Advertisement
E-Paper

সৃজিত, কৌশিকদাকে চাকরিতে ফিরতে হবে না, ওঁরা সফল! আমি ফিরেছি বাধ্য হয়ে: ইন্দ্রাশিস আচার্য

“কোনও পেশাই এখন আর নিরাপদ নয়। চাকরিও যে কোনও দিন যেতে পারে। তাই সব রকম পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে।”

উপালি মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫ ২০:৪৬
ইন্দ্রাশিস আচার্যের জীবন নিয়ে ‘গুডবাই মাউন্টেন’ তৈরি?

ইন্দ্রাশিস আচার্যের জীবন নিয়ে ‘গুডবাই মাউন্টেন’ তৈরি? ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: বিনোদন দুনিয়া ছেড়ে দশটা-পাঁচটার চাকরিতে পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্য, কেমন আছেন?

ইন্দ্রাশিস: ভাল আছি। ‘গুডবাই মাউন্টেন’ মুক্তি পেল। দর্শক-সমালোচকেরা প্রশংসা করছেন। আর একটি ছবি ‘গাজনের ধুলোবালি’র পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে।

প্রশ্ন: তার পর? চাকরি না পরিচালনা?

ইন্দ্রাশিস: (হেসে ফেলে) এখন তো চাকরিই। নতুন চাকরি, গুরুত্বপূর্ণ পদ। গুরুত্ব তো দিতেই হবে।

প্রশ্ন: ‘পাপী পেট’-এর টান সবার আগে আপনিই বুঝলেন?

ইন্দ্রাশিস: এটা একটা কারণ। দ্বিতীয় কারণ, কোথাও গিয়ে আমার ইকো সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করছিল না। ওই জন্যই কিছু দিন ছবি বানানো থেকে বিরতি নিয়ে চাকরি করে আবার হয়তো ফিরব। দেখা যাক, এই বদল কতটা ইতিবাচক হয়।

প্রশ্ন: আপনি একঘেয়েমিতে ভুগছিলেন...

ইন্দ্রাশিস: একঘেয়েমি নয়, আমার অনায়াস পরিচালনা কোথাও বাধা পাচ্ছিল।

প্রশ্ন: দু’বছর পরে আপনার নতুন ছবি মুক্তি পেল?

ইন্দ্রাশিস: কাঁটায় কাঁটায় দু’বছর। দু’বছর আগের জুলাইয়ে ‘নীহারিকা’ মু্ক্তি পেয়েছিল। এ বার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের ছবি।

প্রশ্ন: ‘নীহারিকা’য় পাহাড় না থাক, ছোট টিলা ছিল। যেখানে ছোট মামা আর তাঁর ভাগ্নির মনের আদানপ্রদান করতেন। এ বার ২২ বছর আগের প্রেমের প্রত্যাবর্তন...

ইন্দ্রাশিস: দুটোর প্রেক্ষিত, গল্প, দৃষ্টিভঙ্গি— একদম আলাদা। প্রাকৃতিক দৃশ্যপটে সামান্য কিছু মিল হয়তো রয়েছে।

প্রশ্ন: সমুদ্রের থেকে কি পাহাড়ে বেশি প্রেম খোলে?

ইন্দ্রাশিস: অবশ্যই। আমার বিশ্বাস, নির্জনে, নিরিবিলিতে প্রেম ডানা মেলে।

প্রশ্ন: ইন্দ্রাশিসের এ রকম পুরনো প্রেম কতগুলো?

ইন্দ্রাশিস: পুরনো প্রেম সবার থাকে। আমারও ছিল। স্ত্রী সেটা জানেন (হাসি)।

প্রশ্ন: সেই প্রেমিকার সঙ্গে দীর্ঘ অদর্শনের পরে পাহাড়ে কয়েকটি দিন কাটিয়েছিলেন... যা আপনার নতুন ছবির বিষয়...

ইন্দ্রাশিস: একেবারেই নয়। এ রকম কখনও কিছু হয়নি। ‘গুডবাই মাউন্টেন’ কোনও ভাবেই আমার জীবনের গল্প নয়।

প্রশ্ন: ২২ বছর পরে পুরনো প্রেম ফিরলে কী হয়?

ইন্দ্রাশিস: আমি জানি না, ২২ বছর পরে প্রেম ফিরলে ঠিক কী হয়! এটা ব্যক্তিবিশেষের উপরে নির্ভর করে। আর সিনেমার গল্প কিন্তু কী হয় নয়, কী হয়েছিল— তার উপরে তৈরি। এক একজনের জীবনের এক একরকম মাপকাঠি। কেউ সুখে থাকতে চান। কেউ বেশি সুখে থাকতে থাকতে একঘেয়েমিতে ভোগেন। কেউ সমস্ত অনুভূতির মিশ্রণে তৈরি। এ বার যিনি যে ভাবে জীবনকে দেখবেন। যেমন, পর্দায় নায়ক, নায়িকার গা থেকে গড়িয়ে নামা সাবানের ফেনার মধ্য তার শরীরের গন্ধ খোঁজে! দু’হাতে তুলে ফেনায় নাক ডোবায়। অর্থাৎ, শারীরিক ভাবে কামনা করে তার ফেলে আসা প্রেমিকাকে।

প্রশ্ন: ঋতুপর্ণা আবার আপনার ছবিতে...

ইন্দ্রাশিস: হ্যাঁ, ‘পার্সেল’-এর পর এটি আমাদের দ্বিতীয় ছবি। আসলে, ঋতুপর্ণা বরাবর আমায় প্রচণ্ড সহযোগিতা করেন। নতুন কাজে উৎসাহিত করেন। আমার কাজ ভালবাসেন। আমিও তাই নতুন কিছু করার আগে ওঁকে জানাই। এই ছবির চিত্রনাট্য শুনে নিজে বলেছিলেন, ‘ইন্দ্রাশিস, আমি আনন্দী হব।’

প্রশ্ন: ছবিতে নায়কের চরিত্রে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত কার পছন্দ?

ইন্দ্রাশিস: আমাদের দু’জনেরই।

প্রশ্ন: ঋতুপর্ণা আগে অভিনয় করলেও ইন্দ্রনীল এই প্রথম। অভিজ্ঞতা কেমন?

ইন্দ্রাশিস: খুব বাধ্য অভিনেতা। অত্যন্ত অনায়াস অভিনেতা। শট দেওয়ার আগে আলোচনা করে নিতেন। আমার সঙ্গে, ঋতুর সঙ্গে। প্রচণ্ড পেশাদার। কখনও নিজেকে ছাপিয়ে অভিনয় করতেন না। আর ঋতুর সঙ্গে অসামান্য বোঝাপড়া।

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

প্রশ্ন: নিশ্চয়ই আফসোস হয়েছে, আপনার ছবি ‘পুরাতন’-এর আগে মুক্তি পেলে হিট জুটির কৃতিত্ব আপনি পেতেন...

ইন্দ্রাশিস: এই রকম কোনও কৃতিত্ব নেওয়ার ইচ্ছে নেই। ছবি সফল হলে টিমের সকলের সঙ্গে সেই কৃতিত্ব ভাগ করে নেব। সকলের পরিশ্রম এই ছবির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: অথচ, আপনার ছবিতে ঋতুপর্ণা-ইন্দ্রনীলের কিছু দৃশ্যের সঙ্গে সুমন ঘোষের ছবির অদ্ভুত মিল!

ইন্দ্রাশিস: দেখুন, আমার ছবির শুটিং হয়েছে ২০২৩-এর ডিসেম্বরে। মিল থাকার কোনও সম্ভাবনাই নেই। আমি ‘পুরাতন’ দেখেছি। কোনও মিল খুঁজে পাইনি।

প্রশ্ন: এমনও তো হতে পারে, সম্পর্কের গল্প পর্দায় দেখাতে দেখাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে পরিচালকেরা আলোচনা না করে বানালেও মিলে যায়!

ইন্দ্রাশিস: সম্পর্ক ছাড়া কোনও গল্প হয়? আমার অন্তত জানা নেই। ‘জুরাসিক পার্ক’-এও সম্পর্কের গল্প রয়েছে। কিংবা ‘নির্জন সৈকতে’। তা হলে তো বলতে হয়, সা থেকে নি— সাতটি স্বরের বাইরে গান হয় না। এই স্বরগুলোই প্রত্যেক গানে ঘুরেফিরে আসে। তাতে কি সব গান এক হয়ে যায়! বরং সম্পর্কের রকমফের তার থেকে অনেক বেশি। সম্পর্কের যে সীমারেখা থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে সেই জায়গা থেকে আমার যে কোনও ছবির গল্প শুরু। সেটা ‘পিউপা’ বলুন, ‘নীহারিকা’ বলুন বা ‘গুডবাই মাউন্টেন’। কোনওটাই সম্পর্কের নিরাপদ সীমারেখার গল্প নয়। বলতে পারেন, বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এটা যখন আমার কাছে একঘেয়ে মনে হবে, সে দিন ছবি বানানোই ছেড়ে দেব।

প্রশ্ন: তখন সম্পর্কের গল্প বেশি সহজ করে বলা হত বলে প্রেক্ষাগৃহে বেশি ভিড় হত?

ইন্দ্রাশিস: সাফ বলি, আমি এই মাপকাঠিতে পড়ি না। আমার ১০ বছরে মাত্র পাঁচটি ছবি। কী করে বলব, কেন এখন লোকদের ডাকতে হয়! তবে এটা বলতে পারি, আমার ছবি কিন্তু দর্শকেরা পছন্দ করেন। প্রত্যেকটি ছবির ফিডব্যাক খুব ভাল। যদিও যত সংখ্যক দর্শকের দেখার কথা তাঁদের সকলের কাছে আমার ছবি পৌঁছতে পারে না। কারণ, আমার প্রচারের অভাব, অর্থের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, এখন বাংলা ছবি স্বকীয়তা হারিয়েছে। অনেকেই ছবি বানাচ্ছেন দ্রুত প্রচার এবং সাফল্যের আশায়। হাততালি কুড়োতে। আমার মতে, ওঁদের ছবির দুনিয়ার স্তম্ভদের জীবন, কাজের ধারা সম্পর্কে বিশদে জেনে তার পর কাজে নামা উচিত। সেই সঙ্গে দর্শকেরও রুচি, মান নিম্নগামী হয়েছে। নইলে, ভাল ছবি হচ্ছে না তা কিন্তু নয়।

প্রশ্ন: নিন্দকেরা যে বলে, আপনি নিজেকে সেরা সিনেবোদ্ধা মানেন, সবার ছবি দেখে নাক সিঁটকান...

ইন্দ্রাশিস: একটু না! আমার কানেও এসেছে এ কথা। কখনও কারও ছবিকে খারাপ বলি না। হ্যাঁ, ছবি দেখে কিছু মনে হলে সেটা জানাই। আমি ইউরোপীয় ছবি দেখে বড় হয়েছি। যাঁরা আমাদের পথপ্রদর্শক তাঁদের কাজের ধারা জেনে তবে পরিচালনায় নেমেছি। ফলে, চট করে সব ছবি মনে দাগ কাটে না। এটা হয়তো আমার দোষ।

প্রশ্ন: ছবি বানাতে বানাতে কী কী গল্প তৈরি হল?

ইন্দ্রাশিস: জানেন, ১৮ দিন ধরে রোজ পিকনিক করতে যেতাম আমরা। পাহাড়ে ওঠা, শুটিং করা, নেমে আসা। একদিন মাঝপথে গাড়ি থমকে গেল। চোখের উপর দিয়ে ২৫টি কৃষ্ণসার হরিণ সারি দিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছে! আমি তখন যেন পরিচালকের টুপি খুলে প্রকৃতিপ্রেমিক, স্বভাবকবি। আর একদিন রাতের অন্ধকারে বাংলো ঘেঁষে দুটো চোখ জ্বলতে দেখলাম। শুনলাম বাঘের চোখ। এর পর শুটিংয়ের জায়গা বাঘ ঢুকে পড়ল! আমরা বাংলোয় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছি।

প্রশ্ন: আগের কথায় ফিরি। আপনার মতো সৃজিত মুখোপাধ্যায় বা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়-সহ বাকিরাও যদি নিজেদের গোছাতে চাকরিতে ফেরেন, বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ কী?

ইন্দ্রাশিস: সৃজিত, কৌশিকদা অত্যন্ত সফল। ওঁদের চাকরিতে ফেরার কোনও প্রয়োজন নেই। আমি চাকরিতে ফিরেছি বাধ্য হয়ে। আর্থিক নিরাপত্তার কারণে। তবে, চাকরি জীবন উপভোগ করি না, তা কিন্তু নয়। ছবি আমার কাছে প্যাশন। ভীষণ ভালবেসে ছবি করতে পারলে আবার অবশ্যই বানাব। কিন্তু পরিচালনাকে পেশা বানানোর জায়গায় এখনও পৌঁছইনি। তা ছাড়া, আমার মতো আর কেউ কিন্তু পরিচালনা ছেড়ে চাকরিতে ফিরে যাননি।

‘গুডবাই মাউন্টেন’ ছবির শুটিংয়ে ইন্দ্রাশিস আচার্য, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত।

‘গুডবাই মাউন্টেন’ ছবির শুটিংয়ে ইন্দ্রাশিস আচার্য, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

প্রশ্ন: যাঁরা পরিচালনায় ব্যর্থ তাঁরা সবাই চাকরি পান না, তাঁরা বাঁচবেন কী করে?

ইন্দ্রাশিস: ভবিষ্যৎ ভেবে কাজ করার পরামর্শ দেব। পাগলামি থাকুক, স্বপ্ন দেখুন। কিন্তু পরিবারকে বাঁচিয়ে। যদিও কোনও পেশাই এখন আর নিরাপদ নয়। চাকরিও যে কোনও দিন যেতে পারে। তাই সব রকম পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে।

প্রশ্ন: সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবিতে ‘পরকীয়া’ নয়, প্রেমের প্রত্যাবর্তন। বিশুদ্ধ পরকীয়ার গল্প কবে বলবেন?

ইন্দ্রাশিস: পরের ছবি তো তৈরি। তার পরে কবে, কী নিয়ে ছবি বানাব এখনও সেটা ভাবিনি (হাসি)।

প্রশ্ন: ‘গুড বাই’ মানে ‘বিদায়’... ইন্দ্রাশিস কি এই ছবির মাধ্যমে কোনও কিছুকে বিদায় জানালেন?

ইন্দ্রাশিস: আমার জীবনে পর্বতসমান একাধিক ব্যক্তিত্বের অস্তিত্ব। তাঁরা হাজার শোকে-তাপে-সুখে গলেননি, টলেননি। তাঁদের স্মরণ করে এই ছবি। সব ‘বিদায়’ কি এক হয়?

Rituparna Sengupta Indraneil Sengupta Indrasish Acharya Goodbye Mountain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy