Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

‘বাহুবলী’ হ্যাংওভার এই ছবিতে রয়ে গিয়েছে!

‘রবতা’-র প্রথমার্ধের গল্প শিব (সুশান্ত) আর সায়রার (কৃতী) লভ স্টোরি। ব্যাঙ্কার শিবের সঙ্গে চকোলেট-মেকার সায়রার আলাপ বুদাপেস্টে। সুশান্তের ওভার-দ্য-টপ অভিনয়, বোকা বোকা সংলাপে এগোতে থাকে ন্যাকা ন্যাকা প্রেমের গল্প।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

রবতা

পরিচালনা: দীনেশ ভিজান

অভিনয়: সুশান্ত, কৃতী, জিম সারভ

৩/১০

গল্পের গরু গাছে ওঠে। এমনিতেও এখন গরুর বাজার। তো এই বাজারে যদি গল্পের গরুকে গাছের থেকে আরও একটু উঁচুতে তুলে দেন। মানে ধরুন, এই গাছের মগডালে। এর পর সূর্য-চাঁদ-লভ জয় কমেটকে (শুনেছেন এমন ধূমকেতুর নাম!) সাক্ষী রেখে, জল-স্থল-অন্তরীক্ষে ‘কয়ামত’-এর জগঝম্প বাজিয়ে আগুন-জল-হাওয়ার টোটকার সঙ্গে যদি মিশিয়ে দেন পুনর্জন্মের তেতো টনিক, কেমন হবে বলুন তো? গল্পের গরুটি তৎক্ষণাৎ বমি করবে। পরিচালক দীনেশ ভিজানের ‘রবতা’ ছবিটি এই উপমার থেকে খারাপ বই ভাল কিছু নয়!

প্রেম ও জন্মান্তর নিয়ে বলিউডে কম ছবি তো হয়নি। কিন্তু সব ছবির একটা সময় ও প্রেক্ষাপট থাকে। ২০১৭-য় দাঁড়িয়ে দু’টি সুন্দর মুখের ভরসায় শুধু ছবি বানাব বলেই জন্মান্তরের মতো একটা বস্তা-পচা কনসেপ্টকে চালিয়ে দিলে দর্শক তা খেয়ে নেবে, এটা ভাবা নির্বুদ্ধিতা। এবং তার দায় পরিচালক-প্রযোজক দু’জনেরই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘ককটেল’, ‘বদলাপুর’, ‘এজেন্ট বিনোদ’-এর মতো অনেক ছবি প্রযোজনার পরে এই প্রথম রবতায় পরিচালক হিসেবে ডেবিউ করলেন দীনেশ। ছবিতে কিছু ‘বাহুবলী’ টাইপ অ্যাকশন সিকোয়েন্সও আছে। অভিযোগ উঠেছিল, গল্পটির প্লট পরিচালক এস এস রাজামৌলির ‘মগধীরা’ থেকে চুরি। তবে ‘বাহুবলী’ হ্যাংওভারও যে ছবিতে রয়েছে তা বোধ হয় মিস করে গিয়েছে দক্ষিণী পরিচালকের টিম।

‘রবতা’-র প্রথমার্ধের গল্প শিব (সুশান্ত) আর সায়রার (কৃতী) লভ স্টোরি। ব্যাঙ্কার শিবের সঙ্গে চকোলেট-মেকার সায়রার আলাপ বুদাপেস্টে। সুশান্তের ওভার-দ্য-টপ অভিনয়, বোকা বোকা সংলাপে এগোতে থাকে ন্যাকা ন্যাকা প্রেমের গল্প। পুনর্জন্মের বিক্ষিপ্ত আভাস সায়রার দুঃস্বপ্নে। এর পরে এনট্রি নেয় ত্রিকোণ প্রেমের তৃতীয় কোণ, লিকার টাইকুন জ্যাক (জিম)। মদ্যপ সায়রাকে অপহরণ করে সে নিয়ে যায় তার বিলাসবহুল প্রাসাদে। জ্যাকের হাত থেকে বাঁচতে সায়রা সোজা ডাইভ মারে সমুদ্রে। আর সঙ্গে সঙ্গে গল্পের গরুর গাছে ওঠার পর্বটি শুরু হয়ে যায়।

ফ্ল্যাশব্যাকে যে দুনিয়াটিকে শিব-সায়রা-জ্যাকের আগের জন্ম হিসেবে দেখানো হয়েছে, তা কত বছর পুরনো স্পষ্ট নয়। যে ট্রাইব দু’টিকে দেখানো হয়েছে, তারা কী এদেশীয় না আফ্রিকার কোনও আদিম জনগোষ্ঠী তা-ও হলফ করে বলা যায় না। অদ্ভুত সাজ-পোশাক আর গায়ের ট্যাটু দেখে বোঝা যায়, এটা এক আজগুবি দুনিয়া। সেই দুনিয়ায় সুশান্তের চাহনি, আদব-কায়দা দেখে হাসবেন না কাঁদবেন তা বোঝাও দুষ্কর। গত জন্মের প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা আর খুনের জগাখিচুড়ি এই জন্মেও কি একই পরিণতির দিকে এগোবে, তা জানার জন্য পাক্কা পৌনে তিন ঘণ্টার ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে আপনাকে।

ছবির গান বিশেষ মনে রাখার মতো নয়। আতিফ-অরিজিৎ সিংহের গানগুলো কানে একই রকম শুনতে লাগে। ছবিতে একমাত্র পার্শ্বচরিত্র বলতে সুশান্তের বন্ধুর ভূমিকায় বরুণ শর্মা। বাকি ছবি জুড়ে শুধু সুশান্ত-কৃতী-জিম। এর আগে সন্ত্রাসবাদীর চরিত্রে জিম সারভকে দেখা গিেয়ছিল ‘নীরজা’ ছবিতে। এই ছবিতে তিনি কী ও কেন, তার উত্তর খুঁজবেন না। তবে যা নিয়ে কথা বলা যেতে পারে তা হল, সুশান্ত-কৃতীর কেমিস্ট্রি। কিন্তু দু’জনের কাছেই আমার একটি প্রশ্ন: আপনাদের দু’জনের ব্যাকগ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। অঙ্ক-ফিজিক্স-কেমিস্ট্রির জ্ঞান বেশ পাকাপোক্ত বলে মনে হয়। কোন ইকুয়েশনের মন্ত্রবলে নিজেদের অন-স্ক্রিন কেমিস্ট্রি এক্সপ্লোরের জন্য এই ছবিটিকে বাছলেন?

শেষে এই কথাটি না বললেই নয়! কৃতজ্ঞতা স্বীকারে সবার উপরে জ্বলজ্বল করছিল দীপিকা পাড়ুকোনের নাম। এই ছবিতে তাঁর উপস্থিতির জন্য দর্শক হিসেবে আমিও কৃতজ্ঞ। যে মুহূর্তে গল্পের গরুর দাপাদাপি আর নিতে না পেরে প্রেক্ষাগৃহ ছাড়ব ছাড়ব করছিলাম, তখনই দীপিকার ভুবনভোলানো ছন্দে অস্থির চিত্তকে কিছুটা হলেও শান্ত করি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE