Advertisement
E-Paper

তুবড়ির সংলাপ ভারাক্রান্ত থিয়েটার

ব্রাত্য খুব ভাল। দেবশঙ্করও। কিন্তু জমল না। লিখছেন গৌতম চক্রবর্তী।ব্রাত্য বসু পাশ করেছেন! এই প্রথম নিজের ঘাড়ে একটা গোটা ছবি টেনে নিয়ে গিয়েছেন। ব্রাত্য বনাম দেবশঙ্কর...দুই মঞ্চাভিনেতার দ্বৈরথই ‘কল্কিযুগ’ ছবির মূল আকর্ষণ।

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:১১

ব্রাত্য বসু পাশ করেছেন! এই প্রথম নিজের ঘাড়ে একটা গোটা ছবি টেনে নিয়ে গিয়েছেন। ব্রাত্য বনাম দেবশঙ্কর...দুই মঞ্চাভিনেতার দ্বৈরথই ‘কল্কিযুগ’ ছবির মূল আকর্ষণ।

ব্রাত্য এই ছবিতে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের এসিপি। কিন্তু শবর দত্তের মতো লাফঝাঁপ করেন না। কাজপাগল, কখনও বুদ্ধি খাটান, কখনও হুমকি দেন। কখনও সহকর্মীদের বিষাক্ত ঈর্ষার শিকার। তৎসহ দুই তরুণ সহকর্মী শৌভিক আর রিমঝিমের মেন্টর।

দেবশঙ্কর আবার ব্রাত্যর কাছে একটি খুনের বিষয়ে সন্দেহভাজন। তিনি একই সঙ্গে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী, হিট লেখক। তাঁর লেখা ‘কল্কিযুগ’ উপন্যাসের একটি ধাঁধাতেই নাকি লুকিয়ে আছে খুনের ক্লু। সেই কবে রবীন্দ্রনাথ ছড়ায় গুপ্তধনের সঙ্কেত দিয়েছিলেন, সেই ট্রাডিশন এখনও! সন্দেহভাজন খুনি উপন্যাসে লিখে-রাখা ধাঁধায় ছাপার হরফে ক্লু দিয়ে যায়! গঙ্গার ঘাটে ব্রাত্যর সঙ্গে প্রায়ই এক কিশোরের দেখা হয়। গোয়েন্দা তাকে নিজের নানা সংশয়ের কথা বলেন। জল, কিশোরবেলা ইত্যাদি নিয়ে অবচেতনের সাইকোলজিকাল থ্রিলার। কিন্তু শেষ দৃশ্যে দেবশঙ্কর একটি ছবি এঁকে ব্রাত্যকে চমকে দেন। ঘাটে ব্রাত্য ও সেই কিশোর। দেবশঙ্কর কোথা থেকে এই কিশোরের কথা জানলেন, উত্তর নেই। পরিচালকের সাইকোলজিকাল থ্রিলার বানানোর চেষ্টা ছিল, কিন্তু শেষ অবধি দুই মঞ্চাভিনেতাকে দিয়ে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ টক্কর! ভোরবেলায় লেকের ধারে ব্রিজে শিকারি ব্রাত্য ও শিকার দেবশঙ্কর মুখোমুখি। দু’জনের মুখেই উড়ন তুবড়ির মতো সব সংলাপ। কিন্তু নাটক আর সিনেমা আলাদা! মঞ্চে সংলাপ দিলেই হাততালি পাওয়া যায়। সিনেমায় অহেতুক সংলাপ আবার ক্লান্ত করে।

এই মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলারে শিকারি ব্রাত্য ও শিকার দেবশঙ্কর এক সুতোয় গাঁথা। দু’জনেরই পারিবারিক ট্র্যাজেডি রয়েছে। সিনেমার প্রথম দিকে ব্রাত্য স্ত্রীর দিকে চোখ তুলে তাকান না, পরে কারণটা জানা যায়। দেবশঙ্করের চরিত্র উল্টো। স্ত্রী লকেটের প্রতি তিনি প্যাশনেট। কিন্তু রোম্যান্সের দৃশ্যগুলিতে সেটি বোঝা গেল না। জড়োসড়ো রোম্যান্টিক, ধীমান দেবশঙ্করের বদলে তাই চেয়ারে-বসা খিটখিটে ব্রাত্য এই আখ্যানে এগিয়ে থাকলেন।

আখ্যান, কিন্তু সিনেমা নয়। চমকপ্রদ কো-ইনসিডেন্সে শেষ মুহূর্তে বেরিয়ে যায়, গঙ্গার ধারের বাড়িটা কার! ব্রাত্য খুনির হাতে মরতে মরতে শেষ মুহূর্তে বেঁচে যান দুই তরুণ সহকর্মীর কল্যাণে। লকেটের যে ঝগড়া করে নিজেকে আহত করার অভ্যাস আছে, চিত্রনাট্যকার ছা়ড়া কেউ জানতেন না। নাটকে এমন কো-ইনসিডেন্স হয়েই থাকে। অঞ্জন চৌধুরী ‘ফটোগ্রাফ্ড যাত্রা’ বানাতেন, এখন ফটোগ্রাফ্ড গ্রুপ থিয়েটার। ব্রাত্য সেই ফটোগ্রাফ্ড থিয়েটারটি নিজের কাঁধে বয়ে নিয়ে গিয়েছেন। মায়ের গোঁফ থাকলে মাসি হতেন কি না, দেব বা প্রসেনজিৎ থাকলে ছবিটা আরও জমাট বাঁধত কি না, এ নিয়ে আলোচনা নিরর্থক। এই ফটোগ্রাফ্ড থিয়েটার ব্রাত্য-দেবশঙ্করদেরই জগৎ, সিনেমার নয়।

সব মিলিয়ে কল্কিযুগ তাই শাঁখের করাতের মতো। কাঁটায় বিদ্ধ হতে হতে পাঁচের বেশি দেওয়া গেল না। বাঙালি তরুণী দেবারতি গুপ্ত সাইকোলজিকাল থ্রিলার তৈরির চেষ্টা করেছেন, প্রশংসনীয়। শুরুতে তাঁর সিনেম্যাটিক চিন্তাভাবনায় দু এক বার নড়েচড়েও বসতে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ অবধি গোটাটা সংলাপ-ভারাক্রান্ত থিয়েটার! বাংলা বাজারে এই বিষয়ে অবশ্য দেবারতির মতো নতুন পরিচালককে একা দোষ দিয়ে লাভ নেই।

kalkiyug bratya basu debshankar halder kalkiyug review cinema kalkiyug
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy