প্রোবায়োটিক, প্রিবায়োটিক— ‘নাম তো শুনা হী হোগা’! সমাজমাধ্যমে, পুষ্টিবিদের সাক্ষাৎকারে, স্বাস্থ্যের পরামর্শ দেওয়া অজস্র প্রতিবেদনে এই শব্দের প্রয়োগ দেখে থাকবেন। কিছু খাবারের উপকারিতা বোঝাতে ওই শব্দ দু’টির প্রয়োগ করা হয়। প্রোবায়োটিক এবং প্রিবায়োটিক উভয় ধরনের খাবারকে উপকারী হিসেবে বর্ণনাও করা হয়। দুই খাবারের নামও খানিকটা একই ধরনের। কিন্তু কাজে এবং গুণেও কি দুই খাবার একই রকমের? কোনটি বেশি ভাল? শরীরের জন্য কোনটি বেশি দরকার? কোনটি খেলে কিছু বেশি উপকার পাওয়া যাবে? ভারতীয় ক্রিকেট তারকা বিরাট কোহলির পুষ্টিবিদ রায়ান ফার্নান্দো জানাচ্ছেন, প্রোবায়োটিক আর প্রিবায়োটিকের মধ্যে এ ভাবে গুণ বিচার করে কোনও একটিকে বেছে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, প্রোবায়োটিক এবং প্রিবায়োটিক—দুটিই পেটের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। পার্থক্য এটাই যে এদের কাজ করার ধরনটি আলাদা।
প্রোবায়োটিক বনাম প্রিবায়োটিক
প্রোবায়োটিক: প্রোবায়োটিক হল এমন খাবার যাতে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া জীবন্ত অবস্থায় থাকে। এই ধরনের খাবার খেলে তা সরাসরি পেটে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। ফলে এক দিকে যেমন হজম ক্ষমতা বাড়ে এবং তেমনই উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলি অন্ত্রে থাকা ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়াকে নষ্টও করে দিতে পারে।
প্রিবায়োটিক: প্রিবায়োটিক হল অন্ত্রের থাকা ওই সমস্ত উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার খাবার। এটি থাকে এক ধরনের হজম অযোগ্য ডায়েটারি ফাইবারে। শরীর এই খাবার হজম করতে পারে না বলে তা সরাসরি ক্ষুদ্রান্ত্র দিয়ে বৃহদন্ত্রে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে থাকা ব্যাক্টেরিয়া ওই ফাইবারকে গেঁজিয়ে তা থেকে পুষ্টিগ্রহণ করে এবং বংশ বৃদ্ধি করে।
কোনটি বেশি জরুরি?
পুষ্টিবিদ রায়ান জানাচ্ছেন শরীর সুস্থ রাখতে দুটিরই সমান প্রয়োজন আছে। তাঁর কথায়, ‘‘যদি শুধু প্রোবায়োটিক খান অর্থাৎ উপকারী ব্যাক্টেরিয়া সমৃদ্ধ খাবার খান এবং তাদের ভাল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান না দেন, তবে ভালো ব্যাক্টেরিয়া বাঁচবে না। আবার যদি শুধু প্রি-বায়োটিক খেলেও কাজ হবে না যদি অন্ত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভালো ব্যাক্টেরিয়া না থাকে। তাই খাদ্যতালিকায় প্রোবায়োটিক এবং প্রিবায়োটিক দুটিই রাখা জরুরি। বিজ্ঞানের ভাষায় এভাবে পরিকল্পনা করে প্রিবায়োটিক এবং প্রোবায়েটিক মিশিয়ে তৈকি খাবারকে বলা হয় 'সিনবায়োটিক'।’’ যদি হজমের সমস্যা থাকে বা কেউ যদি অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শেষ করে থাকেন, তবে টক দই এবং ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে তাঁর শরীরে নষ্ট হয়ে যাওয়া উপকারী ব্যাক্টেরিয়া আবার তৈরি হবে।
কোন খাবারে কোনটি পাবেন?
প্রোবায়োটিক খাবার: টক দই, ঘোল, নানা ভাবে গেঁজিয়ে তৈরি করা আচার, পনির বা ছানা, মোজারেলা চিজ, ইডলি, দোসা, কাঞ্জি, কেফির ইত্যাদি।
প্রিবায়োটিক খাবার: রসুন, পেঁয়াজ, সামান্য কাঁচা ভাব থাকা কলা, ওটস, খোসা সমেত আপেল, ডাল, মটরশুঁটি, বিভিন্ন রকমের ছোলা-মটর-বিনস এবং শাকসবজি।