Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বেরিলি থেকে বেভারলি হিলস

হলিউডে তাঁর টিভি সিরিজ ‘কোয়ান্টিকো’ শুরু হতে বাকি মাত্র দশ দিন। বলিউডের মতে এত বড় ব্রেক এর আগে পায়নি কোনও ভারতীয় অভিনেতা। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। তাঁর উত্থানের কাহিনি লিখছেন মানসী শর্মা।হলিউডে তাঁর টিভি সিরিজ ‘কোয়ান্টিকো’ শুরু হতে বাকি মাত্র দশ দিন। বলিউডের মতে এত বড় ব্রেক এর আগে পায়নি কোনও ভারতীয় অভিনেতা। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। তাঁর উত্থানের কাহিনি লিখছেন মানসী শর্মা।

টিভি সিরিজ ‘কোয়ান্টিকো’য় প্রিয়ঙ্কা চোপড়া।

টিভি সিরিজ ‘কোয়ান্টিকো’য় প্রিয়ঙ্কা চোপড়া।

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২২:৪৪
Share: Save:

বোস্টনে ক্লাস টেন পাশ করা এই মেয়ে চাইতেন সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা ক্রিমিনাল সাইকোলজিস্ট হতে। আমেরিকায় স্কুলে পড়ার সময় প্রায়শই বর্ণবিদ্বেষের শিকার হতে হত তাঁকে। টালমাটাল হত আত্মবিশ্বাস।

২০০০ সালে মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব জয়ের পর যদিও চেনা পৃথিবীটা এক মুহূর্তে বদলে গিয়েছিল বেরিলির সেই মেয়ের। পরে বহু সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মিস ওয়ার্ল্ড ক্রাউনটা জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে ন। ভয় হত, এই বুঝি কেউ চুরি করে নিল!

সেই মেয়েই এ বার হলিউডের মেগা টিভি সিরিজে অভিনয় করছেন। ২৭ সেপ্টেম্বর আমেরিকান টেলিভিশনে ডেব্যু করছেন যা ভারতবর্ষে দেখা যাবে অক্টোবরের তিন তারিখ থেকে।

এবিসি- চ্যানেলের টিভি সিরিজ ‘কোয়ান্টিকো’য় তিনি আধা-ভারতীয়, আধা-ককেশিয়ান এফবিআই ট্রেনি অ্যালেক্স প্যারিসের ভূমিকায়। ৯/১১-র পর নিউ ইয়র্কে সবচেয়ে বড় আক্রমণের ছক কষায় সন্দেহভাজন এই অ্যালেক্স।

পুরো বলিউডের মতে তাঁর মতো এত বড় ব্রেক হলিউডে আর কেউ পাননি যা প্রিয়ঙ্কা করে দেখালেন।

নিউ ইয়র্কের হোর্ডিংয়ে তিনি

অনেকেই এটাকে প্রিয়ঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংস বলছেন। তিনি নিজেও স্বীকার করছেন কথাটা। সে জন্যই অবলীলায় প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘১৩ বছর সিনেমা করার পর হঠাৎ মনে হচ্ছে অভিনেতা হিসেবে পুনর্জন্ম হল আমার। খুব নার্ভাস আমি।’’

এতটাই হইচই শুরু হয়েছে
তাঁকে নিয়ে যে বিলবোর্ড, হোর্ডিং, পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছে নিউ ইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের সব টিউব স্টেশন। প্রতিটি বিলবোর্ডের মুখ ‘দেশি গার্ল’ প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার। ২০১৪-র পর আরও একবার।

২০১৪-তে নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারের বিলবোর্ডে ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর এক সামিট উপলক্ষে প্রিয়ঙ্কা বিলবোর্ডে জায়গা করে নিয়েছিলেন অ্যান্টোনিও ব্যান্ডেরাসদের মতো ব্যক্তিত্বের পাশে।

আর এখন এনআরআই-রা ‘কোয়ান্টিকো’ সিরিজে প্রিয়ঙ্কার পোস্টার দেখে এতটাই উত্তেজিত যে একের পর এক ফোন বেজেই চলেছে তাঁর মুম্বইয়ের অফিসে।

হলিউডের সবচেয়ে পরিচিত খান, ইরফান খান যেমন বলছেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কা চোপড়া যেটা করেছেন, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। হলিউডে ব্রেক পাওয়া খুব কঠিন। আর সবচেয়ে ভাল ব্যাপার, প্রিয়ঙ্কার এই সাফল্যের সঙ্গে ওখানকার এনআরআই-রা দারুণ ভাবে জড়িয়ে পড়ছেন।’’

চরিত্রের দৈর্ঘ্যের ওপর কোনও কিছু নির্ভর করে না

শুধু অভিনয় নয়, গত বছর থেকে সুগায়িকার স্বীকৃতিতেও ভরেছে তাঁর ঝুলি। ২০১২-তে ‘ইন মাই সিটি’, ২০১৩-তে পিট বুল-এর সঙ্গে ‘এক্সটিক’, ২০১৪-তে ‘আই কান্ট মেক ইউ লভ মি’। আর ২০১৫-র ইউরোপ মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে ‘বেস্ট ইন্ডিয়া অ্যাক্ট ক্যাটেগরি’তে মনোনয়ন। সব মিলিয়ে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া মানেই ‘থিঙ্ক গ্লোবাল’। কিন্তু হলিউডের এই হাতছানির পাশাপাশি তিনি প্রবল ভাবে রয়েছেন বলিউডেও। এ বছরের শেষেই মুক্তি পেতে চলেছে সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘বাজিরাও মাস্তানি’। আর পরের বছর শুরুর দিকে প্রকাশ ঝা-র ‘জয় গঙ্গাজল’, যেখানে তিনি একজন আইপিএস অফিসারের চরিত্রে।

দু’টো ছবি বিষয়বস্তুর দিক থেকে একেবারে আলাদা। ‘বাজিরাও মাস্তানি’তে সহ-অভিনেতা দীপিকা, রণবীর সিংহ থাকলেও ‘জয় গঙ্গাজল’ ছবিটি পুরোপুরি প্রিয়ঙ্কার নিজের কাঁধে।

আজ প্রিয়ঙ্কার সাফল্য দেখে অবশ্য কেউ আন্দাজ করতে পারেননি তিনি এত দূর পৌঁছবেন। ‘দ্য হিরো’ ছবিতে অতিথি শিল্পী হিসেবে কেরিয়ার শুরু করেন প্রিয়ঙ্কা। সুনীল দর্শনের পরিচালনায় তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘আন্দাজ’ও দারুণ হিট করে বক্স অফিসে।

সম্প্রতি অনুপম খের-এর টক শো-তে প্রিয়ঙ্কা জানান, ‘‘ওই দু’টো ছবিতেই আমি ইন্টারভ্যালের পর পর্দায় এসেছিলাম। কিন্তু তখনই বুঝেছিলাম চরিত্রের দৈর্ঘ্যের ওপর কোনও কিছু নির্ভর করে না। যে কোনও ছবি চলে তার নিজের গুণে।’’

প্রিয়ঙ্কা রুপোর চামচ মুখে নিয়ে জন্মায়নি

প্রিয়ঙ্কার এই একটানা সাফল্যকে কী ভাবে দেখছেন ‘শোম্যান’ সুভাষ ঘাই?

‘‘দেখুন, প্রিয়ঙ্কা রুপোর চামচ মুখে নিয়ে জন্মায়নি। ইন্ডাস্ট্রিতে ওর কোনও গডফাদার নেই। ওর জীবনের গল্প আমাদের সবার কাছে ইন্সপিরেশন। নিজেকে ক্রমাগত ঘষেমেজে এ ভাবে তৈরি করা, আর ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের চেষ্টায়, নিজের ক্ষমতায় জায়গা আদায় করে নেওয়া সত্যিই বিরল। আমি প্রিয়ঙ্কার জন্য গর্বিত,’’ বলছিলেন সুভাষ।

‘করম’ বা ‘বিগ ব্রাদার’-এ প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে কাজ করেছেন লেখক সঞ্জয় চহ্বান। তিনি বলছিলেন প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতার কথা। সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘অভিনেত্রী হিসেবে প্রিয়ঙ্কা অসম্ভব পরিশ্রমী আর ফোকাসড্। অন্য নায়িকাদের মতো তারকাসুলভ কোনও অহঙ্কার ওর নেই।’’

মেয়েরা আমাকে ‘ব্রাউনি’ বলত

অনুরাগ বসুর ‘বরফি’তে ঝিলমিলের চরিত্রে প্রিয়ঙ্কার অভিনয় তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম সেরা কাজ। সেই চরিত্রের মূল্যায়ন হয়তো পুরস্কারের নিরিখে হয়নি। কিন্তু প্রিয়ঙ্কা থামার পাত্রী নন। নিজের কাজ করে গিয়েছেন মন দিয়ে।

‘গোঁলিয়ো কী রাসলীলা রাম-লীলা’তে তাঁর স্পেশ্যাল নাম্বার এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে ‘বাজিরাও মাস্তানি’তেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান রাতারাতি। সঞ্জয় লীলা বনশালির এই ছবিতে মূল চরিত্রটি দীপিকার। দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে তাঁর তুলনা হবে ভেবে পিছিয়ে যাননি প্রিয়ঙ্কা। রাজি হয়েছিলেন সেই কথা মাথায় রেখেও।

আজকের আমেরিকাতে তিনি স্টার। কিন্তু এক সময় ওই দেশেই তাঁকে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল। প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘মেয়েরা আমাকে নানা ভাবে হেনস্থা করত। ‘ব্রাউনি’ বলত। খুব খারাপ লাগত সেই সময়টায়।’’

আসলে অমানুষিক পরিশ্রম আর নিরলস অধ্যবসায়ের স্বীকৃতি হিসেবেই প্রিয়ঙ্কা আজ আন্তর্জাতিক মঞ্চে। নিজেই বলেন দিনে কুড়ি ঘণ্টা কাজ তাঁর কাছে কোনও ব্যাপার নয়।

অর্ম্যাক্স মিডিয়ার সিইও এব‌ং মিডিয়া অবজার্ভার শৈলেশ কপূর তাই বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক মঞ্চে ‘কোয়ান্টিকো’র মূল চরিত্র আদায় করা তাঁর ব্যক্তিগত স্বীকৃতি। বহু ভারতীয় অভিনেতাই বছরের পর বছর হলিউডি ছবিতে, টিভি শো-তে অল্পস্বল্প চরিত্র করেই খুশি থেকেছেন। সেই জায়গা থেকে দেখলে ভারতীয় একজন অভিনেতাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এতটা হইচই, এত রাজসিক ভাবে তাঁকে লঞ্চ করা— এর আগে হয়নি।’’

সব মিলিয়ে গোটা বলিউড এখন তাকিয়ে ৩ অক্টোবরের দিকে যখন ‘কোয়ান্টিকো’র প্রথম পর্ব দেখা যাবে ভারতীয় টেলিভিশনে। কেমন হবে প্রিয়ঙ্কার হলিউড ইনিংস? টিভি সিরিজের পর তিনি কি পারবেন মেনস্ট্রিম হলিউডের কোনও বিগ বাজেট ছবিতে কাজ করতে?

এই প্রশ্নগুলোই এখন ঘুরছে আরব সাগর তীরে। উত্তর পেতে বাকি আর মাত্র দশ দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE