় নিলেন ঠিক দু’সেকেন্ড। বললেন, ‘‘থাকতাম তো এখানে।’’

মানে অক্ষয়ের বন্ধুরা ঠিকই বলছিলেন। মাঝে মাঝেই কলকাতায় আসেন তিনি। না হলে কৈশোরের স্মৃতি এত তাজা থাকে কী করে!

কেউ তো জানতে পারে না? ‘‘বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকঢোল পিটিয়ে যাব নাকি!’’ সটান উত্তর অক্ষয় কুমারের।

আপনার কলকাতার বন্ধুরা বলছিলেন রেড রোডে স্কুটিতে স্টান্টের গল্প। কিন্তু আটচল্লিশ বছর বয়সে কখনও পাঁচতলা বাড়ি থেকে ঝাঁপাচ্ছেন, কখনও সিংহের সঙ্গে নাচছেন। বউ বকাবকি করেন না?

হা হা হা... আগে টিনা (টুইঙ্কল খন্না) খুব বকাবকি করত। পরে দেখেছে এ তো এই রকমই। বকাবকি করে কোনও লাভ নেই। তাই হাল ছেড়ে দিয়েছে। একটা সময় আসে না, যখন ফ্যামিলি বোঝে বকাঝকা করে আর কিছু হবে না। আমারও এখন তেমন হয়েছে (হাসি)। তবে একটা কথা বলি, নিজের স্টান্ট তো করে আসছি প্রথম থেকেই। ওটা তাই অভ্যাস হয়ে গেছে। বন্য প্রাণীদের সঙ্গেও অভিনয়টা চালিয়ে নেওয়া যায়। পোষ মানানো যায় তো। বসতে বললে বসে, হাঁটতে বললে হাঁটে। কিন্তু বাচ্চারা। উফ্! বাচ্চাদের সঙ্গে অভিনয় করাটা সাঙ্ঘাতিক চাপের। এক ঘণ্টার বেশি থাকবেই না সেটে...

কিন্তু আপনি তো সেই পঁচিশ বছর ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেটে থাকছেন। বছরে পাঁচ-ছ’টা সিনেমা...

কে বলেছে! জিজ্ঞেস করুন না, প্রভুস্যরকে (‘সিংহ ইজ ব্লিং’‌য়ের পরিচালক প্রভু দেবা)। দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করি না। দেখুন, একটা সিনেমা করতে লাগে ষাট দিন। চারটে সিনেমা করলে দাঁড়ায় দু’শো চল্লিশ দিন। তাও তো পড়ে থাকল একশো পঁচিশ দিন। কয়েক দিন দিলাম প্রোমোশনে। তার পরেও তো অঢেল সময়। এই তো দেড় মাস ফ্রান্সে ছুটি কাটিয়ে এলাম। এত সময় নিয়ে করবটা কী!

শাহরুখ, আমির, সলমন-রা তো বছরে একটার বেশি ছবি করেন না!

অন্যদের কথা বলতে পারব না। তবে আমার মনে হয় একটার বেশি ছবি যারা করে না তারা অলস। সবাই যদি সেটে হান্ড্রেড পার্সেন্ট দেয়, ঠিকঠাক সময়ে সেটে আসে, তা হলে বছরে চার-পাঁচটা ছবি কোনও ব্যাপারই নয়। কিন্তু উপরের দিকের লোকগুলো যদি আনপ্রফেশনাল হয়, দেরি করে সেটে আসে, তবে অসুবিধা হবেই। অন্যরাও ততটা মন দিতে পারে না কাজে।

রেমুনারেশনটাও একটা ব্যাপার। ছবি প্রতি পঁয়তাল্লিশ কোটি টাকা, মানে বছরে...

না, ভাই, আমি টাকার জন্য সিনেমা করি না। এই প্রশ্নটা কুড়ি বছর আগে কেউ করলে বলতাম, হ্যাঁ, আমি টাকার জন্য সিনেমা করি। আরে টাকা কামাতেই তো সিনেমায় এসেছিলাম। আগে কোনও সাক্ষাৎকারে যদি সেটা অস্বীকার করে থাকি তা হলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কিন্তু এখন কেউ আমার দিকে আঙুল তুলতে পারবে না। বলতে পারবে না শুধু টাকার জন্য ছবি করি। আমি অভিনয় করি চরিত্রগুলোর জন্য। এ বছরই তো ‘বেবি’ করেছি, ‘গব্বর...’ করেছি, ‘ব্রাদার্স’ করেছি... কোনওটাই তো বাণিজ্যিক ছবি না। প্রত্যেকটায় আলাদা আলাদা চরিত্র। কোনওটা হয়তো তিনশো কোটি করেনি।
কিন্তু লোকে বলেছে ‘ওহ মাই গড’ থেকে তারা নতুন কিছু শিখেছে। ‘ব্রাদার্স’ থেকে মিক্সড মার্শাল আর্টে আগ্রহ বেড়েছে। এগুলো ভাল লাগে। নতুন নতুন ছবি করতে আগ্রহ জন্মায়। একই রকম ছবি করে গেলে তো নিজেরই মনে হয়, কী করছিটা কী!

মানে ছবি তিনশো কোটির ব্যবসা না করলেও আপনি খুশি?

হ্যাঁ, একদম। টাকার অঙ্কটা আমি মাথায় নিয়ে ঘুরি না। আমার নিজের জন্য তো মাসে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। সেটে প্রোডিউসরের টাকায় খাই। সিগারেট খাই না, মদ খাই না, অন্য খরচও নেই। অত টাকা-টাকা করে করবটা কী? আর একটা কথা বলি, এই যে কী সব কথা আছে না, ‘এ লিস্টেড’ অভিনেত্রী, এই ক্যাম্প, ওই ক্যাম্প— ও সবও আমার দরকার হয় না। আরে হলিউড তো নতুন ছেলেকে নিয়ে ‘অবতার’ বানাতে পারে, ‘স্পাইডারম্যান’ করতে পারে... এখানেই খালি আমরা সেই পুরনো মডেলে পড়ে আছি।

কিন্তু দিওয়ালি বা ঈদে আপনার কোনও রিলিজ থাকে না কেন? প্রথমত, সে সময় ছবির ব্যবসা ভাল হয়। দ্বিতীয়ত, শাহরুখ-সলমনের সঙ্গে আপনার লড়াইটাও দেখা যায়...

(একটু ভেবে) ভাল বলেছেন। আমি তো চাই দিওয়ালি কী ঈদে রিলিজ হোক। কে জানে কেন প্রোডিউসররা ওই সময় রিলিজ করায় না। সেটা হলে তো ভালই হয়। দিওয়ালি, ঈদে সবাই বেশি বেশি খরচ করে। কে চাইবে না তখন রিলিজ করাতে! তবে আমি এই ব্যাপারে নাক গলাতে চাই না।

শুনেছি অভিনেত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও আপনি নাক গলান না?

একদম। কাস্টিং নিয়ে আমি কোনও কথা বলি না। ওটা পুরোপুরি প্রোডিউসর, ডিরেক্টর, কাস্টিং ডিরেক্টরদের ব্যাপার। আমি ওতে নাক গলাব কেন? আমাকে অবশ্যই বলে। কিন্তু ওইটুকুই। আমি শুনি। আগেই তো বলছিলাম, আমার সিনেমা করতে এ সব ‘এ লিস্টেড’ অভিনেত্রী দরকার হয় না। এখন এত রকমের অভিনয় করছি। ‘স্পেশাল ২৬’, ‘বেবি’তে তো নায়িকাই নেই...

পঁচিশ বছর হয়ে গেল অভিনয় জীবনের। চরিত্র নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন। কিন্তু রাতে হোম থিয়েটারে বা টিভিতে নিজের পুরনো ছবিগুলো দেখলে আফশোস হয় না?

কেন হবে? আপনিই বলুন না, অক্ষয় কুমার হতে আপনার আপত্তি আছে?

অবশ্যই নেই।

তা হলে আমার হবে কেন! হ্যাঁ, অনেক ছবিই খুব খারাপ ছিল। মানছি। মনে রাখবেন ওই ছবিগুলোই কিন্তু তখন আমাকে আর্থিক স্বাধীনতা দিয়েছিল। আমি আজ যেখানে আছি তা তো ওই ছবিগুলোর জন্যই। আজ যে নিজের পছন্দ মতো সিনেমা করতে পারছি, তার ভিত তো ওই সব সিনেমাই করে দিয়েছে। থ্যাঙ্ক গড, আজও আমার স্বাস্থ্য ভাল। আমাকে তো একদিনের জন্যও ক্লান্ত দেখায় না। এই তো দু’বছর পর কমেডি করলাম। ‘সিংহ ইজ ব্লিং’। আট বছর পর আবার ‘সিংহ’ সাজলাম। এর পর আছে ‘এয়ারলিফ্ট’। এখনও তো সমানে অ্যাকশন মুভি করে চলেছি।

কমেডি মিস করছিলেন?

না না না। কমেডি ততটা মিস করি না। মিস করি সাসপেন্স থ্রিলার। এখন তো আর তেমন সাসপেন্স থ্রিলার হয়ও না। অবশ্য এই সোশ্যাল মিডিয়ার দৌরাত্ম্যে হয়তো ওই ঘরানার ছবি চলতও না। ‘খিলাড়ি’ এখন রিলিজ করলে সেটাও হয়তো চলত না। সিনেমা হল থেকেই তো সবাই ফেসবুক, টুইটারে দিয়ে দিচ্ছে অপরাধী কে। ব্যস, ফিনিশ! লোকে আর তা হলে সিনেমা হলে যাবে কেন! তবে আর একটা জিনিসও খুব মিস করি। হরর কমেডি। আমার পঁচিশ বছরের কেরিয়ারে যদি কোনও সিনেমা করে আমার নিজের খুব ভাল লেগে থাকে, তা হলে সেটা অবশ্যই ‘ভুলভুলাইয়া’। ওই রকম কাজ আর পাই না বলে খারাপ লাগে।

সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে আপনি খুব বিরক্ত দেখছি। শাহরুখ তো সব সময় পোস্ট করছেন। ছেলের ছবি দিচ্ছেন...

অন্যদের কথা জানি না। কারও নামও নিতে চাই না। তবে আমার প্রচারে ছেলে-মেয়ের ছবি পোস্ট করতে হয় না। আমি নিজের কাজ আর পরিবার আলাদা করে রাখি। ছেলে-মেয়েকে নিজের কাজের ক্ষেত্রে টেনে আনি না।

তা হলে বলুন আটচল্লিশেও এমন ফিজিকের সিক্রেটটা কী?

সিক্স প্যাক, এইট প্যাকের পিছনে না দৌড়নো। জানেন, আমার বাড়িতে একটা জিম আছে। (হোটেলের বল রুম দেখিয়ে) এই ঘরের মতো বড়। কিন্তু কোনও ইকুইপমেন্ট নেই।
একদম ফাঁকা ঘর। সিলিং থেকে একটা রোপ ঝুলছে। আমার ট্রেনিংটা পুরোপুরি নিজের বডি ওয়েট নিয়ে। ভোর ছ’টায় ওঠা, ন’টার মধ্যে ডিনারের ব্যাপারটা তো জানেনই। আর অবশ্যই পরিবারকে সময় দেওয়া। মন ভাল থাকলে দেখবেন শরীরও আপনাআপনিই ভাল থাকবে।

পরিবারের কথা যখন উঠল তখন বলুন, বেস্টসেলার টুইঙ্কল খন্নার সাফল্য কেমন উপভোগ করছেন?

খুব ভাল লাগছে। এটা হওয়ারই ছিল। ও আসলে খুব দৃঢ় মনের মানুষ। যেটা করবে ঠিক করে সেটা করেই ছাড়ে। ইন্টিরিয়ার ডিজাইনিংয়ে নিজের লেবেল শুরু করেছিল। সেটাতেও সফল হয়েছিল। ‘মিসেস ফানিবোনস’‌ যে বেস্ট সেলারের তালিকায়, সেটার কারণও ওই ডিটারমিনেশন।

শেষ প্রশ্ন করি, স্ত্রী যদি আবার বলিউডে ফেরত আসতে চান, আপনি সাপোর্ট করবেন?

ও তো অভিনয় করতে চায় না। শি হেটস ইট। মাত্র চোদ্দোটা ছবি করেই তো ও ছেড়ে দিল। ওর তো কোনও অসুবিধা ছিল না। সুপারস্টারের মেয়ে। কেরিয়ারের খুব ভাল সময়। তবু তো ছেড়ে দিয়েছিল। দিব্যি আরও পাঁচ-সাত বছর অভিনয় করে যেতে পারত। কিন্তু নিজেই করল না।

ওহ্, তার মানে এ সব নিয়ে কথা হয় আপনাদের?

পাগল! বউয়ের সঙ্গে কেউ কেরিয়ার নিয়ে কথা বলে!

akshay kumar ananda plus cover story akshay kumar interview akshay kumar exclusive interview akshay kumar ananda plus akshay kumar lifestyle akshay kumar untold story rajiv bhatia arijit chakraborty abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy