Advertisement
E-Paper

গঙ্গাবক্ষে সিজার ও বন্ধুরা

মাঝগঙ্গায় দাঁড়িয়ে প্রকাণ্ড ‘বার্জ’‌। হাজির টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সব পুরুষ। প্রসেনজিৎ। দেব। যিশু। পরমব্রত। সৃজিত। কৌশিক। অঙ্কুশ। কারণ? সৃজিতের পরের ছবি ‘জুলফিকার’‌য়ের শ্যুটিং। আনন্দplus-এর ২০১৬-র প্রথম কভার স্টোরির জন্য অভিনব আড্ডা। সামনে ইন্দ্রনীল রায়মাঝগঙ্গায় দাঁড়িয়ে প্রকাণ্ড ‘বার্জ’‌। হাজির টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সব পুরুষ। প্রসেনজিৎ। দেব। যিশু। পরমব্রত। সৃজিত। কৌশিক। অঙ্কুশ। কারণ? সৃজিতের পরের ছবি ‘জুলফিকার’‌য়ের শ্যুটিং। আনন্দplus-এর ২০১৬-র প্রথম কভার স্টোরির জন্য অভিনব আড্ডা। সামনে ইন্দ্রনীল রায়

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৩৩
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

‘রাজকাহিনি’র পর সৃজিত আপনার...

দেব: ইন্টারভিউ শুরু হওয়ার আগে আমার একটা প্রশ্ন আছে।

কী?

দেব: গোটা ইন্ডাস্ট্রি এখানে। মাঝগঙ্গায় এই রোম্যান্টিক পরিবেশে এতগুলো ছেলের ইন্টারভিউ নিচ্ছেন। কেমন লাগছে?

(পাশ থেকে তখন হো হো করে হাসছেন প্রসেনজিৎ, যিশু, পরমব্রত, সৃজিত, অঙ্কুশ, কৌশিক সেনরা )

ইন্টারভিউটা আপনাদের, তাই আমার উত্তরে কেউ ইন্টারেস্টেড হবে না। দেব, আপনার প্রশ্নটাই ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করছি সৃজিতকে। ‘রাজকাহিনি’তে এতগুলো মেয়েকে নিয়ে ছবি করার পর ‘জুলফিকার’‌য়ে দেখছি শুধুই ছেলে। এটা আপনার শাপমোচন নাকি?

সৃজিত: (হাসি) না, আমার শাপমোচন নয়। আমি ‘রাজকাহিনি’র বক্সঅফিসের সাফল্যের পর এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম, যেটা আমাকে চ্যালেঞ্জ করে। ‘জুলফিকার’ আমার কাছে সেই চ্যালেঞ্জটা।

এটা তো ‘জুলিয়াস সিজার’‌য়ের অ্যাডাপ্টেশন?

সৃজিত: শুধু ‘জুলিয়াস সিজার’ নয়। এটাতে আমি ‘জুলিয়াস সিজার’‌য়ের সঙ্গে ‘অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা’ অ্যাড করেছি। শেক্সপিয়রের নাটকে এমনিতেই প্রচুর লার্জার দ্যান লাইফ চরিত্র। প্রচুর ঘটনা। একটা ‘আরশিনগর’ যা ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’‌য়ের অ্যাডাপ্টেশন সেটাতে রিনাদি (অপর্ণা সেন), কী ‘হ্যামলেট’‌য়ের অ্যাডাপ্টেশন ‘হেমন্ত’তে অঞ্জন দত্ত হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন কত চরিত্র থাকে শেক্সপিয়রের নাটকে! সেখানে আমারটায় দু’টো গল্প একসঙ্গে। বুঝতেই পারছেন স্কেলটা...

‘জুলফিকার’‌য়ের টাইটেল রোল মানে জুলিয়াস সিজারের চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বাকিরা কে কোন রোল করছেন একটু বলবেন? কে ব্রুটাস, কে কেসিয়াস, কে কাস্কা, কে অ্যান্টনি?

সৃজিত: সেটা রুপোলি পর্দার জন্যই তোলা থাক না (হাসি)।

বুঝলাম। তা হলে মেয়েরা কোন কোন রোল করছেন, সেটা বলুন। পোর্সিয়া কে, কালপুর্নিয়া কে?

সৃজিত: কালপুর্নিয়া পাওলি। আর পোর্সিয়া জুন। আর যেহেতু আপনি ক্লিওপেট্রা জিজ্ঞেস করেননি, তাই বলছি না (হাসি)।

ওটা আমার পরের প্রশ্ন ছিল, মিস্টার মুখার্জি...

সৃজিত: ক্লিওপেট্রা নুসরত জাহান।

(এর মধ্যেই পরমব্রতকে বেরিয়ে যেতে হল। ডে লাইট কমে আসছে বলে তাঁর শ্যুটিং আজকে শেষ করতেই হবে।)

আচ্ছা, আড্ডাটাকে ছড়িয়ে দিই তা হলে। সৃজিতের সেট মানে প্রসেনজিৎ, পরম, যিশুর চেনা টেরিটরি। কৌশিক সেন-য়েরও তাই। দেবের কেমন লাগছে সৃজিতের সঙ্গে কাজ করে?

দেব: ভালই লাগছে। ঠিকঠাক কাজ জানে সৃজিত (প্রচণ্ড হাসি সবার)। না, সিরিয়াসলি। সৃজিত অভিনেতাদের কাছ থেকে সেরা কাজটা বার করতে জানে। আর আমি স্ক্রিপ্ট পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।

সৃজিত: হ্যাঁ, স্ক্রিপ্ট পড়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই দেব ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছিল।

দেব: আর একটা কথা। এই ছবিতে কিন্তু কেউ কারও কম্পিটিটর নয়। যেহেতু এখানে সবাই বড় স্টার, সবার ইগো বাঁচিয়ে কী করে কাজ করা যায়, সেটা সৃজিত জানে।

এটার কি অন্য একটা কারণ আছে?

দেব: কী রকম বলুন ?

এই সেটে সবচেয়ে বড় স্টার প্রসেনজিৎ। তিনি ইগো বিসর্জন দিয়ে সবার সঙ্গে কাজ করছেন, সেটাই কি সবাইকে ইন্সপায়ার করছে?

দেব: দেখুন, আমার দশ বছর হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। তার আগে বুম্বাদা কেমন ছিল জানি না। কিন্তু আজকের বুম্বাদার কোনও পার্সোনাল অ্যাজেন্ডা নেই।

দেব, এ সব ভাল ভাল কথা বলছেন, কিন্তু সিন শুরু হলে প্রসেনজিৎকে আপনি ছেড়ে দেবেন এমন অভিযোগ তো নেই! বিসিএল-এর খেলার মাঠেই ছাড়ছেন না বুম্বাদার টিমকে, আর সিনেমার সেটে ছেড়ে দেবেন?

(প্রশ্ন শুনে হাসছেন প্রসেনজিৎ, যিশু)

দেব: কিন্তু আমাকে তো টেক্কা দেওয়ার মতো সিন দেয়নি সৃজিত। কত বার বলেছি আমাকে একটা-দু’টো এমন সিন দিতে। আর এটা যদি কমার্শিয়াল ছবি হত বুম্বাদার সঙ্গে, তা হলে আমি হিসেব করতাম কার গান ভাল, কার ক’টা সিন ভাল...

যে হিসেবটা জিতের সঙ্গে ‘দুই পৃথিবী’তে করেছিলেন?

দেব: না, ‘দুই পৃথিবী’‌তে আমি সব ছেড়ে দিয়েছিলাম। (হাসি) আর ‘জুলফিকার’‌য়ে এ সব করতে হচ্ছে না কারণ আমরা এখানে সবাই সাপোর্টিং রোলে। কেউ হিরো নয়।

প্রসেনজিৎ: এখানে আমি একটা কথা বলি... ‘লগান’‌য়ের ক্লাইম্যাক্সে কিন্তু প্রত্যেকটা চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

সৃজিত: ‘রং দে বসন্তি’‌তেও তাই...

প্রসেনজিৎ: হ্যাঁ। তাই কার সিন ভাল, কার কম — এ সব নিয়ে কেউ ভাবছেই না সেটে। (বাকিদের উদ্দেশে) দেখলি কী ভাবে পুরো আলোচনাটা টেনে নিয়ে এলাম নিজের দিকে (হাসি)।

যিশু: এ সবে তুমি মাস্টার...

আচ্ছা, ‘জুলফিকার’‌য়ে মার্ক অ্যান্টনি কে?

সৃজিত: ওটা বড় সারপ্রাইজ। ক্রমশ প্রকাশ্য। তবে ব্যাপারটায় চমক আছে এটুকু আপনাকে বলতে পারি।

আচ্ছা, এই প্রশ্নটা প্রসেনজিৎকে। আপনি তো সৃজিতের সঙ্গে ‘অটোগ্রাফ’ করলেন। ‘২২শে শ্রাবণ’ করলেন। ‘জাতিস্মর’ করলেন...

প্রসেনজিৎ: ‘মিশর রহস্য’ বলে একটা ছবি করেছিলাম..

হ্যাঁ, ‘মিশর রহস্য’ করলেন। প্রথম ছবির সৃজিতের থেকে আজকের সৃজিতের তফাতটা কী? দুষ্টুমি কতটা বেড়েছে, পরিচালক হিসেবে কতটা এগিয়েছেন সৃজিত?

প্রসেনজিৎ: দুষ্টুমিটা সৃজিতের আমি শুনতে পাই কিন্তু কোনও দিন চোখে পড়েনি। সব খবরই কানাঘুষোয় পাই...

যিশু: জিওওওও, কারেক্ট দিয়েছ এটা বুম্বাদা (সঙ্গে হাতের অঙ্গভঙ্গি যা, কোনও মতেই ‘ইউ’ সার্টিফিকেট পাবে না সেন্সরের)।

প্রসেনজিৎ: তবে ফিল্ম লাইনে একটু আধটু বদমাইশি সবাই করে, তাই সেটা নিয়ে আমি ভাবি না। ও যত দিন কাজটা ঠিক করবে, তত দিন সব ঠিক আছে। আর এই যে দুষ্টুমির কথা হচ্ছে, সৃজিত তো কোনও মেয়েকে বাড়ি থেকে হাত ধরে টেনে আনছে না...

সৃজিত: (হাসি) কারেক্ট, এটাই আমি বলার চেষ্টা করি।

প্রসেনজিৎ: আর একটা কথা। ‘অটোগ্রাফ’ থেকেই ওর কনফিডেন্স লেভেলটা হাই ছিল। কিন্তু তখন কেউ যদি বলত, ছ’টা ক্যামেরায় শ্যুট করব, তা হলে ও একটু হলেও নার্ভাস হয়ে যেত। আজকে আর হবে না। সেই কনফিডেন্সটা এসে গিয়েছে ওর মধ্যে।

কিন্তু সৃজিত বেশি শ্যুট করেন বলে ওঁকে আপনি তো বকাবকিও করেন?

প্রসেনজিৎ: সে তো আজকেও করি। একটা কথা বলি, আজকে সিনেমাটা ডিজিটালি শ্যুট হয়। সেই টেকনোলজিটার শেষ দেখা দেখে ছাড়বে সৃজিত। সেটা নিয়ে পড়াশোনা করবে। সেটা নিয়ে ভাববে। সেটাকে দ্য এন্ড পর্যন্ত না নিয়ে গিয়ে ছাড়বে না।

যা সৃজিত ওঁর গার্লফ্রেন্ডদের সঙ্গে করে থাকেন?

(যিশু আর দেব সমস্বরে বলে ওঠেন: লাভলি, কারেক্ট আছে।)

প্রসেনজিৎ: (হাসি) আমি জানি না ওর গার্লফ্রেন্ডদের সঙ্গে ও কী করে। কিন্তু ‘জাতিস্মর’‌য়ের সময় যখন হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল, আমি নিজে হিরোইনদের ফোন করে বলেছিলাম, তোরা শিফট ডিউটি করে ওর বাড়ি যা আর দেখাশোনা কর। না হলে সুস্থ হবে না।

আচ্ছা, সৃজিতের আগের ছবির প্রধান স্টার ছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। আবার এর মধ্যে আপনি শিবপ্রসাদের সঙ্গে ঋতুপর্ণাকে নিয়ে ‘প্রাক্তন’ও করে ফেলেছেন। তা ‘জুলফিকার’টা আপনাকে অফার করে সৃজিত কি একটু ব্যালেন্স করলেন ইকুয়েশনটা?

প্রসেনজিৎ: আমার মনে হয় না ব্যালেন্স করল। ওর ‘রাজকাহিনি’তে ঋতুর মতো একজন অভিনেতার দরকার ছিল, তাই নিয়েছে। ‘জুলফিকার’‌য়ে ওর মনে হয়েছে আমাকে দরকার, তাই আমাকে বলেছে। ও তো যিশুকে হিরো করেও কাজ করেছে। তাই ব্যালেন্স করেছে বলে তো মনে হয় না।

আচ্ছা এই প্রশ্নটা প্রসেনজিৎ আর দেবকে একসঙ্গে। সৃজিত যে কম্পিটিটিভ, সেটা সবাই জানে। এই ‘জুলফিকার’‌য়ের সেটিংটা আন্ডারওয়ার্ল্ডে। স্টার কাস্টও বিরাট। এমন সেটিং আর এমন স্টারকাস্ট, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ভেবেছিলেন তাঁর ‘মহাভারত’ ছবিতে, যেটা কোনও কারণে হয়নি। ‘জুলফিকার’ করে সৃজিত কি ইনডিরেক্টলি কমলেশ্বরের ‘মহাভারত’টা শেল্ভ করে দিলেন?

প্রসেনজিৎ: আমাকে আর দেবকে কেন এই প্রশ্ন করছেন?

করছি, কারণ আপনারা দু’জন কমলেশ্বরের সঙ্গে কাজ করেছেন।

দেব: (প্রসেনজিৎকে থামিয়ে) দেখুন, ‘মহাভারত’ যদি কোনও কারণে বন্ধ হয়ে যায়, সেটা আমার জন্য। আমি বলেছিলাম স্ক্রিপ্টটা আরও বেটার করা যায়। আমার ধারণা, ‘চাঁদের পাহাড় ২’‌য়ের পর ‘মহাভারত’ শুরু হবে।

আর আপনি শাহরুখ খানের ইন্টারভিউ নেওয়ার পরের দিন কি ভাবেন, দেবের ইন্টারভিউটা ভাল করে না নিলেও হবে?

কোনও প্রফেশনাল জার্নালিস্ট তা ভাববে না…

দেব: আমরাও তাই। আমরা সৃজিতের ছবিতেও যতটা কমিটেড থাকব, কমলদার ছবিতেও। কী, ভুল বললাম?

প্রসেনজিৎ: একদম ঠিক বলেছিস।

সৃজিত: তা হলে কী দাঁড়াল? আমি কি শাহরুখ খান? (হাসি)

আচ্ছা, এ বার যিশুকে জিজ্ঞেস করতে চাই। ‘জুলফিকার’‌য়ের ব্যাপারে আপনি বলেছিলেন, এটা সৃজিতের ‘হার্ডকোর কমার্শিয়াল স্বপন সাহা’ ছবি।

যিশু: হ্যাঁ, ঠিকই। এটা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সবচেয়ে কমার্শিয়াল ছবি। এবং তার থেকেও বেশি ইম্পর্ট্যান্ট ‘জুলফিকার’ ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ছবি।

যিশু, সৃজিত কি আপনার জীবনে নতুন ঋতুপর্ণ ঘোষ?

যিশু: সৃজিত আমার জীবনে সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ঋতুদা আমাকে অভিনয় শিখিয়েছিল, যখন আমি না বুঝে অভিনয় করতাম। আর সৃজিত আমাকে অভিনেতা হিসেবে সম্মানটা পাইয়ে দিয়েছে যেটা হয়তো আমার কিছু বছর আগে পাওয়া উচিত ছিল।

এ বার একটু কৌশিক সেনকে জিজ্ঞেস করছি। আপনি থিয়েটারের লোক, মঞ্চে অনেক বার শেক্সপিয়র অ্যাডপ্টেশন করেছেন। ‘জুলফিকার’‌য়ের অফার পেয়ে আপনার ফার্স্ট রিঅ্যাকশন কী ছিল?

কৌশিক: সত্যি বলতে আমার ফার্স্ট রিঅ্যাকশন ছিল, এটা আবার কোনও ‘ঘাটা কেস’ হবে না তো। কিন্তু তার পর যখন স্ক্রিপ্টটা পড়লাম, আই ওয়াজ ভেরি ইম্প্রেসড।

শেক্সপিয়র অনেকের থেকে বেশি পড়া আপনার। কখনও এটা মনে হয়েছে, সৃজিতকে সাজেস্ট করি এই জায়গাটায় ব্রুটাসের ডায়লগটা এই ভাবে হওয়া উচিত ছিল?

কৌশিক: (হাসি) না, সেটা মনে হয়নি। তবে এখানে একটা কথা বলি। আমার কিন্তু শেক্সপিয়ারের অ্যাডাপ্টেশনে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে একটা প্রবলেম বরাবরই ছিল।

মানে বিশাল ভরদ্বাজের ‘মকবুল’ নিয়ে আপনার প্রবলেম ছিল?

কৌশিক: ‘মকবুল’ নিয়ে না হলেও ‘ওমকারা’ নিয়ে তো ছিলই। আমার এই আন্ডারওয়ার্ল্ডের সেটিং-এ শেক্সপিয়ার এনে ফেলব, তার পাশাপাশি ন্যায়-নীতির কথা বলব— এটা নিয়ে একটু অসুবিধে আছে। সে দিক থেকে সৃজিত এই অ্যাডাপ্টেশনটা দেখার পর বুঝবেন, সেটিংটা আন্ডারওয়ার্ল্ডের হলেও চরিত্রগুলো সব স্পেশাল।

আচ্ছা, সৃজিতের যেমন প্রচুর ফ্যান, প্রচুর শত্রুও তো রয়েছে। সেখানে সৃজিত শেক্সপিয়ার অ্যাডাপ্ট করছেন। তারা তো ওয়েট করছে ছিঁড়ে খেতে...

কৌশিক: হ্যাঁ, সৃজিতের প্রচুর ডিট্র্যাক্টর্স, প্রচুর।

সৃজিত কী বলছেন?

সৃজিত: দেখুন, ওটা নিয়ে আমি ভাবছি না। জানি আমি শেক্সপিয়ার করছি বলে অনেকেই ওয়েট করে আছে ছিঁড়ে খেতে। একটা স্টেজ-এ শেক্সপিয়ার তো খুব পপুলিস্ট...

কৌশিক: সাঙ্ঘাতিক পপুলিস্ট। তাই তো শেক্সপিয়ারের নাটকে এত খুন, ইললিগ্যাল সম্পর্ক, ভূত, পেত্নি...

সৃজিত: অ্যাবসোলিউটলি। তাই যেটা পপুলিস্ট, সেটাকে খারাপ বলাটা সেই সময়ে ছিল, আজও আছে। কিন্তু আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ হল শেক্সপিয়রকে কী সেটিংয়ে ফেলা হল। সেটা কি বাজ় লুরম্যানের ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ হল না অপর্ণা সেনের!

কৌশিক: অ্যাবসোলিউটলি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সেটিংয়ে শেক্সপিয়রকে ফেলা যায়, সেটাই তো ওঁর টাইমলেসনেসটা বোঝায়।

কিন্তু দিনের পর দিন এই প্রেশারটা নিতে কেমন লাগে? অন্য কোনও ডিরেক্টরকে লোকে এত হিংসে করে না, এত খারাপও বলে না।

সৃজিত: এই প্রেশারটা তো ১৪ অক্টোবর ২০১০ থেকে বয়ে চলেছি, যবে থেকে ‘অটোগ্রাফ’ রিলিজ করেছিল। সত্যি বলতে, আই থ্রাইভ আন্ডার প্রেশার। আমি আমার প্রেশারের সঙ্গে ডিনার খেতে যাই, সিনেমা যাই। আই লভ দ্য প্রেশার।

দেব: আর যত দিন লোকে সৃজিতকে বদনাম করছে, হিংসে করছে, এটা জানবেন সৃজিত এমন কিছু করছে যেটা অন্যেরা পারছে না করতে।

প্রসেনজিৎ কিছু বলবেন?

প্রসেনজিৎ: আমি এটুকুই বলব, ও সব নিয়ে মাথা ঘামাস না ভাই। আমি তো ৩২ বছর ধরে শুধু বদনামই কুড়োলাম। যে টপ-এ থাকবে, তার বিষয়ে শুধুই খারাপ কথা শুনবেন। সে লতা মঙ্গেশকরই হোন বা অন্য কেউ। এখন দেখছি সৃজিত এটা নিয়ে মাঝেমধ্যে অ্যাফেক্টেড হয়। কিন্তু একটা স্টেজ আসবে যখন সৃজিত এগুলোকে কাঁচি করতে পারবে। তখন শুধু কাজটাই করবে।

আচ্ছা, ‘জুলফিকার’-এর সেট-এ মেয়েরা কতটা সেফ?

সৃজিত: (হেসে) এটা কেন বলছেন?

মানে একটা সেট-এ আপনি, দেব, পরমব্রত, যিশু। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে না-হয় ধরলাম না...

যিশু: (থামিয়ে দিয়ে) কেন, বুম্বাদাকে ধরা হবে না কেন?

(সবার হাসি একসঙ্গে)

দেব: সবাইকে ধরুন। আজও বুম্বাদার গাড়ি লং ড্রাইভে ধাবাতে দেখা যায়...

(মিটিমিটি হাসছেন তখন প্রসেনজিৎ)

যিশু: হ্যাঁ, প্লিজ বাদ দেবেন না ওঁকে। আমরা আজও ওঁর কাছে শিশু। আমরা সবাই। মানে যখন মোবাইল ছিল না, সেই সময় থেকে ওঁর যা ফর্ম...

সৃজিত: হ্যাঁ, মোবাইল না থাকলেও উনি যথেষ্ট ‘মোবাইল’ ছিলেন...

প্রসেনজিৎ: কী দুষ্টু ছেলেগুলো সত্যি!

যিশু: তবে সিরিয়াসলি এই ১৮ বছর কাজ করার পর বুঝেছি বুম্বাদার কন্ট্রিবিউশন...

এটা কি ম্যানেজ দিচ্ছেন যিশু?

দেব: হান্ড্রেড পার্সেন্ট ম্যানেজ দিচ্ছে।

প্রসেনজিৎ: পুরো ম্যানেজ…

সৃজিত: তবে সিরিয়াসলি, আমি যিশুকে একটা কথা বলব। ও বুম্বাদাকে নিয়ে যা বলল, তার অনেক বেশি আমি বলতে পারি। নীলাঞ্জনা ভাল থাকুক এটাই চাইব... (হাসি)

যিশু: (যা গালাগালি দিলেন, তা এই কাগজে লেখা যাবে না)

সৃজিত: আচ্ছা, অন আ সিরিয়াস নোট, এখানে একটা পুরনো প্রসঙ্গ টেনে আনা যায় কি?

কী বলুন?

সৃজিত: ওই যে প্রেশারের কথাটা বলছিলেন, এখানে যাদের সঙ্গে কাজ করছি, তারা সবাই ক্রমাগত নিজেদের বদলেছে। কেউ সেফ খেলেনি। সুতরাং প্রেশার সবাই নিয়েছে।

দেব যে স্টেজ-এ ছিল এক সময়, ও আরামসে ‘রংবাজ ৯’ কি ‘পাগলু ১৬’ করতে পারত। সেটা না করে ও ‘চাঁদের পাহাড়’ করেছে।

এটা কি আপনি হ্যাটা করছেন?

সৃজিত: একদমই নয়। আমিও তো ‘অটোগ্রাফ’-এর পর নানা অ্যাডাপ্টেশন করে ‘অটোগ্রাফ ৭’ করতে পারতাম। সেটা না করে তো ‘হেমলক’ করেছি। ‘রাজকাহিনি’ করেছি যা অত বড় হিট। ইন্ডিয়ান প্যানোরমা, কেরল, মামি ফেস্টিভ্যাল পর্যন্ত গিয়েছে ছবিটা। বুম্বাদাও নিজেকে ক্রমশ পুশ করেছে। আমার কাছে এই সব লোকজনের সঙ্গে কাজ করাটা ইন্সপায়ারিং।

‘জুলফিকার’ রিলিজ করবে কবে?

সৃজিত: (দেবের দিকে তাকিয়ে) এখানে ‘ধূমকেতু’র প্রোডিউসর দেব বসে আছেন, উনি চাইছেন ‘জুলফিকার’ যেন ঈদে রিলিজ হয়।

আপনি কী চাইছেন?

সৃজিত: আমার মনে হয়, ‘জুলফিকার’ পুজোতে রিলিজ হওয়া উচিত।

অঙ্কুশকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। এই টিমে আপনার উপস্থিতিটা কি অনেকটা স্টিভ ওয়ার সেই টিমে ড্যামিয়েন মার্টিনের মতো। মানে আপনি ডিপেন্ডেবল প্লেয়ার, কিন্তু আশেপাশে বাকিরা সুপারস্টার…

অঙ্কুশ: (হাসি) এটা ভাল প্রশ্ন। হ্যাঁ, আশেপাশে সবাই সিনিয়ার। আসলে যে দিন সৃজিতদা প্রথম ইঙ্গিত দিয়েছিল ছবিটার বিষয়ে, সে দিন আমি একটা রেস্তোরাঁয় বসে ছিলাম। সৃজিতদা শুধু বলেছিল, ‘‘রেডি থাকিস। খুব শিগগিরই ডাক পড়তে পারে।’’ তার দু’দিনের মধ্যেই যে ডাক পড়বে, আমি বুঝতে পারিনি। আর এ রকম ব্যানার, এত বড় ছবি, আমি তো সঙ্গে সঙ্গে ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছিলাম। তার উপর দ্য স্ক্রিপ্ট ওয়াজ ফ্যান্টাস্টিক।

এই প্রশ্নটাও প্রসেনজিৎ আর দেব-এর জন্য। প্রসেনজিৎ সৃজিতের সঙ্গে আবার কাজ করার আগে শিবপ্রসাদের সঙ্গে কাজ করলেন। দেব-ও এর আগে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ধূমকেতু’তে কাজ করলেন। সৃজিতের সঙ্গে কৌশিক কি শিবপ্রসাদের তফাতটা কী?

প্রসেনজিৎ: অ্যাজ ডিরেক্টর?

ইয়েস।

প্রসেনজিৎ: শিবপ্রসাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমি বুঝেছি শিবপ্রসাদ ফ্যামিলি ড্রামা, ইমোশনস— এগুলো নিয়ে সিনেমাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। অন্য দিকে সৃজিত একটু লার্জার দ্যান লাইফ। একটু বড় ক্যানভাস।

দেব?

দেব: আমি এটুকুই বলব কৌশিকদা আর সৃজিত দু’জনেই খুব ভাল ডিরেক্টর। দু’জনের স্টাইলটা আলাদা। আমি খুব লাকি এমন দু’জন ডিরেক্টরের ছবি ব্যাক টু ব্যাক করছি। ইট ইজ আ প্রিভিলেজ।

প্রসেনজিৎ: এটা ঠিক যে কেরিয়ারের এই স্টেজ-এ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের এই ছবি করাটা দেবের কাছে ব্লেসিং। তার পর ‘ধূমকেতু’র মতো ছবি।

তা-ও দুজনকেই জিজ্ঞেস করছি শিবু আর সৃজিত, কৌশিক আর সৃজিত— দশে কত নম্বর দেবেন?

প্রসেনজিৎ: এই এসেছে সেই প্রশ্নটা। দেব আমাকে উত্তর দিতে দে। নম্বরটা তো আমরা দেব না ভাই।

কেন?

প্রসেনজিৎ: নম্বর তো আনন্দবাজার দেবে। সব সময় তো ওরাই দেয়। এই পোরশনটা যেন কাটা না হয়। যে দিন থেকে রিভিউতে আপনারা নম্বর দেওয়া শুরু করেছিলেন, সে দিন সকালেই আমি আনন্দplus-এর বিভাগীয় সম্পাদককে ফোন করে বলেছিলাম এটা আপনারা ঠিক করছেন না। সিনেমাকে নম্বর দেবেন না প্লিজ।

হ্যাঁ, কিন্তু আজকাল তো আনন্দবাজার আর নম্বর দেয় না।

প্রসেনজিৎ: তা হলে এ ব্যাপারে একটু অবদান আছে আমার। কিন্তু আমি জানি, এই জায়গাটা একজন ঠিক কেটে দেবে (প্রচণ্ড হাসি)

লাস্ট প্রশ্ন। ‘রাজকাহিনি’তে অত লোকের মাঝে এক ঋতুপর্ণাই ছিলেন সবচেয়ে বড় স্টার। তাই পোস্টারে তাঁর মুখ ছিল সবচেয়ে বড়। ‘জুলফিকার’-এর পোস্টারে কী হবে? দেবের ছবি বড় যাবে, না প্রসেনজিতের? পরমব্রতর, না যিশুর?

দেব: সেটা পোস্টার পড়লেই দেখতে পাবেন…

সৃজিত: (হাসি) দেওয়ালে চোখ রাখুন। সঙ্গে ফিতে রাখবেন।

interview dev prasenjit srijit mukhopadhay parambrata jishu kaushik sen ankush indranil roy julfikar ananda plus exclusive
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy