(হাসি) কেন, সাবধান কেন?
কারণ আপনি নাকি অসম্ভব অ্যারোগেন্ট, বদমেজাজি...
অ্যারোগেন্ট নই। তবে একটু ডানপিটে টাইপ সেটা মানছি। তা ছাড়া হিন্দিতে একটা কথা আছে না ‘মু-ফট’, সেটাও বলতে পারেন। ঢং করে আপনার সামনে এক, পিছনে আর এক বলা আমার ধাতে নেই। যা বলি মুখের ওপর বলি।
মুখের ওপর সত্যিটা বলেন তো?
একদম।
তা হলে প্রথমেই বেড়াল মারা হোক। রাজ চক্রবর্তী আপনার কে?
(প্রচণ্ড হাসি) এই পুজোতে আমার একটা ছবি মুক্তি পাচ্ছে। নাম ‘কাটমুণ্ডু’। হাসি-কান্না সব মিলিয়ে সপরিবারে দেখার মতো ছবি। সেই ছবির পরিচালক রাজ চক্রবর্তী।
আমি ‘কাটমুণ্ডু’র প্রোমোশন ছাড়া অন্য উত্তর খুঁজছিলাম..
(ভেবে) ফ্রেন্ড, ফিলোজফার, গাইড।
জুস অর্ডার করেছি। সঙ্গে অমলেট। খেয়েদেয়ে বাড়ি চলে যাই দু’জনে। এরকম উত্তর দিলে আর ইন্টারভিউ করে লাভ নেই।
আরে সত্যি কথাটা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। রাজ খুব ভাল বন্ধু।
লোকে বলে আপনি আজকাল খুব ক্যাজুয়াল হয়ে গেছেন। অভিনয়-টভিনয় নিয়ে আর মাথা ঘামান না। কাজ চালানো একটা অভিনয় করে দেন নাকি সেটে?
আপনি জানেন একটা স্ক্রিপ্ট আমি পাঁচ বার পড়ি। পাঁচ বার। তার পর পুরো স্ক্রিপ্টটা এমন মুখস্থ হয়ে যায় যে আমার সেটে গিয়ে অযথা গম্ভীর হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তাই অন্যদের কাছে সেটা ক্যাজুয়াল লাগলেও আমি জানি আমি কী করছি।
এটার আর একটা কারণও আছে। রাজ আপনার কাছে সরকারি চাকরির মতো। যাই করি না কেন বছরে দু’টো ছবি আছেই।
টালিগঞ্জের হিরোইনদের কাছে সরকারি চাকরিবাকরি বলে কিছু হয় না। বয়ফ্রেন্ড ডিরেক্টর হলেও হয় না।
আপনার বয়ফ্রেন্ড তো ডিরেক্টর।
(হাসি) ওই দ্যাখো! ডিরেক্টর মোটেই আমার বয়ফ্রেন্ড নয়। বললাম না ফ্রেন্ড-ফিলোজফার-গাইড।
মিমি, বিশ্বাস করুন আজ অবধি ফিলোজফির কোনও কথা শুনিনি রাজের মুখে।
(হাসি) আপনি ওকে ভাল করে চেনেন না বোধ হয়।
সেটা ঠিক, আপনার মতো চিনি না। একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। আপনার বাড়ি তো জলপাইগুড়ি।
হ্যাঁ জলপাইগুড়িতে বাড়ি। ওখানেই ছোটবেলা কেটেছে। ক্লাস টুয়েলভের পর কলকাতায় পড়াশোনা করতে আসি। আশুতোষ কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু শুধু কলেজ আর বাড়ি আমার পোষাচ্ছিল না।
এখানে থাকতেন কোথায়? কোনও আত্মীয়ের বাড়ি?
না, পেয়িং গেস্ট থাকতাম। কলেজ থেকেই একটা সিরিয়ালের জন্য অডিশন দিই। ওরা আমাকে সিলেক্ট করে। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন হিরোইন হব। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হিরোইনদের মতো কথা বলা ছিল ফেভারিট পাসটাইম। তোয়ালে-গামছা বেঁধে চুল লম্বা করতাম। এতটাই পাগল ছিলাম।
তার পর?
তার পর সিরিয়ালটা শুরু হল। জলপাইগুড়িতে সেই সিরিয়ালের প্রোমো দেখে বাবা-মা শকড হয়েছিলেন। বাবা আমার সঙ্গে প্রায় এক বছর কথাই বলেননি। তার পর রানাদা আর সুদেষ্ণাদি আমাকে নিয়ে যায় বুম্বাদা আর ঋতুদা-র কাছে। ওঁরা দু’জনেই আমাকে ‘গানের ওপারে’র জন্য সিলেক্ট করেন।
আপনি নিজেই স্বীকার করলেন আপনি ডানপিটে, ‘মু-ফট’। এটা কি বড় শহর এবং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নানা প্রস্তাব থেকে বাঁচার জন্য ছোট শহরের মেয়ের ‘ডিফেন্স মেকানিজম’?
(ভেবে) একদমই তাই। এখানে যদি আপনি চুপচাপ থাকেন তা হলে কী কী সমস্যা হতে পারে সেটা যে কোনও ছোট শহরের মেয়ে আপনাকে বলে দেবে। স্ট্রং পার্সোনালিটি না থাকলে এখানে সারভাইভ করা খুব শক্ত। সেটা করতে করতে কখনও কখনও হয়তো অ্যারোগেন্টও লেগেছে আমায়।
নিজে ছোট শহরের বলেই কি হালিশহরের রাজ চক্রবর্তীকে আপনার ভাল লাগে?
হতে পারে। আসলে ছোট শহরে যারা বড় হয়েছে তাদের কিছু কিছু মানসিকতা একরকম হয়। চিন্তাধারার একটা মিল থাকে। রাজের সঙ্গেও যেমন কমন পয়েন্টগুলো নিয়ে আলোচনা করতে ভাল লাগে।
একটু ‘কাটমুন্ডু’র কথায় ফিরি। এটা তো লুকিয়ে বেড়াতে যাওয়ার ছবি।
হ্যাঁ লুকিয়ে, অফিসের বসকে না বলে বেড়াতে যাওয়ার ছবি। অনেক দিন পর এই রকম মেজাজের ছবি আসছে বাংলা সিনেমায়। একদম পুজোর মেজাজের ছবি বলতে যা বোঝায় ‘কাটমুণ্ডু’ তাই।