পাওলি দাম। ছবি: সংগৃহীত।
কেরিয়ারের এই মুহূর্তে তিনি কিছুটা ধীরে চলো নীতি নিয়ে পা ফেলতে আগ্রহী। কাজের সংখ্যার তুলনায় গুণগত মানে বিশ্বাসী পাওলি দাম। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পালান’ ছবির মাধ্যমে এক অধরা স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছেন অভিনেত্রী। সেই ভাবনাই ভাগ করে নিলেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন: দীর্ঘ সময় পর আপনার ছবি মুক্তি পাচ্ছে। কেমন আছেন?
পাওলি: ভালই আছি। সামনেই ‘পালান’ মুক্তি পাবে। ছবির প্রচারও শুরু হয়ে গেল। আগামী কয়েকটা দিন বেশ ব্যস্ততার মধ্যেই কাটবে (হাসি)।
প্রশ্ন: ‘খারিজ’-এর শেষ থেকে ‘পালান’-এর শুরু। এই ছবির সঙ্গে মৃণাল সেনও কোনও ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। ওঁর সঙ্গে কোনও স্মৃতি?
পাওলি: ‘কালবেলা’ দেখে উনি ফোন করেছিলেন। অচেনা নম্বর, ফোন ধরতেই ও পাশ থেকে কেউ বললেন, ‘‘আমি মৃণাল সেন বলছি।’’ সত্যি বলছি, বিশ্বাস করতে পারিনি। উনি বলেছিলেন যে, ছবিতে আমার অভিনয় ওঁর ভাল লেগেছে।
প্রশ্ন: ওঁর সঙ্গে পরে কখনও দেখা হয়েছিল?
পাওলি: ফোনেই দেখা করতে বলেছিলেন। সেই মতো একদিন দেখা করি। অনেক কথা হয়েছিল। উনি বলেছিলেন, কোনও দিন ছবি করলে আমাকে কাস্ট করতে চান। অভিনেত্রী হিসেবে ওঁর ওই কথাটা আমার কাছে স্বপ্নপূরণের মতো মনে হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অসুস্থতার কারণে তিনি আর ছবি পরিচালনা করেননি। কিন্তু ঈশ্বরের হয়তো অন্য রকম ইচ্ছা ছিল। ‘পালান’-এর মাধ্যমে এক দিকে যেমন কৌশিকদার সঙ্গেও প্রথম কাজ হল, তেমনই মৃণাল সেনও রইলেন।
প্রশ্ন: মৃণাল সেনের কোন ছবিগুলো আপনার পছন্দের?
পাওলি: ‘খারিজ’ তো রয়েইছে। এ ছাড়াও ‘ভুবন সোম’, ‘মৃগয়া’, ‘একদিন প্রতিদিন’...। ওঁর প্রায় সব ছবিই আমার দেখা।
প্রশ্ন: ছবিতে আপনার চরিত্রটা কী রকম?
পাওলি: মজার বিষয়, ‘খারিজ’-এ বাকি চরিত্রগুলো ছিলই। এই ছবিতে আমার এবং আমার বাচ্চা মেয়েটির চরিত্র, দুটোই কৌশিকদার তৈরি। তাই দায়িত্ব আরও বেশি ছিল। জীবনের সব সমস্যার সমাধান সবাই করতে পারে না। আমার চরিত্রটা কিন্তু সমাধান খোঁজে, সমস্যা নয়।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ১৭ বছর কাজ করছেন। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করতে একটু বেশি দেরি হয়ে গেল কি?
পাওলি: এই প্রশ্নের উত্তরটা কৌশিকদা ভাল দিতে পারবেন (হাসি)। আমার মনে হয়, সবুরে মেওয়া ফলে। আসলে ওঁর মতো পরিচালক জানেন, কে কোন চরিত্রে ভাল অভিনয় করতে পারবেন। সেই ভাবনা থেকেই হয়তো এই ছবিতে আমাকে ভেবেছেন।
প্রশ্ন: ওঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কী রকম?
পাওলি: যে কোনও ছবির শুটিংয়ের আগে একটু ভয়ে ভয়ে থাকি। এই ছবির সঙ্গে মৃণালবাবুর নাম জড়িয়ে রয়েছে বলে ভয়টা আরও বেড়ে গিয়েছিল। কৌশিকদা খুবই ঠান্ডা মাথায় কাজ করেন। সেটে তিনি এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেন, নিজের সেরাটা দিতে ইচ্ছে করে।
প্রশ্ন: যিশুর (সেনগুপ্ত) সঙ্গেও তো অনেক দিন পর কাজ করলেন?
পাওলি: খুবই ভাল। ও সেটে সব সময়েই মজা করে। তাই কাজ করতেও ভাল লাগে। আশা করি, দর্শকরা আমাদের জুটিকে পছন্দ করবেন।
প্রশ্ন: এই ছবিতে কলকাতার অতীত এবং আধুনিক শহরের বৈপরীত্যের প্রসঙ্গ রয়েছে। এই বদলকে আপনি কী ভাবে দেখেন?
পাওলি: আমরা আমাদের শিকড়কে ধরে রাখব, না কি সেটা উপড়ে ফেলে অন্য কোথাও আবার নতুন করে পুঁতে রাখব? তার সঙ্গে রয়েছে দুই প্রজন্মের ব্যবধান। আমি নিজে উত্তর কলকাতায় বড় হয়েছি। উত্তর কলকাতার পাশাপাশি বাড়ি, তার ছাদ, সরু গলি— এগুলো খুব ভাল লাগে। পরে দক্ষিণ কলকাতায় এসে দেখলাম বদলটা একদমই অন্য রকম। পুরনো কলকাতা আমাকে খুবই টানে। পুরনো বই-খাতা, পুরনো স্মৃতি। আধুনিকতাকে গ্রহণ করতেই হবে, তার সঙ্গে পুরনোকেও জায়গা দিতে হবে।
প্রশ্ন: বিগত কয়েক বছরে সেই ভাবে বাংলা ছবিতে আপনাকে দেখা গেল না কেন?
পাওলি: অতিমারির পর বাংলা ছবির কাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে। ওটিটির কাজ বেড়েছে। সত্যি বলতে, একই ধরনের চরিত্র করতে চাই না। গল্প, চরিত্র, পরিচালক— অনেকগুলো বিষয় বিচার করে তার পর রাজি হই।
প্রশ্ন: কিন্তু এ রকমও অনেকে বলেন, বলিউডে মনোনিবেশ করেছেন বলে বাংলায় এখন আপনি বেছে কাজ করছেন।
পাওলি: সেটা কিন্তু ঠিক নয়। বরং এটাও তো হতে পারে যে, সে রকম কোনও আকর্ষণীয় চিত্রনাট্যই আমার কাছে আসেনি। আসলে, এখন সংখ্যার তুলনায় কাজের গুণগত মান আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখন কি ভাষা আর আলাদা করে বিচার্য বিষয়? শুধু হিন্দি কেন, ভাল চরিত্র পেলে দেশের যে কোনও ভাষাতেই আমি কাজ করতে রাজি।
প্রশ্ন: বিশাল ভরদ্বাজের হিন্দি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করলেন।
পাওলি: (হেসে) এটা নিয়ে এখন কিছুই বলা নিষেধ। চলতি মাসেই মুক্তি পাবে। আর একটু অপেক্ষা করলেই সব জানতে পারবেন।
প্রশ্ন: ইদানীং টলিপাড়ার একাংশ বলছে, বাণিজ্যিক ছবির প্রত্যাবর্তন প্রয়োজন। আবার অন্য পক্ষ অন্য ধারার ছবি করে চলেছে।
পাওলি: আমি বিশ্বাস করি, একটা ইন্ডাস্ট্রিতে সব ধরনের ছবি হওয়া উচিত। কাউকে ছোট করে কেউ এগোতে পারবে না। ‘বাহুবলী’ তৈরির বাজেট হয়তো আমাদের নেই। কিন্তু ভাল বাণিজ্যিক ছবির বাজেট তো আছে। এখন প্রযোজককে টাকা ফিরিয়ে দেওয়াটাও তো গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্যনির্ভর বাণিজ্যিক ছবিও তৈরি করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: আচ্ছা, পাওলি মানেই অন্য ধারার ছবি, এই ধারণা কি ভেঙেছে বলে মনে হয়?
পাওলি: এখন সেটা আর নেই। বাণিজ্যিক ছবির তারকারা এখন অন্য ধারার ছবি করছেন। আবার বিপরীতটাও দেখা যাচ্ছে। মাঝের এই দেওয়ালটা এখন আর নেই। দেব তো আমার সঙ্গেই ‘সাঁঝবাতি’ করেছিল।
প্রশ্ন: কিন্তু সমাজমাধ্যমে অনুসরণকারীর সংখ্যা দেখে নায়িকা নির্বাচন নিয়ে টলিপাড়ায় এখন বিস্তর আলোচনা হচ্ছে।
পাওলি: (হেসে) এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।
প্রশ্ন: মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করতে ইচ্ছে করে না?
পাওলি: কেন নয়? নাচ-গান, অ্যাকশন আমার ভীষণ প্রিয়। নারীকেন্দ্রিক ছবিতে অ্যাকশন, সারা বিশ্বে হচ্ছে। আমাদের এখানে হলে আমি করতে রাজি। তার মানে এটা নয় যে, কারও থেকে দেখে করতে হবে। আমাদের মতো করে তো তৈরি হতেই পারে।
প্রশ্ন: কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘একটু সরে বসুন’ তো কমেডি ছবি।
পাওলি: এই প্রথম মনে হয় কমেডি ছবি করলাম। নতুন ধরনের কাজ করতে আমার আপত্তি নেই। আবার ‘পাহাড়গঞ্জ হল্ট’ ছবিতে আমার চরিত্রটা একদম অন্য রকম। তাই নির্মাতাদেরও অভিনেতাদের নিয়ে ভাবতে হবে।
প্রশ্ন: পুজোয় কি কলকাতায় থাকবেন?
পাওলি: এই মাসটা নতুন কাজের প্রচারে ব্যস্ত থাকব। তবে এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পুজোতে কলকাতাতেই থাকব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy