Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

মিষ্টি মিষ্টি মুহূর্তের বৃষ্টি

মোদ্দা কারণ চিত্রনাট্যের বুনোট। গল্পটি তো চেনা। মুখচোরা, সুবোধ বালক। গোবেচারা চশমার আড়ালে লুকোনো তার দুরন্ত প্রতিভা। ও দিকে মেয়েটি হাতেপায়ে লক্ষ্মী।

চিরশ্রী মজুমদার
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০০:০১
Share: Save:

‘শেষের কবিতা’ এবং ‘ঘরে বাইরে’ দু’টি উপন্যাসেই রবীন্দ্রনাথ মানব-মনের জটিল স্তরের দুরূহ তান শুনিয়েছিলেন। দু’টি উপন্যাসের একটি বিন্দুও রূপকথা নয়। আর পরিচালক মৈনাক ভৌমিকের এই নতুন রোম্যান্টিক কমেডি তো ঘোষিত রূপকথা। তাও ভীষণ নরম, চকলেটে মাখামাখি। ছবিতে উপন্যাস দু’টির উপস্থিতি নায়ক-নায়িকার চরিত্রের নামে ও তাদের স্বপ্নে। ছবিটি জুড়ে এ ভাবেই ছড়িয়ে বাঙালি জীবনের যাপন। যাকে কেউ বলে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ। কেউ ডাকে ফিউশন। দৃষ্টিকটু বা মিসম্যাচ নয়। শেষমেশ মানিয়ে গিয়েছে।

মোদ্দা কারণ চিত্রনাট্যের বুনোট। গল্পটি তো চেনা। মুখচোরা, সুবোধ বালক। গোবেচারা চশমার আড়ালে লুকোনো তার দুরন্ত প্রতিভা। ও দিকে মেয়েটি হাতেপায়ে লক্ষ্মী। এই ‘মেড ফর ইচ আদার’ বা ‘হয়তো তোমারই জন্য’ জোড়াটি মান-অভিমানে, দু’জনের রঙে এতটাই মিশ খেয়েছে যে, তুই-তোকারির আবডালে গা ঢাকা দিয়েছে গভীর ভালবাসা। তাকে ডাক দিতে নিজেদেরই বুঝি সঙ্কোচ লাগে। সেই থেকে জন্মানো নানা টেনশন, নাটক নিয়ে এগোয় সিনেমা। শেষে কী হয় তা পোস্টারেই বোঝা যায়। কিন্তু কী ভাবে তা হয়, দর্শক সেটাই দেখতে চাইবেন। এখানেই খেলাটা মন্দ খেলেননি পরিচালক। চেনা-অচেনা ‘সিচুয়েশন’ তৈরি করে মিশিয়েছেন তুমুল হাসি, অল্প একটু কান্না আর অনেকটা আধুনিকতা।

সিনেমাটা ঘোর শহুরে। হয়তো একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের মধ্যে ঘোরে। ভারী স্বাচ্ছন্দ্যের ছাপ সেখানে। শপিং মলের ঝাঁপ তুললে সকাল হয়, দুপুর নামে অভিজাত লাউঞ্জে, রাত গড়ায় পার্ক স্ট্রিটে। পাব ফেরত সে ধাবায় ডিনার সারে। মনে হয় নির্মাতারা এই জীবন পরদায় ফোটাতে সাবলীল। অনেকে তাতে খুঁত ধরতেই পারেন। তবে গোটা সিনেমাটা দেখলে সময় মন্দ কাটে না। কারণ সেই মাপ মতো মিশ্রণ। তাই এ ছবিতে শ্যাম্পেন খুললে বর্ষা আসে। আলট্রা-মড কলকাতার পাশেই বাস করে কল্কা কাটা বারান্দার নস্ট্যালজিয়া। ব্র্যান্ডেড কেক রিকশায় চড়ে। ফুটবল পায়ে দৌড়োয় পাড়া-সংস্কৃতি। গীতবিতান থামিয়ে দেয় ব্যান্ডের গান। গিটারের সঙ্গতে বাজে আম চুরির গল্প। কসমোপলিটান দক্ষিণ কলকাতার পাশেই জেগে ওঠে গঙ্গার উড়িয়ে দেওয়া হাওয়া।

ঘরে অ্যান্ড বাইরে

পরিচালনা: মৈনাক ভৌমিক
অভিনয়: যিশু, কোয়েল, বিশ্বনাথ, অপরাজিতা, মনামী

৬/১০

যিশু ও কোয়েলকে একসঙ্গে দেখতে দর্শক ভালই বাসেন। প্রায় এক দশক বাদে পরদায় ফিরলেন এই জুটি। তাঁদের দেখিয়েছে দারুণ তরতাজা। কারণ প্রতিটি দৃশ্যের পোশাক নির্বাচন তারিফযোগ্য। অন্দরসজ্জাও নান্দনিক। কোয়েলকে সাধারণত নমনীয় রমণীয় রূপেই দেখা যায়। সেখানে তাঁকে ডানপিটে চরিত্রে দেখে মজা লাগে। যিশু অভিনয় নিয়ে এতটাই পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন যে, এমন সরলসিধে চরিত্র আজ তাঁর কাছে খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। রকস্টার-ইমেজটা তাঁকে মানায়। যেখানে ‘গোয়েন্দা কাকাবাবু’র সাব-প্লটটা একটু খুঁড়িয়েছে, সেখানে মূলত নায়কের অভিব্যক্তি-দক্ষতাতেই অন্য গোয়েন্দা ‘ব্যোমকেস বন্দ্যোপাধ্যায়’-এর সাবপ্লটটা উতরে গিয়েছে। ছোট ছোট মুহূর্তে মাতিয়ে দিয়েছেন। তৃতীয় ব্যক্তির চরিত্রের অভিনেতা জয় সেনগুপ্তকে একটু চড়া লাগল। হতে পারে, তাঁকে উদ্ভট, বেমানান দেখানোই উদ্দেশ্য ছিল। তবে জয়-যিশুর সম্মুখ সমরের দৃশ্যে হাসি চাপা অসম্ভব।

যেহেতু রোম্যান্স, গানভিত্তিক ছবি, তাই সংগীতও একটু অন্য ভাবে বাজলে ভাল লাগত। গীতিকার-সংগীত পরিচালকের এ বার কথা ও সুর আনকোরা ধআঁচে ভাবার সময়ে এসেছে। সেই খামতি কিছুটা মিটেছে আবহসংগীতে। ছবির সম্পাদনা কিছুটা দুর্বল। দ্বিতীয় ভাগে যখন মনে হয় ছবি শেষ, তখনই দেখা যায়, এখনও খানিকটা বাকি। তবু সে অবশিষ্টও বসে দেখা যায়। সংলাপ যুগের চল মেনে ব্যঞ্জনাময়। তা মনে আলতো করে খুশির টোকা দিয়ে যায়।

ছবি-বিরতির দৃশ্য এবং ক্লাইম্যাক্স দুই-ই চোখ টানে। মনে হয় নতুন দিনের পেয়ালায় মিষ্টি প্রেমের পুরনো বাংলা সিনেমার স্বাদই পাওয়া গেল। রাস্তায় নায়ক পিছু হাঁটছেন। হঠাৎ বারান্দায় অভিমানিনী নায়িকার জলছবি। সেই থেকে শেষে বারমুডা, চপ্পল পরিহিত নায়ক ও বেনারসী-কুমকুমে সজ্জিতা নায়িকা ক্যাব ঠেলছেন। টুকরো টুকরো বাঙালিয়ানাকে সঙ্গে নিয়েই যেন হাঁটতে থাকে দুষ্টু-মিষ্টি তরুণ দিন। আর ছবিটিও গড়পড়তা বাংলা সিনেমার তুলনায় একটু হলেও এগিয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ghare And Baire Jisshu Sengupta Koel Mallick
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE