Advertisement
E-Paper

সেরা কোচ জোয়াকিমই

সাইডলাইনের ধারে স্ট্র্যাটেজি ঠিক করেন তাঁরা। টিম হারলে তাঁদের দোষ হয় সবচেয়ে বেশি। এই বিশ্বকাপের সেরা পাঁচ কোচ। সুব্রত ভট্টাচার্য-য়ের চোখেসাইডলাইনের ধারে স্ট্র্যাটেজি ঠিক করেন তাঁরা। টিম হারলে তাঁদের দোষ হয় সবচেয়ে বেশি। এই বিশ্বকাপের সেরা পাঁচ কোচ। সুব্রত ভট্টাচার্য-য়ের চোখে

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০০:০০

একটা টিম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে একজন কোচের কৃতিত্ব কতখানি? এই প্রশ্নে বারবার উত্তাল হয়েছে বিশ্ব। কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ভাল টিম না পেলে একজন কোচ যত ভালই হোন, তিনি কি সাফল্য এনে দিতে পারবেন? পাল্টা প্রশ্ন এসেছে, কোচ তো আর মাঠে নেমে খেলেন না। স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেন, ম্যাচ চলতে চলতে বিপক্ষের ভাল-মন্দ দেখে অঙ্ক বদলান। পরিবর্ত ফুটবলার নামিয়ে ম্যাচ বের করার চেষ্টাও করেন। প্ল্যান এ আটকে গেলে প্ল্যান বি বাতলে দেন টিমকে।

নিজে দীর্ঘদিন কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত আছি বলেই জানি, আমার মতে যে কোনও টিমের সাফল্যের পিছনে দ্রোণাচার্যের গুরুত্ব তিরিশ বা চল্লিশ ভাগ। মনে রাখতে হবে, মেসি-নেইমার-রবেনদের নিয়ে হইচই হলেও, তাঁদের নিয়ে প্রত্যাশার ফানুস উড়লেও, টিম হেরে গেলে কিন্তু কোচের চেয়ার-ই কেড়ে নেওয়া হয়। শুধু আমাদের এখানে নয়, সারা বিশ্বেই এটাই নিয়ম হয়ে গিয়েছে।

ফলে এ বারের বিশ্বকাপের কোচেদের র্যাঙ্কিং করতে গিয়ে ক্লাব ফুটবল থেকে দেশ—সবই মাথায় রেখেছি। সেরা কোচ নির্বাচনের সময়। বেলজিয়াম কোচ মার্ক উইলমটস, ইরানের কার্লোস কুইরোজ, কলম্বিয়ার কোচ হোসে পেকেরম্যানের কথা মনে রেখেছি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার বিচারে সেরার সেরা হিসাবে জার্মানির কোচ জোয়াকিম লো-কেই বেছে নিচ্ছি আমি। এর পর যাঁরা আসবেন তাঁরা হলেন আর্জেন্তিনার কোচ আলেজান্দ্রো সাবেয়া, ব্রাজিলের কোচ লুই ফিলিপ স্কোলারি, নেদারল্যান্ডসের কোচ লুই ফান গল এবং ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশঁ।

লো-র হাতে আমরা এক নতুন জার্মানিকে দেখছি। নিজে হাতে টিমটা তৈরি করেছেন। ফলে ইচ্ছেমতো ভাঙাগড়া করতে পারছেন স্ট্র্যাটেজির। জার্মানি মানেই ছিল এত দিন প্রেসিং ফুটবল। অনেকটা কাটখোট্টা ব্যাপার-স্যাপার ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে দারুণভাবে পাসিং ফুটবল মিশিয়েছেন লো। আর তাতেই বিবর্তন যেন এসে গিয়েছে জার্মানির ফুটবলে। ফলে খেলাটা দেখতে ভাল লাগছে। লো যেটা করছেন তা হল, প্রেসিং-তিকিতাকার মিশেল। হাতে বায়ার্নের সেরা মিডিও-রা আছে। সঙ্গে ওজিল। মুলার সেই অর্থে স্ট্রাইকার নন। কিন্তু এমনভাবে ৪-২-৩-১ এ তিনি দল সাজাচ্ছেন যে গতবারের স্পেনের ফলস নাইনের কথা মনে পড়ছে বারবার। লামকে নানাভাবে ব্যবহার করছেন। যেমন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ধুন্ধুমার ম্যাচে লামকে রাইট ব্যাক করে দিয়েছেন। মুলারকে পাঠিয়েছেন ডানদিকে। বিপক্ষের লেফটব্যাক এভ্রার ভয়ঙ্কর ওভারল্যাপ আটকাতে। ক্লোজেকে নিয়ে এসেছেন। হুমেলকে নতুন জায়গায় খেলিয়ে দিয়েছেন। আর তাতেই ‘ক্ল্যাশ অব দ্য টাইটানস’ মুঠোয় এসে গিয়েছে। জার্মানির ক্লিন্সম্যানের সঙ্গে এক সময় দেশের দায়িত্বে ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাচ্ছেন এখন। অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের মানুষ। দল চাপে পড়ে গেলেও স্বাভাবিক থাকেন। ফ্রান্স ম্যাচেও দেখলাম চাপের মুখে তিনি ধীরস্থির। শেষ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। যেটা একজন কোচের বড় গুণ।

নেইমার চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন। সিলভার মতো ডিফেন্ডারের কার্ড। সেমিফাইনালে জার্মানির সামনে পড়ে যাওয়া ব্রাজিল কোচ লুই ফিলিপ স্কোলারি তীব্র সমস্যায়। আগে বিশ্বকাপ জেতানো স্কোলারি কী করেন সেটা দেখার অপেক্ষায় গোটা ফুটবল বিশ্ব মুখিয়ে আছে। আসলে কোচেদের জীবনটাই এ রকম। সব কিছু অঙ্ক মেনে চলে না। নানা পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। ব্রাজিল ফাইনালে যাক বা না যাক, স্কোলারিকে আমি সেরা কোচেদের তালিকায় রাখব তার স্ট্র্যাটেজির জন্য। ম্যান ম্যানেজমেন্টের জন্য। নেইমার, অস্কারদের সামলানো কঠিন। ক্রমশ টিমটাকে তিনি তৈরি করেছেন। চিলি বা কলম্বিয়ার মতো টিমের বিরুদ্ধে শুধু স্ট্র্যাটেজি দিয়েই যে ভাবে তিনি ম্যাচ বের করে নিয়ে গেলেন তাতে তাকে আমি তিন নম্বরে রাখছি। আর্জেন্তিনা কোচ সাবেয়াকে একটু এগিয়ে রেখেছি এ জন্যই যে, মেসি-দি’মারিয়ামাত্র দু’জন ফর্মে থাকা ফুটবলারকে নিয়ে তিনি যে ভাবে একের পর এক ম্যাচ বের করে নিয়ে যাচ্ছেন সেটা সত্যিই দেখার, শেখার। সাবেয়া এবং স্কোলারির উপর প্রত্যাশার চাপ বেশি। কারণ ফুটবল বিশ্ব ধরেই নিয়েছে এই দুটো দলই ফাইনাল খেলবে। কলকাতার অসংখ্য সমর্থক সমৃদ্ধ দলকে কোচিং করিয়েছি। ফলে জানি এই পরিস্থিতিতে টিমকে চাপমুক্ত রেখে, স্ট্র্যাটেজি মেনে খেলানো কী কঠিন। সেটা দু’জনকেই করতে হচ্ছে।

লুই ফান গলকেও আমি সেরা পাঁচের তালিকায় রাখছি। কারণ নেদারল্যান্ডস টিমটার অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য। গতি এবং পাসিংয়ের যে ফুটবলটা রবেনরা খেলছে সেটা সত্যিই চোখের পক্ষে সুখকর। বিপক্ষের পজিশন ধরে ধরে স্ট্র্যাটেজি করে মেক্সিকো ম্যাচে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, গোলের দরজা বন্ধ করলেও কী ভাবে ম্যাচ বের করে নিয়ে যেতে হয়। নেদারল্যান্ডস যে গতিতে ওঠা-নামা করছে, যেভাবে জায়গা পরিবর্তন করে বিপক্ষকে ধন্ধে ফেলে দিচ্ছে সেটা সত্যিই চমকপ্রদ। তা ছাড়া পরিবর্ত ফুটবলার নামানোর ক্ষেত্রেও ওর স্ট্র্যাটেজি আমার দারুণ পছন্দ হয়েছে। আর ফ্রান্স হেরে গেলেও, দেশঁর জন্য আমার খারাপই লাগছে। জুভেন্তাস, মার্সেই, মোনাকোযে ক্লাবেই গিয়েছেন সাফল্য পেয়েছেন। বিশ্বকাপে অবশ্য কিছুই করতে পারলেন না। ছিটকে গেলেন। আমার নিজের মনে হয়, জার্মানি ম্যাচটা ফ্রান্স জিততেও পারত। দেশঁ নানাভাবে স্ট্র্যাটেজি বদল করে অনেকটা গুছিয়েও নিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাগ্য তাঁর সঙ্গী হয়নি। আসলে কোচেদের জীবনটাই এরকমসাফল্য পেলে ফুটবলাররা কৃতিত্ব পান। আর হারলে সমস্যায় পড়েন কোচেরা। হেরে কেউ পদত্যাগ করছেন, কেউ ছাঁটাই হচ্ছেন। দেশঁর যদি চাকরি যায় তাই অবাক হব না।

subrata bhattacharya fifaworldcup
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy