Advertisement
E-Paper

ভন্সালীর ‘সুবুদাদা’

ডাক পেয়ে সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর কাছে ৩০টা ড্রয়িং নিয়ে হাজির। সেদিনই ‘পদ্মাবত’এর শিল্প নির্দেশক হিসেবে সুব্রত চক্রবর্তীকে সই করান ভন্সালী। ঝাড়গ্রামের ভূমিপুত্র, ভন্সালীর ‘সুবুদাদা’র বলিউড জয়ের অভিজ্ঞতার কথা শুনলেন  কিংশুক গুপ্ত ডাক পেয়ে সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর কাছে ৩০টা ড্রয়িং নিয়ে হাজির। সেদিনই ‘পদ্মাবত’এর শিল্প নির্দেশক হিসেবে সুব্রত চক্রবর্তীকে সই করান ভন্সালী। ঝাড়গ্রামের ভূমিপুত্র, ভন্সালীর ‘সুবুদাদা’র বলিউড জয়ের অভিজ্ঞতার কথা শুনলেন  কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৮

প্রশ্ন: শিল্প নির্দেশক হিসেবে প্রথম একক কাজ তো বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সঙ্গে। ২০০৯ সালে ‘জানালা’। মুম্বইয়ে যোগাযোগটা কীভাবে?

উত্তর: বাংলা ছবিতে প্রথম একক কাজ হলেও কেরিয়ারের শুরুটা কিন্তু মুম্বইয়েই। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অফ ভিসুয়্যাল আর্টস্‌-এর স্নাতক। ১৯৯৭ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতকোত্তর স্তরে স্বর্ণপদক। এরপর ডাক আসে মুম্বই থেকে।

প্রশ্ন: মুম্বইয়ে শুরুর কথা একটু বলুন।

উত্তর: ২০০০ সালে শিল্প নির্দেশক সাদেক আলির সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করি। বছরখানেক পরেই প্রখ্যাত শিল্প নির্দেশক সমীর চন্দার ইউনিটে কাজ করার সুযোগ মেলে। সমীর চন্দার শিল্প নির্দেশনায় ‘বোস দ্য ফরগটন হিরো’, ‘রং দে বসন্তীর’ মতো বেশকিছু ছবির সেট তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল আমার। সমীর চন্দার ইউনিটে কাজ করার সময়েই বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ডাক আসে।

প্রশ্ন: ঝাড়গ্রামের দিনগুলোর মনে পড়ে?

উত্তর: এই অরণ্যশহরেই তো বড় হওয়া। রেলকর্মী বাবার চাকরির সূত্রে ঝাড়গ্রামে বসবাস। শহরের স্কুলে পড়েছি। ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী কল্যাণী মহাপাত্রের কাছে আমার আঁকায় হাতেখড়ি। ছোটবেলায় কয়লা আর মোরামের ঢেলা দিয়ে এঁকে ভরিয়ে দিতাম ঘরের মেঝে। কল্যাণীদির আগ্রহেই রবীন্দ্রভারতীতে ভিস্যুয়াল আর্টস নিয়ে ভর্তি হওয়া।

প্রশ্ন: ঝাড়গ্রামের সঙ্গে এখন যোগাযোগ আছে?

উত্তর: এখন আমরা সব ছড়িয়ে গিয়েছি। ঝাড়গ্রামের বাড়িতে থাকেন বাবা দেবব্রত এবং মা লিপিকা। বাবা এখন অবসর নিয়েছেন। ভাই তপোব্রত কর্মসূত্রে কলকাতায়। আমি স্ত্রী ঝুমা এবং স্কুলপড়ুয়া মেয়ে অনুষ্কাকে নিয়ে মুম্বইয়ের মীরা রোডে। কাজের জন্যই যাতায়াত কমেছে।

প্রশ্ন: এখন তো নিজেই প্রোডাকশন ডিজাইনিং সংস্থা খুলেছেন?

উত্তর: বন্ধু অমিত রায়ের সঙ্গে। ২০১১ সালে প্রয়াত হন সমীর চন্দা। বছর খানেক পরে আমি আর বন্ধু অমিত রায় নিজেদের সংস্থা খুলি।

প্রশ্ন: এবং সংস্থার কাজে বলিউড মুগ্ধ? কাজের স্বীকৃতিও তো মিলেছে?

উত্তর: : ‘হায়দর’ এর জন্য একাধিক পুরস্কার পেয়েছি আমি আর অমিত। ‘ডেঢ় ইশকিঁয়া’র জন্যও পুরস্কার পেয়েছি। ‘গুলাব গ্যাং’, ‘তলোয়ার’, ‘উড়তা পঞ্জাব’, ‘রেঙ্গুন’, ‘পদ্মাবত’-এর মতো ২৪টি হিন্দি এবং একটি তামিল ছবিতে কাজ করেছি। তামিল ছবি ‘২৪’-এর শিল্প নির্দেশনার জন্য গত বছর আমি আর অমিত যুগ্মভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাই। কাশ্মীরের পহেলগামে ‘হায়দর’ ছবির সেট তৈরি হয়। আস্ত একটা গ্রাম বানাই আমরা। ছবির নায়ক শাহিদ কপূর সেটিকে আসল গ্রাম ভেবে বসেন।

প্রশ্ন:‘পদ্মাবত’এর সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?

উত্তর: ২০১৫ সালের মাঝামাঝি হবে। ভন্সালীর অফিস থেকে ফোন করে রাঘব ধর নামে একজনের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়। আমি আর অমিত যাই। ‘পদ্মাবত’এর একটি গানের দৃশ্যের জন্য সেট এঁকে দিতে বলা হয়। সময় দেওয়া হয় মাত্র তিন দিন।

মেজাজে: ‘পদ্মাবত’-এর সেটে শিল্প নির্দেশক সুব্রত চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

প্রশ্ন: ভন্সালীর সঙ্গে দেখা হয় সেদিন?

উত্তর: ভন্সালী স্যার আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। তিন দিনে ৩০টা ছবি এঁকে জমা দিয়েছিলাম। ছবি দেখে অভিভূত ভন্সালী স্যার তাঁর সংস্থার সিইও এবং এগজিকিউটিভ প্রোডিউসারকে ডেকে পাঠিয়ে প্রোডাকশন ডিজাইনার হিসেবে আমাদের সই করান। ভন্সালী স্যার আমাদের প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘‘এত ভাল আঁকা আমি আগে দেখিনি।’’

প্রশ্ন: কাজের বিষয়ে ভন্সালী তো খুঁতখুঁতে? অসুবিধা হয়নি?

উত্তর: হ্যাঁ, খুবই খুঁতখুঁতে। প্রায়ই সেট ভাঙতে বলেন, রং বদলাতে বলেন। কিন্তু আমাদের কাজ নিয়ে কখনও কোনও পরিবর্তন করতে বলেননি। উনি আমাকে ‘সুবুদাদা’ বলে ডাকতেন। আমি ওঁকে ভন্সালী স্যার বলে ডাকি।

প্রশ্ন: এটা কী করে সম্ভব হল?

উত্তর: আমরাও ‘রিয়েলিস্টিক জোনে’ কাজ করা পছন্দ করি। ভন্সালীও চেয়েছিলেন অবিকল চিতোরকে সেটে নিয়ে আসতে। দুর্গের এবং পরিবেশে বাস্তবতা আনার জন্য পাঁচবার চিতোর গিয়েছিলাম। পুরো ছবির জন্য দেড়শোটা ছবি আঁকি আমরা। সেই ড্রয়িং থেকে তৈরি হয় ৩৪টা সেট। সেটের বাজেট প্রথমে ছিল ৩০ কোটি টাকা। করণী সেনা দু’টো সেটে ভাঙচুর করল। বাজেট বেড়ে দাঁড়াল ৪১ কোটি টাকা। বর্হিদৃশ্য প্রায় হয়নি।

প্রশ্ন: করণী সেনার কাণ্ড বাদ দিলে সেটের কাজ ভালভাবেই উতরেছে?

উত্তর: আলাউদ্দিন খিলজির সেট বানাতে সমস্যা হয়েছিল। ওঁর আমলের স্থাপত্যের সংখ্যা তো খুবই কম। দিল্লির ‘আলাই দরওয়াজা’ আলাউদ্দিনের তৈরি। ওটাই খিলজির যাবতীয় স্থাপত্যের রেফারেন্স। সঙ্গে আফগান ডিজাইন ও ড্রয়িংয়ের মিশেলে আলাউদ্দিনের বিভিন্ন শিবিরের সেট বানানো হয়। ‘পদ্মাবত’এর পুরো সেট বানাতে সময় লেগেছিল দেড় বছর। শ্যুটিং হয়েছিল সব মিলিয়ে আড়াইশো দিন। আমাদের দলের সকলেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন।

প্রশ্ন: আউটডোর শ্যুটিং হয়নি বলছেন? কিন্তু সিংহলের ওই জঙ্গল?

উত্তর: ফিল্ম সিটির সুনীল ময়দানে চিতোরের সেট তৈরি হয়েছিল। সিংহলের জঙ্গল তৈরি করা হয় ফিল্ম সিটির ফ্লোরে। বর্ষণবনের জঙ্গলটাও কিন্তু নকল ছিল। ওই জঙ্গলে রতন সিংহের সঙ্গে পদ্মাবতীর প্রথমবার দেখা হওয়ার দৃশ্য শ্যুট হয়। জঙ্গলের গাছের জন্য বিশেষ ধরনের নকল পাতা আনা হয়েছিল সিঙ্গাপুর থেকে। এই দুর্দান্ত সেট তৈরি সম্ভব হয়েছিল, আমার আর অমিতের অনবদ্য রসায়নের জন্য। দু’জনের ভাবনায় মিল প্রচুর।

Celebrity Interview Subrata Chakraborty Art Director Padmaavat সুব্রত চক্রবর্তী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy