ডিসেম্বরেই হয়তো প্রকাশ্যে আসবে ২০২৬ সালের বাংলা ছবির ক্যালেন্ডার। দফায় দফায় আলোচনায় বসছে সরকারি স্ক্রিনিং কমিটি। উৎসব-উদ্যাপনের আবহে অর্থাৎ ‘প্রাইম ডেট’-এ মুক্তি পাওয়া ছবির বাজেট কত হতে পারে, কমিটির বৈঠকে তা-ই নিয়েও আলোচনা চলছে।
শনিবার কমিটির বৈঠকে অন্যান্য আভ্যন্তরীণ বিষয়ের মধ্যে অন্যতম বিষয় ছিল ছবির বাজেট-সংক্রান্ত বিষয়টিও। ইম্পা-র অফিসে এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দেব, অতনু রায়চৌধুরী, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, নিসপাল সিংহ রানে, রানা সরকার, শতদীপ সাহা, জয়দীপ মুখোপাধ্যায় (বিনোদিনী প্রেক্ষাগৃহের মালিক), পঙ্কজ লাডিয়া (পরিবেশক), ক্যামেলিয়ার তরফ থেকে নীলাঞ্জন বসু, ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস প্রমুখ। আলোচনা প্রসঙ্গে কমিটির সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত প্রথমে প্রাইম টাইম শো-এর উল্লেখ করে বলেন, “উৎসবের সময়ের যে ১১টি সপ্তাহ বেছে নেওয়া হয়েছে, সেখানে বলিউড বা হলিউডের সঙ্গে পাল্লা দিতে ন্যূনতম দেড় থেকে দু’কোটি টাকা বাজেটের ছবি বানাতে হবে।”
কেন এই বিষয়টি কমিটির আলোচনায় উঠে এসেছে? তারও যুক্তি দিয়েছেন পিয়া। উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, “উৎসবের আবহে বড় বাজেটের হিন্দি ছবি মুক্তি পায়। যেমন, শাহরুখ খান, সলমন খান, রণবীর সিংহদের তারকাখচিত ছবি। কিংবা দক্ষিণের বড় বাজেটের প্রযুক্তিনির্ভর ছবি। এই ধরনের ছবির সঙ্গে অল্প বাজেটের বাংলা ছবি কি পাল্লা দিতে পারবে?” তাঁর ধারণা, বাণিজ্যের দিক মাথায় রেখে হলমালিক বা ছবির পরিবেশকেরা সে ক্ষেত্রে বড় বাজেটের তারকাখচিত ছবিই মুক্তি দিতে চাইবেন। এই প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ দেন নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের। পিয়ার মতে, এই পরিচালকজুটি ১০ বছর পরিশ্রমের পর গত তিন বছর ধরে পুজোয় ছবিমুক্তির সুযোগ পাচ্ছেন।
পরে পিয়া জানান, ‘প্রাইম টাইম শো’ নয়, ‘প্রাইম ডেট’-এ মুক্তি পাওয়া ছবির বাজেট নিয়ে কমিটির অভ্যন্তরীণ বৈঠক চলছে।
আনন্দবাজার ডট কম-এ এই খবর প্রকাশের পরে প্রশ্ন তুলেছেন স্বাধীন পরিচালক, কম বাজেটের ছবির প্রযোজকেরা। তাঁদের প্রশ্ন, তা হলে তাঁদের ছবি কোথায় যাবে? তাঁরা কি কখনও ‘প্রাইম ডেট’ অর্থাৎ উৎসবের আবহে ছবির মুক্তি ঘটাতে পারবেন না? কারণ, তাঁদের পক্ষে দেড়-দু’কোটির ছবি বানানো তো সম্ভব নয়! এই জায়গা থেকেই বাকিদের আশঙ্কা, তা হলে কি ছবিমুক্তিতেও ‘মনোপলি’ ব্যাপার চলে আসতে চলেছে? উৎসবের আবহে নির্দিষ্ট কিছু পরিচালক, প্রযোজক বা তারকাদের ছবিই জায়গা পাবে?
এই প্রশ্ন নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল পরিচালক রঞ্জন ঘোষ, অর্জুন দত্ত, প্রযোজক রানা সরকার, সমীরণ দাস, পরিবেশক শতদীপ সাহা, হলমালিক নবীন চৌখানির সঙ্গে। কী বলছেন তাঁরা?
রঞ্জন-অর্জুন উভয়েই স্ক্রিনিং কমিটি এবং স্বাধীন পরিচালকদের বক্তব্য শুনে জানিয়েছেন, বিষয়টি ভাবার মতো। কারণ, কারও যুক্তিই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তাই রঞ্জনের মত, “ভাল করে আলোচনা করে তার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তাতে সবার স্বার্থরক্ষা হবে।” অর্জুনের অনুরোধ, “প্রাইম ডেটে যখন বড় বাজেটের হিন্দি বা ইংরেজি ছবিমুক্তি থাকবে না, তখন যদি স্বাধীন পরিচালক বা কম বাজেটের ছবিকে সুযোগ দেওয়া হয়, তা হলে সবাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সুযোগ পাবেন। কারও কোনও অভিযোগ থাকবে না।”
প্রযোজক রানা এবং সমীরণ পিয়াকেই সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, “দর্শক উৎসবের আবহে তারকাদের ছবি দেখতে চান। ইদ মানেই সলমন খান, শাকিব খান, হয় দেব নয় জিতের ছবি তাঁরা আশা করেন। এ দিকে হলমালিক ঝুঁকি নিয়ে বড় বাজেটের ছবি ছেড়ে কম বাজেটের ছবি দেখালে ঝুঁকির পরিমাণ আরও বাড়বে। ফলে, সেই সময় দেব, সৃজিত মুখোপাধ্যায় বা নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ছবিকেই সুযোগ দিতে হবে।” কম বাজেটের ছবির জন্য তাঁরা তাই নন ‘প্রাইম টাইম ডেট’ বা বছরের অন্যান্য সময়কেই আদর্শ মনে করেছেন। সমীরণের মতে, “মুখে মুখে ছড়িয়ে যে ছবি ভাল ফল করে, সেই ছবি ভিড়ে হারিয়ে যায়। এই ধরনের ছবির জন্য তো সারা বছর আছেই।” আবার এ-ও জানান, এখন ভাল ভাবে কোনও ছবি বানাতে গেলে এমনিতেই তার বাজেট দেড় কোটি টাকা ছুঁয়ে ফেলে। “এর পাশাপাশি যদি বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত ছবিগুলোও দেখানোর ব্যবস্থা করা যায়, তা হলেও হয়তো সাম্য বজায় থাকতে পারে।”
আরও পড়ুন:
রানা উদাহরণ দিয়েছেন তাঁর ‘অঙ্ক কী কঠিন’ ছবির। বলেছেন, “কম বাজেটে বানানো ছবিটি নন প্রাইম ডেটে মুক্তি দিয়েছি। কম সংখ্যক হলে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। তাতে ভাল ফল করেছে। লোকমুখে ছবির কথা ছড়িয়েছে। বাণিজ্য ভাল হয়েছে।” তাঁর ধারণা, প্রাইম ডেটে ছবিমুক্তি ঘটালে ‘অঙ্ক কী কঠিন’ হয়তো এত ভাল ফল না-ও করতে পারত। স্ক্রিনিং কমিটির একজন সদস্য হিসাবে আশ্বস্ত করে এ-ও জানিয়েছেন, বিষয়টি আলোচনাসাপেক্ষ। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। রানার কথার সুর পরিবেশক শতদীপ, হলমালিক নবীনের। উভয়ের মতে, বিষয়টি আলোচনাস্তরে রয়েছে। তাই তাঁরা এখনই নিজেদের মতামত জানাতে পারছেন না।
যে প্রসঙ্গ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, সে প্রসঙ্গে স্ক্রিনিং কমিটির সভাপতি পিয়ার কী মত?
পিয়া সাফ জানিয়েছেন, বিষয়টি আলোচনাসাপেক্ষ। তাই এখনই আর কোনও কথা বা মন্তব্য তিনি করবেন না। সবটাই কমিটির অভ্যন্তরীণ আলোচনার বিষয়। এখনও ‘প্রাইম ডেট’-এ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির বাজেট নির্দিষ্ট হয়নি। কোনও সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়নি। এই বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। সব দিক বিবেচনা করে পদক্ষেপ করবে কমিটি। স্বাধীন পরিচালক, কম বাজেটের প্রযোজকদের স্বার্থরক্ষারও চেষ্টা করা হবে।