টালিগঞ্জের এনটিওয়ান স্টুডিয়োর ‘স্বপ্নউড়ান’-এর ফ্লোরেই দিনের অনেকটা সময় কাটে ধারাবাহিকের লিড অ্যাক্টর রাহুলের। সাক্ষাৎকারের কথা বলায় তাই স্টুডিয়োতে আসার কথাই বললেন। তখন শ্যুটিংয়ের মাঝে ব্রেক চলছে। টি-শার্ট, থ্রি কোয়ার্টার পরে, চায়ের পেয়ালা হাতে রিল্যাক্সড মুডে কথা শুরু করলেন রাহুল। ডেলিসোপ মানেই তো প্রবল ব্যস্ততা। ‘‘হ্যাঁ, তা আর বলতে! এখন তো তিন তরফের চাপ, ইন্টারনেটটাও ভীষণভাবে উঠে আসছে। আমি তিন ধরনের কাজই করতে চাই। আর ব্যস্ততা উপভোগ করছি।’’ ইদানীং ডেলিসোপে নিয়মিত হলেও ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর মতো ব্লকবাস্টার দিয়ে তাঁর কেরিয়ার শুরুর কথা কে না জানেন! কিন্তু বহু দিনই রাহুলকে সে ভাবে বাণিজ্যিক ছবিতে পাওয়া যায় না। এর উত্তরটা রাহুলের কাছে খুব পরিষ্কার। ‘‘আমি খুব বেশি ছবির অফার পাইনি। শুধু কয়েকটা ছবি করে দারিদ্র নিয়ে বেঁচে থাকার মানে নেই। তার চেয়ে ভাল ভাবে থাকার জন্য সব রকম মিডিয়ামে অনেস্ট্রি দিেয় কাজটা করে যাব। আর মেনস্ট্রিম থেকে সরে আসাটা আমার চয়েস। ছোট থেকে থিয়েটার করে বড় হয়েছি। কমার্শিয়াল ছবির হিরো হিসেবে আমি নিজেকে কনভিন্স করতে পারতাম না, তা হলে দর্শক কী ভাবে করবেন? আমি রাস্তায় নাচতে গিয়ে লজ্জিত বোধ করলে তা স্ক্রিনে বোঝা যাবে, যেটা আমার পক্ষে ঠিক নয়।’’
মেনস্ট্রিম থেকে সরে আসার যুক্তিটা তো বোঝা গেল। কিন্তু তার সঙ্গে এটাও সত্যি, বাণিজ্যিক ছবি বিরাট সংখ্যক দর্শকের কাছে অভিনেতাকে পৌঁছে দেয়। এর ব্যাখ্যায় বললেন, ‘‘এখন মেনস্ট্রিমের সংজ্ঞাই বদলে যাচ্ছে। সৃজিতদা (মুখোপাধ্যায়), শিবুদা (মুখোপাধ্যায়) কৌশিকদাই (গঙ্গোপাধ্যায়) এখন মেনস্ট্রিম। ‘বস টু’ বা ‘চ্যাম্প’ ভাল ব্যবসা করেছে। কিন্তু তার বাইরে হিট ছবি কোথায়? সে দিক থেকে দর্শকের মন ছুঁয়ে যাওয়া বলুন, ব্যবসায়িক লাভ বলুন, সেটা কিন্তু আরবান ফিল্মগুলোই করছে।’’
রাহুলের কথা থেকে মনে হচ্ছিল মনের গভীরে কোথাও চোরা ক্ষোভ রয়ে গিয়েছে। অনুমান সঠিক কি না, জানতে চাওয়ায় সহনশীল গলায় বললেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি সময় এখনও পেরিয়ে যায়নি। ক্ষোভ পুষে রাখাটা কাজের কথা নয়। যে ধরনের কাজ করতে চাই, সেটা যদি কম পেয়ে থাকি, তার পিছনে আমার দায়ও আছে। কিন্তু আমি এ রকমই। দোষ-ত্রুটি নিয়েই আমাকে গ্রহণ করতে হবে। ক্ষোভ আলটিমেটলি সব তেতো করে দেয়। নিজেকে এমন ভাবে গড়ে নিয়েছি যে, জীবনটাকে খুব পজিটিভলি দেখি।’’ সেই পজিটিভিটির ফাঁকেও উঁকি দিয়ে যায় ‘দোষত্রুটির’ ব্যাপারটা। স্পষ্টবক্তা রাহুল নিজেই তা খোলসা করলেন। ‘‘পিআর করি না। পার্টিতে যাই না। মাঝেমধ্যে ফোন তুলি না। তবু অনেক ভালবাসা পেয়েছি।’’