Advertisement
E-Paper

রাত-জাগা তারা

সঙ্গী স্ন্যাপচ্যাট। ফেসবুক। হোয়াটস অ্যাপ। আর পর্ন অ্যাপের হাতছানি। রাতের জেন ওয়াইকে নিয়ে লিখছেন মধুমন্তী পৈত চৌধুরী।সঙ্গী স্ন্যাপচ্যাট। ফেসবুক। হোয়াটস অ্যাপ। আর পর্ন অ্যাপের হাতছানি। রাতের জেন ওয়াইকে নিয়ে লিখছেন মধুমন্তী পৈত চৌধুরী।

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০৩

রাত তিনটে।

ব্ল্যাক কফি বা চা নিয়ে শোওয়ার ঘর যেন সন্ধের ড্রইংরুম।

আগে যা ছিল মধ্যরাত জেন ওয়াই-য়ের কাছে এখন তা সন্ধে।

হোয়াটস অ্যাপে আড্ডা, মেসেঞ্জারে আইডিয়া শেয়ার। ঘর অন্ধকার করে সেক্স অ্যাপে ডুবে যাওয়া। কেউ বা আবার মজে পর্ন ফিল্মে।

আগে রাত জাগার অনুমতি মিলত কেবল পরীক্ষার আগে। এখন ট্রেন্ডটাই বদলেছে। টিন এজার-দের কাছে রাত জাগা আর কোনও ব্যাপার নয়। রাতে বাড়ির সবাই ঘুমোয়। মা-বাবার নজর এড়িয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলতে পারা যায় ওই সময়টায়। প্রথম দিকে রাত জাগায় শরীরের ওপর চাপ পড়লেও কিছুদিন পর বডিও অ্যা়ডজাস্ট করে নেয়।

সপ্তাহভর অফিসের পর সারা রাত ধরে পার্টি করার আনন্দই আলাদা। এখন অনেকে কফি আর মোবাইলে আসক্ত। এই দুটো জিনিস রাতকে আরও লম্বা করে তুলেছে। মনে করছে যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারা।

পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের রাত জাগা অভ্যাস। ‘‘ছোটবেলায় থাকতাম ভবানীপুরের সিনেমা পাড়ায়। সারাদিন নানা আওয়াজে পড়াশোনা করা যেত না। রাতে পড়াশোনা করতে সুবিধে হত। সেই অভ্যেস থেকে গিয়েছে। আজও রাতে লিখতেই পছন্দ করি।’’

সকলেরই যে ছোটবেলা থেকে রাত জাগা অভ্যেস তা কিন্তু নয়। জেন ওয়াই হালে রাত জাগছে।

রাত অনেক পিসফুল। বই পড়া হোক বা গোপন প্রেম বা টিন্ডার অ্যাপে দুষ্টুমি।

শুধু কাজ নয় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারার জন্য রাত় বেস্ট মনে করছেন প্রেসিডেন্সির রিমি বসু। অন্যদিকে ক্লাস টুয়েলভের ছাত্রী শায়েরী ঘোষ বলছেন,‘‘মর্নিং স্কুল থাকে বলে ভোরবেলা উঠতে হয়। তা সত্ত্বেও আমি রাত তিনটে-সাড়ে তিনটে পর্যন্ত জেগে সিনেমা দেখি। ঘুমটা ঠিক ম্যানেজ করে নিই। ওটা আসলে অভ্যেসের ব্যাপার।’’

আই টি প্রফেশনাল বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী সোজাসুজি বললেন, ‘‘কেউ সত্যি কথা বলে না বুঝলেন। আসলে আরাম করে ফ্লার্ট করার জন্যেই রাত জাগে জেন ওয়াই। ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম এখন সেকেলে। স্ন্যাপচ্যাটই আমাদের হার্ট বিট ধরতে পারে… ফ্লারচি, টিন্ডার....এই সব সেক্স অ্যাপের জন্যই তো রাত জাগা।’’ রাত জাগায় অভ্যস্ত বহুজাতিক সংস্থার অঙ্কুর ঘোষ। অফিস থেকে ফিরে প্রেম নয়, প্রতিদিন মগজ শান দিতে রাত জাগেন তিনি। ‘কোয়ারা’ অ্যাপের সঙ্গে বহু রাত কাটিয়েছেন। কোনও বিষয়ে প্রশ্ন করলে তার উত্তর দেন এই অ্যাপের মেম্বাররা। আবার যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, নাইট আউট তাদের ফেভারিট। সপ্তাহ ভর কাজের ক্লান্তি ধুয়ে মুছে যায় শহরের সঙ্গে রাত জাগায়।

• বাধ্যতামূলক রাত জাগা

সকলেই যে ফ্লার্ট আর আড্ডার জন্য রাত জাগছেন তা কিন্তু নয়। পেশাগত কারণে অনেকে রাত জাগেন।

নাইট শিফটে কাজ করতে হয় বিপিও, কল-সেন্টারের কর্মীদের। সাংবাদিক, রেডিয়ো জকি, ডিস্ক জকিদেরও রাত জাগার অভ্যাস আছে। রেডিয়ো জকি লাবণ্যের কথায়, ‘‘আমি বরাবরই নাইট পার্সন। দেরি করে ঘুমাই আর দেরিতে উঠি। তাই চাকরির জন্য রাতে জেগে থাকতে অসুবিধে হয় না।’’ প্রফেশনাল ফোটোগ্রাফার শিলাদিত্য দত্তের ঘুমোতে ঘুমোতে হয় রাত দুটো। ‘‘শ্যুট থেকে ফিরে মেল চেক, ফেসবুক দেখা আর ফটো এডিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকি,’’ বললেন তিনি।

• তাঁহাদের কথা

জেন ওয়াই রাতেই ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু কী বলছেন অভিজ্ঞজনেরা?

‘‘গত কয়েক বছর ধরে মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলি ফ্রি-নাইট কল বা রাতে ইন্টারনেট পরিষেবায় ছাড় দিচ্ছে। জেন ওয়াইয়ের মধ্যে রাত জাগার অভ্যেস বাড়ছে এ কারণেও,’’ বলছেন অভিনেত্রী ও রাজনীতিক রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। অন্য দিকে পরিচালক অরিন্দম শীল যেমন রাত জাগার কথা বলতে গিয়ে মেয়ের কথা বললেন, ‘‘প়ড়াশোনার জন্য হস্টেলে মেয়েকে অনেক সময় সারারাত জেগে থাকতে হয়। তবে বাড়িতে আসলে আমি দেখি ও যেন রাত দু’টোর মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। আমরা তো শিখেছিলাম ছাত্রজীবনে ‘মর্নিং ফ্রেশনেস’-টা খুব দরকারি।’’ একই মত পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়েরও। ‘‘জেন ওয়াইকে মনে রাখতে হবে, কাজের চাপ বাড়বে বই কি কমবে না। ছোট থেকে রাত জাগা অভ্যাস করলে হাই ব্লাড প্রেশার, হাইপার টেনশন শুরু হতে পারে। ফলে রাত না জাগাই ভাল,’’ বলছেন কৌশিক।

পরিচালক মৈনাক ভৌমিক অবশ্য হাঁটছেন জেন ওয়াইয়ের রাস্তায়। বললেন, ‘‘সকালে কাজের মধ্যে হাজারটা লোকের টেলিফোন আসে। সঙ্গে বাইরের শব্দ। বাড়িতে এ আসছে, ও আসছে। কাজে মন দেওয়া যায় না। সারা রাত কাজ করে আমি অনেক সময় সকাল ছ’টায় ঘুমোতে যাই। ঘুমোই দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। এখনও তো শরীর দিব্যি। কোনও অসুবিধে নেই।’’

• রাত-জাগার সাইড-এফেক্টস

ঘড়ি যদি উল্টো পথে চলে, তা হলে কি সত্যিই বিপদ? মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায়ের মতে ব্যাটারি যেমন রিচার্জ করতে হয়। সঠিক রেস্ট নিয়ে ব্রেনকে রিচার্জ করা দরকার। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে অনেক সময় ব্রেন ঠিকমতো কাজ করে না। মেমরি, অ্যালার্ট নেস, কনসেনট্রেশন নষ্ট হয়। তবে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যার যে রকম বডিক্লক। কেউ যদি রাত জেগে সকালে ঘুমিয়ে নেয় তা হলে সমস্যা নেই। পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। মা-বাবার নজরদারি এড়িয়ে প্রাইভেট স্পেস খুঁজতেই রাত জাগছে জেন ওয়াই।’’

• থোড়াই কেয়ার

রাত জাগা নিয়ে নানা মহলে নানা কথা। থোড়াই কেয়ার! নিশুতি রাতে মোবাইল হাতে স্বপ্ন দেখে জেন ওয়াই। তবে চোখ বুজে নয়, চোখ খুলে!

Gen Y Sleepless Generation Sleepless Night
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy