জৈষ্ঠ্যের পড়ন্ত দুপুর। চারিদিকে চাঁদিফাটা রোদ্দুর। উত্তর কলকাতার কাশীমিত্র শ্মশান ঘাট। গঙ্গার পাশে ছোট গুমটি চায়ের দোকান। হাতে গুনে চার-পাঁচ জন মানুষ ঘুরছেন রাস্তায়। গরম হাওয়া থেকে বাঁচতে মোটামুটি সব বাড়িই খিল দিয়েছে দরজায়। কিন্তু তার মধ্যেও একটা বড় স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে বসে অ্যাকশন, কাট বলেই চলেছেন পরিচালক মানসী সিংহ। গরমে তাঁর বিন্দুমাত্র ধৈর্যচ্যুতি নেই।
‘বেগনি রঙের আলো’ ছবির প্রথম দিনের শুটিং। গঙ্গার সামনের সিঁড়িতে শট চলছে অভিনেত্রী সোহিনী সরকারের। উস্কোখুস্কো চুল। সুতির শাড়ি। কপালে ছোট টিপ। পরিবারের কাছের এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এমনই একটি দৃশ্যে দিয়ে শুরু হল ছবির শুটিং।
অর্পিতা, চন্দনের সঙ্গে শট দিতে ব্যস্ত নায়ক বিশ্বরূপ। —নিজস্ব চিত্র।
তখন মধ্যাহ্নভোজের বিরতি। একটু স্বস্তি। ক্যামেরা, ট্রলিরা বিশ্রাম নিচ্ছে। সেই ফাঁকেই আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে কথা বলে নিলেন পরিচালক। সদ্য দুপুরের খাওয়া সেরে ঠান্ডা হওয়ার জন্য নরম পানীয়ে চুমুক দিয়েছেন। কাজে থাকলে তাঁর বিন্দুমাত্র কষ্ট হয় না। মানসী বললেন, “শুটিং থাকলে বরং আমি চাঙ্গা থাকি। গরমে শুটিং করতে হবে বলে হালকা সাদা রঙের সুতির শাড়ি পরেছি। আমার আগের কাজগুলো অনেক ভালবাসা পেয়েছে। এই ছবিও দর্শকের থেকে ভালবাসা পাক। তা হলেই এই কষ্ট করা আমাদের সার্থক হবে।”
কথা বলতে বলতেই পরিচালকের নজর চারিদিকে। তত ক্ষণে অর্পিতা ঘোষ এবং চন্দন সেনের শট নেওয়া হয়ে গিয়েছে। প্রায় প্যাক আপ। কিন্তু সবাই ঠিক করে খাওয়াদাওয়া করেছেন কি না সে দিকেও নজর পরিচালক মানসী এবং প্রযোজক পৌলমী রায়ের। সারা ক্ষণ কাজ করে চলেছেন বলে নিজের সহকারী পরিচালককে তো বকেই দিলেন পরিচালক। একটু ঠান্ডা হয়ে যেন সবাই কাজে হাত দেন। কড়া হুকুম মানসীর।
শটের ফাঁকে অভিনেতা শুভম রায়। —নিজস্ব চিত্র।
সহ-প্রযোজক বিশ্বরূপ চক্রবর্তী এই ছবির মুখ্য চরিত্রে। সোহিনীর স্বামীর চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। প্রথম প্রযোজনা, প্রথম অভিনয়—সব মিলিয়ে তিনিও বেশ চিন্তিত। অভিনেতা বললেন, “সবটা সামলাতে হচ্ছে, বেশ উদ্বেগে রয়েছি। সবটা ভাল ভাবে মিটলেই হল।”
এই ছবিতে দর্শক দেখবেন আরও এক নতুন মুখকে। পেশায় আইটি কর্মী। নিছকই শখে অভিনয় করা। অভিনেতা শুভম রায়কে দর্শক দেখবেন একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে।
মা, মেয়ের গল্প নিয়েই ছবির গল্প বুনছেন পরিচালক। আবার অর্পিতার সঙ্গে সোহিনীর এক অন্য রকম সমীকরণও দেখবেন দর্শক। প্রথম বার বড় পর্দায় দেখা যাবে নাট্যশিল্পী অর্পিতাকে। প্রথমে তাঁর লুকই তাক লাগিয়েছিল দর্শককে।
শিশুশিল্পীর সঙ্গে সোহিনীর বিশেষ সমীকরণ। —নিজস্ব চিত্র।
অর্পিতা বলেন, “হ্যাঁ, আমায় তো এমন ভাবে দেখতে কেউ অভ্যস্ত নন। মানসী ভেবেছে এ ভাবে। নাটকই আমার সব। আশা করছি ছবিতে আমায় দেখলেও সকলের ভালই লাগবে।”
নায়িকা সোহিনীর অবশ্য আলাদা ট্রিকস রয়েছে। দামিনী বেণি বসুর ওয়ার্কশপে গোলাপি রঙের চশমার ট্রিকস শিখেছিলেন নায়িকা। সেই গল্পই করলেন তিনি। অভিনেত্রী বললেন, “ওয়ার্কশপে শিখেছিলাম যখন কোনও কঠিন পরিস্থিতি হবে, এমন কোনও সময় হয়তো যে কাজটা করার চেষ্টা করছি হচ্ছে না, বা খুব কষ্ট হচ্ছে কাজ করতে। তখন মনে করতে হবে একটা গোলাপি রঙের চশমা পরে আছি। যা মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে।” ছবিতে শিশুশিল্পীর সঙ্গে এর মধ্যেই সখ্য হয়ে গিয়েছে নায়িকার। তাঁর খুদে সহ-অভিনেত্রী কখন কোন দিকে যাচ্ছে সেই দিকেও নজর রাখছেন অভিনেত্রী। গল্পের সারল্য আকর্ষণ করেছেন সোহিনীকে। ‘বেগনি রঙের আলো’ কি বাস্তবে নায়িকার জীবনে কিছু প্রভাব ফেলবে? শুটিং শেষে এই উত্তরই খোঁজার চেষ্টায় থাকবেন অভিনেত্রী।