Advertisement
E-Paper

‘শুধু চেহারা বা কায়দা দিয়ে এখন কিছু হয় না’

অভিনয়ই তাঁর পরিচয় হয়ে উঠুক, সেটাই চান তিনি। ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার ঝুলি উপুড় করলেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। সামনে আনন্দ প্লাস অভিনয়ই তাঁর পরিচয় হয়ে উঠুক, সেটাই চান তিনি। ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার ঝুলি উপুড় করলেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়।

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০২
শুভাশিস। ছবি: সুপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়

শুভাশিস। ছবি: সুপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়

আশির দশক। ছিদাম মুদি লেনের বাড়ি থেকে বেরোল এক যুবক। গন্তব্য হয়তো দেশবন্ধু পার্ক বা ফড়িয়াপুকুর। সোজা রাস্তায় হেঁটে গেলে মিনিট পনেরোর রাস্তা। কিন্তু ছিদাম মুদি লেন থেকে বেরিয়ে রামধন মিত্র লেন হয়ে সে ঘুরপথে পৌঁছবে তার গন্তব্যে। রামধন মিত্র লেন হয়ে যাওয়ার কারণ একটি বাড়ি, যদি সেখানে দেখা পাওয়া যায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের! সে দিনের সেই যুবা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, যাঁকে ‘মহালয়া’ ছবিতে দেখা যাবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চরিত্রে।

প্র: চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তুতি নিলেন কী ভাবে?

উ: বীরেনবাবুর বেশির ভাগ কাজই বেতারে। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ ছাড়াও উনি অনেক নাটক করেছিলেন বেতারে... সেগুলো সব শুনেছি। তবে উনি তো ছবিতে অভিনয় করেননি। আর ওঁর নাটকও আমি দেখিনি। ফলে ওঁর ম্যানারিজ়ম চাক্ষুষ করার সৌভাগ্য হয়নি। ওঁকে জানার জন্য আমি পড়তে শুরু করলাম। আর আমিও যেহেতু বেতারে কাজ করেছি, সেই সূত্র ধরে ওঁর সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের খুঁজে বার করলাম। যেমন অজিত মুখোপাধ্যায়, সমরেশ ঘোষ, জগন্নাথ বসু। তাঁদের কাছ থেকেই জানতে পারলাম, ওঁর কথা বলার ধরন, ম্যানারিজ়ম, হাঁটাচলা... আর সঙ্গে ছিল সৌমিক সেনের চিত্রনাট্য। এই সবটাকে জুড়ে মনে মনে বীরেনবাবুর একটা ছবি এঁকে নিলাম। সেটাই পর্দায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।

প্র: প্রস্তুতি পর্বে তো সময় লেগেছে, অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?

উ: ‘রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু’র দিন একটা ধারাবিবরণী বেতারে সম্প্রচারিত হয়েছিল। ছবিতে সেই দৃশ্যে অভিনয় করার পরে আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল। আর একটা দৃশ্যে উত্তমকুমার (যিশু সেনগুপ্ত) এসেছে বীরেনবাবুর সঙ্গে কথা বলতে। সেই দৃশ্যের পরে যিশু আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। সে ভাবেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম, ছাড়তে পারছিলাম না একে অপরকে। এতটাই ভিতর থেকে নিংড়ে বার করে এনেছে এই ছবিটা।

প্র: সিরিয়াস চরিত্রের প্রস্তাব কম পেয়েছেন বলে কোনও আক্ষেপ?

উ: যা পাইনি, তার জন্য কাউকে দোষ দিই না। ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছি। তবে একেবারে পাইনি, তা-ও নয়। মাঝে একটা ‘হারবার্ট’ পেয়েছি। ‘শিল্পান্তর’, ‘গোরস্থানে সাবধান’ পেয়েছি। এখন আবার ‘মহালয়া’, এর পরে ‘প্রফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেলাম। সেখানে আমি নকুড়বাবু। শুটিং ব্রাজ়িলে। এ রকম মাঝেমধ্যে যা পাই, সেটুকুই তৃপ্তি।

প্র: আর বাণিজ্যিক ছবিতে যে সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন...

উ: আমার অভিনীত যে কোনও চরিত্রই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কমার্শিয়াল ছবিতে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। সেগুলো করতে হয়েছে প্রয়োজনে। কারণ এটাই আমার পেশা। তবে তার সঙ্গে এটাও বলব যে, সেই চরিত্রগুলোও অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে করেছি। চরিত্রগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছি। দর্শকও তো ভালবেসেছেন!

প্র: এত দিন তো কাজ করছেন, ইন্ডাস্ট্রি কতটা বদলেছে?

উ: অনেকটাই। এখন অভিনয়ই হিরো। কারও চেহারা অতটা ম্যাটার করে না। বাণিজ্যিক ছবির নায়কদের অবশ্য ফিট থাকতে হয়, লুকের জন্য খাটতে হয়। কিন্তু শুধু চেহারা বা কায়দা দিয়ে এখন কিছু হয় না। একটা চরিত্রের জন্য অভিনয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্র: মঞ্চ, পর্দা, বেতার... প্রায় সব মাধ্যমেই তো কাজ করেছেন।

উ: মঞ্চ খুব চ্যালেঞ্জিং। থিয়েটার আর যাত্রা খুব কঠিন! সেখানে সেকেন্ড চান্স নেই। তার দর্শকরাও সেটা খুব ভাল বোঝেন। ফলে সাংঘাতিক মনোযোগ প্রয়োজন।

প্র: ব্যক্তি শুভাশিস কেমন মানুষ? বাড়িতে কী ভাবে সময় কাটে?

উ: বাড়িতে আমার স্ত্রী আর শাশুড়ি আছেন। আর আছে আমাদের নাটকের দল ‘উষ্ণীক’। ঈশিতাই (স্ত্রী) দেখাশোনা করে সেই নাটকের দলের। আর আছে আড্ডা। আমি ও ঈশিতা দু’জনেই আড্ডা দিতে ভালবাসি। আমার বাবার সময় থেকেই অনেক গুণী মানুষের সমাবেশ ঘটত বাড়িতে। সেই ধারা এখনও বজায় আছে। অনেকেই আসে আমাদের বাড়ির আড্ডায়। তারা বলে, ‘শুভাশিসের বাড়িতে যাওয়ার সময়টা জানি, ফেরারটা নয়!’ আর ভালবাসি রবীন্দ্রসঙ্গীত। সে হল আমার প্রাণের আরাম, আত্মার শান্তি। তাই যখন-তখন রবীন্দ্রসঙ্গীত গাই, তবে বেসুরে (হাসি)।

Cinema Actor Interview Subhasish Mukhopadhyay Mahalaya Jisshu Sengupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy