Advertisement
E-Paper

সাহস আর সদিচ্ছাই কি পারবে ভাল বাংলা ছবির ‘রিইউনিয়ন’ ঘটাতে?

বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ কি?

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:৪৭
‘রিইউনিয়ন’ ছবির দৃশ্যে রাইমা এবং পরমব্রত।

‘রিইউনিয়ন’ ছবির দৃশ্যে রাইমা এবং পরমব্রত।

বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি শব্দটার প্রায় কোনও অস্তিত্ব নেই। নন্দন বা যাদবপুরে কান পাতলে প্রায়শই শোনা যায় এ প্রবাদ। কারণ হিসেবে উঠে আসে নানা কিছু। কখনও তা ডিজিটাল প্রযুক্তি তো কখনও লগ্নি ও মেধার অভাব। তবু ফেস্টিভ সিজনে হরেক পোস্টার চোখে পড়ে। কেউ কেউ নবীন পরিচালক। বোঝা যায় না কবে এ সব ছবি এল আর কবেই বা চলে গেল। ছবির মান ভাল হলেও উপযুক্ত মিডিয়া প্রোমোশনের অভাবে। নেই মাল্টিপ্লেক্সের ঠিক টাইমিং। তা হলে ছবির ভবিষ্যৎ কী?

কথা হচ্ছিল সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রিইউনিয়ন’ ছবিটি নিয়ে। পরিচালক মুরারী এম রক্ষিত নিজের সঞ্চিত লগ্নিতে এই ছবি বানিয়েছেন। ভালবেসেই তিনি অন্য পেশা ছেড়ে সিনেমায়। রিউইনিয়ন ছবিতে স্টারের অভাব নেই। সব্যসাচী, পরমব্রত, রাইমা থেকে সায়নী, সমদর্শী, সকলেই আছেন। আছে ঠাসবুনোট গল্প। সুন্দর লোকেশন। তবু তেমন জমছে না বক্স অফিস?

কারণ জানতে কথা বলছিলাম হল থেকে বেরনো কিছু মানুষের সঙ্গে। লেক মার্কেটে শীতের সন্ধ্যার জমজমাট ভিড়। ক্রিসমাসের মেজাজে শহর। সেক্টর ফাইভের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সায়ম বলছিলেন, ‘‘দেখুন, আজ বিকেলে এক দিনের ছুটি। কাছেই থাকি। ফেস্টিভ মুড। মনে হল, বান্ধবীকে নিয়ে একটা সিনেমা দেখি। মাল্টিপ্লেক্সে এলাম। এই ছবিটা চলছিল। ঢুকে পড়লাম দেখতে।’’

কেমন লাগল?

এন্টারটেইনিং। তবে বিরাট কিছু না। খুব ভাল বা খারাপ কোনওটাই না।

একই কথা বলছিলেন লাবণী দেবী। একটি বুটিক চালান তিনি স্থানীয় এলাকায়। অবসরে সিনেমা দেখেন শুক্রবার করে। রাসবিহারী এলাকার অনেক দিন ধরে আছেন। পুরনো হলে স্বামীর সঙ্গে সিনেমা দেখেন সুযোগ পেলেই। জানালেন, চোখের সামনেই এই এলাকায় একাধিক হল উঠে গেল। অথচ ভবানীপুর, কালীঘাট এক সময়ে ছিল সিনেমার আখড়া। আর এখন রুগ্ণ।

আরও পড়ুন, ভিন্ন ভাবনার রসদ দিচ্ছে ‘ধানবাদ ব্লুজ’-এর ট্রেলার

কেমন লাগল রিউইনিয়ন ছবিটি?

খারাপ না। তবে শিল্পে আরও অভিনিবেশ দরকার। ছবি বানালেই তো হবে না। তাকে শিল্প হয়ে উঠতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ও অন্য পেশা থেকে সিনেমায় এসেছেন। তাঁর ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখে যদিও সিনেমা আর শিল্প, এই প্রাচীন তরজা ডানা মেলেনি। কয়েক বছর আগে ‘বক্স নম্বর ১৩১৩’ নামের একটি ছবি হয়। তাতেও পরিচালক অন্য পেশা থেকে টাকা জমিয়ে সিনেমা করতে এসেছিলেন, তাঁকে সাহায্য করেছিলেন চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ডের সদস্যরা। পরে যদিও তাঁর সিনেমা নিয়ে বিশেষ আলোচনা শুনিনি।


‘রিইউনিয়ন’ ছবির অপর একটি দৃশ্য।

বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ কি?

কথা হচ্ছিল যাদবপুর আর এস আর এফ টি আই-এর দুই ছাত্রের সঙ্গে। তাঁরা জানালেন, দু’জনেই অভিনব বিষয় নিয়ে ছবির কথা ভাবছেন। কাজও করছেন। কিন্তু কোনও প্রযোজকের দ্বারস্থ না হয়ে, তারা নিজেরাই ডিজিটালে বানাবেন তাঁদের ছবি। এ ভাবেই ভাবছেন তারা। তার পর নেটে ছেড়ে দেবেন।

কারণ?

আরও পড়ুন, ‘সত্যকাম’-এর মুকুটে নতুন পালক…

কারণ, প্রযোজকের কাছে যাওয়া মানেই আপোষ। ফ্রেম বলে দেবে। ছবিটা আর আমার থাকবে না। আমি তো আর ইভেন্ট ম্যানেজার নই। ছবি বানাই। আর এই ভারচুয়াল দুনিয়ায় তো জাফর পানাহিরাও এ ভাবে কাজ করছেন। অসুবিধা কোথায়?

সত্যি এ এক জটিল প্রশ্ন আমাদের সামনে। মোবাইল ফোনে আমরা যারা ছবি দেখছি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যাদের আধার। ভরসা। তাদের সিনেমা কি কাজে লাগবে? নাকি একশো বছরেই তা উবে যাবে? দুনিয়া জুড়ে একের পর এক বিগ হাউস ধসেছে। সম্প্রতি বন্ধ হল ফ্যান্টমের মতো প্রযোজনা সংস্থা। অনুরাগ জানালেন, আর প্রযোজনা নয়। এ বার শুধু পরিচালনা। বাঙালির সিনেমা কালচার, যা হেমন্ত কালে, নন্দনে দেশ-বিদেশের পরিচালকের রঙে রঙিন হত, তার কি তবে অবসান হতে চলল? নাকি তার ভবিষ্যৎ মুরারীবাবুদের মতো কিছু মানুষের হাতে, যাদের আরও সদিচ্ছা, সাহস আর শিল্পবোধ সিনেমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে? ভরসা দেবেন তরুণরাও? ঋত্বিক ঘটক বা সত্যজিৎ রায়ের শহরের মানুষরা কী বলছেন?

(সিনেমার প্রথম ঝলক থেকে টাটকা ফিল্ম সমালোচনা - রুপোলি পর্দার বাছাই করা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদনের সব খবর বিভাগ।)

Bengali Movie Tollywood Celebrities
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy