Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Bratya Basu

থিয়েটারকে জীবনের অনেক সময় দিয়েছি, এ বার ছবিকে দিই: ব্রাত্য বসু

১০ বছরের ব্যবধানে ব্রাত্য বসু পরিচালনার কাজে হাত দিলেন করোনাকালে। লেখার কাজ, রাজনীতি থেকে পরের ছবির কাজ সব সামলাতে গিয়ে বললেন, ‘‘সময়কে মেনে চলি আমি।

১০ বছরের ব্যবধানে ফের ছবি পরিচালনায় ব্রাত্য বসু।অভিনয়ে নুসরত জাহান ও আবীর চট্টোপাধ্যায়।

১০ বছরের ব্যবধানে ফের ছবি পরিচালনায় ব্রাত্য বসু।অভিনয়ে নুসরত জাহান ও আবীর চট্টোপাধ্যায়।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২০ ১৫:৩০
Share: Save:

‘ডিকশনারি’-র ডাবিং শেষের পথে। ১০ বছরের ব্যবধানে ব্রাত্য বসু পরিচালনার কাজে হাত দিলেন করোনাকালে। লেখার কাজ থেকে পরের ছবির কাজ সব সামলাতে গিয়ে বললেন, ‘‘সময়কে মেনে চলি আমি। এই সময়টাতেই মনে হল ছবিতে মন দিই।’’

প্রশ্ন: কিন্ত এই কি প্রথম বাংলা ছবি শুরু করার সময়?

ব্রাত্য: এই সময়কে আমি চিনতে বা বুঝতে পারছি না। আমি তো জ্যোতিষী নই। তবে আন্তোনিন আর্তো-কে নিয়ে আমি একটা কাজ করছি। সেখানে উনি বলছেন, পৃথিবীতে ১০০ বছর অন্তর এ ধরনের সংক্রমণ ফিরে আসে। এই রোগ প্রকৃতির মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করে। প্রকৃতিই মানুষকে বলে, তোমার ঔদ্ধত্য, ধরাকে সরা জ্ঞান করা, যা ইচ্ছে তাই করা— এ বার আর করা যাবে না। ফলে কোভিডকে পুরো নেগেটিভ দেখতে আমি রাজি নই। আমি এই সময় নিজে প্রচুর লেখাপড়া করেছি। এই সময় আমার কাছে যথেষ্ট ফলদায়ক মনে হয়েছে। তবে আমরা আশা করতেই পারি, কোভিড এক দিন চলে যাবে। কে থাকবে না থাকবে সেটা অন্য কথা। তবে একটা সময় আসবে যখন মানুষ স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে। তখন আমার ধারণা, সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাদী আস্ফালনের পুনর্মূল্যায়ন হবে। আবার লোকে ধরাকে সরা মনোভাব দেখাতে গেলে এক বার ভাববে। তার ভেতরের কোভিড তাকে সতর্ক করবে।

প্রশ্ন: কিন্তু বাংলা সিনেমার কী হবে?

ব্রাত্য: বাংলা সিনেমার সময় খুব খারাপ।

প্রশ্ন: ভাল ছবি নেই। তাই কি হলে লোক নেই?

ব্রাত্য: না। যা পরিস্থিতি মানুষ সিনেমা হলে যেতে ভয় পাচ্ছে। বরং ব্যক্তিগত পরিসরে মোবাইলে ছবি দেখতে পছন্দ করছে অনেক বেশি। যে কারণে ওটিটি এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ে নিল।

প্রশ্ন: আপনার এই ছবি কি ওটিটি-তে আসবে না কি সিনেমা হলে?

ব্রাত্য: কথা ছিল নতুন বছরের জানুয়ারি মাসে ছবি রিলিজ করার। আমার মত নেই। দেখি, আমি আর প্রযোজক ফিরদাসৌল হাসান আলোচনার মাধ্যমে কোনও একটা সিদ্ধান্ত নেব।

প্রশ্ন: এই ছবিতে আবীর আর নুসরতকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?

ব্রাত্য: আমার ছবির চরিত্রের জন্য আবীর আর নুসরতকেই প্রয়োজন ছিল। এ ক্ষেত্রে আর একটা বিষয়ও খেয়াল করতে হয়েছিল আমায়। ওরা বড় স্টার। দর্শক ওদের জন্য হলে আসবে। ছবির স্যাটেলাইট রাইটস্ বিক্রির ক্ষেত্রে সুবিধে হবে।

প্রশ্ন: ব্রাত্য বসুকেও এত কিছু ভাবতে হয়?

ব্রাত্য: অবশ্যই। আমার মনে হয়, সারা বিশ্বেই সিনেমা শুধু গল্পের গুণে চলে না। টারান্টিনো কেন ব্র্যাড পিট বা লিওনার্দোকে নিয়ে কাজ করেন?

মানবসম্পর্কের রহস্যের কথা বলবে ‘ডিকশনারি’।

প্রশ্ন: নুসরতকে কেমন লাগল?

ব্রাত্য: নুসরত দুর্দান্ত। ওকে যা করতে বলেছি ঠিক তাই করেছে। আমার মনে হয়, নুসরত ‘ডিরেক্টর্স অ্যাক্টর’। আর আবীরও এক কথায় এই ছবিতে রাজসিক অভিনয় করেছে। খুব নিখুঁত কাজ হয়েছে।

প্রশ্ন: এই ছবিতে আপনি তো বাংলাদেশের মোশারফ করিমকে নিয়েও কাজ করলেন…

ব্রাত্য: আমার তো মনে হয় মোশারফ করিম বাংলা ছবির ক্ষেত্রে একটা বড় আবিষ্কার হতে চলেছে। বাংলাদেশের স্টার ও। এই বাংলায়, এ ছবিতে অসামান্য কাজ করেছে। ওর সঙ্গে পৌলমীও খুব ভাল কাজ করেছে। আর থিয়েটার থেকে অর্ণ মুখোপাধ্যায় এ ছবিতে আমার সঙ্গে কাজ করল।

প্রশ্ন: ‘ডিকশনারি’ আসলে কী?

ব্রাত্য: আমি এমন এক ছবির কথা বলতে চেয়েছিলাম যা মানবসম্পর্কের রহস্যের কথা বলবে সহজ ভাবে, মানবিকতার মোড়কে। বুদ্ধদেব গুহর দুটো গল্প নিয়ে লিনিয়ার ন্যারেটিভ তৈরি করলাম। গল্প দুটো পড়েছিলাম অনেক আগে, কম বয়সে। মাথায় থেকে গিয়েছিল। দুটোকে মিশিয়ে দিলাম। এই ছবিতে যে এই ভাবনাই ছিল তা নয়। তবে এই ছবির জন্য যে বিষয় ভেবেছিলাম সেটা হয়তো আমার দ্বিতীয় ছবির বিষয় হবে। যদি জানুয়ারিতে নতুন ছবির কাজে হাত দিতে পারি...

আরও পড়ুন: সামান্য প্রতিদান! ১৪ জন বন্ধুকে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা করে দিয়েছিলেন জর্জ ক্লুনি, কেন জানেন

প্রশ্ন: আপনি কি এখন ছবিই করবেন?

ব্রাত্য: সে রকম ইচ্ছা আছে। থিয়েটারকে জীবনের অনেক সময় দিয়েছি। এ বার ছবিকে দিই। আগামী পাঁচ বছর সিনেমাকে দেওয়ার ইচ্ছে।

প্রশ্ন: অভিনেতা ব্রাত্য বসু না কি পরিচালক ব্রাত্য বসু, কাকে বেশি পছন্দ?

ব্রাত্য: দু’জনেই সমান আমার কাছে। প্ল্যান আছে আগের মতোই সিনেমায় অভিনয় করার। আর অভিনেতা হিসেবে যখন ফ্লোরে ঢুকব তখন আমি ডিরেক্টর্স অ্যাক্টর। পরিচালক যা বলবেন ঠিক তাই করব।

প্রশ্ন: নাট্যজগতের কী হবে?

ব্রাত্য: দেখুন, অডিটোরিয়াম খুলছে, কিন্তু ভাঁড়ে মা ভবানী চলছে থিয়েটারে। নাটকের কর্মীরা তাঁদের কাজ করে যাবেন। মনুষ্য জাতির মধ্যে অনেক বুদ্ধিমান ব্যক্তি আছেন যাঁরা অর্থনীতি নিয়ে ভাববেন। আর অর্থনীতি স্বাভাবিক হলে নাটকের অবস্থাও স্বাভাবিক হবে। এই অবস্থায় আশা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। ভ্যাক্সিন নিশ্চয় আসবে। আসবে মানে বলতে চাইছি, আমার পাড়ার ওষুধের দোকানেও পাওয়া যাবে। বিজ্ঞানীরাও বলছেন, এমন একটা সময় আসবে যখন এই ধরনের সংক্রমণ আপনা থেকে চলেও যাবে।

নুসরত এবং আবীরকে ছবির একটি দৃশ্য বোঝাচ্ছেন ব্রাত্য।

আরও পড়ুন: কোভিডের পর কাজে ফিরলেন সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, আসছে ধারাবাহিক 'অপরাজিতা অপু'

প্রশ্ন: অন্য প্রসঙ্গে আসি। এখনও ডায়েট করছেন?

ব্রাত্য: (হেসে) দেখে কী মনে হচ্ছে? এই তো আবার যখন অভিনয়ে পুরোপুরি ঢুকে যাব তখন কড়া ডায়েট শুরু হবে।

প্রশ্ন: সামনে তো ডার্বি ম্যাচ আসছে। আপনি কোন দলে?

ব্রাত্য: আমি তো ইস্টবেঙ্গল।

প্রশ্ন: খেলা দেখবেন?

ব্রাত্য: অবশ্যই। টেলিভিশনে। এক সময় কত মাঠে গিয়েছি। আমার তো সিট বুক করা থাকত। মানে, ওই সিটে না বসলে আগে মনে হত দল জিতবে না।

প্রশ্ন: এই মুহূর্তে কাজের ভাবনা কী?

ব্রাত্য:
মাথায় এখন তিনটে ছবির প্লট ঘুরছে।

(ছবি সংগৃহীত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE