Advertisement
E-Paper

একদিনে ছবিমুক্তি, ‘ভিকটিম’-‘মাফিয়া কার্ড’-এর খেলা! লড়াইয়ে ‘রঘু ডাকাত’ আর ‘রক্তবীজ ২’?

দেব বলেছেন, “কেন সব কিছুর এ রকম চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে জানি না। আমার কোনও ভাবনা বাংলা ছবির উপকারে এলে, সেই কাজ অন্যদের ছুঁয়ে গেলে সমস্যা কোথায়?”

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:২৩
জিতবে কে, ‘রঘু ডাকাত’ না ‘রক্তবীজ ২’?

জিতবে কে, ‘রঘু ডাকাত’ না ‘রক্তবীজ ২’? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ছবি নয়, ছবির প্রচারটাই যেন আসল! গত কয়েক বছর ধরে ছবিমুক্তির আগের ছবিটা তেমনই। প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতারা দলে দলে প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন। ছবিমুক্তির পরেও প্রচারের বিরাম নেই। গত দু’বছর ধরে এই ছবিতেও বুঝি বদল। ছবি নয়, প্রযোজক-পরিচালকদের পারস্পরিক বিদ্রুপ, কটাক্ষ, ছবিমুক্তির দিন নিয়ে টানাটানি— এই লড়াই-ই যেন বক্সঅফিসে লক্ষ্মীলাভের একমাত্র হাতিয়ার হয়ে উঠেছে!

এ বছর পুজোর সময়ে ছবিমুক্তির ব্যপারটাই দেখা যাক। মুক্তি পাচ্ছে ‘রঘু ডাকাত’, ‘দেবী চৌধুরাণী’, ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’, ‘রক্তবীজ ২’। ১৪ সেপ্টেম্বর প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা এবং প্রযোজক-পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে ঘরোয়া আড্ডায় পাশাপাশি বসে মুড়ি খেতে দেখা গিয়েছে। সেই ছবি বাংলা বিনোদন দুনিয়ার সুস্থ মানসিকতা এবং পরিবেশকেই যেন তুলে ধরেছিল। ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ গুঞ্জন, গত দু’বছরের মতো এ বারেও নাকি দেব প্রেক্ষাগৃহ আর প্রদর্শন সময়ের দখল নিতে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছেন! এর জেরে কোণঠাসা বাকি ছবি।

দিন যত এগিয়ে আসছে, পারস্পরিক শাণিত মন্তব্য আরও ধারালো। যা দেখে সিনেবোদ্ধাদের দাবি, ‘দেবী চৌধুরাণী’ এবং ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ নাকি এই লড়াইয়ে নেই! লড়াই শুধু ‘রক্তবীজ ২’ আর ‘রঘু ডাকাত’-এর মধ্যে। বলা ভাল, দেব বনাম শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আরও একবার!

‘রঘু ডাকাত’-এর ট্রেলারমুক্তির অনুষ্ঠানে দেব।

‘রঘু ডাকাত’-এর ট্রেলারমুক্তির অনুষ্ঠানে দেব। ছবি: সংগৃহীত।

বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় দেবের দাপট প্রসঙ্গে ‘রক্তবীজ ২’-এর কাহিনি-চিত্রনাট্যকার জ়িনিয়া সেন আনন্দবাজার ডট কম-এর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “আমিও এ রকম কথা শুনেছি। গুঞ্জন সত্যি হলে প্রভাব পড়বে ‘রক্তবীজ ২’-সহ বাকি তিনটি ছবির উপর। কেন বার বার কেউ বা কারা সুযোগের অপব্যবহার করবেন? ‘বহুরূপী’ যে পরিমাণ ব্যবসা করেছে গত পুজোয়, তার পর এই রকম আশঙ্কার জায়গা তৈরি হবে কেন? আমাদের তো আশ্বাস পাওয়া উচিত।” যদিও সরাসরি কেউ কাউকে বেঁধেননি।

১৬ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে বিষয়টিতে ইন্ধন জুগিয়েছেন রাজনীতিবিদ-অভিনেতা কুণাল ঘোষ। তিনি এক বার্তায় লিখেছেন, “যা খবর, ‘প্রভাবশালী’ একটি ছবি শুরু থেকেই একাধিক প্রেক্ষাগৃহে বাড়তি সময় পাচ্ছে।” তিনি সরাসরি ‘রক্তবীজ ২’-এর হয়ে মুখ খুলেছেন। জানতে চেয়েছেন, নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ‘রক্তবীজ’ সুপারহিট হওয়া ছবিকেও কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গোড়া থেকে। এটা কাম্য নয়। শুরুতে সবাই সমান সুযোগ পাক। তার পর দর্শকের বিচার। সেটা না হলে এত বৈঠকের মানে কী?”

এই প্রসঙ্গে ‘রঘু ডাকাত’-এর প্রযোজক দেব, শ্রীকান্ত মোহতা-মহেন্দ্র সোনি কী বলছেন?

তাঁরা সংবাদমাধ্যমকে কোনও বার্তা দেননি। তবে কানাঘুষো শোনা গিয়েছে, নিজেদের ছবি নিয়ে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী। শ্রীকান্ত নাকি এমনও বলেছেন, “আমার কাছে দেব আছে।” আর এটাই নাকি বাকি প্রযোজক-পরিচালকের অস্বস্তির কারণ! যদিও নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ছবিতে রয়েছেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, সীমা বিশ্বাস, আবীর চট্টোপাধ্যায়, মিমি চক্রবর্তী, অঙ্কুশ হাজরা, নুসরত জাহান, কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের মতো এক ঝাঁক তারকা। শুভ্রজিৎ মিত্রের ‘দেবী চৌধুরাণী’তেও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী-সহ একাধিক খ্যাতনামী রয়েছেন। অনীক দত্তের ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’তে রয়েছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়, বাংলাদেশের নায়িকা নওশাবা আহমেদ।

অর্থাৎ, চারটি ছবিতেই তারকা এবং অভিনেতাদের ছড়াছড়ি। নিজেদের ছবির সাফল্য নিয়ে তাই প্রযোজক-পরিচালকদের সংশয় থাকার কথা নয়। কিন্তু দ্বন্দ্ব থামছে কই? উল্টে প্রত্যেকের নানা পদক্ষেপ পারস্পরিক লড়াই-ঝগড়ায় সিলমোহর দিচ্ছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে টিম ‘রক্তবীজ ২’।

সাংবাদিক সম্মেলনে টিম ‘রক্তবীজ ২’। ছবি: সংগৃহীত।

যেমন? সারা বাংলা ঘুরে প্রচারের ধারা তৈরি করেছেন দেব। গত শীতে ‘খাদান’ মুক্তির আগে তিনি পুরো দল নিয়ে বাংলার আনাচেকানাচে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এ বছরও সেই ধারা ধরে রেখে টিম ‘রঘু ডাকাত’ গিয়েছিল উত্তরবঙ্গ, মালদহ-সহ সর্বত্র। একই ভাবে বর্ধমান, চন্দননগর-সহ বাংলার বিভিন্ন জেলায় প্রচার সেরেছেন নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ‘রক্তবীজ ২’। অভিনয় না করলেও প্রায় প্রত্যেক প্রচার-সফরে উপস্থিত ছিলেন শিবপ্রসাদ স্বয়ং।

২০ সেপ্টেম্বর দেবের অভিনয়জীবনের ২০ বছর উদ্‌যাপিত হয় নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে। সেখানে ছবির প্রচার-ঝলক টিকিট কেটে দেখেছেন দর্শক। খবর, ১৫ হাজার দর্শক সে দিন দেবের উদ্‌যাপনে শামিল হয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভিডিয়োবার্তায় শুভেচ্ছা জানান তাঁর দলীয় সাংসদ-প্রযোজক-অভিনেতাকে। খবর, শিবপ্রসাদও মুখ্যমন্ত্রীর থেকে আশীর্বাদ নেন, যা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে টলিউডের অন্দরে। পরিচালক জুটির পুজোর ছবিতে একাধিক রাজনৈতিক বক্তব্য যথারীতি রয়েছে। সেই কারণেই কি আগেভাগে মুখ্যমন্ত্রীর শরণ নিলেন তিনি? নাকি নিছক অনুসরণ!

এ প্রসঙ্গে দেব আনন্দবাজার ডট কম-কে বলেছেন, “কেন সব কিছুর এ রকম চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে জানি না। আমি বরাবর বাংলা ছবির জন্য কিছু করতে চেয়েছি। কারণ, আমার যাবতীয় জনপ্রিয়তা টলিউড থেকেই। আমার কোনও ভাবনা যদি বাংলা ছবির উপকারে লাগে, সেই কাজ যদি অন্যদের ছুঁয়ে যায়— সমস্যা কোথায়? সবাই এক ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে এগোলে আখেরে টলিউডের লাভ।”

এখানেই শেষ নয়। কখনও একই দিনে, এক ঘণ্টা আগেপরে উভয়পক্ষ সংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করছেন! ‘রঘু ডাকাত’-এর মুক্তির দিনেই ‘রক্তবীজ ২’ ছবিমুক্তির দিন স্থির করেছেন নন্দিতা-শিবপ্রসাদ! সেখানে ‘দেবী চৌধুরাণী’ বা ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’-এর তরফ থেকে এ রকম কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। উল্টে, দেবের অভিনয়জীবনের উদ্‌যাপন আয়োজনে যোগ দিতে নিজের ছবির প্রচার ছেড়ে এসেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়।

Dev Shiboprosad Mukherjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy