বলিউডে তাঁকে বলে ‘দ্য স্ট্রং অ্যান্ড সায়লেন্ট’ টাইপ। পরের ছবি ‘ব্রাদার্স’-এর প্রচারের জন্য জুহুর নোভোটেল হোটেলের পুলসাইডে সে দিন খোশমেজাজে সিদ্ধার্থ। জ্যাকি শ্রফ আর জ্যাকেলিন ফার্নান্ডেজের সঙ্গে খুনসুটির মধ্যেই শুরু হল আড্ডা...
আপনার জানার কথা নয়। কিন্তু আমাদের আনন্দplus দফতরে বহু পাঠক ফোন করে জিজ্ঞেস করেন কবে সিদ্ধার্থ মলহোত্রর ইন্টারভিউ বেরোবে…
(হেসে) আমি লাকি এটুকুই বলব। হ্যাঁ, কলকাতা থেকে আমার কাছেও প্রচুর ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ আসে। আপনি ডিরেক্ট এয়ারপোর্ট থেকে এসেছেন, একটু চা বলি?
শিওর।
(ওয়েটারকে ডেকে) দু’টো আর্ল গ্রে।
আপনার সঙ্গে প্রথম কোথায় দেখা হয়েছিল মনে আছে?
কলকাতায় তো...
হ্যাঁ, কিন্তু কলকাতার কোনও ফ্যান্সি ফাইভ স্টার প্রপার্টিতে নয়। মল্লিকবাজার মোড়ের একটা ছোট্ট হোটেলে!
ইয়েস, ইয়েস, মনে পড়েছে। আমি আর বরুণ এসেছিলাম ‘স্টুডেন্টস অব দ্য ইয়ার’-এর প্রোমোশনে। পুরোটা মনে আছে...
এক্সট্রা ঘর ছিল না। ছোট ঘর, তাও চেঞ্জ আর মেক আপ করেছিলেন আপনারা। বরুণ আপনার শর্টস নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাথরুমের বাইরে।
(হাসি) এ বার বুঝতে পারছেন প্রোমোশনাল বাজেট কাকে বলে? সেই সময় আমিও নতুন, বরুণও নতুন। আজ ফিরে দেখলে মনে হয় দারুণ কেটেছিল দিনগুলো। ছবিটাও তো বিরাট হিট হয়েছিল। বাকি আর কিছু এসে যায় না।
বরুণের সঙ্গে শুরু করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু তার পর ধীরে ধীরে বরুণ অনেকটা এগিয়েও তো গেলেন। আলিয়া ভট্টও তাই...
বরুণ, আলিয়া আমার দারুণ বন্ধু। দারুণ দারুণ ছবি করছে দু’জনে। ‘বদলাপুর’-এ বরুণ ওয়াজ ফ্যান্টাস্টিক। ‘হাইওয়ে’তে আলিয়া এক্সট্রাঅর্ডিনারি। ওরা ওদের মতো কাজ করছে, আমি আমার মতো। কোনও হিংসা নেই। মাঝে মধ্যেই কথা হয়। তিন জনেই আলোচনা করি কতটা বদলে গিয়েছে জীবনটা আমাদের ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’-এর পর থেকে।
আপনারও ‘এক ভিলেন’-এ খুব প্রশংসা হয়েছিল। কিন্তু আলিয়া হলেন মহেশের মেয়ে, বরুণ হলেন ডেভিড ধবনের ছেলে। কোথাও আউটসাইডার বলে কি অসুবিধে হয় ইন্ডাস্ট্রিতে?
আমি ‘ব্রাদার্স’ ছবিটা করেছি দু’জনের সঙ্গে। অক্ষয়কুমার আর জ্যাকি শ্রফ। একজনের ৩০ বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে। একজনের ২৫। শাহরুখ খানও ২৬ বছর রাজ করছেন। এঁদের কারওই ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না তাই ওই আউটসাইডার থিয়োরিতে আমি বিশ্বাস করি না।
তোমার মধ্যে যদি দম থাকে, তুমি নিজের জায়গাটা ঠিক বানিয়ে নেবে। সেটা না থাকলে গডফাদার থাকা সত্ত্বেও কোনও লাভ হবে না। বরুণ, আলিয়া নিজের দমে জায়গা করে নিয়েছে।
কলকাতার পাঠক আপনার বিষয়ে জানতে চায় কারণ সিদ্ধার্থ মলহোত্র সম্পর্কে তারা প্রায় কিছুই জানে না। একটু আপনার ব্যাকগ্রাউন্ডটা বলবেন?
পাঠকদের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি কারণ দোষটা সম্পূর্ণ আমার। আমি আসলে ও রকম ফটাফট ইন্টারভিউ দিতে পারি না। মনে হয়, আমার কাজটা তো শুধু অভিনয় করা। বাকি ব্যাপারে কেন মাথা ঘামাতে যাব! কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি ইন্টারভিউ দেওয়া, ফোটোশ্যুট করাটাও কত দরকার।
আইফাতে গিয়েছিলাম টাম্পা বে-তে। সেখানে আপনাকে নিয়ে মাতামাতি হৃতিক রোশনের থেকেও বেশি ছিল।
(লজ্জায় লাল হয়ে) কোথায় হৃতিক, কোথায় আমি?
হোটেলের বাইরে রাত বারোটায় আপনার নাম ধরে লোকে চেঁচাচ্ছে আর হৃতিক গাড়ি থেকে নামলেও কেউ ফিরে দেখছে না!
টাম্পাতে সত্যিই মানুষ আমাকে সাঙ্ঘাতিক ভাবে গ্রহণ করেছিল। আসলে বলিউডও পাল্টাচ্ছে। নতুন নতুন দর্শক আসছে। এই নতুন দর্শকদের মধ্যে আমাদের নিয়ে একটা কৌতূহল আছে।
যার বেশির ভাগটাই মহিলা?
হুমম। হ্যাঁ, যার বেশির ভাগই মহিলা (হাসি)।
এ বার আপনার ব্যাকগ্রাউন্ডটা বলুন।
আমি দিল্লির ছেলে। বাবা আর্মিতে ছিলেন। ডন বস্কো স্কুলে পড়াশুনো। ক্লাস টেন অবধি অল বয়েজ স্কুল। তার পর ঠিক রাইট টাইমে কো-এড স্কুলে ভর্তি (হাসি)।
প্রচুর গার্লফ্রেন্ড?
না, না। অল বয়েজ স্কুলে যারা পড়াশুনো করেছে, তারা মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতেই ভয় পায়। আমিও তাই ছিলাম। তবে এটুকু বুঝতে পারতাম আই ওয়াজ ‘মার্কড’।
মানে মেয়েদের নজরটা ছিল?
(হাসি) সেটা বোধহয় আজও আছে। তার পর একুশ বছর বয়স অবধি দিল্লিতে। নিয়মিত মডেলিং করতাম। ২০০৫-এ মুম্বই চলে আসি।
অনুভব সিংহের একটা ছবি করবেন বলে?
কারেক্ট। এই আট মাস একটা ফ্ল্যাট তিন জনের সঙ্গে শেয়ার করে থাকতাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলই না ছবিটা...
কোথায় থাকতেন? মীরা রোড?
না, অত দূরে না। ওই দিকেই। গোরেগাঁও ইস্ট-এ।
দিল্লির আপার মিডল ক্লাস ফ্যামিলি থেকে ওয়ান বেডরুম ফ্ল্যাট। কাজ না থাকলে মুম্বই ক্যান বি আ ক্রুয়েল সিটি।
ইয়েস অফকোর্স। ফ্যমিলিকে মিস করতাম সাঙ্ঘাতিক। তার পর ধীরে ধীরে কিছু বন্ধু হল। তাদের কাছ থেকে ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানতে শুরু করলাম। জানলাম অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর বলে একটা জিনিস হয়। ভাবলাম অভিনয় যখন হচ্ছেই না, তখন অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর হয়ে যাই।
সেখান থেকে ‘মাই নেম ইজ খান’এ কর্ণ জোহরের অ্যাসিস্টেন্ট?
ইয়েস।
অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টরের সব কাজ করতেন? কন্টিন্যুইটি, ক্রাউড সামলানো?
সবচেয়ে নতুন ছিলাম তো, অত বড় ছবির কন্টিন্যুইটির দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়নি। আমি ক্ল্যাপ দিতাম (হাসি) আর ক্রাউড সামলাতাম। ভ্যানে গিয়ে বলতাম কাজল ম্যাম, শট ইজ রেডি। শাহরুখ স্যর, শট ইজ রেডি। কাজল ম্যাম, প্লিজ কাম...
আজও কি শাহরুখকে স্যর বলেন?
হ্যাঁ, হ্যাঁ। শাহরুখ আমার কাছে সব সময় স্যর। আমি ভয়ে ভয়ে ঢুকতাম ওই মেক আপ ভ্যানটায়। খুব লজ্জাও লাগে যখন শাহরুখ স্যর আমার প্রশংসা করেন। লাইফ ইজ স্ট্রেঞ্জ...
কেন বলছেন?
যে শাহরুখের ছাতা ধরতাম, চেয়ারের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতাম, সেই শাহরুখ স্যরই আমার প্রথম ছবির প্রোডিউসর ছিলেন। বলিউড বড় অদ্ভুত।
আপনি এখন তো তিরিশ?
ইয়েস, তিরিশ...
নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কোন দিকে যাচ্ছে প্রশ্নটা?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, বুঝেছি (হাসি)। এটা ঠিক একা একা থাকতে ভাল লাগে না। ইউ ওয়ান্ট টু রিটার্ন হোম টু সামবডি। তবে এই মুহূর্তে কিছু নেই মাথায়। অ্যাট লিস্ট পাঁচ বছর পর হবে।
থ্যাঙ্ক ইউ সিদ্ধার্থ।
থ্যাঙ্ক ইউ। আশা করি আপনার পাঠকেরা খুশি হবেন। আর নেক্সট বার কলকাতা এলে আমি পাক্কা ফ্যানদের মিট করব।
আর একটা ফোটোশ্যুট করবেন প্লিজ আমাদের জন্য মল্লিক বাজারের ওই হোটেলে।
(হাসি) শিওর। এবার নিশ্চয়ই আলাদা আলাদা ঘর পাব, বলুন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy